User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Was a Good one to read, Print is ok.
Was this review helpful to you?
or
হরিশংকর জলদাস তাঁর আগের তিনটি উপন্যাসে জেলেদের সমাজজীবন আর পতিতাদের ক্লেদময় জীবনের কাহিনি শুনিয়েছেন। রামগোলাম হরিজনদের জীবনভাষ্য। ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা অচ্ছুৎ। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল। নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখন তাদের কোণঠাসা অবস্থা। পর্যাপ্ত থাকার ঘর নেই, পানি নেই; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘর, বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে চাকরি থেকে; তাদের প্রথা-সংস্কার-ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে তাদের স্পর্শ করতে বাধে, কিন্তু গোপনে ভোগ করতে দ্বিধা নেই। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর এমন একটি উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে মহাভারত, মনুসংহিতা, পুরাণকথা আর বর্তমানের মেথরজীবন একাকার হয়ে উঠেছে। বঞ্চনা, প্রেম, যৌনতা-মেথরসমাজের আদ্যোপান্ত ইতিহাস যেন রামগোলাম।
Was this review helpful to you?
or
Really good
Was this review helpful to you?
or
প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিমুহূর্তে মানুষের হৃদয় স্পন্দিত হচ্ছে হর্ষ, শোক, ঘৃণা, প্রেম, হতাশা প্রভৃতি আবেগের দ্বারা, পাচ্ছে প্রতিমুহূর্তেই অনুরণনের ছোঁয়া। অনুরণনের মাত্রা কখনোবা থাকে অত্যন্ত উঁচুতে, কখনোবা মনে হয় দিগন্তসীমার নৈকট্যে খুব কাছাকাছি আর কখনোবা থাকে মাঝামাঝি অবস্থানে। সাহিত্যের কোন ফিল্ড বা ক্ষেত্রে যদি এই সবগুলো টনিক বাস্তবতার নিরিখে একত্রে সমন্বিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত শক্তিশালী অথচ আকর্ষণীয় একটি ক্ষেত্রে যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ন্যায় চারপাশের সকল কিছুকে তার দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে অবলীলায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১২ ইং সালে প্রকাশিত হরিশংকর জলদাসের লেখা “রামগোলাম” বইটি সেরকমই আশ্চর্য একটি ক্ষেত্র যা সফলতার সাথে একত্রে সমন্বয় ঘটিয়েছে মানব মনে প্রতমিুহূর্তে অনুরণন তোলা হর্ষ, শোক, ঘৃণা, প্রেম, হতাশা প্রভৃতি আবেদনগুলোর। আবেদনগুলো “রামগোলাম” বইটিতে বর্ণিত শুধুমাত্র হরিজনদের জীবনালেখ্যই তুলে ধরেছে এমনটি নয়, লেখকের ক্র্যাফটসম্যানশিপ বা কুশলী বর্ণনায়, অনুভূতির সংস্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে হয়ে ওঠে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনভাষ্য। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘসময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর আমাদের এমন এক আবদ্ধ জনপদে উপস্থাপন করেন যেখানে মহাভারত, মনুসংহিতা, পুরাণকথার সাথে মেথরজীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে। বঞ্চনা, প্রেম এবং স্পষ্টীকৃত অলংকরনের চ্ছটায় সুসজ্জিত “রামগোলাম” বইটি হয়ে উঠেছে মেথর সমাজের অদ্যোপ্রান্ত ইতিহাস। প্রিয় পাঠক, আসুননা চলে আসুন, ঘুরে আসি ফিরিঙ্গিবাজার সেবক কলোনি থেকে যেখানে জড়িয়ে আছে, যেখানে ছড়িয়ে আছে পুরো চার মেথরপট্রির শক্তিশালী সর্দার একজন গুরুচরণের শুরু থেকে শেষ, তার ছেলে শিউচরন, গুরুচরণ পৌত্র উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু রামগোলাম, গুরুচরণ স্ত্রী একজন অঞ্জলী বাঈ, পুরোহিত বাবাঠাকুর, মাদারবাড়ি হরিজনপল্লির বলিষ্ঠ কার্তিক, মদোশ্যামল,বান্ডেল মুখ্য চেদিলাল, মনের অজান্তে ঝলক দিয়ে ওঠা মীরজাফরী চ্ছটায় মোড়ানো রাবন বংশের বিভীষণ যোগেশ, সদা শঙ্কিত ঝাউতলাপট্রির বাসিন্দা রূপলাল ও তার সাহসী কন্যা রূপালী,বিশ্বস্থ চমনলাল-মনুলাল-রামপ্রসাদ, সর্বোপরি করপোরেশনের সর্বময় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী বড় কর্তা আব্দুস ছালাম সাহেব এবং তার ডান হাত ধুরন্ধর জমাদার হারাধনবাবুর জানা অজানার যজ্ঞ। “নদীতো এঁকেবেঁকেই চলে। কিন্তু কর্ণফুলী চট্রগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বেশ ক’মাইল একেবারে সোজা বয়ে গেছে। নদীর জন্যই শহর। কর্ণফুলী না থাকলে চট্রগ্রাম শহর গড়ে উঠতনা। পৃথিবীর প্রায় সব শহড় গড়ে ওঠার পেছনে নদীর অবদান আছে। এই কর্ণফুলীর পাড়েই মাঝিরঘাট-সদরঘাট, জাহাজ ভেড়ার জেটি, কাস্টম হাউস। এই নদীর কারনেই বিদেশিদের আগমন-আক্রমন, ব্যবসা-শোষণ, ইংরেজ রাজত্ব, ব্রিটিশ পীড়ন। এই নদীর পাড়েই ব্রিটিশদের আবাসস্থল পাথরঘাটা-ফিরিঙ্গিবাজার। স্থানীয়রা গোরা ব্রিটিশদের বলত ফিরিঙ্গি। ফিরিঙ্গিবাজার থেকে একটু দূরে, কর্নফুলীর একেবারে কোল ঘেঁষে তৈরী করা হলো ফিরিঙ্গিবাজার সেবক কলোনি। পাঁচতলার দুটো বিল্ডিং। একটি বিল্ডিংয়ের তিনতলার চৌদ্দ নম্বর ঘরে গুরুচরণ থাকে। নামে কলোনি, আশেপাশের সভ্যভব্য মানুষরা বলে মেথরপট্রি। ফিরিঙ্গিবাজার মেথরপট্রিতে সত্তরটি পরিবার থাকে। তার মধ্যে থাকে গুরুচরণের পরিবারও। প্রত্যেক পরিবারের জন্য দুটো কামরা বরাদ্দ। একটি রান্নাঘর অন্যটি শোবার ঘর।প্রতিটি পরিবারের তিনটি জেনারেশন একসঙ্গে থাকে। দাদা-দাদি,মা-বাপ আর ছেলেমেয়ে নিয়ে পরিবারের নয়-দশজন সদস্য” # পুরুষানুক্রমিকভাবেই চলছে এই কঠিন নিয়ম,সদস্য যাই হোকনা কেনো ঘর সবের উপর দুটো,তাই মাউথপিস গুরুচরণের ভাষ্যের মধ্য দিয়ে মনুসংহিতার বর্ণনার প্রতি লেখকের তীব্র কটাক্ষের শ্লেষ পাওয়া য়ায় তার স্বরূপে: “ওই মনু লিখেছে ব্রাম্মণের ঘর থাকবে পাঁচটা, ক্ষত্রিয়দের ঘর হবে চারটা, বৈশ্যরা তিনটি ঘর বাঁধতে পারবে, ইচ্ছে করলে বা সামর্থ্য থাকলেও দুইটার বেশী ঘরের মালিক আমরা হতে পারবোনা” একটি পরিবারের মধ্য দিয়েই ফুঁটে বেড়েয়েছে অনেকগুলো পরিবারের জমানো কথা, তাদের ক্ষোভ, হাসি, আনন্দ, কান্নার দমক। লেখক নিজে মিশেছেন ফুঁসে ওঠা সে দমকে, মিশিয়েছেন সকলকে তাই বইটির চতুর্থ অধ্যায়ে প্রসঙ্গক্রমেই টেনে এনেছেন পবিত্র দেবতা ব্রম্মার মহীথর সৃষ্টির অভিলাষকে, কেনো অমৃতের পুত্রদের থেকে তিনি অপবিত্র মহীথর নামক পুত্রটিকে আলাদা করে রেখেছিলেন, সে গোপন অংশটুকুকে আলোতে নিয়ে এসেছেন,পুরোহিত সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করা মিথ্যে বানীগুলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন সর্বোপরি তুলে ধরেছেন শাস্ত্রবাণীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, ধর্মীয় অনুশাসনের কুযুক্তি কিভাবে মেথর সম্প্রদায়কে হিন্দু জাতিস্তম্ভের নিম্নতম স্তরে ঠেলে দিয়েছে। #জগতের সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায় ধীরে ধীরে, একটি সময় ফিকে হয়ে আসে পরিবর্তনের আশায় ঝুলতে থাকা গুরুচরণের মনও। বইটির প্রথমার্ধে হরিজনদের স্বার্থ রক্ষায় মেথর সর্দার গুরুচরণের উপস্থিতি এতোটাই প্রবল যে পড়তে গিয়ে মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ জেগে ওঠে আসলে বইটির নাম গুরুচরণ না হয়ে রামগোলাম কেনো! সংশয় অবশ্য মিটে যায় লেখকের সেন্টার পয়েন্ট কুশীলব রামগোলামের নামের সন্ধিবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এবং অবশ্যই তা গুরুচরণের ভাষ্যে রামগোলামের নাম কে রেখেছিলো সে প্রেক্ষাপটে কৈশোরোত্তীর্ণ রামগোলামের সে প্রশ্নের উত্তরে: “ধাইয়ের কথা শুনে পূর্ব দিকে ফিরে আমি চিৎকার করে বলে উঠেছিলাম, আমার নাতির নাম হবে রামগোলাম। হিন্দুদের দশ অবতারের একজন রামচন্দ্র, তাঁকে বড় শ্রদ্ধা করে হিন্দুরা, বড় ভালোবাসে। গোলাম মুসলমানি নাম। এ দুটো জোড়া লাগিয়ে আমি তোমার নাম রেখেছিলাম রামগোলাম। এ দুটো নামের খাতিরে হলেও অন্তত হিন্দু মুসলমানরা তোমাকে ঘৃণা করবেনা, লাথি-কিল দেবেনা, শালা-বানচোৎ করবেনা।” #পুরো বইটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হরিজনপল্লির গুরুচরণের সাহসিকতার কথা,কর্পোরেশনের বড়কর্তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা, স্ত্রী অঞ্জলির প্রতি এক স্বামীর ভালোবাসার কথা। বইটি পাঠ করার প্রতিমুহূর্তেই পাঠকের অবচেতন মন গুরুচরণের প্রতি পক্ষ নিয়ে নেয়, পুত্র শিউচরণ এবং চাঁপারানীর ভালোবাসার কথকতা তুচ্ছ এবং ঈষৎ হালকা হয়ে যায় বয়সী গুরুচরণ এবং অঞ্জলীর আবেগময় কথোপকথনের নিকট। “মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে তরুন রামগোলাম মানুষজন দেখছে। গেট দিয়ে কেউ ঢুকছে, কেউ বের হচ্ছে। কারও পায়ে তাড়া, কেউ ধীর পায়ে হাঁটছে। কারও চেহারা উদ্বিগ্নতায় ভরা, আর কেউ কেউ হাসতে হাসতে যাতায়াত করছে। দু-চারটা কার এবং জিপ করপোরেশনের মূল বিল্ডিংয়ের মুখে এসে থামছে। ওসব গাড়ি থেকে বনেদিমুখো সাহেবরা নেমে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপর দিকে উঠে যাচ্ছে। রামগোলামের বুঝতে অসুবিধা হয়না-এরাই এই করপোরেশনের দণ্ডমুন্ডের মালিক। এদের অঙ্গুলিহেলনে করপোরেশন ওঠে আর বসে। এদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো আবদুস ছালাম-করপোরেশনের বড়বাবু। আবদুস ছালাম সাহেবদের হাতে হরিজনদের মরা-বাঁচার নাটাই” #হরিজনরা বুঝতে পারে কিভাবে তাদের পৃথিবী ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে, তাই তাদের পক্ষে সর্দার হিসেবে লড়াই করার শেষ চেষ্টায় রত হয় গুরুচরণ ‘হুজুর আমাদের চাকরি নাকি এখন থেকে সবাই করতে পারবে? নোটিম জারি করেছেন আপনি? আমরা মাঠেমারা যাবো হুজুর। মেথর আমরা, অন্য কোনোখানে চাকরি করার সুযোগ নেই আমাদের। হিন্দু মুসলমান সবার জন্য খুলে দিলে এই চাকরিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে সবাই। না খেয়ে মারা পড়ব আমরা’ অবশ্য বড় সাহেব আব্দুস ছালামের মন তাতে কোনভাবেই টলেনা, টলেনা হারাধনবাবুর মন বরঞ্চ তিনি আশ্রয় নেন কূটচালের, যে চাল হরিজনদের সাথে চালা হয়েছে পুরাণমতে সেই পুরাণকাল থেকেই। “পরের ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দেন স্যার। আপনি শুধু রামগোলামকে চাকরিটা দেন। বুকপকেট থেকে ঘড়ি বের করলেন তিনি। ফতুয়ায় ঘড়ির ডায়াল ঘষতে ঘষতে বললেন, কোন কালে মেথরদের আন্দোলন সাকসেসফুল হয়েছে বলেন স্যার? ওরা হলো কুত্তার জাত, একটুকরা মাংস সামনে ছুঁড়ে দিলেনতো ওটা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিবে। দু-চারজন মুখ্য আর দু-চারজন যুবককে কয়েকদিন মদে চুবিয়ে রাখবেন। ওরাই স্ট্রাইক ভেঙ্গে কাজে যোগ দেবে” “রামগোলাম আকাশের অজস্র তারার দিকে তাকাতে তাকাতে ভাবে-তুমিওতো আজকে ওই তারাগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছো দাদু। কোন তারাটি তুমি দাদু? কত খুঁজছি তোমাকে! একা করে রেখে গেলে আমাকে। এত তাড়াতাড়ি মরলে কেন তুমি? হরিজনদের দায়ভার তুমি আমার কাঁধে তুলে দিলে। বয়স কম আমার। তারপরও তুমি বললে-রাম, তুমি পারবে। আমি আছিনা! তোমাকে বাতলে দেব সব” #মৃত্যুর পরে হরিজনমুক্তির আন্দোলনে রামগোলামকে দক্ষ সেনাপতির ভূমিকায় গুরুচরন পথ বাতলে দিয়েছিলো কিনা, কিংবা করপোরেশনে চাকরি নেয়ার সুবাদে রামগোলাম হরিজনমুক্তির আন্দোলন ভুলে যোগেশের ন্যায় বড় কর্তার তালপাতার সেপাইয়ে পরিণত হয়েছিলো কিনা সেই শেষাংশের দেখা পাওয়ার জন্য হলেও বইটি পাঠ জরুরী। এখানে লক্ষণীয় বিষয় প্রথমাংশে প্রত্যক্ষভাবে বর্ণিত গুরুচরণের ভূমিকা শেষাংশে পরোক্ষভাবে হলেও পাঠকের মনজুড়ে ভর করে, ক্ষণে ক্ষনে হলেও স্মরণ করিয়ে দেয় তিরোহিত গুরুচরণের কথা। মেথরদের প্রতি যুগ-যুগান্তরব্যাপী প্রথাবদ্ধ ঘৃণার অখ্যান তুলে ধরার প্রয়োজনে লেখক যেমনভাবে প্রচলিত প্রথার প্রতি তার বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শণীর পাশাপাশি তার শ্লেষ ঝরিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে দক্ষ হাতের লেখনীর ঘোরে আবদ্ধ করেছেন পাঠকদের, ভাবনার অবকাশ করে দিয়েছেন অনায়াশে, অবকাশে। প্রিয় পাঠক, ফিরিঙ্গিবাজার মেথরপট্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কুতুবুদ্দীনের আবৃত্তি করা কবিতার মধ্য দিয়ে শেষ করছি: “হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান” *************************** এক নজরেঃ বইঃ রামগোলাম লেখকঃ হরিশংকর জলদাস ধরনঃ উপন্যাস প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী হাজরা প্রকাশকঃ প্রথমা প্রকাশ প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৩ মোট পৃষ্ঠাঃ ১৯২ মূল্যঃ ৩২০.০০ টাকা আইএসবিএনঃ 978-984-8765-86-9 **************************** লেখক পরিচিতিঃ [“হরিশংকর জলদাস” এর জন্ম ১২ ই অক্টোবর ১৯৫৫, চট্রগ্রামে সমুদ্রপারের জেলেসমাজে। চুয়াল্লিশ বছর বয়সে কলম ধরেন তিনি, লেখেন নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জনজীবন। “জলপুত্র” “দহনকাল”, “কসবি” আর “জলদাসীর গল্প” তাঁকে লেখালেখির জগতে প্রতিষ্ঠা পাইয়ে দেয়। “লোকবাদক বিনয়বাঁশী” এবং “জীবনানন্দ ও তাঁর কাল” লেখকের অন্যরকম দুটি বই। “কৈবর্তকথা” ও “নিজের সঙ্গে দেখা” নামে দুটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আছে তাঁর। দলিত সমাজের লেখক তিনি, দলিতদের নিয়েই লেখেন। পেশায় অধ্যাপক হরিশংকর এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে নন্দিত হয়েছেন লেখার ক্ষেত্রে লুকোচুরি বা রাখঢাক না করার কারনে। তাঁর লেখায় জেলে, মেথর, বারবনিতা, ধোপা, নাপিত, ভিক্ষুক, মুচি, কামার-কুমার ফিরে ফিরে আসে। ১৪১৬ বঙ্গাব্দে হরিশংকর জলদাসের “দহনকাল” উপন্যাসটি ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার লাভ করে। ২০১১ ইং সালে এই শক্তিশালী লেখক “ড. রশীদ আল ফারুকী সম্মাননা স্মারক” পুরস্কারে ভূষিত হন।] তথ্যসূত্রঃ বই ও অন্তর্জাল। ছবিসূত্রঃ অন্তর্জাল। ওয়েবসাইট: a href="http://raselasrafulkabir.blogspot.com/" rel="contributor-to nofollow" onclick="" আশরাফুল কবীরের রাজ্যে /a a href="http://asrafulkabir.wordpress.com/" ক্রৌঞ্চমিথুনের কথোপকথন /a ********** ২৮ শে আষাঢ়, ১৪২০ মতিঝিল, ঢাকা।
Was this review helpful to you?
or
রামগোলাম হরিজনদের জীবনভাষ্য। ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা আজও অচ্ছুত। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল। নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখন তাদের কোণঠাসা অবস্থা। পর্যাপ্ত থাকার ঘর নেই, পানি নেই; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘর, বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে চাকরি থেকে; তাদের প্রথা-সংস্কার-ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে তাদের স্পর্শ করতে বাধে, কিন্তু গোপনে তাদের ভোগ করতে দ্বিধা হয় না। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর এমন একটি উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে মহাভারত, মনুসিংহতা, পুরাণকথা, আর বর্তমানের মেথরজীবন একাকার হয়ে উঠেছে।