User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
‘‘মিশরের পথে পথে’’ এক পর্যটকের কষ্টার্জিত অভিজ্ঞতার প্রয়াস ফারুকুর রহমান চৌধুরী ঢাকার উৎস প্রকাশ থেকে প্রকাশিত সিলেটের পর্যটক মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর ‘‘মিশরের পথে পথে’’ শিরনামে বইটি তাঁর কষ্টার্জিত একটি ভ্রমণ বিবরণী গ্রন্থ । অমর একুশে বইমেলা ২০১৩ উপলÿÿ্য প্রকাশিত বইটির জন্য মিশরের পিরামিড, ছিটাডেল খাতেবী দূর্গ, নীল নদ প্রভৃতির বাসত্মব ছবি সমন্বয়ে আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ এঁকেছেন সমর মজুমদার। ৬৫ গ্রাম অফসে কাগজে চেইন বাঁধাই করা ১২৫ টাকা মূল্যের ৮০ পৃষ্ঠা বইটি উৎসর্গ দেয়া হয়েছে নিঃস্বার্থ সমাজসেবক দানবীর আলহাজ্ব মোঃ বশির মিয়া’কে। বইটির মোড়কে ভ্রমণ বিবরণী এবং ইতিহাস নির্ভর একটি লেখা দিয়ে পর্যটকের সংÿÿপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেছেন বহুমার্তিক লেখক ও গবেষক রববানী চৌধুরী। বইটির ভূমিকা লিখেছেন লেখক নিজেই। তিনি ভূমিকায় উলেস্নখ করেছেন বাসত্মবে পিরামিড দেখার স্বপ্ন দেখতেন ছেলেবেলা থেকে। দীর্ঘ প্রতিÿার পর এ স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে; ইতোপূর্বে মধ্যযুগের সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম চীন দেশের প্রাচীর এবং আগ্রার তাজমহল দেখেছেন। ভ্রমণ কাহিনী সম্পর্কে কিছু লেখার ইচ্ছ তাঁর ছিল না; কিন্তু শুভানুধ্যায়ীদের তাগিদে লিখেছেন। যাদের উৎসাহে বইটি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- গবেষক প্রফেসর নন্দলাল শর্মা, বহুমাত্রিক লেখক রববানী চৌধুরী, গীতিকার হাসনাত মোহাম্মদ আনোয়ার, এ্যাভোকেট মণি গাঙ্গুলী, শিÿক মোঃ হেকিম উদ্দিন, গীতিকার মোঃ আছাব আলী এবং তাঁর সহধর্মিনী মোছাম্মৎ ছামিরম্নন বিবি। তাঁদের উৎসাহ না থাকলে আমরা সাধারন পাঠক সমাজ ঘরে বসে মিশর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতাম। যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই পর্যটক মিশরে মাত্র সাত দিন অবস্থান করেছিলেন। এই অল্পদিনে বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ স্থান, প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন পর্যবেÿণ করে বাসত্মব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন আজ হতে হাজার হাজার বছর আগে আমাদের আদি সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের জীবন চিত্র, তাঁদের চিমত্মা চেতনা আর বীরত্বের অমর কীর্তি সম্পর্কে। সেই সাত দিনের ভ্রমণ কাহিনী লিপিবদ্ধ করে সফর সূচি অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায় সাজিয়েছেন। অধ্যায়গুলো এমন- প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন, পঞ্চম দিন, ষষ্ঠ দিন, সপ্তম দিন। এরপর পর্যবেÿণ করা প্রতিটি প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে লিখিত প্রবন্ধের শিরেরনাম দিয়ে পৃষ্ঠাঙ্কন করেছেন। পর্যটক মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর এই বইটি পড়লে পৃথিবীর উলেস্নখযোগ্য প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন, অপরিচিত এলাকায় ভ্রমণের সময় সতর্কতা অবলম্বন ইত্যাদি বিষয়ে ধারনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। বইটি পড়লে মিশরিয়দের বর্তমান সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান, সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এছাড়াও মিশরের কোন প্রত্ননিদর্শন কিভাবে দেখতে হবে, সেখানে কিভাবে যেতে হবে, কোন সময় যেতে হবে, কোন প্রত্ননিদর্শনের প্রবেশ ফি কত, পর্যটকদের আবাস ব্যবস্থা, মিশরের হোটেল সমূহের খাবার মান, যানবাহন ব্যবস্থাপনা, আইন শৃংখ্যলা পরিস্থিতি, ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা পাওয়া যায়। আমরা জানি- গ্রীক পর্যটক মেগাস্থিনিস, চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং, ফাহিয়েন, মা- হুয়ান, মরক্কীয় পরিব্রাজক ইবনে বতুতা প্রমুখ পর্যটকগণ ইতিহাসরে নিদর্শন আবিস্কার করে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী জগদ্বিখ্যাত হতে পারবেন না হয়ত; কিন্তু একজন পর্যটক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য বলে আমি মনে করি। মিশরের ভ্রমণ কাহিনী বইটি অতি সহজ সাবলিল ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন বিধায় যে কেউ এর বিষয়বস্ত্ত বুঝতে কোন সমস্যা হবে না। সিলেটের কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসে রচিত ‘‘সিলেটে আমার বারো বছর’’ বইটি দীর্ঘদিন পরেও পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে; আমাদের সিলেটের কৃতিসমত্মান মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর ‘‘মিশরের পথে পথে’’ বইটিও একদিন রবার্ট লিন্ডসের ‘‘সিলেটে আমার বারো বছর’’ বইটির মতো পাঠদের বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। ইতিহাস সচেতন এই পর্যটক বিশ্বের গুরম্নত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন পর্যবেÿণ করে ইবনে বতুতা কিংবা হিউয়েন সাংদের সাথে তালিকায় না গেলেও ভ্রমন বিবরনী লেখার দিক থেকে তিনি রবার্ট লিন্ডসের কাতারে একদিন আসবেন আমার বিশ্বাষ। মিশর ভ্রমণ করে মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী শুধু নিজেই উপভোগ করেননি; বরং তাঁর ভ্রমণ বিবরনী গ্রন্থগত করে সাধারন মানুষকে মিশর ভ্রমনের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর লেখা এমনভাবে অলংকরন করেছেন যা পড়লে মিশর ভ্রমন না করেও মিশর সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে কোন ত্রম্নটি থাকবে না। মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী তাঁর জীবনে সাত দিনের মিশর ভ্রমনে যে ঐতিহাসিক প্রত্ননিদর্শন দেখেছেন সেগুলো হচ্ছে- প্রাচীন মিশরের তৃতীয় রাজ বংশের ফেরা রাজা জোসেফের শাসনামলের নিদর্শন, প্রাচীন মিশরের চতুর্থ রাজবংশের ফেরা রাজা মেনকাউয়ারা নির্মিত পিরামিড, ফেরা রাজা খাফরে নির্মিত পিরামিড, ফেরা রাজা খুফু কর্তৃক নির্মিত মহা পিরামিড, পৃথিবীর বৃহত্তম ও প্রাচীন মুর্তি স্ফিংস, মিশরের মামলুক সুলতান খানসুর আল গহরী কর্তৃক নির্মিত আল গহরী মসজিদ, শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ আল হোসাইন, ৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত মিশর শাসনামলের আজহবর মসজিদ, কায়রো জাদুঘর, কায়রো জাদঘুরে রÿÿত প্রাচীন মিশরীয়দের বায়ুর দেবতা ‘‘আমুন’’ মুর্তি, জগতের দেবতা ‘‘আনুবিস’’ মুর্তি, সূর্যদেবতা ‘‘রা’’ বা ‘‘হোরাম’’ মুর্তি, প্রাচীন দেবতা সেট এর স্ত্রী ‘‘নেপথিস’’ এর মুর্তি, দেবী ‘‘নেপথিস’’ এর মুর্তি, মিশরের লুক্স শহরে অবস্থিত মিশরীয় ফেরাউন রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে কম-বয়সী রাজা তুতেনখামেনের জাদুঘর; যেখানে তুতেনখামেন জীবিতকালীন সময়ে ব্যবহৃত সর্বমোট ৫৩৯৮টি জিনিস সংরÿÿত আছেন, রাজার সমাধি, রাজা তুতেনখামেনের ধনসম্পদ যেমন- আসবাবপত্র, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের সিংহাসন, স্বর্ণের পালংক, মৃত্যুর পর রাজার মরদেহ গোসল কারানোর পালংক, মরদেহের কফিন, মমির মাথার মুকুট ইত্যাদি । আরো দেখেছেন- প্রায় এক লÿ বিশ হাজার আইটেম সংরÿন করা কায়রো জাদুঘর; যেখানে সংরÿÿত ৪০০০/৫০০০ বছর আগের প্রাচীন মিশরীয় রাজকুমারী/রাজরানীদের স্বর্ণের অলংকার, ৩৮০০ বছরের পুরনো নৌকা, পাথরের তৈরী প্রাচীন রাজবাড়ির গেইট, পাথরের তৈরী রাজ রানীদের মুর্ত্তি। দেখেছেন রামাসিস দ্বিতীয় বা ফেরাউনের মমি। এছারাও আলেকজান্দ্রিয়ায় সংরÿÿত শিরের সুলতান আল আশরাফে আল দ্বীন খাতবী নির্মিত মনোরম ইমারত ছিটাডেল খাতেবী দূর্গ। মিশরের সুলতান কর্তৃক ১৭৭৫ সালে নির্মিত মসজিদ, ১.৫০ মিলিয়ন বই সংরÿÿত আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরী,। সাক্কারা পিরামিড ‘‘খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৩০-২৬১১ অব্দে’’ নির্মিত, প্রাচীন মিশরে ৫/৭ হাজার বছরের পুরনো দালানের খুটি, ফেরা রাজার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পিলার, এপিসের সমাধি, গিজার বিখ্যাত পিরামিড, গিজার তৃতীয় বৃহত্তর পিরামিড। ১১৭৬-১১৮৩ সালে মিশরের শাসনকর্তা সুলতান সালাদ্বীন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সালাদ্বীন ছিটাডেল দূর্গ, আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী পাশা কর্তৃক নির্মিত মোহাম্মদ আলী মসজিদ, মিশরের শাসনকর্তা কর্তৃক ১৩১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজকীয় আল নাসের মোহাম্মদ মসজিদ। ১৫২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সুলেমান পাশা মসজিদ, আল গওহরি ভবন বা জাদুঘর, খোলা বাগান জাদুঘর, রিয়েল কারেজ জাদুঘর, ইউসুফ নদী, নীল নদ, মিশরে অবস্থিত কারম্ননের নগরী, ১৩২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত খান আল খালেলী বাজার ইত্যাদ। মাত্র সাত দিনে মোহাম্মদ আলিয়াস আলীর এই বিশাল সফর যে কাউকে ভাবিয়ে তুলবে। শারিরীক পরিশ্রম অর্থ ব্যয় সময়ের অপচয় কোন কিছু না ভেবে বিশ্বের বিখ্যাত প্রত্ননিদর্শন পর্যবেÿণ করে প্রমান করলেন তিনি একজন ইতিহাস সচেতন মানুষ। তিনি মিশর ভ্রমন করে কি যে এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এই বইটি না পড়লে তা অজানাই থেকে যেতো। ‘‘মিশরের পথে পথে’’ ভ্রমণ বিবরনী বইটি পড়লে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা সম্পর্কে এক অসাধারন অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। পর্যটক বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন দেখার বর্ণনা ও অভিজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে সংÿÿপ্ত আলোচনা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, প্রত্ননিদর্শনের পিছনে লুকিয়ে থাকা লোককথা, বিভিন্ন সময়ের রাজাদের নাম, রাজত্বকাল, রাজার জন্ম পরিচয়, প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কারকের নাম ও পরিচয়, প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কারের সংÿÿপ্ত কাহিনী, প্রত্ন নিদর্শনের বর্তমান অবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রাচীন ইতিহাসের সংÿÿপ্ত বর্ণনা ইত্যাদি অত্যামত্ম গুরম্নত্বদিয়ে লিখেছেন। মিশর ভ্রমণের কাহিনী নিপুন ভাবে লিখতে গিয়ে বর্ণনা দিয়েছেন - পিরামিড কী, পিরামিড কিভাবে তৈরী হয়, পিরামিড তৈরীর পাথরের উৎস, পিরামিডের আকৃতি গঠন প্রণালী, পৃথিবীর বৃহত্তম ও প্রাচীন মুর্তি ষ্পিংস মুর্ত্তির গঠন প্রণালি আয়তন সংÿÿপ্ত বর্ণনা স্ফিংসের মুর্তি সম্পর্কে মিশরে প্রচলিত লোককাহিনী। প্রাচীন কালে মিশর শাসন করতেন কারা, তাঁদের উপাধি কী ছিল। মিশরের চিত্রলিপি হায়ারোগিস্নফিক ও ভাষা সম্পর্কে আলোচনা, হায়ারোগিস্নফিক শব্দের অর্থ, লিপির জন্মস্থান, চিত্রলিপি আবিষ্কারকের নাম, হায়ারোগিস্নফিক লিপির বিবর্তিত নাম সময়কাল বিলুপ্তির সময়। যুগপরস্পরায় মিশরে আরবি ভাষা ও বর্ণমালা প্রতিষ্ঠার সংÿÿপ্ত বর্ণনা। মিশর ফরাসিদের শাসনাধীন হওয়ার সংÿÿপ্ত বর্ণনা, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন মিশরীয় লিপি পুনঃআবিষ্কারের সংÿÿপ্ত ইতিহাস, রেনেসা পাথর বৃটিশ মিউজিয়ামে যাওয়ার কাহিনী, প্রাচীন কালের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এবং বিশ্ববিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার সম্পার্কে বিশেষ আলোচনা করে বইটিকে গুরম্নত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। সেই ফাঁকে মিশরীয়দের বিয়ের বর্তমান আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে সাম্যক ধারনা দিয়ে গেছেন। তাঁর এই সুনিপুণ বর্ণনা ‘‘মিশরের পথে পথে’’ বইটি পাঠে সাধারন পাঠকদের পাশাপাশি শিÿার্থীরাও উপকৃত হবেন। মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর মিশর ভ্রমনের সময় গুরম্নত্বপূর্ণ কিছু বই সংগ্রহ করেছেন। তাঁর এই সংগ্রহকে দূর্লভ বলেই স্বীকার করতে হয়। কারন ইচ্ছে করলেই এই বইগুলো সংগ্রহ করা আমাদের পÿÿ সম্ভব নয়। তিনি মিশরের প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে বেশ কিছু আলোকচিত্র সংগ্রহ করেছেন। সংগৃহীত আলোকচিত্র থেকে- ২৪টি গুরম্নত্বপূর্ণ ছবি বইয়ের পাতায় সংযোজন করেছেন। এতে বইটি আকর্ষণীয় হয়েছে, মূল্যায়নও বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘‘মিশরে পথে পথে’’ বইটিতে যে ছবি ছাপা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- পৃথিবীর প্রথম পিরামিড সাক্কারা-জোসেসের পিরামিডের ছবি, গিজার পিরামিডের ছবি, স্ফিংস মুর্তির ছবি, আল গহরী মসজিদ, তুতেনখামেনের স্বর্ণের মুকুট ও কফিনের ছবি, রামেসিস দ্বিতীয় বা ফেরাউনের মমির ছবি, সেরা রাজা খুফুর মুর্তির ছবি, ছিটাডেল খাতেবী দূর্গের ছবি, মোহাম্মদ আলী মসজিদের ভিতরের কারম্নকার্যের ছবি, কারম্ননের বাড়ি, ফাইয়ুম পানির চাকার ছবি ইত্যাদি। মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী মিশর ভ্রমণ কালে যারা তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন তাঁদের নাম উলেস্নখ করেছন- আজাদ মিয়া এবং বশির ভাই। কিন্তু এই আজাদ মিয়া এবং বশির ভাই কে ? সেই পরিচয় বইটির কোথাও উলেস্নখ করেছেন বলে চোখে পড়েনি। বিধায় তাঁদের পরিচয় সাধারন পাঠকের অজানাই থেকে গেলো। মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী মিশর ভ্রমণ করতে গিয়ে তেমন কোন বিপাকে পরতে হয়নি; কায়রো এয়ারপোর্টে অবতরন করেই যে গাড়ি ভারা করেছিলেন সেই গাড়ির চালক ছিল ‘‘মাঝদিক’’ নামে এক মিশরীয় লোক। মাঝদিক তাঁদের বিশ্বস্থতা অর্জন করতে স্বÿম হয়েছিল। বিধায় মিশর ভ্রমণ সমাপ্ত হওয়ার আগ পর্যমত্ম এই ব্যক্তি পর্যটকদের সফর সঙ্গী ছিলেন। মাঝদিক তাঁর দায়িত্ব সততা ও বিশ্বসত্মতার সাথে পালন করেছিলেন বিধায় লেখক তাঁর লেখায় মাঝাদিকের নামটি বারবার উলেস্নখ করেছেন। যাইহোক- ইলিয়াস আলী সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও তাঁর লেখনির সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয়। ইতিহাস চর্চায় নিবেদিত প্রাণ মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী একাধারে গীতিকার, লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক। এ পর্যমত্ম তার ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হচ্ছে- দেওয়ান একলিমুর রাজা : জীবন ও কাব্য, বিশ্বনাথের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মনের আগুন কেউ না দেখে, ভাটির দেশে গানের রাজা, লোকসঙ্গীতের প্রবাদপুরম্নষ মুসত্মাফা জামান আববাসী, মিশরের পথে পথে। তাছাড়া তাঁর সম্পাদনায় মাসিক সিলেট দর্পন এবং বার্ষিক বীথিকা নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। উলেস্নখিত বইগুলোর মধ্যে ‘‘মিশরের পাথে পথে’’ বইটি এ পর্যটকের কষ্টার্জিত অভিজ্ঞতার প্রয়াস। আমি আশাকরি তাঁর এই প্রয়াসটির উপযূক্ত মূল্যায়ন করা হবে। পরিশেষে- বইটি যত্নসহকারী প্রকাশ করায় উৎস প্রকাশনের প্রকাশক জনাব মোসত্মফা সেলিমকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর ভ্রমন কাহিনীর বই, মিশরের পথে পথে পড়লাম। বইটি পড়ে ভালো লাগলো। সেই সাথে মনে হলো আমার ভালো লাগাটুকু অন্য সব ভ্রমন বিলাসীদের সাথে একটু শেয়ার করে নেই। বইটি পড়ে মিশরের অনেক অজানা কথা জানতে পারলাম বলেই, মনের তাগিদে দু-কথা লেখতে বাধ্য হলাম। দু রকমের ভ্রমন বিলাসী রয়েছেন, প্রথম দলে রয়েছেন তারা যারা বাস্তবেই নানাদেশ ঘুরে বেড়ান। আর আরেক দলে রয়েছেন সেইসব মানুষ যারা নানা কারনে বাস্তবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখার ফুরসত পাননা, তাই বই-পত্র পড়ে, ডকুমেন্টারী দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। এ বইটি এ উভয় দলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। মাত্র আশি পৃষ্ঠার এ বই পড়া শুরু করলে যে কোন পাঠকই একটানে শেষ করে নিতে পারবেন। ঝরঝরে ভাষায় লেখা, এ বই তথ্যবহুল কিন্তু তথ্য ভারাক্রান্ত নয় । সেইসাথে রয়েছে দর্শনীয় স্থান সমূহের পিছনের ইতিহাস, প্রয়োজনীয় ছবি। বর্ণনার সরস ভঙ্গি ও বইটিকে পাঠক প্রিয় হতে সাহায্য করবে। মিশরের পথে পথে লেখকের সাতদিন ব্যপী মিশর ভ্রমনের এক সুন্দর লেখ-চিত্র। প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন ...সপ্তম দিন এভাবে সাজানো হয়েছে এ বই। প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে-- ফেরাউনদের ইতিহাস, পিরামিডের ইতিহাস, কারুনের বাড়ি পরিদর্শনের কথা, কায়রো মিউজিয়াম,প্রাচীন মিশরের চিত্রলিপি সম্পর্কিত তথ্যাবলী এবং আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্যাবলী। ভ্রমণসঙ্গী বশীর ভাই কে নিয়ে নানা খুটিনাটি বর্ণনা বইটি সজীব করে রেখেছে আগাগড়া। লেখক কিভাবে উট চড়তে গিয়ে পড়ে যান উটের পিঠ থেকে, সঙ্গী বশীর ভাই অসুস্থ হয়ে কিভাবে যাত্রাবিরতী করলেন, উট রাখাল বালকদের অসুস্থ ব্যক্তির সেবার আপ্রাণ চেষ্টা ইত্যাদি বর্ণনা ই প্রমান করে লেখক কল্পনার রঙ লাগিয়ে তার ভ্রমনের যেখানে তিল দেখেছেন, সেখানে তাল বানিয়ে বই লেখেন নি। বাস্তব ও প্রামাণ্য হিসাবে ই এগিয়েছে তার কলম। চাঁদের ও কলঙ্ক থাকে, তেমনি বইটির ও কিছু দিক ভালো লাগেনি। অত্যন্ত জরুরী ছবি গুলির কয়েকটি খুবই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ভাষার গতি সমান তালে এগুতে পারেনি। উঠা-নামা করেছে। এ ছাড়া কিছু আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার (যেমন- লালটি রঙ, ডং করে বললেন) এড়াতে পারলে ভালো হতো। গীজার পিরামিড কে গীর্জার পিরামিড বলে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে, আসলে স্থানটির নাম গীজা, গীর্জা নয়। যাই হোক, মিশর ভ্রমনেচ্ছু যেকোন আগ্রহী পাঠকের জন্য এ বই অবশ্য পাঠ্য। বইটিতে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা আশি, মূল্য ১২৫ টাকা, প্রকাশক উৎস প্রকাশন,ঢাকা । সংগ্রহে রাখার মতো এ বই ভ্রমণ গাইড হিসাবে ও কাজে লাগবে। লেখকের সুস্বাস্থ্য ও বইএর বহুলপচার কামনা করি। ধন্যবাদ।।