User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Masud Rana

      04 Sep 2019 11:00 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বই।এত সুন্দর অনুবাদ করেছেন মূল ভাবটা ঠিক ছিল। যেই বয়সটা পড়ালেখার,খেলাধুলা করার,সেই বয়সেই যুদ্ধে যেতে হয় একদল যুবকের।সেখানে যুদ্ধের বিচিত্র অভিজ্ঞতা,নির্মমতা, সহমর্মিতা ফুটে উঠেছে।যুদ্ধ যে কতটা ভয়াবহ আর মনব মনে যে এর সুদূরপ্রসারী ছাপ ফেলে তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখক।পল বোমার কয়েকজন সহপাঠীর সাথে যুদ্ধে যায়,এক এক করে মারা যায় সব।শেষ পর্যন্ত সেও মারা যায়।যুদ্ধে বিচিত্র পেশার মানুষের সাথে পরিচয় হয়।কেউ পেশাদার না,কেউ কৃষক,কেউ তালার মিস্ত্রি,কেউ ছাত্র,সব শ্রেণী পেশার মানুষ।ফ্রন্টের অভিজ্ঞতা,ক্ষুধা, অবসরে তাস পেটানো,কিংবা অলস দুপুরের একটু ঘুম।যা দীর্ঘদিনের ফ্রন্টের ভয়ার্ত,জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার মত কঠিন বাস্তবতা ও রুক্ষ পরিবেশকেও ভুলিয়ে দেয় এক মুহূর্তে। এই উপন্যাস পড়লে ইতিহাসের পাতা থকে ঘুরে আসা যায়।যুদ্ধেরও যে একটা নীতি আছে তা বোঝা যায়।এক কথায় কিছু মানুষের খামখেয়ালিপনার জন্য লাখ লাখ মানুশের জীবনে যে বিপর্যয় ডেকে আনে সেই বার্তাই লেখক দিতে চেয়েছেন।

      By Rashel

      26 Jan 2017 01:03 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা। বই- অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েষ্ট্রান ফ্রন্ট। লেখক- এরিক মারিয়া রের্মাক। রুপান্তর- জাহিদ হাসান। ধরন- আত্মজীবনি, স্মৃতিকথন। পৃষ্ঠা- ২৪০। প্রকাশনী- সেবা। দিত্বীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা নিয়ে রচিত এই বই। লেখক এরিক মারিয়া রের্মাক নিজেও একজন সৈনিক ছিলেন দিত্বীয় বিশ্বযুদ্ধে। যুদ্ধ করেছেন জার্মানির হয়ে। দেখেছেন যুদ্ধের মর্মান্তিকতা। সেসব স্মৃতিময় ব্যাপারই তুলে এনেছেন এই বইতে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লেখকের বয়স ছিলো অল্প। পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ আসায় তাদেরকে বাধ্যতামূলক সৈনিক হিসেবে যোগদান করতে হয়। স্বল্প সময়ের কষ্টকর ট্রেনিং দিয়ে অপরিপক্ক অবস্থাতেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় যুদ্ধের ময়দানে। বদলে যায় তাদের জীবন। যুদ্ধে তার অনেক বন্ধু মারা যায়। কেউ পঙ্গু হয়। যে আগ্রহ ও বীরত্ব দেখানোর জন্য এই যুদ্ধে আসা হয়, মর্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন সহযোদ্ধাদের দেখে সে আগ্রহ ও বীরত্ব নিভে যায়। সাধারন জীবনে যেসব জিনিসকে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ তাই হয়ে ওঠে তখন তুচ্ছ। তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায় আরো একটা দিন কিভাবে বেচে থাকা যায়। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর মরে প্রজারা। অনেকটা এমন অবস্থাই তুলে ধরেছেন লেখক এরিক মারিয়া রের্মাক। পুরো বইতে ফুটে উঠেছে তার অসাধারন পর্যবেক্ষন শক্তির পরিচয়। যুদ্ধশেষে পরবর্তীকালে তিনি আমেরিকায় স্থায়ী হন এবং সেখানেই তিনি এই বই লেখেন। তার আরো একটি বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে আছে নিঃসঙ্গতার একশো বছর। পুরো বইতে পরোক্ষভাবে লেখকের হাহাকার ফুটে উঠেছে। যুদ্ধকালীন সময়ে যে অবস্থা তিনি ও তার সহকর্মীরা পার করেছেন তা মানুষের জীবন বলাই যায় না। কতো কঠোর অবস্থায় থাকতে হয়েছে তাদের দিনের পর দিন। খাবারের ঠিক নেই, ঘুমানোর ঠিক নেই এমনকি চিকিৎসারও ঠিক নেই। পাঠকের মনে গভীর একটা দাগ কেটে দিবে এই বই। বইটির অনুবাদ খুব ভালো হয়েছে। সেবার অনুবাদ বরাবরই সুন্দর হয়। বাংলা সাহিত্যের জগতে সেবার চেয়ে ভালো অনুবাদ আর বোধহয় কেউ করতে পারেনা। অত্যন্ত সহয প্রান্জল ভাষায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্থানসমূহের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পাঠক দ্রুতই বইতে হারিয়ে যাবে। সবাইকে বইটা পড়ার আহবান রইলো। রেটিং- ৪.৯৫/৫.০০

      By Jahan-E-Noor

      09 Apr 2013 05:36 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় মিছিলের সব হাত কন্ঠ পা এক নয়। সেখানে সংসারী থাকে,সংসার বিরাগী থাকে, কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার। এরিক মারিয়া রেমার্ক-এর ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ উপন্যাসটি পড়তে যেয়ে বার বার মনের মাঝে ঘুরে ফিরে এসেছে কবি হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাখানি। কবির চোখে যুদ্ধ যেন রোমাঞ্চের এক প্রতিশব্দ! যৌবনের মহত্তর উজ্জ্বল প্রদর্শণী। কিন্তু একজন সৈনিকের কাছে যুদ্ধ একটা খেলা। এ খেলায় হার মানে মৃত্যু। জীবনের সমস্ত অনুভূতিগুলো এখানে মৃত, একটাই শুধু চিন্তা বেঁচে থাকতে হবে, অন্যকে মারতে হবে। “কত দিন হলো আছি এখানে হিসেবও করতে পারি না। মাথার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে গেছে সব। কত দিন হবে? এক সপ্তাহ, এক মাস নাকি এক বছর? অথবা কয়েকটা দিন মাত্র! ঘন্টা মিনিট দিয়ে আমাদের দিন হয় না, আমাদের দিন হয় মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে, আহতদের মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে। ছুটছি, গুলি ছুঁড়ছি, গ্রেনেড ছুঁড়ছি, মারছি, মরছি, চলছে তো চলছেই। শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই, কিছু ভাবারও ক্ষমতা নেই, শুধু জানি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু অবাক হয়ে যাই, এর মধ্যে বেঁচে আছি কি করে! মৃত্যুকে আর কতবার ফাঁকি দিতে পারব?” পৃ : ১০৩ এরিক মারিয়া রেমার্ককে মাত্র আঠারো বছর বয়সে যোগ দিতে হয়েছিল জার্মান সেনাবাহিনীতে। জুন ১২, ১৯১৭ তে তাঁকে পাঠানো হয় ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে, দু’নম্বর কোম্পানিতে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। খুব কাছে থেকে দেখেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা, ধ্বংসযজ্ঞ। গোলার বিস্ফোরণে বাম পা, ডান হাত আর ঘাড়ে মারাত্নক জখম হলে, তাঁকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় জার্মানির এক সামরিক হাসপাতালে। যুদ্ধের বাকিটা সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। এই উপন্যাসটি পড়তে পড়তে তাই বার বার মনে হয়েছে এটা কোন বানানো কাহিনী নয়। খুব কাছে থেকে দেখা কতগুলো ঘটনার বর্ণনা। সেই ঘটনাগুলো লেখক বলিয়ে নিচ্ছেন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের দু’নম্বর কোম্পানির উনিশ বছর বয়সী পল বোমারকে দিয়ে। এই পল বোমার আর কেউ নন, লেখক নিজেই। পল বোমারের সাথে একই ক্লাসের আরো উনিশ জন নাম লিখিয়েছিল যুদ্ধে। তখন ওদের বয়স ষোল। যুদ্ধে যাবার টগবগে উত্তেজনা, মনের মধ্যে নানান রোমান্টিক স্বপ্ন, প্রাণ থাকতে এক ইঞ্চি পিছু না হটার প্রত্যয়, পিতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা, সব ফিকে হয়ে আসে দশ সপ্তাহের ট্রেনিংএ। দশ বছরের স্কুলের শিক্ষা আর আদর্শ, জীবনের সূক্ষ্ণ দিক, পবিত্রতা, মহত্ব একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে যায়। “মনের কোন দাম নেই, তার চেয়ে দামী হলো জুতোর ব্রাশ, বুদ্ধির কোন দরকার নেই, নিয়ম মানাটাই আসল, স্বাধীনতা নয়, ড্রিলটাই বেশি দরকারী।… ‘পিতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা’, ফুঃ, ওসব ফালতু কথা, আসল কথা হলো জুতোর পালিশ চকচকে আছে কি-না। আর যে ব্যবহার পেলাম আমরা, সবচেয়ে অবাধ্য ক্রীতদাসের সাথেও বোধহয় মানুষ অমন ব্যবহার করে না। তারপর আছে ড্রিল, অ্যাটেনশন, প্যারেড মার্চ, অস্ত্র প্রদর্শন, লেফট রাইট, রাইট টার্ন, লেফট টার্ন, ফরোয়ার্ড মার্চ, হল্ট, অ্যাবাউট টার্ন আরও কত যে হাবিজাবি। যেন সার্কাসের ঘোড়া আমরা, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম এর সাথে। সেই সাথে বুঝলাম এত কিছুর মধ্যে খুব সামান্য অংশই দরকারী, বাকি সব ভড়ং। একজন সত্যিকারের সৈনিক খুব ভাল করেই বোঝে কোনটা দরকারী আর কোনটা নয়।” পৃ : ২২ ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের দুই নম্বর কোম্পানিতে ওরা এক সাথে এসেছিল ছয় জন; পল বোমার, জোসেফ বেন, ফ্রাঞ্জ কেমারিখ, অ্যালবার্ট ক্রপ, মুলার আর লিয়ার। ওদের মধ্যে জোসেফ বেন ছিল একটু ঘরকুনো স্বভাবের, ও প্রথমে নাম লেখাতে চায় নি। অথচ সবার আগেই মারা যেতে হল ওকে। শেষ পর্যন্ত রাজি না হয়ে উপায়ই বা কি ছিল ওদের, তখন সময়টা এমন ছিল যে ও রাজি না হলে ওর বাড়ির লোকেরাই ওকে বলত ‘কাপুরুষ, ভিতুর ডিম, পড়াশুনা বাদ দিয়ে বরং কাপড়-চোপড় পরিষ্কার কর গিয়ে।’ পৃ : ১২ ওদের স্কুল মাস্টার ক্যান্টোরেক যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই প্রতিদিন ড্রিলের সময় বক্তৃতা দিয়ে ওদেরকে যুদ্ধে যেতে উদ্ধুদ্ধ করত। “গোল চশমার ভিতর দিয়ে কুতকুতে চোখে তাকিয়ে গলায় যতটা সম্ভব আবেগ এনে বলত, ‘তরুন বন্ধুরা আমার, পিতৃভূমির এই চরম সঙ্কটলগ্নে তোমরা কি তার আহ্বানে সাড়া দেবে না?’ ওর বক্তৃতা শুনতে শুনতে এমন বিরক্ত হয়ে গেলাম যে, ওর হাত থেকে বাঁচার জন্যই একদিন সবাই জেলা কমাণ্ড্যান্টের কাছে যুদ্ধে যাবার জন্য নাম লিখিয়ে ফেললাম। এখন বুঝি, এই লোকগুলো সব ধরনের কথাবার্তা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যখন যেটা দরকার সুড়ৎ করে টেনে বের করে।” পৃ : ১৩ ডেটারিং যুদ্ধে আসার আগে ছিল চাষী। যুদ্ধের এই বীভৎসতা, ধ্বংসযজ্ঞ ওর মনে এতটুকুও ঠাই নিতে পারে নি। সারাক্ষণ মিষ্টি বউ আর জমির চিন্তায় ওর দিন কেটে যায়। জাদেন ছিল তালার কারিগর, আর হাই ওয়েস্থাস গর্ত খুঁড়ে কাঠকয়লা তুলে বিক্রি করত। এই উপন্যাসে পল বোমারের পরে যে চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, সে কাটজিনস্কি। দুই নম্বর কোম্পানির সবার প্রিয় কাট। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, নীল চোখ, একটু কুঁজো হয়ে হাঁটে। সব কিছুতেই দারুণ চৌকস। নতুন নাম লেখানো কিশোর যোদ্ধাদের সাহস দেয়া, ফ্রন্টে কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে লড়তে হবে, সব কৌশল শেখানোর চেষ্টা করত নিজের গরজে। “ভাল খাবার কোথায় পাওয়া যাবে আর সবচেয়ে কম পরিশ্রমে কি করে কাজ হাসিল করা যাবে, সেসব ওর নখদর্পণে। তবে সবচেয়ে বড় গুণ যেটা ওর, সেটা হলো ফ্রন্টের অবস্থা কি করে যেন ও আগে থেকে টের পায়। ওর এই গুনের জন্য কতবার যে বিপদ থেকে বেঁচে গেছি তা বলার নয়।” পৃ : ৬ যুদ্ধ ক্রমশ সৈনিককে আত্নকেন্দ্রিক করে গড়ে তুলে। সব অনুভূতি শূন্য করে দিয়ে, শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবতে প্রেরণা যোগায়। টিকে থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। ফ্রন্টে যারা পাশে থাকে তাঁরাই হয়ে ওঠে আপন জন, প্রতিদিন পাশের কোন না কোন সৈনিক মারা যায়, আহত হয়, তবুও সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে চলেনা ওদের। দুই নম্বর ফ্রন্টের দেড়শ জনের জন্য বাবুর্চি রুটিন মাফিক রান্না করলে, বেঁচে থাকা আশি জন সৈনিক খুশি ওঠে দ্বিগুন খাবার, চুরুট, সিগারেট আর তামাক পাতা পাওয়া যাবে ভেবে। ফ্রাঞ্জ কেমারিখ ফ্রন্টে একটা পা হারিয়ে মৃতুর সাথে লড়ছে, ওর মুখে যন্ত্রণা আর হতাশার ছাপ। অথচ ওর কিশোর মন ফ্রন্টে হারানো দামি ঘড়িটার জন্য ব্যাকুল। “মুখটা কাঁদো কাঁদো করে যেন অভিযোগ জানাচ্ছে এমন করে বলল, ‘জানিস, আমার ঘড়িটা চুরু হয়ে গেছে। যখন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম, কোন শয়তান মেরে দিয়েছে ওটা’।” পৃ : ১৫ কেমারিখ ফ্রন্টে একবার এক মৃত পাইলটের কাছ থেকে একজোড়া চমৎকার বুট জোগাড় করেছিল। নরম হলদে চামড়া, হাঁটু পর্যন্ত লম্বা, ফিতেও বাধঁতে হয় হাঁটু পর্যন্ত। দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। এই যুদ্ধে ভালো এক জোড়া বুট কত প্রয়োজনীয় সে সৈনিক মাত্র জানেন। কাঁটাতারের বাঁধা ডেঙানো, দ্রুত ফ্রন্টে এগিয়ে যাওয়া, কাদামাটি গলে হামাগুড়ি দিয়ে নিঃশব্দে চলা, সব জায়গায় এক জোড়া ভাল বুট কত কাজের! তাই মৃত ইংরেজ পাইলটের কাছ থেকে বুটটা নিতে এক বারও ভাবতে হয়নি কেমারিখকে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে বাস্তবই একমাত্র সত্যি। ঠুনকো আবেগ নিয়ে যুদ্ধ চলে না। চারিদিকের এত অভাব, এত আকালে একজোড়া ভাল বুট, তার ওপর আবার ঠিক ঠিক মাপের, অত সহজে পাওয়া যায় না। “মুলার বুটজোড়ার দিকে তাকিয়ে একবার ঠোঁট চাটল, নিজের শতচ্ছিন্ন বুটের দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটা হিসেব কষে নিল, তারপর বলল, ‘তুই তোর বুট বাড়িতে নিয়ে যাবি, তাই না?’ কেমারিখ কিছু বলল না, সেই মুহূর্তে আমরা সবাই একই কথা ভাবছিলাম, ও-তো এখন বড়জোড় একটা বুট পরতে পারবে, আর ও মারা গেলে সাথে সাথে আর্দালিগুলো বুটজোড়া গায়েব করে দেবে। ‘তুই বরং ওগুলো আমাদের দিয়ে যাস, অ্যাঁ?’ কেমারিখ কিছু বলল না, মুলারের বুটের আশা তবুও যায় না, ‘ঠিক আছে এমনি না দিলে বদলাবদলি করে নিস, এখানে যারা থাকবে ওদের তো বেশি কাজে লাগবে। আবার তুই যখন ফিরে…,’ বলেই থেমে গেল ও”। পৃ : ১৭ “যুদ্ধে এসে আমাদের স্বাভাবিক মূল্যবোধগুলো কি আশ্চর্যজনকভাবেই না বদলে গেছে। এই যে মুলার কেমারিখের বুটজোড়ার জন্য হাপিত্যেশ করছে, দুশ্চিন্তায় আছে আমরা কেউ না থাকা অবস্থায় ও মারা গেলে বুটজোড়া হাতাছাড়া হয়ে যাবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একথা ভাবতেই পারত না। কিন্তু এখন ভাবছে বলেই যে ও খুব নিষ্ঠুর মোটেই তা নয়। দরকার পড়লে ও বরং খালি পায়ে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে, তবু যতক্ষণ কেমারিখের কাজে লাগবে ততক্ষণ ওর বুটের দিকে ফিরেও তাকাবে না।” পৃ : ২১ ওরা যেদিন বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিল, সেদিন সবারই আত্নীয়-স্বজন এসেছিল বিদায় জানাতে। কেমারিখের মা এসেছিল স্টেশনে, মোটাসোটা গোলগাল এক মহিলা। কাঁদতে কাঁদতে শাদা হয়ে গিয়েছিল গালদুটো। মায়ের কান্না দেখে কেমারিখ লজ্জায় লাল। বার দুয়েক মৃদু ধমকও দিয়েছিল ও। কিন্তু তাতে কি আর মায়ের কান্না থামে! “হঠাৎ ওর মায়ের চোখ পড়ল আমার ওপর। ভিড় ঠেলে আমার কাছে এসেই হাত চেপে ধরলেন, ‘বলো, বাবা, আমার কেমারিখকে দেখে রাখবে তুমি, বলো, কথা দাও।’ তাঁর শিশুর মত সরল মুখ দেখে বললাম, ‘আচ্ছা, রাখব।’ যুদ্ধে কে কাকে দেখে রাখে কিংবা দেখে রাখতে পারে!” পৃ : ১৬ “সেই কেমারিখ শুয়ে আছে এখানে, এই হাসপাতালে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। হাহাকার করে ওঠল বুকের মধ্যে, অসহায় ক্রোধে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে হলো। কেন, কিসের জন্য ওর এই অবস্থা? ইচ্ছে হল চিৎকার করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিই, ‘এখানে শুয়ে আছে ফ্রাঞ্জ কেমারিখ, জীবনের মাত্র সাড়ে উনিশটি বছর কাটিয়েছে ও। ও মরতে চায় না, ওকে মরতে দিও না কেউ’।” পৃ : ২৯ যুদ্ধে এত মৃত্যু, হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, রক্ত, বীভৎসতা! তবু কেন এ যুদ্ধ! এরিক মারিয়া রেমার্ক সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন এই উপন্যাসে। একে একে উঠে এসেছে যুদ্ধের সেই রুদ্র রূপখানি। এই উপন্যাসটি পড়তে পড়তে তাই আমরাও হয়ে উঠি যুদ্ধবিরোধী শক্তি। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শান্তিপ্রিয়, একের দুঃখে অপরে কাঁদে, সমব্যথী হয়, আনন্দে হেসে ওঠে, মেতে ওঠে উল্লাসে। তবু কেন এ যুদ্ধ! “‘কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বুঝি না,’ শুরু করল ক্রপ, ‘কাইজার যদি বলতেন “না”, তাহলে যুদ্ধ হত কিনা।’ ‘হতই,’ আমি বললাম, ‘সে তো যুদ্ধের বিপক্ষেই ছিল।’ ‘আচ্ছা, ধরো আরও বিশ অথবা তিরিশ জন যদি “না” বলত, তাহলে কি যুদ্ধ হত?’ ‘তাহলে বোধহয় হত না। কিন্তু আমি নিশ্চিত ওদের বেশির ভাগই “হ্যা” বলেছে।’ কাট শুরু করল, ‘আমার মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে, আমারা তো আমাদের পিতৃভূমি রক্ষা করতে যুদ্ধ করছি, ফরাসীরাও তাই, তাহলে কোনটা ঠিক?’ ‘সম্ভবত দুটোই,’ আমি বললাম। ‘বেশ,’ কথার খেই ধরে শুরু করল ক্রপ, সাথে সাথে বুঝলাম ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছি, ‘কিন্তু আমাদের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা, খবরের কাগজ, সবাই তো বলে যাচ্ছে, শুধু আমরাই ঠিক কাজ করছি। তাহলে কার কথা ঠিক?’ ‘জানি না,’ শুরুতেই আত্নসমর্পণ করলাম আমি, ‘কিন্তু যাই হোক না কেন যুদ্ধ হচ্ছে এটাই সত্য কথা। আর খেয়াল করছ, প্রত্যেক মাসে কত নতুন নতুন দেশ জড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধে?’ দূরে দেখা গেল জাদেনকে, দাঁত বের করে হাসতে হাসতে আসছে। কাটের কথা রেখেই এল কিনা কে জানে। এসেই শুরু করল তার প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, যুদ্ধ বাধে কি করে?’ ‘অধিকাংশ সময়ই যখন কোন দেশ অন্য দেশকে ভালমত অপমান করে, তখন,’ উত্তর দিল ক্রপ। জাদেনের চোখমুখ ঝুলে পড়ল। যেন উচ্চমার্গের কথাবার্তা, কিন্তু বুঝছে না এমন ভাব করে বল, ‘দেশ? আমার মাথায় তো ঠিক ঢুকল না। জার্মানির একটা পাহাড় কি করে ফ্রান্সের একটা পাহাড়কে অপমান করবে? কিংবা নদী, বনজঙ্গল, খেতখামার?’ ‘তোর মাথার মধ্যে ঝামা পাথর ঠাসা,’ খেপে উঠল ক্রপ, ‘পাহাড়, নদী এসবের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে যখন কোন মানুষ অন্য দেশের মানুষকে…।’ ‘মানুষ? তাই বলো,’ বাধা দিয়ে বলে উঠল জাদেন, ‘তাহলে যাই এখানে আমার কোন কাজ নাই। আমাকে তো কেউ অপমান করেনি।’ ‘তোর তো গণ্ডারের চামড়া, মান অপমান শব্দগুলো তোর জন্য না।’ ‘তাহলে বসে থেকে কি করব, বাড়িতে যাই।’ ওর কথা শুনে হেসে উঠল সবাই। ‘আসলে ও বুঝিয়েছে জনগণ, রাষ্ট্র এসব,’ ব্যাখ্যা করল মুলার। ‘রাষ্ট্র তাই না,’ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল জাদেন, ‘তার মানে পুলিস, ট্যাক্স এই তো? তাই যদি হয় তো আর কোন কথা নেই।’ ‘সাবাস, জাদেন,’ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল কাট, এতদিনে একটা কথার মত কথা বলেছিস। তোর মাথায় দেখছি বেরেন আছে। রাষ্ট্র আর পিতৃভূমির মধ্যে অনেক তফাৎ।’ ‘কিন্তু তাহলেও একটা ছাড়া আরেকটা থাকে না।’ ‘মানলাম, কিন্তু তার পরেও ভেবে দেখো আমাদের কথা। আমরা কারা? অধিকাংশই সাধারণ লোক, তাই তো? ফ্রান্সের কথা ভাব, ওরাও অধিকাংশই আমাদের মত সাধারণ লোক। তাহলে ঐসব সাধারণ লোকের কি দরকারটা পড়েছে আমাদের মত সাধারণ লোককে আক্রমণ করার? আসলে আমরা ওরা কিছু না, এটা যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের ব্যাপার। কই, যুদ্ধে আসার আগে তো কোনদিন কোন ফরাসীকে দেখিনি? ওরাও নিশ্চয়ই তাই।’ ‘কিন্তু তাহলে যুদ্ধটা হচ্ছে কেন?’ ‘কে জানে,’ কাঁধ ঝাঁকাল কাট, ‘অনেক লোক আছে, যুদ্ধ লাগলে যাদের হাসি কান পর্যন্ত পৌছয়, তাদের জন্য হয়তো।’ জাদেন বলল, ‘আমার তো পৌছয় না।’ ‘তোমারও পৌছয়, তবে খাবার দেখলে। তা যাক, সোজা কথা যুদ্ধ করে তোমার আমার কোন লাভ হচ্ছে না।’ ‘তাহলে কার লাভ হচ্ছে? আমার তো মনে হয় স্বয়ং কাইজারেরও না। তার তো সবই আছে। যা চায় তাই পায়, তাহলে?’ ‘আমার মনে হয় কাইজারের লাভ আছে, কারণ এটা ছাড়া কোন যুদ্ধই করতে হয়নি তাকে। যুদ্ধ না হলে সম্রাটেরা বিখ্যাত হবেন কি করে? ইতিহাস বইয়ে দেখোনি এসব?’ এতক্ষণে মুখ খুলল ডেটারিং, ‘জেনারেলদের বিখ্যাত হবার জন্যও যুদ্ধ দরকার।’ ‘এমনকি কোন কোন সময় সম্রাটের চেয়েও বেশি বিখ্যাত হয়ে যায় ওরা।’ ‘যুদ্ধ করে মরি আমরা, আর ফায়দা লোটে যতসব চাটার দল,’ রাগে গজগজ করতে বলল ডেটারিং। ক্রপ যেন একটা সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছে, এমন ভঙ্গিতে বলল, ‘আসলে এটা একটা অসুখের মত, কেউ আমরা চাই না, তারপর একদিন দেখা গেল ধরে ফেলেছে সবাইকে’।” পৃ : ১৬৭-১৭০ এক জন জার্মানকে এই যুদ্ধ অনায়াসেই এক জন ফরাসীর শত্রু বানিয়ে দিয়েছে। যে রাশিয়ান চাষীকে আগে হয়ত দেখেনি আরেক জন ইংরেজ খামারী, অথচ আজ তাঁরা বন্ধুর মত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে তাঁদের শত্রু জার্মান সৈন্যটার বিরুদ্ধে। আজকে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে সবাই আবার ঘরে ফিরবে, আবার সাজাবে ঘরকন্না। কেউ হয়ত কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো পিতা। সেদিন কোন ফরাসীর জার্মানের সাথে দেখা হলে, হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দেবে করমর্দন করার জন্য, কুশল বিনিময় হবে, একে অপরের সংসারের খোঁজ নিবে। কিন্তু এই যুদ্ধ এখানে সবাইকে পরিণত করেছে নিষ্ঠুর খুনীতে। বেঁচে থাকার জন্যই আরেক জনের দিকে গুলি চালাতে হয়, নির্লিপ্তভাবে আরেক জনের বুকে বসাতে হয় ছুরি, নতুবা নিজেকেই এর শিকার হতে হয়। যুদ্ধের মাঠে সবাই যন্ত্র-পুতুল, হৃদয়টাকে বন্ধকী রেখে যন্ত্র-পুতুলের মত কাজ ঠিক ঠিক করে যেতে হয়। “অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে। গর্তের ওপরে নড়াচড়ার আভাস পেয়েই আস্তে করে ঘাড় ফেরালাম। একজনকে দেখা গেল, পিছু হটছে। তার পেছন পেছন পুরো দলটা। মেশিনগানের আওয়াজের বিরাম নেই। আস্তে করে আবার যেই ঘুরতে যাব, ছোট্ট একটা মৃদু চিৎকারের সাথে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে হুড়মুড় করে কে যেন গড়িয়ে পড়ল আমার পাশে। মাথার মধ্যে বোমা ফাটল একটা। কিভাবে ছুরিসুদ্ধ হাত তুলেছি, কি করেছি কিচ্ছু মনে নেই। শুধু অনুভব করলাম, আমার হাতের নিচে কে যেন ছটফট করছে, মোচড় খাচ্ছে, তারপর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নিশ্চল হয়ে গেল। হুঁশ ফিরতেই দেখি ছুরি ধরা হাতে গরম আর আঠালো কি যেন লেগে চটচট করছে।…. ওর দিক থেকে একবারের জন্যেও চোখ সরাইনি আমি। হাতের মধ্যে ছুরিটা তখনও শক্ত করে ধরে রেখেছি। ও চিৎকার করতে চাইলেই ছুরি বসিয়ে দেব আবার।” পৃ : ১৭৯ “এই প্রথম সামনাসামনি মারলাম কাউকে। এমন ভাবে যে, শুধু ওকে মারাটাই আমার একমাত্র কাজ ছিল। কাট, ক্রপ, মুলার, ওদের জন্যে ব্যাপারটা পানির মত সোজা এখন। হাতাহাতি যুদ্ধে ওরা অনেক করেছে এসব। কিন্তু এখন প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন আমার বুকটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে ফরাসীটার কাছেই আছে আমাকে হত্যা করার অমোঘ অস্ত্র। সময় এবং আমার বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো, অদৃশ্য ছুরির মত আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে আমাকে। সব কিছুরই শেষ আছে। বেলা তিনটার সময় মারা গেল ও।” পৃ : ১৮৩ “আর পারছি না। অসহ্য এই নীরবতা। মাতালের মত টলতে টলতে ফরাসী সৈনিকটার লাশের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘কমরেড, আমি সত্যি সত্যি তোমাকে মারতে চাইনি। আবার যদি তুমি লাফিয়ে পড়ো, আর যদি তুমি আমাকে মারতে না চাও, আমিও তোমাকে কিছু বলব না। তুমি তো আগে আমার কাছে মানুষ ছিলে না, ছিলে একটা ভিন্ন মতাদর্শ। আমি তো তোমাকে ছুরি মারিনি, মেরেছি সেই মতাদর্শকে। কিন্তু এখন তো তুমি আমার মত মানুষ, কমরেড। আমি শুধু ভেবেছি তোমার অস্ত্রের কথা, তোমার জিঘাংসার কথা, কিন্তু এখন দেখছি, তুমিও মানুষ। তোমারও বউ, ছেলে-মেয়ে আছে, পরিবার আছে, ভালোবাসা আছে, মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো আছে। আমাকে ক্ষমা করো, কমরেড। কত দেরিতেই না সব কিছু বুঝি আমরা। তুমি কেন আমাকে বললে না, তুমিও আমার মত সাধারণ মানুষ, তোমার মা-ও আমার মায়ের মতই সন্তানের মঙ্গলের জন্যে সারাক্ষণ প্রার্থণা করে? কেন বললে না, আমাদের একই মৃত্যু-যন্ত্রণা, একই মৃত্যু ভয়! কেন, কেন? আমাকে ক্ষমা করে দাও, কমরেড। তুমি কেন আমার শত্রু হবে? এই রাইফেল, এই পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিলেই তো তুমি কাট, ক্রপ ওদেরই মত আমার ভাই, আমার বন্ধু। আমার জীবনের কুড়িটা বছর নিয়ে নাও, আচ্ছা, না হয় আরও বেশি নাও, তবু জেগে ওঠো। আমার জীবনের সামনের দিনগুলো আমার চেয়ে তোমার বেশি দরকার। তোমার যতটুকু খুশি নিয়ে নাও, তবু জেগে ওঠো। কথা বলো আমার সাথে।’” পৃ : ১৮৪-১৮৫ এই উপন্যাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়তে যেয়ে আমরা ব্যথিত হই, ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎসতা দেখে আতংকিত হয়ে উঠি আমরা। যুদ্ধের এই ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎসতা চিরন্তন। প্রতিটি যুদ্ধের সাথেই মিশে আছে হাজারে হাজারে নিরীহ মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণা, আহতদের যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ। বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে যুদ্ধ এখনও চলছে। যুদ্ধ চেপে বসে সাধারণ নাগরিকদের ওপরে। বদলে দেয় ওদের জীবনের গতিধারা নানানভাবে। আর লাভবান হয় ছোট একটা অংশ, যারা যুদ্ধকে তাঁদের ব্যবসায়ের অনুষঙ্গ মনে করে। যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারলেই, ফুলে ফেঁপে উঠে তাঁদের ব্যবসা। তেল সম্পদ দখল, অস্ত্র বিক্রি, চোরাই হিরের ব্যবসা, মাদক; সেই সময় আর এই সময়। ব্যবসায়ের রূপ পরিবর্তিত হয়েছে, সাম্রাজ্যবাদের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎসতা একই থেকে গেছে। রক্তের রঙ সেই আগের মতই লাল, সাধারণ নিরীহ নাগরিকের সেই একই লাল রক্ত, সেই একই রকম মৃত্য, রোগ-শোক। এই উপন্যাসে সে অর্থে কোন সরল রৈখিক কাহিনী নেই। পল বোমারকে দিয়ে লেখক যুদ্ধ ফ্রন্টের প্রতিটি দিন, মুহূর্তের দিনলিপি ফুটিয়ে তুলেছেন। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলমান যুদ্ধে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে, বাধ্য করা হচ্ছে যুদ্ধে যেতে। অথচ এই সময়টায় ওদের হাতে থাকার কথা ছিল নতুন মলাটের রঙিন বই, রঙিন স্বপ্ন, ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট-বল। যুদ্ধ এই শিশু-কিশোরদেরকে খুব অল্প বয়সেই জীবনের অমোঘ নিয়তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এরা যুদ্ধের কিছু জানে না, অল্প কদিনের ট্রেনিং শেষ করে এসে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে, কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে আর্তনাদ করছে। যারা বেঁচে থাকছে, দিন গুনছে সেই অমোঘ নিয়তির। এদের না আছে অতীত, না আছে ভবিষ্যৎ। “ভাবতে অবাক লাগে বাড়িতে থাকতে আমি বইপত্র পড়তাম। আমার টেবিলের ড্রয়ারে এখনও কবিতা আর নাটকের বই অর্ধেক পড়া অবস্থায় পড়ে আছে। মাঝে মাঝে ভাবি সেই জীবনের কথা কিন্তু কিছুতেই আমার সাথে মেলাতে পারি না। সবকিছু অবাস্তব মনে হয়। আসলে যেদিন থেকে যুদ্ধে এসেছি সেদিন থেকেই মুছে গেছে আমাদের অতীত। কি ছিল আমাদের? আমাদের বয়স ছিল মাত্র আঠারো কি উনিশ। জীবনের কি-ই বা দেখেছিলাম আমরা। এমনই বয়স তখন আমাদের যে এই বয়সে বাবা-মার টানও বেশি থাকে না। স্কুল, খেলাধুলা, স্ট্যাম্প জমানো, ছোটখাটো কোন শখ এইসব ছাড়া তো আর কিছু ভাবা হয়নি কখনও। অথচও বুড়োদের কি নেই! ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি আছে, বউ, ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী আছে, আশা আছে, ভালোবাসা আছে, অবশিষ্ট ভবিষ্যতের স্বপ্ন আছে। যুদ্ধ তাদের জন্যে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার মধ্যে খানিকটা ব্যতিক্রম। যুদ্ধ শেষ হলেই আবার তারা ফিরে যাবে আগের জীবনে। কিন্তু আমরা? আমরা যাবো কোথায়? জীবনের মাটিতে শেকড় নামাবার আগেই মুছে গেছে আমাদের অতীত জীবনের স্মৃতি। যুদ্ধ আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, মুছে ফেলেছে সব। আমরা এখন পতিত জমি ছাড়া কিছুই নই। জীবনের ফুল আর ফুটবে না কোনদিন। আমরা জানি না এর শেষ কোথায়, কোথায় ভেসে যাচ্ছি আমরা।” পৃ : ২০ এরিক মারিয়া রেমার্ক এই উপন্যাসে যুদ্ধ ফ্রন্টের ভয়াবহ পরিবেশের বর্ণনা এত সুনিপুণ বিষাদময়ভাবে দিয়েছেন, মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। তিনি যে কতটা শক্তিমান লেখক, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি শব্দের গাঁথুনিতে। “চাঁদের আলোর মত চুইয়ে এল ভোর। আলোর ঝলকানি আবছা হয়ে এল। গোলাবর্ষণ এমন অবিশ্রান্ত ভাবে চলছে যে মনে হলো অনন্ত কাল ধরে চলতেই থাকবে। হটাৎ আওয়াজটা যেন বদলে গেল খানিকটা, কান পাততেই বুঝলাম কামানের সাথে যোগ হয়েছে মাইন ফাটার শব্দ। সমস্ত পৃথিবীটা যেন প্রচণ্ডভাবে কেঁপে উঠল। টাল সামলানোর জন্য যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তাড়াতাড়ি বসে পড়ল। অসহ্য! সারা পৃথিবীটা বোধহয় গোরস্থান হয়ে গেছে!” পৃ : ৯১ “একদিন সকালে দেখি দুটো প্রজাপতি উড়ছে আমাদের ট্রেঞ্চের সামনে। কী সুন্দর দেখতে, বাদামী ডানার ওপরে লাল লাল ফুটকি। সবকিছু ভুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। মরতে এল নাকি ওরা এখানে! ধারেকাছে মাইলখানেকের মধ্যে তো কোন গাছই নেই, ফুল তো দূরের কথা। এঁকেবেঁকে উড়তে উড়তে একটা খুলির দাঁতের ওপর বসল একটা প্রজাপতি। আরেকটা উড়ে উড়ে ঘুরতে লাগল ওটার চারপাশে। খানিক পরে দুটোই চলে গেল নতুন কিছুর খোঁজে। যতক্ষণ দেখা যায়, তাকিয়ে থাকলাম ওদের দিকে। চোখের আড়াল হতেই ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস পড়ল একটা। ওরা যতক্ষণ ছিল বড় ভালো লাগছিল।” পৃ : ১১০-১১১ “উনিশশো আঠারোর গ্রীষ্মকাল। দিনগুলো যেন নীল সোনালী রংয়ের দেবদূত। কিন্তু আমাদের কাছে মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে সব। এত ভয়াবহ রক্তপাত আগে কখনও হয়নি। প্রত্যেকেই জানি, হেরে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু এ ব্যপারে কিছু বলি না কখনও। ক্রমাগত পিছু হটছি আমরা। পরিষ্কার বুঝতে পারছি, এই প্রচণ্ড আক্রমণকে আর প্রতিহত করতে পারব না। আমদের জনবল নেই, খাবার নেই। গোলাবারুদ নেই, তারপরেও ফ্রন্টে যাই, মারা যাই। এই গ্রীষ্মের আগে জীবনকে এতটা মায়াভরা মনে হয়নি কখনও। বুঝিনি কোনদিন, জীবনকে যে এতটা ভালোবাসি। ক্যাম্পের চারপাশে লাল লাল পপি ফুলে ছেয়ে গেছে, ঘাসের সবুজের ফাঁক দিয়ে উকি দেয় হালকা ঘাসফুল, ভোরের রহস্যময় আলোয় কালো গাছগুলো হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যেতে চায়। মনে পড়ে কুলকুল বয়ে যাওয়া নদী, ঝিকিমিকি তারার আলো। জীবন এত সুন্দর, এত ভালোলাগার?… বর্ষাকাল। আকাশের রং ইস্পাতের মত ধূসর। সারাক্ষণ কাঁদছে তো কাঁদছেই, অঝোর ধারায়। যেন সমস্ত দুঃখ গলে গলে পড়ছে, ঘোলাটে হয়ে জমা হচ্ছে গর্তে। তার মধ্যে ধূসর মৃত্যুর ছায়া।” পৃ : ২৩১-২৩৩ ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ উপন্যাসটিতে এরিক মারিয়া রেমার্ক যুদ্ধের কঠিন নির্মমতা আর লুকানো দিকগুলো এত হৃদয়গ্রাহী ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যিনি যুদ্ধের মাঝে শৌর্য-বীর্য খুঁজে পেতে চান, যুদ্ধ বা বিপ্লবকে জীবনের মহত্তর অর্জন মনে করেন, তার জন্য এই উপন্যাসটা একটা ধাক্কা হিসেবে হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যাবে। সেও যুদ্ধবিরোধী হিসেবে আমাদের মিছিলে যোগ দিবে। পাঠকের এই মানস পরিবর্তনের দিক দিয়েও রেমার্ক পুরোপুরি সফল। তবে এরিক মারিয়া রেমার্ক পুরোপুরি জার্মান জাত্যাভিমান ছাড়তে পারেননি, হয়ত তিনি সচেতনভাবেই এই কাজটা করেছেন দেশপ্রেম থেকে। তিনি যুদ্ধের ভয়ঙ্কর দিকগুলো সফলভাবে পাঠক মানসে মেলে ধরলেও, কোথাও স্বীকার করেননি এই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কুশীলব জার্মানরাই। বরং তিনি বলতে চেয়েছেন স্বয়ং কাইজার নাকি এই যুদ্ধটা চান নি, জার্মানদের ওপরে এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পৃ : ১৬৭ জার্মানরা কাপুরুষ নন, বরং গোলাবারুদ, রসদ আর সৈন্যের অভাবেই এই যুদ্ধে তাদের হারতে হয়েছে, এমনটাও বলার প্রয়াস পেয়েছেন রেমার্ক। “ওদের রসদ, গোলাবারুদ, সৈন্য, সবকিছু আমাদের চেয়ে অসম্ভব রকমের বেশি। একটা জার্মান প্লেন দেখলেই হলো; আর কথা নেই, কমপক্ষে পাঁচখানা ইংরেজ নয়তো আমেরিকান প্লেন ছুটে আসবে। যেন কুকুর নিয়ে খরগোস শিকার করতে এসেছে। অথবা একজন দুর্বল, শীর্ণ জার্মান সৈনিকের বিরুদ্ধে পাঁচজন তরতাজা সৈনিক গুলি ছুঁড়ছে। আমরা যখন কোনরকমে একটা রুটি পাই, ওদের কাছে তখন পঞ্চাশ টিন মাংস গড়াগড়ি খাচ্ছে। তবুও হার মানিনি আমরা, ওদের চেয়ে আমরা অনেক দক্ষ, অনেক অভিজ্ঞ সৈনিক। আমরা হারছি, কারণ ওদের শক্তি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।” পৃ : ২৩২ যুদ্ধ ফ্রন্টে ছুটি পেয়ে পল বোমার যখন বাড়ি ফিরলেন, ফিরলেন তার মায়ের কাছে, সুনিবিড় নির্মল আশ্রয়ে, আমরা পাঠকেরা রেমার্কের মোহনীয় জাদুকরী লেখায় আবেগে ভেসে গেলেও, তিনি মাকে দিয়েও পলরূপী অগণিত পাঠককে বলিয়েছেন, “ফ্রান্সের মেয়েদের ব্যাপারে সাবধান থাকিস। ওরা ভাল না।” পৃ : ১৫৩ পৃথিবীতে এমন জাদুকরী উপন্যাস খুবই কম আছে, যার শেষ পৃষ্ঠাটি পড়া হয়ে গেলে আবার প্রথম পৃষ্ঠায় ফিরে আসতে হয় এক দুর্ণিবার টানে। এ টান শুধু রেমার্কের লেখনীর মোহনীয় শক্তির জন্যেই নয়, পল বোমার, কাটজিনস্কি, ফ্রাঞ্জ কেমারিখ, মুলার, হাই, ডেটারিং প্রভৃতি না দেখা অকালে হারিয়ে যাওয়া নিরীহ সৈনিকদের জন্য একটা আবেগ থেকেও। আজও পৃথিবীর কত প্রান্তে যুদ্ধে হচ্ছে, আর প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে কারও ছেলে পল, ফ্রাঞ্জ কেমারিখ, কারও স্বামী ডেটারিং, কারও ভাই মুলার। “অসম্ভব শান্ত একটা দিন। ঝকঝকে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে শাদার ছোপ। বাতাস বইছে মৃদুমৃদু। ঘাসের ডগার শিশিরবিন্দু এখনও শুকোয়নি। লাল লাল ফুলগুলোর ওপর ছোটাছুটি করছে দুটো রঙিন প্রজাপতি। নির্মল বাতাস, বারুদের গন্ধ নেই, গোলার গর্জন নেই। চারদিকে এমন নিঃশব্দ যে একটা মাত্র লাইনে শেষ হয়েছে আর্মি রিপোর্ট : ‘পশ্চিম রণাঙ্গন সম্পূর্ণ শান্ত’ (All Quiet On The Western Front)। গাছটার নিচে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে পল, যেন ঘুমিয়ে আছে। ওকে যখন ওলটানো হলো, দেখা গেল মুখে তখনও হাসি লেগে আছে একটুকরো। যেন কোন কষ্টই পায়নি ও। যেন জেনেই গেছে, সব শেষ হতে চলেছে। প্রজাপতি দুটো উড়েই চলেছে ফুলে ফুলে।” পৃ : ২৩৯-৪০ ২৪০ পৃষ্ঠার ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন জাহিদ হাসান। তিনি এত সুনিপুণ ভাবে উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন, পড়তে যেয়ে কখনই মনে হয়নি এটি কোন অনুবাদ গ্রন্থ। মনে হয়েছে, অনুবাদ করতে যেয়ে তিনি এটি আবার নতুন করে লিখেছেন। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা এই উপন্যাসটি অনুবাদ করা যে মোটেই সহজসাধ্য নয়, এটি তিনি তাঁর অনবদ্য অনুবাদের মাধ্যমে পাঠককে বুঝতে দেননি। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ নিয়ে নতুন কিছু না বললেও চলে, তবে নিঃসন্দেহে এই বইটি সেবার অন্যতম সেরা প্রকাশনা।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!