User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Excellent Sylhet579
Was this review helpful to you?
or
কথায় বলে, এক দেশের বুলি অন্য দেশের গালি। বাক্যটা এভাবেও বলা যায়, এক অঞ্চলের গালি অন্য অঞ্চলের বুলি! কারণ দেশ তো অনেক বড় ব্যাপার। আরো ছোট পরিসরেই তা যখন পাওয়া যাচ্ছে! একটু ভাবলেই এ বাক্যের সত্যতা মিলবে। বাংলাদেশ হাতের তালুর মতোই ছোট্ট একটি দেশ। ছোট্ট এদেশে রয়েছে বেশকিছু অঞ্চল; অঞ্চলভেদে ভাষা, সংস্কৃতিও আলাদা। এক অঞ্চলের ভাষার সাথে আরেক অঞ্চলের ভাষা খুব একটা মেলে না। কিছু অঞ্চলের ভাষা তো ‘দুর্বোধ্য’। এক্ষেত্রে সিলেট ও চট্টগ্রামের কথা সবার আগে বলতে হয়। তবে সহজবোধ্য আঞ্চলিক ভাষার সংখ্যাই বেশি। অন্য জেলার মানুষের কাছে সিলেট অঞ্চলের ভাষা দুর্বোধ্য বটে। তবে দুর্বোধ্য হলেও শ্র“তিমধুর। এ ভাষার অন্দরে প্রবেশ না করলে মজাটুকু বোঝা যায় না। আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আমাদের দেশে খুব গুরুত্বের সাথে কাজ খুব একটা হয় না। এ নিয়েও যে অনেক গবেষণাকর্ম করা যায় এ উপলব্ধি আমাদের হয়নি। তাই আঞ্চলিক ভাষার ওপর লিখিত বই-ও খুব একটা চোখে পড়ে না। এ শূন্যতার মাঝে আহমেদ আমিন চৌধুরীর সংকলিত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। সিলেটের সুপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর প্রভাব পড়েছে ভাষা এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতিতেও। সময়ের পরিক্রমায় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ এক আভিজাত্য ধারণ করেছে- এটা বোদ্ধাজন স্বীকার করবেন। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে প্রকাশিত বইটির সংকলক, গ্রন্থক ও সম্পাদক হিসেবে আহমেদ আমিন চৌধুরী তাই সুধীজনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসাধন্য হবেন- তা বলার অপো রাখে না। বইটির ভূমিকা লিখেছেন প্রফেসর মনসুর মুসা। এ ভূমিকা পাঠে জানা যায়, আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আহমেদ আমিন চৌধুরীর এটাই প্রথম কাজ নয়, আরেকটি কাজও রয়েছে। তাঁর জন্ম-জেলা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা নিয়েও অনুরূপ একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যা তাঁর আঞ্চলিক ভাষাপ্রেমকে প্রতিষ্ঠিত এবং চিহ্নিত করে। গ্রন্থকার চট্টগ্রামের অধিবাসী; কর্মসূত্রে অবস্থান করেছিলেন সিলেটে। সিলেটের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা তাঁকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে যে তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান রচনায় আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হয়েছেন, কর্মটির সফল সমাপ্তিও ঘটিয়েছেন- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। প্রতিটি ভাষাই দেশের সম্পদস্বরূপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক বিজ্ঞজনও আঞ্চলিক ভাষাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন। অনেকে আঞ্চলিক ভাষাভাষীদের গেঁয়ো বলেও উপহাস করেন। অথচ প্রতিটি ভাষাই সমমূল্যের- প্রমিত বা আঞ্চলিক যা-ই হোক না কেন। একটি ভাষা একটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে, ঐতিহ্য সংরণ করে। প্রমিত বাংলা যেমন বাংলা ভাষাভাষীদের গর্বের ধন, তেমনি আঞ্চলিক ভাষাও। কারণ ভাব প্রকাশের বাহন হিসেবে মাতৃভাষা অদ্বিতীয়। এেেত্র আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি। যে ভাষায় (আঞ্চলিক) সর্বাধিক সংখ্যক লোক কথা বলে সে ভাষাকে খারিজ বা অবজ্ঞা করা অযৌক্তিকই বটে। তাছাড়া আঞ্চলিক ভাষায় যত সহজে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, প্রমিত বাংলায় সে ভাব প্রকাশ সহজতর নয়। আঞ্চলিক ভাষার ঊর্ধ্বে উঠে সব মানুষ প্রমিত বাংলায় কথা বলবে- এমনটিও সহসা হওয়ার নয়। তা বোধহয় সম্ভবও না। প্রতিটি অঞ্চলেই রয়েছে বেশ কিছু লোকগীতি। এই লোকগীতির স্বাদ শহুরে গানে কখনোই মিলবে না। একেবারে আলাদা দুটি ধারা। কথা হচ্ছে, আঞ্চলিক ভাষা আছে বলেই রচিত হয়েছে এসব লোকগীতি। ছোট্ট এ উদারহণ থেকেই আমরা আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব এবং উপযোগিতার কথা অনুভব করতে পারি। শব্দ, সে যে ভাষা বা অঞ্চলেরই হোক, শব্দের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত। শব্দ ভাষার বা ভাবের যে সেতুবন্ধন রচনা করে তার তুল্য আর কিছুই নয়। প্রতিটি শব্দই শক্তিশালী এবং অনন্য। অপরিহার্য তো বটেই। সেটা আঞ্চলিক ভাষার শব্দ হোক বা প্রমিত স্বদেশি বা বিদেশি। এ গ্রন্থে গ্রন্থকার মূলত শব্দ নিয়েই কাজ করেছেন। ভাষার একক তো শব্দই। তাই ভাষার অভিধান রচনা করতে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়েছে শব্দের। বাংলা বর্ণমালার ক্রমিক অনুসারে অর্থাৎ অ থেকে হ পর্যন্ত তিনি সিলেটের আঞ্চলিক শব্দ এবং প্রমিত বাংলা শব্দ লিপিব্ধ করেছেন। পাশাপাশি দুটি শব্দ বসানোর ফলে পাঠক খুব সহজে বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। তবে লেখক শুধু শব্দকোষেই থেমে থাকেননি; ুদ্র পরিসরে হলেও তুলে ধরেছেন দেশের অন্যতম (প্রধান বললেও খুব একটা ভুল হবে না) সমৃদ্ধ জনপদ সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি। পরিশিষ্ট ০৩ অংশে আমরা পাই রাধারমণ দত্ত, সৈয়দা হাবিবুন্নেছা, সহিফা বানু, হাসন রাজা, সৈয়দ আনোয়ার আলী লিখিত আঞ্চলিক গান। রয়েছে বেশ কিছু লোকগীতিও। একটি অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সিলেটি কৌতুক। এ কৌতুক হাস্যরসের খোরাক জোগানোর পাশাপাশি সিলেটের কথনশৈলী, বাক্য, বাক্যে শব্দের ব্যবহার সম্পর্কেও বাস্তব ধারণা দেবে। গ্রন্থটির বড় একটি বৈশিষ্ট্য, নাগরী ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষ আলোকপাত। নাগরী সিলেটের অঞ্চলের বিলুপ্ত একটি লিপি। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে লিপিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ লিপিতে সিলেট এবং আরো বেশকিছু অঞ্চলের আদিবাসীরা সাহিত্যচর্চা এবং পড়ালেখা করতো। নাগরী কোনো ভাষা নয়, লিপিমাত্র। বাংলা ভাষাকেই নাগরী হরফে লেখা হতো। এ ভাষায় রচিত হয়েছে অসংখ্য পুঁথি। যা সাহিত্যের অসামান্য এক সম্পদ। শুধু অসামান্য সাহিত্যমূল্যের জন্যই নয়, এ পুঁথিগুলোর ধ্বনিমাধুর্যও অসাধারণ। বর্তমানে সে পুঁথিগুলো উদ্ধার করে, তা সংরণকল্পে বই আকারে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন কিছু উদ্যমী মানুষ ও শেকড়সন্ধানী প্রকাশনা সংস্থা উৎস। ইতোমধ্যে নাগরী সাহিত্যের ১০টি পুঁথি প্রকাশ করেছে। আরো ৪০টি পুঁথি প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও সিলেট বিষয়ক শতাধিক বই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’র প্রকাশিত হয়েছে। এ বইতে স্থান পেয়েছে বাংলা ভাষায় অনুবাদকৃত নাগরী পুঁথি। নাগরী বর্ণমালাও রয়েছে। নাগরী হরফের সাথে মিলিয়ে তখনকার প্রকাশিত কিছু লেখায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষাও স্থান পেয়েছে। যা পাঠকরা দেখছেন স্ক্যান করা; অবিকৃতভাবে। নাগরী লিপি শিখতে ইচ্ছুকদের এটা কাজে লাগবে। সব মিলিয়ে বইটি চমৎকার। শুধু সিলেটি ভাষা শিখতেই নয়, সিলেটকে জানতে-বুঝতে, এর সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে এ বই। সিলেটি তো বটেই, অন্য অঞ্চলের পাঠকদের পাঠ্য তালিকায় বইটি ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করাই যায়। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সংকলন, গ্রন্থনা, সম্পাদনা : আহমেদ আমিন চৌধুরী প্রকাশক : উৎস প্রকাশন প্রচ্ছদ : সমর মজুমদার প্রকাশকাল : নভেম্বর ২০০৯ পৃষ্ঠা : ১২০, দাম : ১৫০ টাকা