User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
"স্বামী বিক্রি করছে স্ত্রীকে, মা বেঁচে দিচ্ছে মেয়েকে, ভাই বিক্রি করে দিচ্ছে বোনকে। অথচ যখন তাদের অবস্থা ভালো ছিল, তখন এসব পতিতালয়ের দালালরা এ ধরণের কোনো ইঙ্গিত করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলত। কিন্তু আজ তারা ঘরের মেয়েদের শুধু বেঁচেই দিচ্ছে না, বিক্রির জন্য খরিদ্দারকে রীতিমতো তোষামোদ করছে। ধর্ম, আদর্শ, মায়া-মমতা, নীতি, জীবন-মানবতার সব আদর্শ-সবকিছু আজ ধুলোয় লুণ্ঠিত। জীবন তার জৈবিক নগ্নরূপে মূর্ত, ক্ষুধার্ত, নিষ্ঠুর আর ভয়ংকর হিংস্র পশুর মতো দাঁড়িয়ে আছে।" ৬৮ পৃষ্ঠার বইটা পড়ে থম মেরে বসেছিলাম কিচ্ছুক্ষণ। কিছু একটা গলার কাছটাতে এসে আঁটকে ছিল। শ্বাস নেয়ার জন্য খাবি খাচ্ছিলাম। আবার দমটাও ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কেমন যেন এক অস্বস্তিকর যন্ত্রণা দলা পাকিয়ে গলার কাছে আঁটকে ছিল। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল জয়নুল আবেদীনের আঁকা দূর্ভিক্ষের চিত্রকর্মগুলো। মনে হচ্ছিল যেন ভূত হয়ে তাড়া করছে সেসব অঙ্কিত ফিগার। যেন কানে কানে বলতে চাইছে, একমুঠো ভাত চাই। এর আগে কৃষণ চন্দরের ভগবানের সঙ্গে কিছুক্ষণ এবং আমি গাধা বলছি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। অন্নদাতা পড়ে মুগ্ধতার চাইতে বেশি ভয়ংকর বা বলা চলে বাস্তব জীবনে ভৌতিক এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। গা শিরশিরে একটা অনুভূতি হলো এই বই পড়ে। তেতাল্লিশের মন্বন্তর নিয়ে পাঠ্যবইতে পড়েছি কিন্তু ফিকশন এই প্রথম পড়লাম। এককনা চালের কাছে একজন মানুষের জীবনও তুচ্ছ। এই পৃথিবী টিকে আছে কেবল ঐ এককনা চালে। দূর্ভিক্ষের সেই ভয়াবহ বাস্তবতাকে কৃষণ চন্দর এমনভাবে সাজিয়েছেন যে প্রতিটা বাক্যই অন্তরের অন্তঃস্থলে গিয়ে আঘাত হানে। ক্রমাগত এই বাক্যের হাতুড়িময় আঘাত মাথার ভেতরটায় এক শূন্যতার অনুভূতির জন্ম দেয়। আতংক এসে চেপে ধরে। অস্বস্তি হয় পড়তে। আবার না পড়েও থাকা যায় না। আর কৃষণ চন্দরের চিরাচরিত লেখনশৈলীর মতোই এই গল্পেও লেখক হাস্যরস, কৌতুক আর ব্যঙ্গের আড়ালে অস্থিতিশীল এক সমাজের বাস্তব অথচ নির্মম চিত্র তুলে ধরেছেন। নাহ শুধুমাত্র একটি সমাজব্যবস্থার গল্পকেই প্রাধান্য দেননি লেখক। বরং বৈষয়িক রাজনীতিকে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই অস্থিতিশীল বিশ্বকে এনে দাঁড় করিয়েছেন কলকাতার চিরচেনা অলিগলিতে। অনুবাদক জাফর আলম মূল উর্দু থেকে এত সুন্দরভাবে বাংলায় এসব বর্ণনা অনুবাদ করেছেন যে বুঝার উপায় থাকে না, এ কি অনুবাদ পড়ছি নাকি মৌলিক রচনা! জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মগুলো দেখে মনটা বিষণ্ণতায় ছেয়ে যেত। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতো। কিন্তু কৃষণ চন্দরের এই বই সেইসব অনুভূতিকে একদম তুচ্ছ করে নিজের জায়গা করে নিল। এককনা চালের জন্য মানুষের হাহাকারের কাছে দুনিয়ার তাবৎ কিছুই নস্যিই। কিছু লিখতে পারবো কিনা ভেবেও কতকিছু লিখে ফেললাম। আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে কত না বলা আঁটকে আছে দলা পাকিয়ে গলার কাছটাতে। ঢেকও গেলা যাচ্ছে না আবার ভুলেও থাকা যাচ্ছে না। বইয়ের কিছু বিশেষ বাক্য যেগুলো হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে সেইসব তুলে দিয়ে শেষ করছি। "সম্পদ তো শুধু তার দেহ নয়, বাড়িঘর ধনদৌলত নয় - সম্পদ হলো তার আত্মা ও প্রাণ। বাকি যা-কিছু, অর্থাৎ দেহ, জমিজমা, ধন-সম্পদ ইত্যাদি মানুষ ব্যবহার করার পর সবকিছু পেছনে ফেলে রেখে যায়। কিন্তু তার মনে আঁকা থাকে কয়েকটি ছবি, কয়েকটি স্মৃতির টুকরো, প্রজ্বলিত আগুনের অঙ্গার, এক টুকরো মুচকি হাসি। এসব নিয়েই মানুষ বাঁচে। আর মরার সময় শুধু দেহই সঙ্গে নিয়ে যায়।" "আত্মা আর দেহ - দুয়ের মিলনেই জীবন। এ দুয়ের মিলনেই আছে আনন্দ, প্রেরণা, প্রাণ-সবকিছু। মাটি আর পানি মিলেমিশেই জন্ম দেয় চালের কণা; নর আর নারীর মিলনে জন্ম নেয় এক হাসিখুশি জীবন্ত শিশু। আত্মা আর দেহ যখন এক হয়, তখনই সৃষ্টি হয় জীবন।" "দেহ আর মনঃ - পার্থক্য এটুকু, দেহ যখন আত্মা থেকে পৃথক হয়, তহন দুর্গন্ধ বের হয়, আর আত্মা দেহ থেকে পৃথক হলে বের হয় ধোঁয়া।"
Was this review helpful to you?
or
কৃষণ চন্দরের "অন্নদাতা" বইটি ১৯৪৩ সালে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল তার এক জলজ্যান্ত দলিল এবং সেটা কতটা ভয়াবহ ছিল তা প্রকাশ করাতে লেখক শতভাগ সফলও হয়েছেন,বইটি থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।
Was this review helpful to you?
or
কৃত্রিমভাবে তৈরি করা এক দুর্ভিক্ষে মানুষের ভয়াবহ অবক্ষয়ের চিত্র এঁকেছেন কৃষণ চন্দর তাঁর এই বইয়ে৷ মানুষ জীবিকা ও খাবারে জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে যাত্রা করছে৷ খাবারের জন্য মানুষ যেকোন ঘৃণিত কাজ করেছে৷ একজন মা তার সন্তানকেও বিক্রি করতে একটুও ভাবে নি৷ যেখানে মাতৃত্বের মৃত্যু ঘটে সেখানে দৈহিক মৃত্যুকে লেখক তুচ্ছভাবেই দেখেছেন৷ পুরো বই জুড়ে দুর্ভিক্ষের এক নিদারুণ চিত্র তুলে ধরেছেন৷ বইটি পড়লেই যেন ৪৩-এর দুর্ভিক্ষ আমাদের সামনে ভেসে ওঠে৷
Was this review helpful to you?
or
কৃষণ চন্দর জীবদ্দশাতেই উর্দু সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ লেখক এবং কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ছোটগল্প লিখেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি, যেগুলো ২২ খণ্ডে প্রকাশিত, লিখেছেন আটটি উপন্যাস এবং নানা বিষয়ে ৩০টি গ্রন্থসহ তিনটি রিপোর্টাজ। উর্দু ছোটগল্পের আধুনিকায়নে তাঁর ভূমিকা অত্যধিক। আজীবন পুঁজিবাদবিরোধী এই লেখক শুধু লেখার মাধ্যমে তাঁর প্রতিবাদকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বিগত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় বিপ্লবী ভাগৎ সিংয়ের দলে যোগ দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে তাঁকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, অন্তরীণ থাকেন লাহোর দুর্গে। ট্রেড ইউনিয়ন এবং সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। একবার ঝাড়ুদার সংঘের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীন সমাজতন্ত্রী ভারত এবং ইংরেজমুক্ত দেশই ছিল তাঁর লক্ষ্য। নিপীড়িত সাধারণ মানুষের কথাই তাঁর গল্পে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। উদার দৃষ্টিভঙ্গি, মানবতাবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধিতা তাঁর ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই ছিল। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে অখণ্ড ভারতে লাখ লাখ লোক মারা যায় (বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৭০ লাখ)। এ সময়ে মানবতার অবমাননা এবং ক্ষমতাসীন ও ধনীদের ভূমিকা কৃষণ চন্দরকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। দুর্ভিক্ষের পরের বছর উর্দু ভাষায় প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাসিকা অন্নদাতা। পরবর্তী সময়ে ধ্রুপদি উর্দু সাহিত্যকর্মের মর্যাদা লাভ করে এটি। উপন্যাসের প্রথাগত কাঠামোতে একে ফেলা কঠিন। এর নির্মাণশৈলী সম্পূর্ণ আলাদা। তিন পর্বে বা অধ্যায়ে বিভক্ত এ উপন্যাসের প্রতিটি পর্বেরই আলাদা আলাদা প্রধান চরিত্র রয়েছে। তবু শেষ পর্যন্ত এর প্রধানতম চরিত্র হয়ে ওঠে ওই দুর্ভিক্ষ, যা মানুষের মৌলিক অনুভূতিসমূহ নিয়ে অবলীলায় সব নিষ্ঠুরতম খেলা খেলে যায়। প্রথম পর্বটির প্রধান চরিত্র এফ বি পটাখা, এক বিদেশি রাষ্ট্রদূত। তাঁর দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার কাছে লেখা বেশ কয়েকটি চিঠিতেই শেষ হয়েছে এ পর্ব। চিঠিগুলো ক্ষুদ্রকায়, কখনো কখনো মাত্র কয়েকটি লাইনে সমাপ্ত, সিনেমার দৃশ্যের মতো খণ্ড খণ্ড দৃশ্যকল্পে ভরা। দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে বিদেশিদের হাস্যকর আর বিভ্রান্ত ধারণা ধরা পড়ে সেগুলোতে। তবু পাঠক ঠিকই এসব চিঠির মধ্য দিয়ে দুর্ভিক্ষের একটি সাধারণ চিত্র চিনে নিতে পারে। সাধারণের দুর্ভোগের বাইরে থাকা অভিজাত সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের বিলাস আর তাদের বিচ্ছিন্নতার রূপ এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেননা তাদের খাবার টেবিলে তখনো ২৬ প্রকারের মাংস, ২৪ ধরনের তরিতরকারি, পুডিং, সালাদ এবং সেরা মদ পরিবেশন করা হয়। দুর্ভিক্ষের প্রকৃত চিত্রগুলো তাদের কাছে কল্পনাতীত হওয়ায় তারা মনে করে এসব ঘটনা অতিরঞ্জিত এবং গুজব। ভারতবর্ষের মানুষের চিন্তাপদ্ধতি ও জীবনযাপন সম্পর্কে অন্যান্য সরকারি ও বিদেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতোই এই রাষ্ট্রদূতটির অজ্ঞতা এখানে প্রকটভাবে দেখানো হয়েছে। দূতাবাসের সিঁড়িতে পড়ে থাকা মৃতদেহটির সঙ্গে ভেতরের রাষ্ট্রদূতটির যোজন যোজন দূরত্ব মারাত্মকভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওইসব পত্রে। দ্বিতীয় পর্বটির প্রধান চরিত্র একজন অভিজাত নর্তক। পুরো উপন্যাসিকায় একবারও তার নাম নেই, চরিত্রটিকে লেখক ‘সে’ বলে সম্বোধন করছেন। দারুণ রসিকতায় নির্মিত এই চরিত্র। দুর্ভিক্ষ তার মনকে আর্দ্র করে তোলে, ভুখা লোকদের জন্য সে কিছু করতে চায় কিন্তু গ্রামবাংলায় থাকার জন্য ভালো কোনো হোটেল না থাকায় তার এসব চিন্তা শেষ পর্যন্ত কোনো আকার পায় না, জনসেবা করে পত্রিকার শিরোনাম হওয়ার স্বপ্ন মার খায় ফাঁসিতে ঝোলার ভয়ে। এ পর্বে আরেকটি চরিত্র সুন্দরী ও আবেদনময়ী তরুণী মিস সিনহা, তার নাচের জুটি। তারা ঠিক করে, নৃত্যানুষ্ঠান করে পাওয়া টাকা দুর্ভিক্ষের জন্য দান করবে। কিন্তু অপরূপ দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী মিস সিনহার শরীরেই আটকে থাকে চরিত্রটির যাবতীয় সদিচ্ছা। তাদের মোটরকারে ক্ষুধার্ত দুটি ভাইবোন ভিক্ষা চাইতে এলে তাদের প্রহার করে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য আয়োজিত নৃত্যানুষ্ঠানের দিকে চলে যায় তারা। শেষ পর্বের প্রধান চরিত্র একজন সেতারবাদক, যে আসলে সমগ্র ভারতবর্ষের ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতিনিধি, প্রথম পর্বে একটি চিঠিতে যার উল্লেখ রয়েছে, মৃত লোকটির খোলা দুই চোখ রাষ্ট্রদূতের এক রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। অথচ এ পর্বের নাম দিয়েছেন লেখক ‘লোকটি এখনো মারা যায়নি’। মৃত সেতারবাদকে বয়ানে খুব সামান্য পরিসরে মর্মস্পর্শী সব ঘটনার বর্ণনা করেন লেখক। গ্রাম থেকে কলকাতার পথে লাখো মানুষের মিছিলে ছিলেন এই সেতারবাদক, তাঁর স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যা। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মেয়েটির মা মেয়েটিকে বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। সমগ্র দেশেই তখন মানুষের কেনাবেচা চলছিল, দুটো কন্যাসন্তান বিক্রি করতে পারলে সাত-আট দিন খাওয়ার মতো চাল কেনা যেত। পুরো পরিবারই মারা যায় এই দুর্ভিক্ষে। সেই ঘটনার বর্ণনা আছে সবশেষে মারা যাওয়া এই সেতারবাদক লোকটির জবানিতে। উপন্যাসিকাটি মূল উর্দু থেকে অন্নদাতা নামে বাংলায় তরজমা করেছেন জাফর আলম। ক্ষুদ্রায়তনের এ উপন্যাসিকাটি দুর্ভিক্ষের একটি সার্বিক চিত্র আমাদের সামনে হাজির করে। সেই সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতার মাধ্যমে এটি সমাজের শ্রেণী বিভাজনকেও নগ্ন করে দেখায়।