User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Magic...
Was this review helpful to you?
or
অতঃপর আমি বা আমরা শহীদুল জহির কর্তৃক রচিত 'ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প' বইটা পড়ি এবং আমরা এক ধরনের সমস্যা বা অস্বস্তির মধ্যে পড়ি; যে ধরনের সমস্যায় ভূতের গলি বা দক্ষিণ মৈশুন্দির লোকেরা প্রায়ই পড়ে এবং নারিন্দা, জোড়পুল বা পদ্মনিধি লেনের মানুষেরাও এর কথা জানতে পারে । কিন্তু আমাদের সেই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে যখন আমরা এর থেকে বের হয়ে আসার পথ পাই না কিংবা আমরা হয়ত সমস্যাটা কি তাই ভাল করে বুঝে উঠতে পারিনা । এই কারণে হয়ত আমরা এক রকম ধাঁধার মধ্যে পড়ে যাই কিংবা ইন্দুর-বিলাই খেলায় ক্রমাগত ইন্দুর হয়ে বিলাইয়ের হাতে মার খেয়ে যাই; কিন্তু তবু আমরা এর থেকে বের হতে পারিনা । তখন আমরা শাহবাগ বা পলাশীতে চা খেতে খেতে আড্ডা দেই আর এই সমস্যা বা অস্বস্তির ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি এবং আমরা বুঝতে পারি যে শহীদুল জহিরের লেখনী বা গল্পের অদ্ভুত সব কাঠামোর কারণেই হয়ত এইরকম ধাঁধার সৃষ্টি হয়, অথবা আমরা হয়ত কিছুই বুঝতে পারি না । এর ফলে আমরা আবার সেই সমস্যার মধ্যেই পড়ে যাই, আবার আমরা এর থেকে বের হতে পারিনা, আবার আমরা আড্ডা দেই...
Was this review helpful to you?
or
Boi porata amar shokh-er o valolagar bisoy . Sai shokh o valo laga hote amra gore tulesi amader office library . Thanks Rokomari amader sokol boi thik quality te ena dewar jonno . And aro thanks alokito bangladesh gorar proyash newar jonno . Thanks the all team member of Rokomari .
Was this review helpful to you?
or
শহীদুল জহির।বাংলা সাহিত্যের বিস্ময়ই বটে।গল্প বলার এক অভিনব ভঙ্গিমা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি।এমন এক ভঙ্গিমা যা পাঠককে বই পড়ার কয়েকদিন পর যাবতও এক ঘোরগ্রস্ত পৃথিবীতে আটকে রাখে।পাঠক আপন মনে কথা না বলে,নিজেকে গল্প না বানিয়ে পারেন না।যদিও ১ম গল্পগ্রন্থে স্বমহিমায় শহীদুল জহিরকে পাওয়া যায় না কিন্তু পরবর্তী দুটো গল্পগ্রন্থই তাঁর প্রতিনিধিত্ব করে।এই বইটিতে মোট সাতটি গল্প রয়েছে।যার মধ্যে অন্যতম একটি গল্প হলো "আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস"। পূর্ণচ্ছেদবিহীন এক অনন্য গল্প এটি।এছাড়া নাম গল্পটিও পাঠককে তার জীবন সম্বন্ধীয় দর্শন পাল্টে ফেলার দৃষ্টি দেবে।ছোটগল্পগুলোর মধ্য দিয়ে যে দর্শনের সম্মুখীন আমরা হই,আর যে ভাষার,তার তুলনা হয় না।কিন্তু এখনও আমরা আমাদের এই অভিনব লেখকের লেখার যথার্থ সম্মান দিতে পারিনি।আশা করি পাঠক একদিন এর পাওনা মিটিয়ে দেবে।
Was this review helpful to you?
or
আজকাল বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসের ক্ষেত্র খুব বেশি প্রসারিত না হলেও, ছোটগল্পের ক্ষেত্রে খুব বেশি বৈচিত্র্যের দেখা মিলছে। প্রতিটি লেখকই এত ভিন্ন ভিন্ন বাচনভঙ্গি আর বিষয়বস্তুকে পুঁজি করে ছোটগল্প নির্মান করছেন যে ক্রমেই বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পগুলো খুব দ্রুততার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পের এই চলার পথে শহীদুল জহিরের অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শহীদুল জহিরের রচনার প্রধান বিশেষত্ব তার স্বকীয় বর্ননাভঙ্গি, বিচিত্র সব কাহিনী আর সহজ-সরল কিন্তু কিছুটা অপরিচিত ও অপ্রত্যাশিত ধাঁচের সংলাপ। লেখকের বিশেষত্বসমূহের বিশেষভাবে দেখা মিলেছে ''ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প'' শিরোনামের বইটিতে, মোট ৭টি গল্পের মাধ্যমে। প্রতিটা গল্পের ব্যবচ্ছেদ নাই বা করলাম। সামগ্রিকভাবে বইটিকে নিয়ে কথা বলছি, কেননা এতে আমারও যেমন সময় বাঁচবে তেমনি এই রিভিউ যদি কেউ পড়ে থাকেন তবে তিনিও বিরক্ত হবেন না। আসলে গল্পগুলোকে একটার সাথে আরেকটার যোগসাজশ খুব একটা সহজ হবে না। কোনোটার প্রেক্ষাপট ঢাকার শহুরে জীবনধারা তো কোনোটার প্রেক্ষাপট আবার গ্রামবাংলা। তবে গল্পের মূল বক্তব্যকে পর্যালোচনা করলে গল্পগুলোর মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্য নিরূপণ খুব একটা কঠিনও নয়। প্রতিক্ষেত্রেই লেখক মানুষের স্বপ্নের কথা বলেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবতার মাপকাঠিতে বিচার করে, স্বপ্ন ছোঁবার পথে যথাযথ প্রতিবন্ধকতার সীমাও এঁকে দিয়েছেন। আশা আর আশাভঙ্গের উপস্থিতি যে পাশাপাশি, একই ঘরে তথা মানবমনেরই একই কুঠুরিতে তাদের বসবাস, সেটা প্রতীয়মান হয় প্রতিটা গল্পেই। প্রেম ভালোবাসার উপস্থিতি অনুমিতভাবেই রয়েছে গল্পে। তাদের সন্ধানে বয়ে চলা সন্ধানী জীবন গল্পগুলোর প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু একেকটি জীবন তো একেকরকম। তাই অন্তর্নিহিত ভাবের মেলবন্ধন সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের জীবনযাত্রায় দেখা মিলেছে ভিন্নতার। একেকটি চরিত্রের জীবনে একেকরকম করে দেখা মিলেছে উত্থান ও পতনের। সবমিলিয়ে একটা কথাই বলা দরকার। এই বইয়ের গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত ভাব ও ভাবের বাহন চিরচেনা ছোটগল্পের আদলেই গড়ে উঠেছে। তবুও এই বইয়ের গল্পগুলোর রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা আর তা লেখকের নতুন ধাঁচের গল্প নির্মান কৌশলের কারণে। আঙ্গিক গঠন অনুসারে প্রতিটি গল্পই একদম আলাদা। সেটি শুধু পারস্পরিক বিচারেই না। অপরাপর ছোটগল্প ও সমসাময়িক লেখকদের লেখা পর্যালোচনা করলে সামগ্রিকভাবেই এই বইয়ে স্থান পাওয়া গল্পগুলোর বিশেষত্ব ও নিজস্বতা চোখে পড়বে। এই বইয়ের গল্পগুলো শুধু বৈচিত্রময়ই নয়, বরং কাহিনী, কাহিনী বলার ধরন, ভাষার ব্যবহার সবকিছু মিলিয়ে সত্যিই খুব সুন্দর। আর সেই ভিন্নধর্মী সৌন্দর্যের স্বীকৃতিও বইটি পেয়েছে আজকের কাগজ কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে।
Was this review helpful to you?
or
ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প লেখকের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ । ২০০৪ সালে যেটা মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছিল বইমেলায়, আর ২০০৫-এ যেটা তাঁর জন্য এনেছিল একটি কাগজ সাহিত্য পুরস্কার। বইটিতে মোট সাতটি ভিন্ন ভিন্ন গল্প রয়েছে। “কোথায় পাব তারে” নামক প্রথম গল্পের আব্দুল করিম নামের নিষ্কর্মা লোকটির হটাৎ ময়মনসিং যাত্রা গলিবাসী মানুষের জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়। সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কোন এক শুক্রবারে আব্দুল করিম ময়মনসিং আখালিয়া নদী তীর হতে ফিরে আসে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে পরিচিত হওয়া শেপালীর দেয়া ভুল কিবা সঠিক ঠিকানার স্রোত থেকে। আব্দুল করিমের একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যাটি দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা সংকটে পড়ে লেখকের নির্মাণ করা কথন বিশ্বে। চরিত্রের কথার তোড়ে নিজের অলক্ষ্যেই পাঠক জড়িয়ে যায় শহীদুলের বহুমাত্রিক কথন বিশ্বে। সুহাসিনী গ্রামের কামলা খাটা আকালু আর তার পরিবারের গল্প “আমাদের বকুল”। এই গল্পেও লেখক কেবল মাত্র একটি পরিবারের গল্পকে গঠন করেছেন সকলের তরে। আকালুর স্ত্রী ফাতেমার নিখোঁজ হওয়া, বকুলের কলাগাছ পরীক্ষা্র মাধ্যমে মায়ের জন্য প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষার কাহিনী এবং সবশেষে মায়ের মতো শারীরিক গঠনের অধিকারী বকুলের লাল পিঁপড়ায় রক্তাক্ত হবার গল্প পাঠককে নিয়ে যায় গল্পের ভিতরের গল্পে। “মহল্লায় বান্দর, আব্দুল হালিমের মা এবং আমরা” গল্পে লেখক কেবল একটি গল্পই বলেন না বরং সমান্তরালে বয়ান করেন একাধিক গল্প আর শাখা গল্প। মুক্তিযুদ্ধের খন্ডচিত্র বর্ণনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় বান্দর বিষয়ক এমন একটি গল্প যার মাধ্যমে একটি মহল্লার বাহারি নারী-পুরুষের রকমারী পরিচয় উন্মোচিত হয়। কার্নিশে ঝুলে থাকা বান্দরের লেজে ঝুলে থাকে কাহিনীর বাঁক আর গল্পের মূল। “ইন্দুর-বিলাই খেলা” নামক চতুর্থ গল্প বাংলা ছোটগল্পের অঙ্গনে কেবল বিরল নয় বরং বিরলতম। ছোটগল্পের ক্যানভাসে লেখা এই সৃষ্টিতে লেখক আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এমন এক সূত্র যা আমাদেরকে বিস্মিত হতে বাধ্য করে। মহল্লার বালকদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে দুই বাড়ীওয়ালীর ঝগড়া্র মতো রীতিমত খেলো একটি বিষয় কিংবা বীরাঙ্গনা খতিজার সাথে পাকসেনা ও রাজাকার কমান্ডার আব্দুল গনির নিত্য আনাগোনার মতো ব্যক্তিক কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনার ইন্দুর-বিলাই খেলা আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, খেলোয়াড়ের শেষ আছে, খেলোয়াড় খেলা ছেড়ে যায় কিন্তু খেইল জারি থাকে। পঞ্চম গল্প “প্রথম বয়ান” পাঠককে আব্দুর রহমানের সাথে সাথে স্মৃতিকাতর করে তোলে। চম্পার ডাল ভেঙ্গে দেয়া সুপিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অসহায় আব্দুর রহমানকে খুঁজে পাওয়া যায় পাঠকের অসহায়ত্বে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার এতটুকু বিপদে ফেলে নি তৈমুর আর সমর্ত বানুকে নিয়ে লেখা “ডলু নদীর হাওয়া” গল্পটি। লেখক এই গল্পে খেয়ালী ভাষার যৌক্তিক শৃঙ্খলের বর্ণনা আর একরোখা বয়ানের বেপরোয়া গোঁয়ার্তুমির সর্বোচ্চ সাফল্য দেখানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বর্ণনায় যৌক্তিক জাল বিস্তারের মাধ্যমে শহীদুল জহির পাঠককে আটকে রাখেন শেষ পর্যন্ত এবং একই সাথে একের পর এক এমনকি, হয়তো, অথবা, হবে, হবে না, ঘটে, অথবা ঘটে নাই, অনেক পানি, অথবা পানি নাই ইত্যাদি শব্দের হেয়ালী প্রয়োগে পাঠককে ভ্রমে ফেলে, কখনোবা স্তম্ভিত করেন। পুর্নমুদ্রিত ও এই বইয়ের সর্বশেষ গল্প “আমদের কুটির শিল্পের ইতিহাস” লেখক শেষ করেছেন একটি অনুচ্ছেদে এবং কোনো রকম পূর্ণযতি চিহ্ন ছাড়া এগিয়ে গেছেন কেবল কমা আর সেমিকোলন দিয়ে। লেদ-মেশিন আর নাট-বল্টুর টুংটাং আওয়াজে হারিয়ে যাওয়া জনপদের বটের সবুজ কিংবা তরমুজের লাল রঙের ‘ভিসিয়াস সাইকেল’ টাকে ধরে রেখেছেন পূর্ণযতি বিহীন এই গল্পে। আজকের কাগজ পুরুস্কারপ্রাপ্ত বইয়ের ভিন্নধর্মী সাতটি গল্প ।।
Was this review helpful to you?
or
Your Rating 12345 Write Review ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প এই সঙ্কলনে সাতটি গল্প রয়েছে। এগুলোর পটভূমি কখন ঢাকা শহর কখন বাংলাদেশের গ্রাম এবং উপজীব্য মানুষের স্বপ্ন ও স্বপ্নের বিনাশ অথবা এই বিনাশের ভেতরেও অবচেতনের আদিম গুহায় একা কিংবা একসঙ্গে স্বপ্নের জন্যই তাদের জেগে থাকা। এই গল্পের বুননের ভিতরে হয়তো আছে প্রেম কিংবা তার সন্ধান, হয়তো ভালবাসা নয়- তার সন্ধানই জীবন। হয়তো আরো আছে ছায়া, পীড়ন ও পতনের, হয়তো ম্লান আনন্দের, এবং আছে জীবনের পথ একটুকরা/দুইটুকরা/পাঁচটুকরা লোকের; অথবা হয়তো কিছু নাই, আছে মাধুরী কিছু না থাকার
Was this review helpful to you?
or
গল্পকার শহীদুল জহিরের আজকের কাগজ পুরুষ্কারপ্রাপ্ত "ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প" বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ২০০৪ সালে।সংলাপ নির্বাচনে নতুনত্ব, ব্যাতিক্রমধরমী বর্ণনাভঙ্গী এবং সম্পুর্ণ নতুন ধরণের আখ্যান নিয়ে রচিত তার প্রতিটি গল্প।“ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প” বইটিতে মোট সাতটি ভিন্ন ভিন্ন গল্পে খুঁজে পাওয়া যায় সমসাময়িক জীবনধারা যার প্রেক্ষাপট কখনো শহর কখনও বা গ্রাম। প্রথম গল্প 'কোথায় পাব তারে'।অসাধারণ এই গল্পটি দিয়ে বইটির শুরু।গল্পে আব্দুল করিমের ময়মনসিং যাত্রা শুনে সমস্যা শুরু হয় মহল্লার তার পরিচিতদের মধ্যে।আব্দুল করিম ময়মনসিং নদী তীর হতে ফিরে আসে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে পরিচিত হওয়া শেপালীর দেয়া ভুল কিবা সঠিক ঠিকানা থেকে।আবার সে ভুতের গ্লিতে ফিরে আসে।পুরবের জীবনযাপ্ন করতে থাকে। দ্বিতীয় গল্প “আমাদের বকুল”।কামলা খাটা আকালুর স্ত্রী একদিন মেয়ে বকুল ও ছেলে আমির হোসেন কে রেখে নিখোজ হয়। আকালু স্ত্রীকে খুঁজতে গিয়ে আবার নিঃস্ব ফিরে আসে তার গ্রামে।চলতে থাকে তার কামলা খাটা।কাজের অবসরে মনে পরে ফাতেমার স্মৃতি।একপর্যায়ে আকালু সখিনাকে বিয়ে করে আনে,বকুলরা বড় হয়। বকুল মাঝে মাঝেই হারানো মাকে মনে করে কাঁদে।বকুল স্বপ্ন দেখে।বকুলের শারীরিক গঠন তার মায়ের মত হয়, চোখে পড়ে সবার। এবং একসকালে, রক্তাক্ত বকুলের শাড়ি পাওয়া যায় কলাগাছের সেই ঝোপের পাশে। ৩য় গল্প "মহল্লায় বান্দর,আব্দুল হালিমের মা এবং আমরা"।একি সমান্তরালে দুটি গল্প এগতে থাকে এই গল্পে।এক গল্পে দেখা যায় মহল্লার থেকে একদিন ভাতের হাড়ি চুরি হয়। তারপর এটা সেতা চুরি হতে থাকে। তারপর একদিন মহল্লায় বানর দেখা যায়।বানর দেখে তারা অবাক হয়। কারণ তারা মহল্লায় অনেক দিন বানর দেখে না। অন্য গল্পে আব্দুল হালিম মুক্তিযুদ্ধে যায়। যুদ্ধে দেখা হয় ঝর্ণার সাথে। এবং তার পরই মারা যায় ঝর্ণা। ঝর্ণার প্রতি হালিমের ভালোবাসা প্রকাশ পায় ঝর্ণার একগোছা চুলের ফিতা দিয়ে। ৪র্থ গল্প "ইন্দুর-বিলাই খেলা"।মহল্লার বালকদের ইদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে দুই বাড়ীওয়ালীর ঝগড়া, খেলার ইতিহাস হিসেবে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মহল্লাবাসীর সাথে রাজাকার এবং পাকসেনাদের অত্যাচার, বীরাঙ্গণা খতিজার সাথে পাকসেনা ও রাজাকার কমান্ডার আব্দুল গনির নিত্য আনাগোনা। পরের গল্প "প্রথম বয়ান"।'কেরোসিন বাত্তির বাত্তিওয়ালা' আব্দুর রহমান ও সুপিয়ার পরিণতি না পাওয়া প্রেমকাহিনী নিয়ে গল্প। ৬ষ্ঠ গল্প "ডলু নদীর হাওয়া"।গল্পের ঘটনার স্থান চট্টগ্রাম। তাই গল্পের সংলাপ ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা।মগ মেয়ে সমর্ত বানু ও তৈমুরের প্রেম ও তার পরিণতি। সর্বশেষ গল্প '"আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস"। বাংলাসাহিত্যে এটাই একমাত্র পূর্ণচ্ছেদবিহীন ছোট গল্প।লেখক শেষ করেছেন একটি অনুচ্ছেদে ।গরমের দিনে তরমুজওয়ালার তরমুজ দিয়ে কাহিনীর শুরু। লেখক বুঝিয়েছেন বাশীর সুর কিংবা শেফালি ফুল অথবা লাল তরমুজ কিভাবে শিল্পায়নের প্রভাবে দূরে সুরে যাচ্ছে।
Was this review helpful to you?
or
শহীদুল জহির, বাংলা ছোটগল্পের এক বিহ্বল আর ব্যতিক্রমী কথাকার। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর পর একমাত্র শহীদুল জহির আমাদেরকে তার নিরাসক্ত বর্ণনায় পাইয়ে দেন কাহিনীর সুস্পষ্ট বাঁক, গল্পের ভিন্নতর স্বাদ আর অনুভূতির স্পর্শ। “ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প” বইটিতে মোট সাতটি ভিন্ন ভিন্ন গল্পে পাঠক খুঁজে পায় শহীদুলের একরোখা বয়ানের চূড়ান্ত সফলতা আর ক্লানিহীন মানুষের ভালোবাসা। “কোথায় পাব তারে” নামক প্রথম গল্পের আব্দুল করিম নামের নিষ্কর্মা লোকটির হটাৎ ময়মনসিং যাত্রা গলিবাসী মানুষের জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়। সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কোন এক শুক্রবারে আব্দুল করিম ময়মনসিং আখালিয়া নদী তীর হতে ফিরে আসে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে পরিচিত হওয়া শেপালীর দেয়া ভুল কিবা সঠিক ঠিকানার স্রোত থেকে। আব্দুল করিমের একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যাটি দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা সংকটে পড়ে লেখকের নির্মাণ করা কথন বিশ্বে। চরিত্রের কথার তোড়ে নিজের অলক্ষ্যেই পাঠক জড়িয়ে যায় শহীদুলের বহুমাত্রিক কথন বিশ্বে। সুহাসিনী গ্রামের কামলা খাটা আকালু আর তার পরিবারের গল্প “আমাদের বকুল”। এই গল্পেও লেখক কেবল মাত্র একটি পরিবারের গল্পকে গঠন করেছেন সকলের তরে। আকালুর স্ত্রী ফাতেমার নিখোঁজ হওয়া, বকুলের কলাগাছ পরীক্ষা্র মাধ্যমে মায়ের জন্য প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষার কাহিনী এবং সবশেষে মায়ের মতো শারীরিক গঠনের অধিকারী বকুলের লাল পিঁপড়ায় রক্তাক্ত হবার গল্প পাঠককে নিয়ে যায় গল্পের ভিতরের গল্পে। “মহল্লায় বান্দর, আব্দুল হালিমের মা এবং আমরা” গল্পে লেখক কেবল একটি গল্পই বলেন না বরং সমান্তরালে বয়ান করেন একাধিক গল্প আর শাখা গল্প। মুক্তিযুদ্ধের খন্ডচিত্র বর্ণনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় বান্দর বিষয়ক এমন একটি গল্প যার মাধ্যমে একটি মহল্লার বাহারি নারী-পুরুষের রকমারী পরিচয় উন্মোচিত হয়। কার্নিশে ঝুলে থাকা বান্দরের লেজে ঝুলে থাকে কাহিনীর বাঁক আর গল্পের মূল। “ইন্দুর-বিলাই খেলা” নামক চতুর্থ গল্প বাংলা ছোটগল্পের অঙ্গনে কেবল বিরল নয় বরং বিরলতম। ছোটগল্পের ক্যানভাসে লেখা এই সৃষ্টিতে লেখক আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এমন এক সূত্র যা আমাদেরকে বিস্মিত হতে বাধ্য করে। মহল্লার বালকদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে দুই বাড়ীওয়ালীর ঝগড়া্র মতো রীতিমত খেলো একটি বিষয় কিংবা বীরাঙ্গনা খতিজার সাথে পাকসেনা ও রাজাকার কমান্ডার আব্দুল গনির নিত্য আনাগোনার মতো ব্যক্তিক কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনার ইন্দুর-বিলাই খেলা আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, খেলোয়াড়ের শেষ আছে, খেলোয়াড় খেলা ছেড়ে যায় কিন্তু খেইল জারি থাকে। পঞ্চম গল্প “প্রথম বয়ান” পাঠককে আব্দুর রহমানের সাথে সাথে স্মৃতিকাতর করে তোলে। চম্পার ডাল ভেঙ্গে দেয়া সুপিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অসহায় আব্দুর রহমানকে খুঁজে পাওয়া যায় পাঠকের অসহায়ত্বে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার এতটুকু বিপদে ফেলে নি তৈমুর আর সমর্ত বানুকে নিয়ে লেখা “ডলু নদীর হাওয়া” গল্পটি। লেখক এই গল্পে খেয়ালী ভাষার যৌক্তিক শৃঙ্খলের বর্ণনা আর একরোখা বয়ানের বেপরোয়া গোঁয়ার্তুমির সর্বোচ্চ সাফল্য দেখানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। “.........হয়তো সে রোদের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে, অথবা ডলু নদীর সকালের বাতাসে শুকনা গুয়ের গন্ধ সত্ত্বেও আরামে এমনি চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তখন সে তার ডান পা বাম পায়ের হাঁটুর উপর তুলে দেয়, ফলে লুঙ্গি নিচের দিকে হা হয়ে থাকে এবং এই ফাঁক দিয়ে বড় তালের আঁটির মতো তার খয়েরি রঙ্গের প্রাচীন হোলের বিচি দেখা যায়” ঠিক এইরূপ বর্ণনায় যৌক্তিক জাল বিস্তারের মাধ্যমে শহীদুল জহির পাঠককে আটকে রাখেন শেষ পর্যন্ত এবং একই সাথে একের পর এক এমনকি, হয়তো, অথবা, হবে, হবে না, ঘটে, অথবা ঘটে নাই, অনেক পানি, অথবা পানি নাই ইত্যাদি শব্দের হেয়ালী প্রয়োগে পাঠককে ভ্রমে ফেলে, কখনোবা স্তম্ভিত করেন। পুর্নমুদ্রিত ও এই বইয়ের সর্বশেষ গল্প “আমদের কুটির শিল্পের ইতিহাস” লেখক শেষ করেছেন একটি অনুচ্ছেদে এবং কোনো রকম পূর্ণযতি চিহ্ন ছাড়া এগিয়ে গেছেন কেবল কমা আর সেমিকোলন দিয়ে। লেদ-মেশিন আর নাট-বল্টুর টুংটাং আওয়াজে হারিয়ে যাওয়া জনপদের বটের সবুজ কিংবা তরমুজের লাল রঙের ‘ভিসিয়াস সাইকেল’ টাকে ধরে রেখেছেন পূর্ণযতি বিহীন এই গল্পে। শহীদুল জহির পাঠককে গল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন অনাহাসে কিন্তু অলক্ষ্যে নিজেই সটকে পড়েন অবলীলায়। পাঠক কথকের কথায় কথা বলে কিন্তু কথককে খুঁজে ফেরে অবিরাম। “ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প” বইয়ে আমরা খুঁজে ফিরি প্রেম কিংবা অপ্রেমের ফিরিস্তি, পীড়ন বা পতনের আনন্দ, কখনোবা বিষাদ, জীবনের ইতিহাস নয়তো মরণের খেড়োখাতা, কখনো সবকিছু মহান পরক্ষণেই যা কিছু তুচ্ছ কখনোবা কিছুই না।
Was this review helpful to you?
or
বলা হয়ে থাকে যে, বাংলা সাহিত্য বর্তমান সময়ে তার মৌলিক ছোট গল্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময়েই সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সমৃদ্ধ শাখা- ছোটগল্পের জগতে শহীদুল জহিরের আগমন। "ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প" বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ২০০৪ সালে। ব্যাতিক্রমধর্মী সংলাপ নির্বাচন, স্বকীয় বর্ণনাভঙ্গী এবং সম্পুর্ণ নতুন ধরণের আখ্যান নিয়ে রচিত তার প্রতিটি গল্প। তার গল্পে কখনো ঢাকা শহর, কখনো প্রত্যন্ত গ্রাম, উপজীব্য মানুষের স্বপ্ন ও স্বপ্নের বিনাশ অথবা বিনাশের ভেতরেও এক কিংবা কয়েকজনের স্বপ্নের পথে জেগে থাকা দেখতে পাওয়া যায়। "ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প"- বইটিতে সংযুক্ত হয়েছে মোট সাতটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও চমৎকার বিষয়বস্তু সমৃদ্ধ ছোট গল্প। বইটি আরম্ভ হয়েছে 'কোথায় পাব তারে' নামের অসাধারণ একটি গল্প দিয়ে। ঢাকা শহরের দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলি এলাকার এক জটিলতা দিয়ে গল্পটির শুরু। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র- আব্দুল করিমের ময়মনসিং যাচ্ছে শুনে সঙ্কট আবির্ভূত হয় মহল্লার তার পরিচিতদের মধ্যে। তারা বিশ্বাস করতে পারে না অকর্মা এই যুবকটি ময়মনসিং কেন যাবে কিংবা আদৌ যাবে কি না! ঘোর সংশয়ে তার সাথে কথোপকথনের প্রতিটি পর্যায়ে সে বলে , 'আমার বন্দু আছে, বেড়াইবার যামু '।এইভাবে দিন পার হতে থাকে, আব্দুল করিম যায় না দেখে মহল্লার লোকেরা আরও সন্দিগ্ধ হয়। সাধারণ অথচ চমৎকার কিছু সংলাপের শেষে একদিন প্রকাশ হয় আবদু ল করিম শেফালি নামের এক মেয়ে যার সাথে মহাখালি বাসস্ট্যান্ডে পরিচয়- তার সাথে দেখা করতে যাবে। তারপর, কোন এক মঙ্গলবার, আব্দুল করিম, দুলাল মিয়াকে সাথে করে ময়মনসিং রওনা হয়। ময়মনসিং নেমে কাগজে লেখা শেফালির দেয়া অদ্ভুত একটা ঠিকানা ধরে তারা এগুতে থাকে। অনেকদুর এগিয়ে আখালিয়া নদী পার হয়ে হঠাৎ আব্দুল করিম বলে উঠে-'ল ফিরা যাই'। তারপর, তারা আবার ভুতের গলিতে ফিরে আসে এবং আগের মতোই দিন যাপনের মাধ্যমেই গল্পের শেষ হয়। 'গ্রামের লোকেরা তার প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় ছিল'- বাক্যটি দিয়ে শুরু হয় ২য় গল্প- "আমাদের বকুল"। গল্পের নায়ক, 'কামলা' খাটা আকালু শ্বশুরবাড়িতে তার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে খুঁজতে গিয়ে আবার নিঃস্ব হাতে সুহাসিনী গ্রামে ফিরে আসার বর্ণনা দিয়েই গল্পের শুরু। কোন একদিন মেয়ে বকুল এবং ছেলে আমির হোসেনকে রেখে আকালুর স্ত্রী ফাতেমা নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আকালু আবার 'কামলা' দেয়। হুকোয় টান দিয়ে আবার আকালু ফিরে যায় বিয়ে করে আনার সেই দিনের স্মৃতিতে। সংসারের কাজে ব্যস্ত ফাতেমার কাজ এবং দৈহিক গঠন দুটোই গ্রামের লোকদের আকৃষ্ট করে। তারা বলে, 'ক্যারে আকালু, এমন বৌ বিয়্যা করলি, এমন ধামার নাহাল তোর বৌয়ের শরীল!'। ফাতেমা দুই খাদি ধান চুরি করে বিক্রী করে বকুল আর আমির হোসেনকে মিয়া বাড়ির জায়গির দাখিল ক্লাশের রফিকুল ইসলামের কাছে আরবি পড়ায়। ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ায় লোকেরা তাকেও সন্দেহ করে। একপর্যায়ে আকালু সখিনাকে বিয়ে করে আনে,বকুলরা বড় হয়। বকুল মাঝে মাঝেই হারানো মাকে মনে করে কাঁদে। জুমা ঘরের ইমাম স্বান্তনাস্বরুপ একটা কলা গাছ লাগিয়ে বলে, গাছে পানি না দিলে যদি গাছ বাঁচে, তবে তোর মা বেঁচে আছে। ধীরে দ্গীরে কলাগাছ পানিছাড়াই বেড়ে উঠে। বকুল স্বপ্ন দেখে। বকুলের শারীরিক গঠন তার মায়ের মত হয়, চোখে পড়ে সবার। একসকালে, রক্তাক্ত বকুলের শাড়ি পাওয়া যায় কলাগাছের সেই ঝোপের পাশে। ভূতের গলিতে বানরের স্মৃতি দিয়ে শুরু হয় ৩য় গল্প- "মহল্লায় বান্দর,আব্দুল হালিমের মা এবং আমরা"। মহল্লার বাসা থেকে একদিন ভাতের হাড়ি চুরি হয়। তারপর আবার হাতঘড়ি, তেলের বোতল চুরি হতে থাকে। তারপর, তারা একদিন মহল্লায় বানর দেখে অবাক হয়। কারণ তারা মহল্লায় অনেক দিন বানর দেখে না। বানরের বর্ণনার সাথে সমান্তরালে বর্ণিত হয়, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা। আব্দুল হালিম সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যায়। যুদ্ধের সময় দেখা হয় ঝর্ণার সাথে। এবং তার পর-ই মারা যায় ঝর্ণা। ঝর্ণার প্রতি হালিমের ভালোবাসা প্রকাশ পায় ঝর্ণার একগোছা চুলের ফিতা দিয়ে। ইঁদুর আর বিড়ালের চমৎকার একটি ছক চিত্র দিয়ে শুরু হয় ৪র্থ গল্প-"ইন্দুর-বিলাই খেলা"। মোহনীয় বর্ণনায় কাহিনী এগিয়েছে খেলার সঙ্গা,ধরণ,পদ্ধতি, ভূতের গলির খেলোয়াড়গণ এবং সাতটি নমুনায়। মহল্লার বালকদের ইদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে দুই বাড়ীওয়ালীর ঝগড়া, খেলার ইতিহাস হিসেবে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মহল্লাবাসীর সাথে রাজাকার এবং পাকসেনাদের অত্যাচার, বীরাঙ্গণা খতিজার সাথে পাকসেনা ও রাজাকার কমান্ডার আব্দুল গনির নিত্য আনাগোনা, মহল্লার নতুন উঠতি সন্ত্রাসী হুমু/জাহুর সাথে মহল্লার সাধারণ মানুষের নিয়ম মাফিক খুন খেলা, খতিজার আরও কিছু বীরগাঁথা, নির্বাচন কালীন সময় দুই বিরোধী দলের ভোট প্রার্থনা এবং চন্দ্রকান্তের পরিবারের সাথে তাদের পরিচিত বচসার পুনরাবৃত্তি এবং ইন্দুর-বিলাইয়ের পরিবর্তে মহল্লায় ডেঙ্গুর উপদ্রপ; এই সব নমুনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই আমাদের পরিচিত লুকোচুরি। গল্পকার এই গল্পের পরিণতিও টেনেছেন চমৎকার ভাবে। আধুনিক বিদ্যুত বাতির এই সময়ে, আব্দুর রহমানের ছেলেবেলার 'কেরোসিন বাত্তির বাত্তিওয়ালা'কে খোঁজা নিয়ে ৫ম গল্প- "প্রথম বয়ান"। এখানে বাতি জ্বালানোর সময়কার পর পর ৩ দিনের এক-ই ঘটনা আব্দুর রহমানকে স্মৃতিকাতর করে তুলে। সেই ৩ দিন-ই সুপিয়ার সাথে দেখা হয়, চম্পার একটা ভাঙ্গা ডাল তাকে দিয়ে যায়। আব্দুর রহমান সেটা নেয় না। তারপর, অনেকদিন পর সুপিয়ার সাথে দেখা হলে সে জানে, সুপিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। তৈমুর আলি চৌধুরী ও সমর্ত বানুর সংসার নিয়ে লেখা হয়েছে ৬ষ্ঠ গল্প- "ডলু নদীর হাওয়া"। চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সংলাপে কোনখানেই বুঝতে অসুবিধা হয়না গল্পের প্রবাহ। মগ মেয়ে সমর্ত বানুকে ভালো লেগে যায় তৈমুরের। তারপর, সমর্ত বানুকে রাতে বাড়িতে একা পেয়ে ঢুকতে চায় তৈমুর। সমর্ত তাকে একটা শর্ত দেয়। শর্ত মেনে তৈমুর ঢুকতে পারে তবে তার এক পা পঙ্গু হয়ে যায়। এরপর-ই তৈমুর বিয়ে করতে চায় সমর্তকে। সমর্ত আবারো একটা শর্ত দেয়। এই শর্তেই তৈমুরের জীবন পরিণতির দিকে এগোয়। সর্বশেষ গল্প- '"আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস"। বাংলাসাহিত্যে এটাই একমাত্র পূর্ণচ্ছেদবিহীন ছোট গল্প। গরমের দিনে দক্ষিন মৈশুন্দিতে তরমুজওয়ালার তরমুজ দিয়ে কাহিনীর শুরু। এক-ই সাথে, মহল্লায় লেদ মেশিনের আগমন, নাট-বল্টু, পাওরুটি, কাঁচের গ্লাসের ফ্যাক্টরি প্রভ্রিতির আবির্ভাব লেখক কৌশলে তুলে এনে বুঝিয়ে দিয়েছেন- আমাদের চেনা বাশীর সুর কিংবা শেফালি ফুল অথবা লাল তরমুজ কিভাবে শিল্পায়নের প্রভাবে দূরে সুরে যাচ্ছে। অসাধারণ ভাবে এগিয়ে গেছে দাঁড়িবিহীন এই ছোট গল্প। সর্বোপরি, শহীদুল জহির এক অসামান্য দক্ষতায় তার প্রতিটি গল্পের সাথে সমসাময়িক জীবনধারা তুলে এনেছেন; যা আমাদের আবেগে অভিভূত করে, আমাদের ভাবায়, স্বপ্ন দেখায়।