User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By Jahan-E-Noor

      17 Apr 2013 12:23 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আচমকাই গত নভেম্বরে ঢাকাতে এই গল্পের বইটির কয়েকটি গল্প পড়ে ফেলে খুব ভালো লেগে গেল। সঙ্গে নিয়ে এসে দিল্লিতে বাকি গল্পগুলোও পড়ে ফেললাম। কলকাতাতেও বইটি আমার কাছে। প্রথম পড়াতেই দু-একটি গল্প ভালো লাগার পথে বাধা ছিল আমার পড়ার অভ্যাসেই। নিজের সঙ্গে নিজের একটু ছলচাতুরী চলছিল। বাকিগুলো পড়ে ফেলার পর এই ধরনের গল্প নিয়ে আমার রক্ষণশীলতাই বজায় থাকবে এমন একটা ধারণা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খারাপই লাগবে—এমন একটা ভরসায় কেউ কি কেন বই পড়ে যায়? গল্পগুলোর ভেতরের কোনো জোর ছাড়া? এটা স্বীকার করেই শুরু করতে চাই—গল্পগুলোর সেই ভেতরের জোরটাই আমাকে বইটিতে টেনে রেখেছিল। কেন, কী করে বইয়ের নামগল্পটিই ধরছি। বাংলাদেশের একটি ছেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মিটে যাওয়ার বহু পর নিউইয়র্কের এক বড় রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ নিল আর সেই রেস্তোরাঁয় এককালের মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট কিসিঞ্জার ডিনার করতে আসেন মাঝেমধ্যে। এই ছেলেটি একটু উদ্ভট। যে ঢাকার এক প্রাইভেট কলেজে ইংরেজি পড়াত। তার মতো লোকের মাস্টারি করার কথা নয়। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে গুন্ডাগুন্ডা লোকজন সাহেবদের স্কুলে পড়াত ও সাহেব তাড়াতে চায়, এমন বিল্পবীদের জন্য ব্যায়ামাগার খুলত। লোকটি তাদের কলেজের ছাত্রদের গেম টিচারও হয়ে গেল—রোদে-জলে সে ছেলেদের সঙ্গে মাঠে নেমে কাদা মাখামাখি করে ডজ করা, ট্যাকল করা, ড্রিবলিং করা শেখাত। লোকটির গায়ে-পড়ে—মাতব্বরির একটা অভ্যাসই তৈরি হয়ে গিয়েছিল—কলেজে কোনো নতুন কাজকর্ম শুরু হলে সে ঘাড় পেতে দায় নিত, ছাত্রদের মধ্যে কারও মাস্তানি বাড়লে তাকে শায়েস্তা করত, বাথরুম বা করিডরগুলো পরিষ্কার না থাকলে জমাদারদের একহাত নিত; আর যেসব মা-বাপ ছেলেরা কী করে বেড়াচ্ছে তার খবরই রাখতেন না, তাঁদেরও বকাঝকা করত। লোকটি দেখতেও ছিল গুন্ডামার্কা—ঘুষি মেরে নারকেল ভাঙত—এসব কসরত দেখিয়ে তার ছাত্রদের তিনি তার তাঁবুতেও রাখত। কিন্তু সবই শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে। একবার এক ফেল্টু ছাত্র তাকে পাস করিয়ে দিতে বলে একটু চাপা স্বরে, চমকে দিয়ে ও লোকটি ছাত্রটিকে বিরাশি সিক্কার এক চড় কশায়। ছাত্রটি ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে তাকে শায়েস্তা করতে গেলে গুন্ডাদের হাত থেকে চেইন ছিনিয়ে নিয়ে সে তাদের এমন পেটায় যে তারা ভেগে যাওয়ার পথ পায় না। তার চেইনের মার সবচেয়ে বেশি খায় তার ছাত্রটিই, কারণ সে ভাড়াটে গুন্ডাদের মতো ভেগে পালিয়ে যেতে পারেনি। ছাত্রটিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তার মা-বাবা এই গল্পে লোকটার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নোটিশ আনবে বলে ভয় দেখায় ও কলেজের ছাত্ররা ওর ক্লাস বয়কট করতে থাকে। কোর্ট-কাচারির কারবার লোকটির জানা ছিল না আর কোর্টের বাইরে গোপনে কোনো রফা করতেও তার ইজ্জতে লাগছিল। সে কোনো রকমে একটা আমেরিকান ভিসা জোগাড় করে। সে খ্রিষ্টানি এবং তার নামও খ্রিষ্টানি। আমেরিকায় পৌঁছাতে তার কোনো ঝামেলা হয়নি। আমেরিকায় পৌঁছেই সে রাজনৈতিক আশ্রয় চায়। সে ‘অ্যাসাইলাম’ পেয়ে গেল। গল্পটির পরের অংশে এই লোকটি তার স্বভাব-চরিত্রের আর একটু ব্যাখ্যা করেছে। গল্পের পক্ষে সেই ব্যাখ্যাটিতেই লেখক কে. আনিস আহমেদ সবচেয়ে নির্ভুল প্রমাণ রেখেছেন গল্পলেখক হিসেবে তাঁর কবজির জোর কতটাই তার কল্পনাশক্তির ওপর নির্ভরশীল। গল্পটির এই অংশে লোকটি বলছে, সে যতটা না রাগী ছিল তার চেয়েও রাগে ফুঁসত বেশি। রাগের কারণটা সে কিছুতেই ভুলতে পারত না। তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি করে জ্বলত সেই তার সেই একেবারে ছোটবেলা থেকেই। লোকটির বয়স যখন নয়, তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। পাকিস্তানি সেনারা তাদের গ্রাম এড়িয়ে ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে। মাস দুই পরে (এখন হিসাব করে বলা যায় মে-জুন) সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে এসে মাইক ফোঁকে যে যারা গোলমাল না পাকিয়ে সুখে-স্বস্তিতে থাকতে চায়, তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে—তাদের কোনো ভয় নেই। পরের দিন সকালে একটা বেশ বড় দল নিয়ে এক মেজর তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে ও তার বাবাকে ডাকে। তার বাবা ছিলেন সেই গ্রামের এক পুরোনো ভাঙাচোরা গির্জার প্যাস্টর। তার নামে অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। তন্নতন্ন করে বাড়ি সার্চ করেও তেমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেল না। তার বাবাকে বারান্দায় দাঁড় করানো হলে তিনি খোলা জামায় হাঁটুগেড়ে মাথা নুইয়ে বললেন, এ রকম কোনো কিছু তিনি করেননি। বাবার সেই নিরপরাধ নতিস্বীকার এই ছেলেটি তার মায়ের স্কার্টে লুকিয়ে আড়াল থেকে দেখছিল। যে সেনারা বাড়ি ঘিরে রেখেছিল, তারাও দেখছিল প্রকাশ্যেই। সেই সেনাদের ভেতরে এক আহাম্মক মূর্খের মত দাঁত কেলিয়ে হেসে ওঠে। হঠাত্ তার হাতের বন্দুক উঁচিয়ে এক ছাগশিশুকে গুলি করে মেরে ফেলে। সেই মেজর তাতে চটে উঠে বোকা জোয়ানটাকে বাপ-চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে গাল দিয়ে (তার বন্দুক কেড়ে নিয়ে) তাকে বের হয়ে যেতে অর্ডার দেয়। আর ঘাড় ঘুরিয়ে বাকিদের অর্ডার দেয় তার বাবাকে গুলি করে মারতে। লোকটি গুনতে পেরেছিল তার বাবাকে ১০ থেকে ২০ বার গুলি করা হয়। যখন তাঁর শরীরে একটুও কাঁপুনি নেই, তখনো। গোঁয়ার গোবিন্দ ছেলেটি সেই আহাম্মক জোয়ানটির মুখটি ভোলেনি। সে আজও ভাবে সেই জোয়ানটিকে যদি সে আজ কোনো দোকানের কাউন্টারে দোকানদার হিসেবে দেখে, তা হলে সে কী করবে? আশ্চর্য, সেই লোকটি কিন্তু মেজরের কথা বলেনি যে তার বাবাকে গুলি করার হুকুম দিল। এই জায়গাটিতে এসে আমার বিশ্বাসই হতে চায়নি যে এই গল্পের লেখকের বয়স সত্যিই এত কম। মেজর যে হুকুমটা দিয়েছিল সেটা পূর্বসিদ্ধান্ত, ঠিকই ছিল প্যাস্টরকে মেরে ফেলা হবে। সেই সামরিক সিদ্ধান্ত যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করার মধ্যেই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর প্রভুত্বপ্রামাণিক আচরণ। ওই আহাম্মক জোয়ানটি মূর্খের মতো হেসে ও একটি ছাগশিশুকে গুলি করে সেই প্রভুত্বের আপাত-নৈতিক সাহায্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিল। আবার একই সঙ্গে সেই আহাম্মক জোয়ান, প্যাস্টরের নতিস্বীকারের অর্থহীন বিষয়ের ভঙ্গিটুকুও তুচ্ছ করে দিল। প্যাস্টর তো জানে না তাঁকে মরতেই হবে। আবার একই সঙ্গে ওই আহাম্মক জোয়ান এই সামরিক অভিযানের অর্থহীন হাস্যকরতা ও মিথ্যাও কি দেখিয়ে দিল? গল্পের একটা মাত্র ঘটনায় এতগুলো সংকেত ঠেসে দেওয়ার জন্য গল্প লেখকের ছেনি-হাতুড়ির নির্ভুলতার সংযোগ দরকার। সে সংযোগ বুড়ো খোদাইশিল্পীর স্বাভাবিক ক্ষমতা ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না, এটাই লোকশ্রুতি। কিন্তু যদি কোনো তরুণ লেখক আয়ত্তের প্রমাণ এমন নির্ভুল দিতে পারেন, তাহলে পাঠক হিসেবে আমার তো আর কোনো প্রতিরোধ থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু আনিস আহমেদ প্রমাণ করেই ছাড়বেন যে তাঁর গল্পকল্পনার ও লেখার ক্ষমতা সত্যি করেই তুলনা ব্যতিরেকি। একটি খুবই ছোট প্যারায় লোকটিকে দিয়ে তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষে নতুন দেশ তৈরি হলো। সে আশা করে যেতেই থাকল যারা স্বাভাবিক ন্যায়-নীতি লঙ্ঘন করেছে তাদের অন্তত বিচার হবে। কিন্তু সে দেখতে পেল ধীরে ধীরে, নিশ্চিতভাবে তেমন সুবিচারের সম্ভাবনাও অবান্তর হয়ে যাচ্ছে। খুনিরা ও আপসকামীরা একজোট হয়েছে। এক অনুত্তীর্ণ হতাশা নিয়ে লোকটি তার কলেজের ক্লাসঘরে আর করিডরে যথোপযুক্ত ন্যায় কায়েম করতে চাইল এবং তার দাম দিতে তাকে আমেরিকায় পৌঁছে অ্যাসাইল্যাম নিয়ে এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হতে হলো। গল্পলেখকের কাজটাই লোক ঠকানো আর লোকটাকে বিশ্বাস করানো যে সে ঠকছে না এবং তাকে আবার ঠকানো শিল্পরচনার এটা একমাত্র মতলব। অবিশ্বাস দূর করাই শুধু নয়, তা হলে ম্যাজিকই হতো। বিশ্বাস তৈরি করা। বিশ্বাস তৈরি করাই শুধু নয়, তাহলে বুজরুকি হতো। নিজে বিশ্বাস করা। নিজে বিশ্বাস করা শুধু নয়, তা হলে ভূতে বিশ্বাসের মতো অসম্ভবও হতো। নিজের কররেখার মতো বিশ্বাস করা, এই যে দেখছি, তুমিও দেখো। কররেখা যেমন নিজে তৈরি করা যায় না, শারীরিক নিয়মে তৈরি হতে থাকে তেমনি সত্য। যামিনী রায় যখন মেয়েদের মুখ এঁকে দেখান এই যে বাঙালি মেয়ের মুখ, তার পর থেকে বাঙালি মেয়েদের মুখ তেমনি হয়ে যায়। তার দেখাটা তার রেখা হয়ে যায়, রং হয়ে যায়। জয়নুল আবেদিন সেই ১৯৪৩-এ যে দেখেন ও দেখান মাত্র গোটা কয়েক মোটা কাল রেখায় দুর্ভিক্ষে মরা মানুষ এমনি করে মরে পড়ে থাকে আর তার শরীরের ওপরে-নিচে কাক আর কুকুর এমনি করে বসে-শুয়ে থাকে তার পর থেকে আমাদের দুর্ভিক্ষ আর মরা তো চালছেই কিন্তু মরা, কাক ও কুকুর কখনো তাদের শোয়া-বসার জায়গা ভুল করে না। আমরা আর একটি গল্প পড়ে দেখি আনিস আহমেদের গল্প বানানোর জায়গাটা কেমন বা একটু উল্টো করে বলা যায় যে গল্প বানালেন তিনি সেই জগত্টা কেমন। আমরা এখন পড়ব এই সংকলনে তার সবচেয়ে বড় গল্পটি ‘অল মাই এনিমিজ’। পাতার হিসাবে ৪০ পাতার ওপর শব্দের হিসেবে ১২ হাজারের মতো। একটা গল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাতার হিসাব বা শব্দের হিসাবে কেন জোর পাবে? এমন শব্দ শুনলে মনে হতে পারে ঠিকই তো, সাহিত্য বিচারে সংখ্যা, সে শব্দই হোক আর পৃষ্ঠাই হোক, কী প্রধান হওয়া উচিত? এখন প্রশ্ন তোলা একটু গোঁড়ামি তো বটেই। এত বেশি দিন ধরে গল্প-উপন্যাস লেখা হচ্ছে, নানা আকারে যে সেই আকারগুলো সাহিত্যের প্রকারকে প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। খুব ক্ষমতাবান সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠিত ওপর আকারের এই নিয়ন্ত্রণ নিশ্চয়ই ভাঙতে পারেন, ভেঙেছেনও। কিন্তু ভাঙনের সেই দু-একটি ব্যতিক্রম দিয়ে কোনো সাধারণ ধারণার বদল ঘটানো যায় না। আনিস আহমেদ যদি একটি গল্প লিখতে ১২ হাজার শব্দ ব্যবহার করে থাকেন, তা হলে তারা এই লেখাটি নিয়ে এমন কথা তো উঠতেই পারে; তিনি কি একটা ছোট উপন্যাসই লিখলেন? যাকে বলে নভেলেট। আখ্যায়িকা বা নভেলেট নিশ্চয়ই একটা আলাদা প্রকারের গল্প—ছোটগল্প নয়, উপন্যাসও নয়। আমি শেষ পর্যন্ত গল্পটিকে ছোটগল্প হিসেবে নিয়েছি। এখানে ‘ছোটগল্প’ শব্দটি একটি মাত্র শব্দ, গল্পের বিশেষণ হিসেবে ছোট ব্যবহূত হয়নি। গুডনাইট মি. কিসিঞ্জারও ছোটগল্প। যদিও এই দুটি গল্পই ঘটনাগুলো অতীতে বা বর্তমানে ছড়িয়ে গিয়েছে, যেমন একটু-আধটু ছড়িয়ে যাওয়া নভেলেট বা আখ্যায়িত ধর্ম ও সমান্তরালে বিস্তারিত হওয়া উপন্যাস বা নভেলের ধর্ম—তবু মূল ঘটনা একটি মাত্র মানুষের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের খাত দিয়েই একটা পরিণতি বা অপরিণতির দিকে চলে গেছে। কথাটা তুলছি এই কারণে যে আমার মনে হয়েছে, এই লেখকের সামর্থ্যও বোধহয় নভেলেট বা আখ্যায়িকার অনুকূল। গুডনাইট মি. কিসিঞ্জার পড়তে গিয়ে এই কথাটি আমি তুলিনি। অল মাই এনিমিজ পড়তে গিয়ে এই প্রশ্নটিকেই বড় করে তুলতে চাই। গল্পের প্রথম লাইনটিই হচ্ছে, ‘সেই রাতের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে শাহবাজ সকালটা ও প্রায় অর্ধেক অফিস ব্যস্ত হয়ে থাকল।’ আর গল্পের শেষ লাইনটি হচ্ছে, ‘ঢাকাও আকাশ ভেঙে ভোর শুরু হওয়া পর্যন্ত সে পড়েই গেল আর হারিয়ে যাওয়ার সেই গল্প শাহবাজের নিঃসঙ্গ আর ডুবন্ত সব চেষ্টাকে মানুষের অপরিমেয় ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে মিলিয়ে একটা “ঐকতান” তৈরি করে তুলল।’ আর কেউ অনুবাদ করলে হয়তো ঐকতান না বলে চিত্রশিল্পের আনুষঙ্গিক ‘বিশাল চিত্রভাষা’ বলতেন। মূলে আছে ‘কম্পোজিশন’। আমি সন্ধ্যাবেলার পার্টির ব্যান্ডের সঙ্গে মিল রেখে ও খানিকটা শাহবাজের ছেলে ইমতিয়াজের সংগীতপ্রিয়তা মনে রেখে ঐকতান শব্দটিই বেছেছি। যা-ই হোক, ছবি বা সংগীত—এটা এ গল্পের প্রধান বা প্রামাণ্য গতিমুখ, চেষ্টার একাকিত্ব থেকে এককের সমবায়িতা। এককের সেই সমবায়িতা বইয়ের দিক থেকে চোখে না পড়তে পারে, যার গল্প বলা হচ্ছে তার বা তার কারও। কিন্তু উপলব্ধিতে সেটা সত্য হয়ে ওঠে, যার গল্প বলা হচ্ছে তার বা তার কারও। গল্পটা যে নানা রকম ঘটনার খাতে এই উপলব্ধির দিকে যাচ্ছে, সেই গতিটাই গল্পটিকে নভেলেট বা আখ্যায়িতার দিকে ঠেলছে। প্রায় লিস্টি করে দেওয়া যায়, এই দিনটির শুরু থেকে কী কী ঘটনা ঘটেছে: ১. সিঙ্গাপুর থেকে যে ক্র্যাব আসার কথা ছিল, সেগুলো না আসায় কুয়াকাটা গ্রাম থেকে জ্যান্ত তোলা লবস্টার দিয়ে ব্যবস্থা হয়েছে। ২. কোন কোন নিমন্ত্রিত আসবেন তার খবর ফোনে আসছে, সরকারের বিরোধী পক্ষের নেতার কাছে খারাপ মেজাজের ফোন করছেন, উকিল ও পুলিশ কমিশনার ফোন করছেন, ঢাকার এক নতুন হিড়িক পড়েছে লাক্সারি বসতবাড়ির মহল্লা (কনডোমোনিয়াম?) তার ড্রয়িং নিয়ে আর্কিটেক্টদের সঙ্গে মিটিং—প্রত্যেকটিতেই মন দিতে হচ্ছে। মন দিতে শাহবাজের ভালোও লাগছে, ব্যস্ততায় মৃত্যু ভুলে থাকা যায়। ৩. একটা অপ্রস্তুত ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ দিতে যে এসেছে, সে এই কোম্পানিতে একটা চাকরির আবেদন করেছিল, পায়নি। এখন এক মন্ত্রীর সুপারিশে সেই অবিচারের প্রতিকার চাইতে এসেছে। এই ছেলেটি—এই গল্পে বা আমি বলব এই প্রায় আখ্যায়িকা বা প্রায় নভেলেটে—হয়ে দাঁড়িয়েছে শাহবাজের প্রতিচরিত্র। এই ছেলেটির সঙ্গে দুবার শাহবাজের দেখা হয়, এই ইন্টারভিউর সময় আর সন্ধ্যার পার্টিতে ছেলেটি ক্যাটারারের পরিবেশনকারীর পোশাকের ছদ্মবেশে ঢুকে শাহবাজের মুখোমুখি হয়েছিল। এই ছেলেটি সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত করেছে এই দিনটিতে। এত ব্যস্ততার মধ্যেও মন্ত্রীর সুপারিশ অমান্য করতে পারেনি শাহবাজ। ছেলেটিকে সময় দিতে হয়েছে। ছেলেটিকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দিতে দুবারই শাহবাজই শারীরিক আক্রমণ করেছে, এমন একটা মায়ায় ভুলেছে। যখন সে মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে এসেছে, তখন এবং যখন সে নিজেই ছদ্মবেশে এসেছে, তখন। এই ছেলেটিকে গল্পে জায়গা করে দেওয়াই ছিল গল্পকারের পক্ষে সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ শাহবাজের সঙ্গে ছেলেটির এই মুখোমুখি প্রতিস্থাপনাতেই গল্পের নিহিত গতিমুখ গল্প ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে। লেখক তার ঘটনাগুলোকে সেভাবেই সাজিয়েছেন। শাহবাজ যখন মন্ত্রীর পাঠানো এই ছেলেটির সঙ্গে আলাপ বেশ ভালোভাবেই শেষ করে আনছে, ঠিক তখনই এল তার ছেলে ইমতিয়াজের ফোন। শাহবাজের কথা ছিল আজ ইমতিয়াজের সঙ্গে এই হোটেলে দুপুরে খাবে, এটা শাহবাজ ভুলে গিয়েছিল। শাহবাজকে ফোন করে ছেলে জানায় যে সে মিনিট বিশেক বসে আছে। অপ্রস্তুত শাহবাজ লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে বেরোতে যায়, ছেলেটার কাছে প্রথাগত বিদায় নিয়েই কিন্তু ছেলেটি তার জীবনের এই চরম মুহূর্তটি হারাতে রাজি নয়, ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়, লেখকের যথার্থ ভাষায় সেটা ‘কনভারসেশন-লং ইনডিটারমিনেন্সি’। এই ঘটনাটা খুব ভালো তৈরি করা হয়েছে, খুবই ভালো। আমার পঠন অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনাকে বলে থাকি গোগোলি, দস্তায়েভস্কীয় বা স্তাঁদালীয়। এই বইটির পেছনের মলাট মুড়ে বইটি সম্পর্কে ও লেখক সম্পর্কে যে প্রশস্তি বাক্যগুলো আছে, তার দায় নিশ্চয়ই লেখকের নয়। তেমন একটি কাব্যে বলা হয়েছে, লেখকের ভাষার বিরল যথার্থে নায়পল, কোয়েেস, ঝোসা ও বোলানোর কথা মনে পড়ে যায়। উল্লিখিত সব লেখকই তো এই তরুণ লেখকের সমকালীন বয়োজ্যেষ্ঠ। তা হলে এই লেখকের তো তাঁর বৈশিষ্ট্যগুলো চিরকালের প্রতিষ্ঠিত ক্লাসিকস থেকেই নিয়ে থাকতে পারেন। অন্তত সেটাই প্রত্যাশিত। এই পরিস্থিতিটা এত ভালোভাবে তৈরি হয়েছে যে নামহীন, পরিচয়হীন ও সাহায্যপ্রার্থী এই ছেলেটিই গল্পের কেন্দ্রে চলে এসেছে। সে লেখকের সমর্থন পেয়ে গেছে। আমার বেশ মজাই লাগছিল যে শাহবাজ এর পর থেকে কেমন টলে গেছে। এই ঘটনাটি ঘটছে, বলা যায়, গল্পের প্রথম সিকি ভাগে। ছেলেটির সঙ্গে তার কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগেই শাহবাজের দুনিয়ার অক্ষাংশ- দ্রাঘিমাংশ ছকে ফেলা হয়ে গেছে। খোন্দকার, স্টুয়ার্ট, শাহবাজের বাবা, যাদের শাহবাজ বেবুন বলে তারা, তার ছেলেমেয়ে ও বই—এদের সঙ্গে শাহবাজের সম্পর্ক, এসব যেমন যুদ্ধের কোনো ফ্রস্টে ম্যাপ, নানা রঙের ফ্ল্যাগপিন দিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান চিহ্নিত করা হয় তেমনই স্পষ্ট চিহ্নিত। তেমন কোনো রঙে চিহ্নিত হওয়ার মতো কোনো স্বাতন্ত্র্যই ছেলেটির নেই। তেমন কোন ফ্ল্যাগপিন শাহবাজের আঙুলের ডগায় ছিলই না। লেখক দুটো আলগা মন্তব্য করে পাঠকের জানালেন বিরাট সাফল্য শাহবাজকে কিছু স্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়েছে, সে মনে মনেও ফ্ল্যাগপিন গাঁথতে পারে। শাহবাজ নিজে জানত যে সে মানুষ চিনতে পারে। একটা ছোট্ট ভঙ্গিতে, অসাবধানী কথায়, মুদ্রাদোষে, ভঙ্গিতে ধরা পড়ে যায়। ছেলেটির কোনো একটা কিছুতে শাহবাজের মনে না হয়ে পারে না, ওই রকমই ছিল যেন। যেসব জায়গায় তার প্রবেশাধিকার ছিল না, সেখানে ঢুকে পড়ত, যা তার পক্ষে দুষপ্রাপ্য তেমন কিছু দাবি করত। ছেলেটির সঙ্গে তার এই ইন্টারভিউ যে দস্তয়েভস্কীয় অবাস্তবতায় শেষ হলো, তার পর থেকে গল্পটিতে এই ছেলেটি অনুপস্থিতিতেও প্রবীণ হয়ে উঠেছে ও শাহবাজ তার আধিপত্য সত্ত্বেও অপ্রবীণ হয়ে উঠছে। সেই প্রাধান্যের প্রতিযোগিতায় কেক কাটার চরম মুহূর্তের ঘটনাটি ঘটে গেল। গল্পটি আমি এখনই পড়েছি। এখন পড়া থেকেই অনুমান করতে পেরেছি, বাংলাদেশের বাস্তব এই তরুণ লেখককে একটা পরিপূরক কিম্ভূত কাহিনির দিক নিয়ে গিয়েছে। বাস্তব থেকেই তিনি সেই কিম্ভূত তৈরি করতে পারেন। তাঁর লেখার এটাই সবচেয়ে জোরের জায়গা। কিন্তু সেই জোরের জায়গাটি তিনি নিজে চেনেন কি না, আমি বুঝতে পারছি না। শাহবাজ—লেখকটিকে ৬০ বছরের জন্মদিনের মতো বয়সী লাগছে না। লেখক পাল্টা বলতে পারেন, সেটাই তো তাঁর গল্প। পাঠক হিসেবে পাল্টা বলতে পারি, তা হলে ৬০ বছর বয়সের একটা স্থিরবিন্দু তো থাকা দরকার। থাকলে সেই স্থিরবিন্দু থেকে শাহবাজের দূরত্ব মাপা যায়। এই গল্পটি ভেতরে থেকে একটা আখ্যায়িকা বা নভেলেটের বিস্তার চাইছে। লেখক সেই বিস্তারটুকু নিয়ে বাড়াননি। ইমতিয়াজের সঙ্গে দুপুরের খাওয়া থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে শাহবাজ যেমন ঘুমোচ্ছে, ঘুমোক। কিন্তু বিলকিস ও সোনিয়া একটু নিজেদের মতো চলাফেরা করলেই গল্পটা নভেলেটের বিস্তার পেয়ে যেতে পারে। আমি তো বইটি নিয়ে কথা বলছি, যাকে বলে রিভিউ লিখছি। পরামর্শ দেওয়া নিশ্চয়ই আমার এখতিয়ারভুক্ত নয়। এই পরামর্শটা অছিলা। আমি এই লেখকের দৌড়ের দমটা আন্দাজ করতে চাইছি। তাই আর একটি গল্প পড়ব, ‘এলিফ্যান্ট রোড।’ এই গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করলে এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো গল্প হিসেবে পড়া যেত। কিন্তু মূল ইংরেজিতে এটা সেই সবচেয়ে ভালো হয়ে উঠছে না। কেন? লেখক তাঁর নিবিড় বাঙালি অভিজাত্যকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেলেছেন। সাহিত্য কখনো অনূদিত অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরি হয় না। আমার কথাটির প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি জায়গা উল্লেখ করছি। গল্পটির দ্বিতীয় প্যারায় ঢাকার একটি জনবহুল রাস্তার বর্ণনা ঘটছে। গল্পটির ভিত এই রাস্তাটি এবং সেই রাস্তা দিয়ে এই যুবকটির হাঁটা। আমি ইংরেজির মূল বাক্যের গঠন অবিকৃত রেখে বাংলা অনুবাদ করে পড়ছি, সেই পড়ার ফলে দেখা যাবে ইংরেজি বাক্য ও তার শব্দানুগ বাংলা অনুবাদও এই বাস্তবের ভিত তৈরি করতে পাড়ছে না। Aninda had trudged over to that congested shop filled street, where the buildings jostled shoulder to shoulder as densely as the pedestrians milling in their shadows to buy a pair of PT shoes for his daughter. ইংরেজি গড়ন রেখে বাংলা অনুবাদ দাঁড়াবে: অনিন্দ্য বেশ কষ্ট করে পার হলো সেই ভিড়াক্রান্ত দোকানঠাসা রাস্তাটি; যেখানে দালানগুলোও এ ওর কাঁধে ধাক্কা মারছে, যেন এতই ঘন সন্নিবিষ্ট এই ছায়ামূর্তি পথিকদের মতোই তার মেয়ের জন্য এক জোড়া পিটি জুতো কিনতে। লেখকের বাক্যগঠন অবিকৃত রাখতে এবং এই বর্ণনায় অভিজ্ঞতার অনুবাদ বাস্তব থেকে সরে এসেছে কেমন—সেটা দেখাতেই আমি ইচ্ছা করেই অনুবাদটি এমন ঠাসা রেখেছি। লেখক যা দেখেছেন, সে রাস্তাটা এই রকম—অনিন্দ্যকে ওই ভিড়ঠাসা রাস্তা ঠেলে ঠুলে বেরোতে হলো। মানুষজন এ-ওর গায়ে পড়ে ছায়ার মতো চলছে, দুই পাশের বাড়িগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা নেই, এ-ওর গায়ের ওপর পড়ছে। কিন্তু অনিন্দ্যকে দোকানে যেতেও হবে, তার মেয়েকে কালই পিটি সু পরে যেতে হবে। কেউ যদি বলেন, লেখকের এই দেখাটা তার লেখাতেও পড়ে নিলে হয়। তেমন পড়া যায় না। পাঠক তো অনুবাদ করে দেখতে পারেন না। লেখক যা দেখছেন বলে বলছেন, সেটাই তাঁর অভিজ্ঞতা । এই গল্পের আরও দুটি এমন দরকারি জায়গা অনিন্দ্যের বাড়ির খাওয়ার জায়গা আর হাসপাতালের ওয়ার্ড। এই দুটি জায়গাতেও অভিজ্ঞতার অনুবাদ ঘটছে। ফলে, গল্পের শেষে প্রতিবেশীর পেয়ারাগাছের ছায়াটা বুড়ো মানুষের মতো দেখাটাও ইংরেজিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ গল্পটিকে যদি তার লিখিত আকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবি, তাহলে এই গল্পটি এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো গল্পের একটি। হয়তো সবচেয়ে ভালো দুটির মধ্যে একটি। কথাটি আমি তুলছি একটি আরও জরুরি কথা বলতে। এবার আমি এই গুডনাইট মি. কিসিঞ্জার বইটির অতি তরুণ গল্পকারকে আনিস আহমেদ তাঁর গল্পগুলোতে বাংলাদেশের জীবনকে তিনি যেমন দেখেছেন, আমাদের তেমনই দেখাতে পেরেছেন। আমি তাঁর একটি গল্পের আধাআধি পর্যন্ত পড়ে লেখার চেষ্টা করলাম, কী করে সেই দেখা ও দেখানোটা সত্য হয়ে উঠল। ওই গল্পটির বাকিটুকু বা তার আরও আটটি গল্পের আর কোনটি আমি কী করে পড়েছি, তা আর বলব না। এই লেখাটির উপলক্ষে তেমন কথা বিস্তারের পক্ষে যথেষ্ট নয়। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এবার আমার পড়ার অভ্যাসের রক্ষণশীলতার যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেই কথাতে ফিরে যেতে চাই। এই আমাদের প্রায়—মহাদেশের জীবন নিয়ে একটা ইংরেজি সাহিত্যে তৈরি হয়ে চলেছে, আমেরিকানরা তার নাম দিয়েছেন দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য। কথাটি আমি তুলছি একটি আরও জরুরি কথা বলতে। এবার আমি এই গুডনাইট মি. কিসিঞ্জার বইটির অতি তরুণ গল্পকার কে. আনিস আহমেদ তাঁর গল্পগুলোতে বাংলাদেশের জীবনকে তিনি যেমন দেখেছেন, আমাদের তেমনই দেখাতে পেরেছেন। আমি তার একটি গল্পের আধাআধি পর্যন্ত পড়ে লেখার চেষ্টা করলাম কী করে সেই দেখা ও দেখানোটা সত্য হয়ে উঠল। ওই গল্পটির বাকিটুকু বা তার আরও আটটি গল্পের আর কোনোটি আমি কী করে পড়েছি, তা আর বলব না। এই লেখাটির উপলক্ষে তেমন কথা বিস্তারের পক্ষে যথেষ্ট নয়। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এবার আমার পড়ার অভ্যাসের রক্ষণশীলতার যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেই কথাতে ফিরে যেতে চাই। এই আমাদের প্রায়-মহাদেশের জীবন নিয়ে একটা ইংরেজি সাহিত্যে তৈরি হয়ে চলেছে, আমেরিকানরা তার নাম দিয়েছেন দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য। ব্রিটিশরা তার নাম দিয়েছেন কমনওয়েলথ লিটারেচার। লাখ লাখ ডলার-পাউন্ডে সেই নামী সাহিত্য এখন ওই চিহ্নিত ভূখণ্ডের একমাত্র সাহিত্য হয়ে উঠেছে। সে হোগ্ গে। কিন্তু এই সাহিত্যেও কোনো উদ্দিষ্ট নেই। যেন আমি কাউকে ডাকছি অথচ সে নামে কে সাড়া দেবে, তা আমি জানি না। এই প্রায়-মহাদেশের এত এত ভাষা এত যে কোটি কোটি মানুষের জিবের ও কানের ভাষা এ-সাহিত্যে সে-ভাষায় লেখা নয়। তাহলে তারা তো সাউথ এশিয়ান বা কমনওয়েলথ লিটারেচারের উদ্দিষ্ট পাঠক হতে পারে না। বেশ, না-ই হলো। যার যা ভাষা, সেই ভাষার সাহিত্যই সে প্রধানত আর প্রথমত পড়লেও পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সব সাহিত্য আমরা ভালো বা খারাপ বাসি। এই সাহিত্য সেভাবেই পড়া হবে বেশ, বটেই তো। কিন্তু অনুবাদ তো একমাত্র তার পাঠ যে মূল ভাষা জানে না। এই সাহিত্য যদি অনুবাদতুল্যই হয়, তা হলেও তো এর একজন মূল ভাষা কোথাও না-কোথাও আছেন? তাঁরা কে, তাঁরা কোথায় থাকেন? নিশ্চয়ই সাহেবরা নন সেই পাঠক—সে সাহেব নিউজিল্যান্ডরই হোক আর টরন্টোরই হোন। এই সাহিত্য ইংরেজি সাহিত্যের অংশ নয়। কোনো শাহেব আলোচক সাহিত্যবিবেচনায় এই লেখাগুলোকে তার প্রতিপাদ্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য হিসেবে মানেন, এমনটি অন্তত আমার চোখে পড়েনি। এই সাহিত্যের পাঠক তাহলে দক্ষিণ এশিয়া বা কমনওয়েলথের সেসব মানুষজন যাঁরা ইংরেজি ভাষাতেই সাহিত্য পাঠের আমোদ খোঁজেন—এটা বিশ্বাস করে বলে ও তাদের নিজেদের ভাষার সাহিত্য থেকে সেই আনন্দ পাওয়া তাদের নানা কারণে সম্ভব নয় বলেই তাঁরা এই সাহিত্যের পাঠক। ঠিক এই পর্যন্ত এসেই আমার বিপদ। তা হলে এ-সাহিত্যেও গোড়া ও আগা দুটোই অনুবাদের ভেতর সেঁধিয়ে আছে। বাংলাদেশ বা বর্ধমানের, করাচির বা শ্রীলঙ্কার, সিঙ্গাপুরের বা রেঙ্গুনের যে জীবন আমার গল্প-উপন্যাসের গল্প হয়ে উঠছে, সেই জীবনটাই অনুবাদ করা হচ্ছে। ভাষাটা তো অনুবাদের ভাষা নয়, লেখক তো ওই ভাষাতেই লিখছেন, সেটাই মৌলিক ভাষা। মুলকরাজ আনন্দ বা আর কে নারায়ণ ও এখানকার অনেক লেখকই তো ওই ভাষাতেই লিখছেন— সে সালমান রুশদিই হোন আর যে-ই হোন, এমন কি ভি এস নায়পলই হোন; তাঁরা শুরুই করেছেন অভিজ্ঞতার অনুবাদ থেকে। অভিজ্ঞতার অনুবাদ থেকে এমন গল্প হতে পারে তা মূলত সাংবাদিক, তাতে আবার আপত্তি নেই, সাংবাদিকতা নিশ্চয়ই সাহিত্যকর্ম হতে পারে কিন্তু নিশ্চয়ই শিল্পকর্ম হতে পারে না। আমার এই গোঁড়ামিতে এই তরুণ লেখক, কে. আনিস আহমেদ একটু চোট দিয়েছেন। তাঁর লেখা পড়ে প্রথম মনে হলো, এটা অভিজ্ঞতার অনুবাদ ও শিল্পকর্ম হতে পারে, যদি সেই অনুবাদটা জীবনেই ঘটে থাকে। ওই নামগল্পটি নিয়ে আমি দেখতে চেয়েছি গল্পটির ভেতরেই ভাষা তৈরি হয়েছে। এ-গল্প বাংলাতেই লেখা যেত, এমন জিদ অচল যদি আমার গোঁগামিতে এই পর্যন্ত মানতে আমি সম্মত যে হ্যাঁ, এই গল্পই ইংরেজিতেও লেখা যায়। এই বইয়ের আরও কিছু গল্পে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিদেশে জীবনের অনেকটা কাটিয়ে এসে এক যুবক তার চেনাজানা নিজেরই শহরটাকেই খুঁজে পায় না (‘ইয়ার অব রিটার্ন’)। তেমনি আর দুটি গল্প ‘এলিফ্যান্ট রোড’, ‘অল মাই এনিমিজ’। উল্টো দিকে ‘চামেলি’ ও ‘রামকমলস গিফট’-এর অভিজ্ঞতার ভিত খাঁটি বাঙালি। বাকি কিছু গল্প সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আনিস আহমেদ তাঁর লেখার ভেতরের যুক্তিতে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে গল্পের অভিজ্ঞতা ও গল্পের ভাষার হরিহরাত্ম সম্পর্ক-বিষয়ে তিনি সচেতন ও খুঁতখুঁতে। তা হলে তিনি বাংলাতেও লিখুন, ইংরেজিতেও লিখুন।

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!