User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কামালপুর ১৯৭১: সম্মুখযোদ্ধা এবং ভারতীয় ও পাকিস্তানি সমরবিশেষজ্ঞদের কথা সম্পাদক: মুহাম্মদ লুৎফুল হক প্রথমা প্রকাশন প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী দাম: ২৭৫ টাকা বর্তমান জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম কামালপুর। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখা থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরেই ছিল ১৯৭১ সালে রণকৌশলগতভাবে অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ কামালপুর বিওপি তথা এই সীমান্তঘাঁটি বা সীমান্তচৌকির অবস্থান। এরই দখল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একক এবং ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যে যৌথ সামরিক অভিযান চলেছিল, তারই বহুমাত্রিক বিবরণ ধারণ করা এই গ্রন্থ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জোগাবে অমূল্য উপাদান। বস্তুত এই গ্রন্থ হয়ে উঠেছে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের বিবরণধৃত এক অমূল্য দলিলবিশেষ। স্মরণ রাখতে বলি, কামালপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকটি পর্যায়ে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং তার যে প্রায় নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা, পাশাপাশি সেই যুদ্ধের যে প্রচণ্ডতা, তেমনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আর কোনো এলাকার রণাঙ্গনে দেখা যায়নি। ছয়টি পরিশিষ্টসহ মোট চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই গ্রন্থ। যেমন—কামালপুর, যাতে আছে কামালপুর বিওপির অবস্থান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা, মুক্তিবাহিনীর অবস্থান, কামালপুরের চূড়ান্ত যুদ্ধ ও উপসংহার, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আছে নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের কলমে কামালপুর যুদ্ধের বিবরণ। এখানে লিখেছেন মেজর আবু তাহের বীর বিক্রম, ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, ক্যাপ্টেন আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম ও লেফটেন্যান্ট মো. আবদুল মান্নান বীর বিক্রম। তাঁদের বয়ানে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে শত্রুর বিরুদ্ধে কামালপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ যুদ্ধের দৃশ্যাবলি। তৃতীয় পরিচ্ছেদে আছে গণবাহিনীর ১৭ জন সদস্যের সাক্ষাৎকার। তৃণমূল পর্যায়ের এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের তুলে ধরা বিবরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গাটির যুদ্ধের অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতিবন্ধকতাগুলো, তাঁদের সাময়িক পশ্চাৎপসরণ, পুনর্গঠিত হওয়া এবং শেষত মরণপণ যুদ্ধের যে খুঁটিনাটি বিবরণ, এককথায় তার পাঠ রোমাঞ্চকর কাহিনিকেও হার মানায়। সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক এই গ্রন্থের চতুর্থ পরিচ্ছেদটি, যেখানে কামালপুরের যুদ্ধের বিবরণ একজন পাকিস্তানি ও একজন ভারতীয় পদস্থ সামরিক কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। এই দুই সামরিক কর্মকর্তা হচ্ছেন ভারতীয় মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং এবং পাকিস্তানের মেজর সিদ্দিক সালিক। উল্লেখ্য, কামালপুর যুদ্ধের বিবরণ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পাঠদান করা হয়। বইটিতে বেশকিছু দুর্লভ দলিল ও আলোকচিত্র সংযুক্ত হয়েছে, যা আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এই গ্রন্থের পরিশিষ্টের সুবাদে দেখি এই যুদ্ধে কতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এখানকার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টভুক্ত সেনাদের শহীদ হওয়ার সংখ্যা ২৯ এবং সেক্টর ১১ভুক্ত সেনাদের শহীদ হওয়ার সংখ্যা ১১৩। আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধের যতগুলো সেক্টর ছিল, সেগুলোর মধ্যে এই সেক্টরের সেনাদের শহীদ হওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এই সেক্টরের সেনাদের নানা খেতাবে ভূষিত হওয়ার সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি বলেই মনে হয়। গ্রন্থের সম্পাদক মুহাম্মদ লুৎফুল হককে আন্তরিক ধন্যবাদ কামালপুরে সংঘটিত যুদ্ধকে বহুকৌণিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে ধরার জন্য। তাঁর সম্পাদনার গুণেই সন্দেহাতীতভাবে মূল্যবান হয়ে উঠেছে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথাসমৃদ্ধ এই আলোচ্য গ্রন্থটি।