User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত কবি; যদিও তাঁর ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং ইত্যাকার বিপুল রচনা কোনোভাবেই অগণ্য নয়। কিন্তু এও সত্যি যে তাঁর সাহিত্যিক সত্তার সঙ্গে ধর্মসাধনা ও দর্শনচিন্তার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, বিশেষত কবিতা ও গানে। তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধের বিষয় ধর্ম, সমাজ ও দর্শন। কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বাঁকবদল সুস্পষ্ট, কিন্তু তাঁর মধ্যকার ধর্মবোধ কখনো মোচড় খায়নি। প্রমথনাথ বিশী বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ও শিল্প নিয়ত পরিবর্তনশীল, নানাবিধ পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া তাহারা গিয়াছে—কিন্তু একটি বিষয়ে কখনো তাহাদের পরিবর্তন ঘটে নাই... বিশ্ববিধানের পরিণাম মঙ্গলময়, বাহ্য দুঃখ-কষ্ট ও অমঙ্গল উদারতর দৃষ্টিতে শুভেরই ছদ্মবেশ, বিশ্বব্যাপারে যিনি কর্তা তিনি আনন্দ ও কল্যাণস্বরূপ...।’ আর আধুনিক বুদ্ধদেব বসুর মতে, রবীন্দ্রনাথ আজীবন শুভত্ব বিষয়ে সর্বদা নিঃসংশয় ছিলেন—‘রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাসের ঘোষণা অধিকাংশ স্থলেই নির্দ্বন্দ্ব।’ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কথিত এই শুভবোধ ও মঙ্গলচেতনা রবীন্দ্রমানসের মূল প্রবণতা, তাঁর ধর্ম ও দর্শনচিন্তার মূল ভিত্তি। জীবনের শেষপাদে তরুণ প্রবল আধুনিকতাবাদীরা এ জন্যই তাঁকে ‘পরিত্যাজ্য’ হিসেবে ‘খারিজ’ করে দিতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ও দর্শনচিন্তা কেবলই সাহিত্যের পথে এগোয়নি, এ তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকার—শুরু যৌবনের প্রারম্ভে, ব্রাহ্মধর্মের চর্চা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে এবং থেকেছে আমৃত্যু প্রবহমান। ভারতীয় উপমহাদেশে রবীন্দ্রনাথ কবি হিসেবেই বেশি আদৃত, কিন্তু বাইরের জগতে তাঁর সম্পর্কে আগ্রহ তাঁর ধর্ম ও দর্শনচিন্তার জন্য। এসব স্বল্পালোচিত প্রসঙ্গ নিয়ে একটি চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন চিন্তাশীল লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। গ্রন্থটির নাম রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন। রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী ছিলেন, কিছু আচারসাধনাও করতেন, ধর্মোপদেশও দিতেন, কিন্তু তিনি ‘ধর্মগুরু’ ছিলেন না, দার্শনিকের মতো ‘সত্যের সন্ধান’ও করেছেন, কিন্তু ছিলেন ‘সৌন্দর্যপূজারি’, ‘ভাবযোগী’ হলেও ছিলেন ‘সমাজসজ্ঞান ও রাজনীতিসচেতন দায়িত্বশীল মানুষ’। এ ধরনের উপক্রমণিকা দিয়ে বইটির শুরু। এর পরে রয়েছে এসবের ব্যাখ্যা বিভিন্ন শিরোনামে—হিন্দু, ব্রাহ্ম, বৌদ্ধ, বাউল, লোকজ ধর্ম, সুফিবাদ এবং মরমি মানবতাবাদ কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে প্রভাবিত এবং তাঁর নিজস্ব ধরনের ধর্মসাধনা ও দর্শনচিন্তা নির্মাণ করেছে, তার বিস্তারিত আলোচনা। পাশ্চাত্যের রাসেল ও ক্রোচের সঙ্গে ভাববিনিময় এবং জাপান ও পারস্যের অভিজ্ঞতার বর্ণনাও রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ও দর্শনের স্বরূপ, দেশ-বিদেশে তার প্রতিক্রিয়া এবং সমকালে ও ভবিষ্যতে তাঁর ধর্ম ও দর্শনচিন্তার প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করেছেন লেখক। এই মহান ভাবুকের এত সব চিন্তা ও কর্মোদ্যোগের কি কোনো অভিমুখ ছিল না? উপসংহারে গ্রন্থকারের ধারণা, রবীন্দ্রনাথ ‘একটি ভারতবর্ষীয় একেশ্বরবাদী সমাজ গড়ে’ তোলার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর অনেক সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা থাকলেও লেখক মনে করেন, ‘আধুনিক সংঘাতময় সময়ে তাঁর চিন্তার অনুশীলন মানবসমাজের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে।’ এখানেই এই বইটির প্রাসঙ্গিকতা। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রজীবনের কিছু নতুন এবং স্বল্পালোচিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। গ্রন্থটির পাতায় পাতায় লেখকের গভীর অধ্যয়ন, পরিশ্রম ও গবেষণার স্বাক্ষর বিদ্যমান। আলোচ্য বিষয় গুরুগম্ভীর হলেও তাঁর ভাষা প্রাঞ্জল ও উপভোগ্য। রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে উপলব্ধি ও চর্চা করতে এই গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রতীতি রাখা যায়।