User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাহিত্যাঙ্গনে ‘জীবনগাঙের পরানকথা’র কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত তরুণ কবি ও লেখক আহমেদ তানভীর। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা 'জীবনগাঙের পরানকথা’ (২০১২) কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ‘কাঠকয়লার আঁচড়’ (২০১৩) কবি আহমেদ তানভীরের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। পাঠকের পছন্দের কোন সীমারেখা নেই। পরিবর্তন জগতের স্বাভাবিক নিয়ম। আহমেদ তানভীরও বুঝি সেই পরিবর্তনের নতুন ঠিকানা চেনাতেই লিখলেন আধুনিকতা মিশ্রিত কাব্যগ্রন্থ ‘কাঠকয়লার আঁচড়’ যা বলয়ভাঙার সংকোচহীন বহিঃপ্রকাশ। কবিতা এখানে নতুন দিগন্ত খুঁজে পেল। আহমেদ তানভীর এর কবিতায় দর্শন প্রচুর। কবি এখানে জীবনসংগ্রাম, দ্রোহ, পিতৃবিয়োগের বেদনা, মা-মাটির প্রতি আকুতি, সুখ ও শোক, দুঃখ ও কষ্ট, নিঃসঙ্গতা, মৃত্যুচিন্তা, শৈশবস্মৃতি, প্রেম, বিরহ ও রোমান্স যেভাবে চিত্রিত করেছেন তা সত্যি এক কালজয়ী সৃষ্টি। ‘কুকুরের কামড়ে যেদিন ছিঁড়ে গেল আব্বার সফেদ পাঞ্জাবি/ সেদিনই বুঝেছি, এখানে আমাদের থাকতে দেওয়া হবে না’ (নির্বাসন)। এরকম সহজ সরল বচন ক’ক’জনের পক্ষে সম্ভব এভাবে বলা? ‘বুঝলা মিয়ারা, মাথায় লালপট্টি বাইন্ধ্যা/ চুরুটের নরম পাছায় চুমা দিয়া দিয়া/ লাল চায়ে ঠোঁট ভিজাইলে/ আর চিল্লাইয়্যা গলার রগ ফুলাইলেই বিপ্লব অয় না।/বিপ্লব আমরাও করছি মিয়া...’ (ধূমায়িত বিপ্লব)। তাঁর কবির কবিতায় বিপ্লবের চিত্র ধরা দেয় এভাবেই। কবি কখনো চরম দ্রোহে ঘোরগ্রস্থ হয়ে বলেছেন, ‘এবার লাথি মেরে উল্টে দেবো মানচিত্র’ (উল্টে দেবো মানচিত্র) কিংবা ‘গণমানুষের সেলাম পাওয়া এক শুয়োরের বাচ্চা আমি’ (আমাকে মানুষ করে দে মা)। অকপটে চিত্রিত করেছ ‘বর্ণনা করেছেন ‘চলার পথের গল্প’। আহমেদ তানভীর এ দেশে গৃহযুদ্ধের আশংকা করেছেন এভাবে- ‘মা, তুমি তো জানো, এ দেশে সহসাই হবে না কিছু/ তোমার আঁচলতলে শেষবারের মতো একটু ঠাঁই দাও/ তোমার সনত্মানদের ললাটলিখন- অনিবার্য গৃহযুদ্ধ/ কেউ ঠেকাতে পারবে না- কেউ না...’ (শয়তানের বিজয়োল্লাস)। বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে কবির হতাশা পাঠককেও হতাশাগ্রস্থ করে ÔÔস্বপ্নের বসতি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় সময়-শকুন;/ অথচ, ‘বেশ ভালো আছি’ বলে/ ঠিকই ভালো থেকে যায় নষ্টের প্রজন্ম!” (সময়-শকুন)। পিতৃবিয়োগের বেদনা ফুটে উঠেছে ‘মনজানালায় আব্বার মুখ’ শিরোনামে লেখা দশটি কবিতায়। কবির এ বেদনায় পাঠকহৃদয়ও কেঁদে ওঠে অজান্তেই। ‘‘আমার সমস্ত ভালোবাসা বিষাক্রান্ত হয় যদি ছোবলে ছোবলে/ বেদনায় নীল হয়ে যেতে যেতে নরম গলায় বলবো/ ‘নাগিন, আমি তোমাকেই ভালোবাসি...’ (ভালোবাসার ইচ্ছেঘুড়ি)। ‘কেঁপে কেঁপে ওঠা বুকের পর্বতে টিপটিপ বৃষ্টি হবে,/ খসে পড়বে প্রাচীন দেয়ালের গভীর আস্তরণ!’ (অসভ্য কবিতার খসড়া)। আহা! এত রোমান্স যা সত্যি শিহরণ জাগায়। কবির কাব্যপ্রেমিকাগণ পাঠককে ভাবিয়ে তুলে বারেবারে। কখনো নিরুপমার জন্য হাহাকার ‘তুমি এলে না/ এলে না তুমি, নিরুপমা!/ কৃষ্ণচূড়ার লাল চাদর আজ হয়ে যাক আমার কাফন,/ ভালোবাসার নির্জন সীমান্তে হোক তবে আমার দাফন!’(ভালোবাসার সীমান্তে)। আবার চিত্রাদি-কে নিয়ে স্মৃতিচারণ, ‘এরপর আর কোনদিন/ চাঁদভরা সন্ধ্যায় চিত্রা দি’র বুকের উপত্যকায় মুখ ডুবিয়ে/ শুনতে পাইনি ডালিমকুমার, পঙ্খিরাজ কিংবা সোনার কাঠি- রূপার কাঠি...’ (মনভাঙা রোদপ্রহর)। সত্যি বেদনা জাগায়। মাঝে মাঝে কবির স্বপ্নও কাব্য হয়ে যায়। স্বপ্নচোখে ভাসে শৈশব- ‘ঘুম ঢুলুঢুলু চোখ আজও খুঁজে ফেরে কাঁপা কাঁপা হাতে বর্ণ লেখার দিন।/ করুণ বাঁশরির মতো বাজে অদৃশ্য বিলাপ!’ (স্বপ্নচোখের কাব্য)। “অধরাই থেকে গেল শেষ বগির শেষ দরজাটা!/ দণ্ডিত হবার ভয়ে একবারের জন্যও শিকলটা টেনে দিলে না তুমি!’ (অধরা ট্রেন), ‘হৃদয়ের একপাশ ছিঁড়ে নিলে তুমি- অন্যপাশ খেয়ে যায় নিদারুণ উঁইপোকা!’ (আঁধারপেয়ালায় চুমুক)। কবির বিরহ এভাবেই বেদনা হয়ে বাজে। কবির স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল অতীত দিনের ‘কাঠকয়লার আঁচড়’- ‘অদৃশ্য কোনো দহনে পুড়তে পুড়তে আছড়ে পড়ি/ সেই মায়াবী স্কুলঘরের পেছনের ভাঙা দেয়ালে- / আজও যেখানে জেগে আছে কাঠকয়লার আঁচড়ে লেখা/ তোমার আমার যুগলবন্দি নাম;/ মাঝখানটায় একটা বেদনার্ত যোগচিহ্ন।’ (কাঠকয়লার দহনকথা)। প্রকৃতপক্ষে এ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি লাইনই কবিতা। নামকরণও যথার্থ হয়েছে বলা যায়। এতকিছুর পরেও নীলের প্রতি কবির দুর্বলতা লক্ষণীয়। এ কি বেদনার বহিঃপ্রকাশ নাকি অন্যকিছু তা সত্যিই রহস্যময়। বইয়ের কিছু কিছু জায়গায় বানানে ভুল আছে। ছাপার মান আরো খানিকটা ভালো হতে পারতো। মূলতঃ ‘কাঠকয়লার আঁচড়’ সমকালীন বাংলাসাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি। তবু সচেতন পাঠকই বলতে পারবেন বইটি কতটুকু সফল। ভেতরের কথা অকপটে বলতে পারাতেই আসল তৃপ্তি। কবি ‘ভাস্কর চৌধুরী’ এ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘কবি তাঁর মূল থেকে না নড়ে স্বাভাবিকভাবেই কবিতায় গ্রামজ, প্রাণজ জীবনের দায় ও দক্ষিণা মিশিয়ে লিখেছেন ‘কাঠকয়লার আঁচড়’। সর্বোপরি, এ কাব্যগ্রন্থ পাঠকের অনুভূতিকে বেশ নাড়িয়ে দিবে একথা অকপটে বলা যায়। ‘কাঠকয়লার আঁচড়’ সকল হৃদয়ে আঁচড় কাটুক এই প্রত্যাশা রইলো। কেননা, আঁচড় না দিলে কেউ মনে রাখে না। সা য়া দা ত চ ম ন [email protected] facebook.com/sayadatchamon