User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বিতংস - পাঠক প্রতিক্রিয়া ------------------------------------------------------------ বিতংস লেখকঃ ওয়াহিদা নূর আফজা প্রচ্ছদঃ সামিয়া হোসেন প্রাকাশকঃ আগামী প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারী ২০১৩ খ্রীঃ পৃষ্ঠাঃ ২৮০ মূল্যঃ ৫৫০ টাকা ------------------------------------------------------------ বিতংস এর ঘেরা টোপে পাঠক। লেখক তার স্বকীয়তায় সুনিপুণ রচনাশৈলী দিয়ে সুক্ষ সুক্ষ জালে আটকে ফেলবে পাঠককে - হ্যাঁ ওয়াহিদা নূর আফজার লেখা ‘বিতংস’ আগা-গোড়া পড়ে পাঠক হিসাবে এই আমার অভিমত। শাশ্বত বাঙলার চিরাচরিত গ্রাম-নগরে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায়ের অতি সাধারন দিনলিপি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। পাশাপাশি সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিখুঁত ও সত্যভাষণে অনুরণিত হয়েছে উপন্যাসের প্রতিটি পরতে-পরতে। বাংলার মফস্বল শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের এক সাদা-মাটা আখ্যান যেখানে লেখক আমাদের পরিচিত পরিবারের এক প্রতিচ্ছবি অত্যন্ত সফলতার সাথে অঙ্কন করেছেন। লেখক তার উপন্যাসের প্রভা ও বৈভবকে ভূগোল, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটে আধুনিক ছকে ফেলে ব্যাখা করার প্রয়াস নিয়েছেন। বিশেষ করে, সময়ের প্রেক্ষাপটকে তিনি সবক্ষেত্রেই মনে রাখতে চেয়েছেন। জীবন বহমান - এ নতুন কিছু নয়, বরং প্রতিটি মানব জীবন এ সত্যের বাহিরে যাবার ক্ষমতা এখনো অর্জন করেনি। তাই তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে সময়ের প্রলেপ পরে, শৈশব-কৈশরের ডানপিটে দাপাদাপি, যৌবনের প্রথম প্রেম, বাবা-মায়ের সংসারের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী, লেখাপড়া ও পাঠ বহির্ভূত পাঠ্যক্রম, বালিকা থেকে নারী হয়ে ওঠার ধারাক্রম, সামাজিক অবস্থান, সমাজে বাসরত সবল ও দূর্বলের কোমল-নিষ্ঠুর আচার ব্যবহার এ সব কিছুই আমাদের কারোর অজানা নয়। তবুও কি আমরা সবাই সবটুকু অনুভব, উপলব্ধি বা আত্মস্থ করতে পারি? ওয়াহিদা সেটা পেরেছেন এবং সুললিত, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় সফলভাবে তা উপস্থাপন করেছেন। লেখক হিসাবে এ তার অহংকার করার মত এক অর্জন। ‘বিতংস’ - মিষ্টি প্রেমের এক উপাখ্যানও বটে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দিয়া জীবনের প্রথম ভাগে প্রেম বিতংস-এ জরিয়ে পড়ে হিরণ নামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবকের সাথে। দৈনন্দিন বাঁধা জীবনে দিয়ার প্রেমের ব্যক্ত-অব্যক্ত অনুভূতি মানবিক ঘেরাটোপে কেবল অস্থিরতা জাগায়, প্রকাশ আর পায় না। দোদুল্যমান অস্থির চিত্ত তাই খানিকটা সাময়িক ছিটকে পড়ে সমাজের তথাকথিত রাজনৈতিক নেতার পুত্র শাহেনশাহ এর উপর। কিন্তু শাহেনশাহ এর অনৈতিক ও অবন্ধুসুলভ আচরন দিয়ার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এমতাবস্থায় সামাজিক দীনতা পরিবারকে বাধ্য করে দিয়ার বিবাহের আয়োজন করতে। সে বিয়ে বন্ধনেও সৃষ্টি হয় জটিলতা। নিয়তির খড়গে আত্মহুতি দিয়ে নির্মম ভাগ্যকে মেনে নিতে হয় হিরণ নামের আদর্শবান প্রেমিককে। ফলে অন্তর্জ্বালা আর আত্মদ্বন্ধের অনলে পুড়তে পুড়তে অঙ্গার হয়ে পড়ে দিয়ার কোমল হৃদয়। তাতে কি? কি যায় আসে তাতে? এ সবে কার কি লাভ-ক্ষতি? তবুও কি জীবন থেমে থাকে? থাকে না। দিয়াও তার জীবনের অন্য ক্যানভাস কিংবা অজানা, অচেনা এক থিয়েটারের খোঁজে জগতের অমোঘ নিয়মে বাড়ী থেকে বের হয়ে পড়ে.... মোটামুটি এই হল এই উপন্যাসের উপাখ্যান। ঘটনা প্রবাহের যোগসূত্র ও বর্ণনার প্রয়োজনে প্রধান চরিত্রগুলোর পাশাপাশি আরো বেশ কিছু চরিত্র সংযোজিত হয়েছে। উপন্যাসটি পড়লেই কেবল পাঠক এর সম্পর্কগুলো অনুধাবন করতে পারবেন। লেখক চরিত্র সৃষ্টিতে যেমন মুনশিয়ানার পরিচয় দেখিয়েছেন তেমনি পরোক্ষ চরিত্র বর্নণায় চরিত্রগুলো জীবন্ত রূপ ধারন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, চরিত্রগুলোর ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ়তা শুধু যে চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্যকেই ফুঁটিয়ে তুলেছে তা নয় বরং এসবের মধ্য দিয়ে লেখক সমাজের মনস্তাত্ত্বিক ও নীতিমূলক এক শুদ্ধ বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। উপন্যাসটির উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল, এর রূপকের ব্যবহার। ওয়াহিদা তার লেখার মধ্যে রূপকের যে ঝংকার তুলেছেন সেজন্য তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। যেমন: “অকেজো কাগজপত্রও অবেলায় ভারী হয়ে যায়। ঠিক যেন মানুষের মত।” কিংবা “সুখী হওয়ার প্রথম পাঠ ঋণমুক্ত হওয়া।” বা যখন মামুলীভাবে তিনি বলেন “ইটের প্রাচীর ডিঙোনো যায়, লোহার গারদ ভেঙে ফেলা যায়। কিন্তু অদৃশ্য শ্রেণীবৈষম্যের সীমারেখা কি অত সহজে অতিক্রম করা যায়?” - তখন বস্তুবাদী মানব চেতনা অজান্তেই আলোড়িত হয়। মনে হয়, এ যে আমারই কথা বলছে। আমার কিংবা আমাদের মত মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবিই ত দেখছি!! উপন্যাসের বিছানো জমিনে দেশ, রাজনীতি, মানবজীবন চরিত, সময় বা কাল ইত্যাদির পাশাপাশি সমসাময়িক ঘটনা, ব্যক্তিত্ব, এমনকি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্বিক নিদর্শনও সাবলীলভাবে স্থান করে নিয়েছে। এ সবের মধ্য দিয়ে তাই লেখকের জ্ঞানের গভীরতা পরখ করা যায়। নিঃসন্দেহে উপন্যাসটি সব দিক বিচারে পরিপূর্নতা পেয়েছে। আমাদের সমাজ-সংসারের আটপৌর মফস্বল জীবনের ছন্দোবদ্ধ ছকে ফেলা দিনগুলো প্রকৃতির নানা টানা-পোড়নে নিত্য বহমান। এই সহজ সরল অকপট জীবনকে লেখক চিত্তহারী ভাষায় সরস করে তুলেছেন। ওয়াহিদা নূর আফজার লেখালেখির প্রতি অনুরাগ সেই ছোটবেলা থেকে। তিনি ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ এ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যায়ন করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তড়িৎকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। অতপর যুক্তরাষ্ট্রের স্যান হোজে স্টেট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া খেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। উপন্যাসটি সকল মহলে ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আশা করি এই ধারা চির অব্যাহত থাকবে। ওয়াহিদার জীবনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রীঃ [email protected] ঢাকা-১২৩০
Was this review helpful to you?
or
বিতংস লেখকঃ ওয়াহিদা নূর আফজা প্রকাশকঃ আগামী প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ওয়াহিদা নূর আফজার দ্বিতীয় উপন্যাস 'বিতংস' আবর্তিত হয়েছে মূল চরিত্র 'দেয়ার' জীবনকে ঘিরে। প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশের এক মফস্বল শহর। গল্পের শুরু ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে। পুরনো কাগজপত্র হাতড়াতে গিয়ে মধ্যবয়েসি দেয়া হঠাৎ করেই খুঁজে পায় ফেলে আসা অতীতের এক অমূল্য উপহার; নিমিষে সে ফিরে যায় তার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের ঘটনাবহুল দিনগুলিতে। দেয়ার শৈশব কাটছিল কুমিল্লা শহরের আর আট দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুর মতই। হঠাৎ ঝড়ের মত এল মুক্তিযুদ্ধ। নির্বিঘ্ন জীবন হঠাৎ হয়ে উঠল অশান্ত, উত্তাল আর আশংকাময়। যুদ্ধের ডামাডোলে দেয়ার পরিবার জড়িয়ে পড়ল শহরের এক বনেদী পরিবারের সাথে। এরই মধ্যে ঘটনাচক্রে ছোট্ট দেয়া দেখা পায় রাজপুত্রের মত একজনের, যে অবধারিতভাবে পরিণত হয় তার স্বপ্নপুরুষে। এই 'হিরণ' চরিত্রটিই দেয়ার গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। পুরো উপন্যাসের মূল উপজীব্যই হল দেয়ার সাথে তার স্বপ্নপুরুষের সম্পর্ক, তাকে নিয়ে দেয়ার দ্বিধা দ্বন্দ্ব, হতাশা, আবার তার কাছ থেকেই অনুপ্রানিত হওয়া। শৈশব ও কৈশোরে পেরিয়ে দেয়া বিকশিত হতে থাকে সুদর্শনা গুনী তরুনী হিসেবে। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশও এক বাক থেকে আরেক বাকে প্রবাহিত হতে থাকে। একাত্তর, পচাত্তর, জিয়াউর রহমান, এরশাদ আমল - সাম্প্রতিক ইতিহাসের মাইলস্টোনগুলো দেয়ার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়। এরপরও সে তার প্রতিভার জোরে আর প্রগতিশীল বাবামার উৎসাহে, মধ্যবিত্তের ছক বাঁধা গন্ডীর বাইরে আসার চেষ্টা করে। সফলও হতে থাকে, ঠিক মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। সে কঠিন পথে শেখে যে, সামান্য একটা ভুল কত অমোঘ পরিনতি টেনে আনতে পারে। যত গুণী বা খ্যাতিমানই হোক না কেন, আমাদের বাঙালি মুসলিম সমাজে একটা মেয়ের বিকশিত হওয়ার সুযোগ সীমিত,পথ কাটায় ভরা এবং সম্মান ক্ষণভংগুর। সামাজিক প্রতিকূলতার সাথে এরপর যোগ হয় কঠিন আঘাত। এতসব দুর্ভাগ্য, হতাশা আর গ্লানিকে জয় করে দেয়া আবার মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে, নাকি অতল তলে তলিয়ে যাবে - বইয়ের শেষ পাতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত পাঠক জানবেনা। এখানেই লেখিকা তাঁর প্রতিভা দেখিয়েছেন - পাঠককে ধরে রাখার কাজে পুরোদস্তুর সার্থক। ওয়াহিদার লেখনির তিনটি দিক উল্লেখ করতে চাই। এক হল, তার ইতিহাসকে একনিষ্ঠভাবে তুলে আনার চেষ্টা, সন্দেহ নেই এই নিয়ে তাকে তুমুল পড়াশোনা/গবেষণা করতে হয়েছে। স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা একটা সাধারণ পরিবারকে কতখানি অনিশ্চয়তায় ফেলতে পারে, ওয়াহিদা তার বিশ্বাসযোগ্য ছবি এঁকেছেন। দ্বিতীয়ত, সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা আর প্রতিক্রিয়াশীলতার হ্মতিকর প্রভাব তুলে ধরেছেন খুবই সূক্ষ্মভাবে, নিজের (ধরে নিচ্ছি প্রগতিশীল)দর্শনকে পাঠকের উপর চাপিয়ে দেননি। তিন নম্বর হল, লেখিকা তার নায়িকা দেয়ার মনস্তাত্তিক বিশ্লেষণে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন, যদিও কখনো কখনো সেটা গল্পের গতিকে কিছুটা হলেও শ্লথ করেছে। শুধু ছোট্ট একটা অভিযোগ, লেখক বেশ কিছু জায়গায় সাধু-চলিত মিশিয়ে ফেলেছেন - তবে সেটা খুবই সামান্য খুঁত। ওয়াহিদা লেখালেখি করছেন বেশীদিন হয়নি, বয়সেও তরুণী - আশা করি তার লেখা আরো পরিণত হবে, ইতিমধ্যেই সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে 'বিতংস'এর মধ্য দিয়ে। অভিনন্দন তাকে।
Was this review helpful to you?
or
প্রচলিত অর্থে রিভিউ বলতে যা বুঝায় আমার এই লেখাটি ঠিক সেই কাতারে পড়বে না। আবার কেউ যদি একে বিজ্ঞাপনমূলক ফরমায়েশী লেখার দলে ফেলে দেন তা হলেও আমি আপত্তি করবো। কারো উপন্যাস নিয়ে যখন আলোচনা মূলক কিছু লিখবো তার উদ্দেশ্যে প্রচারণা থাকবে না এমন আশা করা যায় না। তবে এই লেখাটি আমার কাছে মোটেও ফরমায়েশী নয়। বরং ভালো লাগার জায়গা থেকে স্বপ্রণোদিত লেখা।এত কিছু শুরুতে বলে নেয়ার কারণ হলো এই বইটি আমি পুরোটা পড়ি নি। তবে এই উপন্যাস জন্ম নেয়ার সাথে খুব সামান্য জায়গা থেকে হলেও জড়িত ছিলাম বলেই হয়তো এর মধ্যে আমার নিজের অধিকারবোধ কাজ করে অজান্তেই। তাই বই বিষয়ে কিছু বলার চাইতেও বইয়ের সাথে আমার সৌহার্দের গল্পের বয়ানটুকু আগে করে নেই। বইয়ের লেখক ওয়াহিদা নূর আফজা শান্তা আপার সাথে আমার পরিচয় মূলত ক্যাডেট কলেজ ব্লগ সূত্রে। তার কিছু লেখা পড়া তা নিয়ে কথা বলার সূত্র ধরেই কোন কারণে আমার পাঠক সত্তার উপর উনার ব্যাপক আস্থা জন্মে। অথবা বলা যায় ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি আমাকে ফেসবুকে কথা প্রসঙ্গে এই বইটির কথা বলেন। এবং আমি বইটি পড়ে পাঠকের জায়গা থেকে মূল্যায়ন তাকে দিতে পারি কিনা তা জানতে চান। পাঠ্য বই ব্যতীত কোন পড়ার ব্যাপারেই আমার কখনো না ছিলো না। তাই সানন্দের সাথেই রাজি হই। আপা আমাকে অল্প কিছু অংশ পাঠান। সত্যি বলতে দ্বিধা নেই বইটির ব্যাপারে খুব বেশি উচ্চ ধারণা নিয়ে পড়া শুরু করি নি। তাই পড়ার পরে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গৎবাধা অ আ ক খ এর বাইরে কিছু বলতে পারি নি। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমার প্রথম দিককার ফাঁকিবাজি মূল্যায়ন হয়তো লেখক চোখ এড়িয়ে যায়। তাই হয়তো তিনি আরো একটু অংশ আমাকে পড়বার সুযোগ করে দেন। উপন্যাস এগুবার সাথে সাথে মনে হয় লেখা গভীর হয়। আর প্রেক্ষাপটের দরুণ আমি বেশ আকৃষ্ট হই। এর পরের বারে নিজেই পরের অংশ গুলো চেয়ে নেই। সময় যতই এগুতে থাকে উপন্যাসটি আমাকে বেশ আকর্ষণ করতে থাকে চুম্বকের মতো। পরের দিকে যা হতো আমি মোটামুটি এক বসায় পড়ে ফেলতাম এবং আমার ভাবনা গুলো সাথে সাথে নোট করে পাঠাতাম। সময়ের সাথে সাথে চরিত্র গুলোকে আমার কাছে খুবই জীবন্ত মনে হয়েছে প্রাণবন্ত বর্ণনা শৈলীর জন্য। উপন্যাসের এক তৃতীয়াংশ পড়ে তার উপরকার লেখনীর দুর্বলতা কিংবা আমার কাছে অস্পষ্টতার বয়ান পেসহ করেছি ধাপে ধাপেই। লেখক আমার মতামত বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বলেই হয়তো এই উপন্যাসটির প্রতি আমার অধিকার বোধ। এক তৃ্তীয়াংশ পড়ে কোন উপন্যাসের সামগ্রিক মূল্যায়ন মোটামুটি অসম্ভব। তবে আমার পাঠের নিরিখে আমি যা বলবো এটার এক তৃতীয়াংশ পড়বার পরে এর পরবর্তী ডেভেলাপমেন্ট কী হতে পারে তা আমাকে ভাবিয়েছে বেশ। সেজন্য অবশ্যই লেখক প্রশংসার দাবি রাখেন। এবার একটু গোড়ায় ফিরে গিয়ে সমালোচনা করবার চেষ্টা করি। বিতংস নামকরণটি ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে এটা তর্কসাপেক্ষ হয়েছে তবে নামটি যে দাঁত ভাঙা হয়েছে সে ব্যাপারে টর্কের অবকাশ নেই। বিতংস শুনেই যে কেউ ভুরু কুঁচকে তাকাবেন। এর শাব্দিক মানে হলো জাল। গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে একাত্তরের সময় কিশোরী থাকা মফস্বলের এক কিশোরীর চোখ। তার কিশোরী চোখে দেখা হয়েছে একাত্তর পরবর্তী সামজিক বাস্তবতাকে, তার ভার্সিটি লাইফের মাঝ দিয়ে দেখা হয়েছে মধ্য আশি কিংবা এরশাদ পতন সময়কার ছাত্র রাজনীতিকে। আর নব্বই পরবর্তী তার চোখে উঠে এসেছে প্রবাস জীবন (আপাতত হয়তো তাই প্রতীয়মান হয়)। উপন্যাসের ফরম্যাটে অভিনবত্ব হলো আলাদা প্রতিনিধিত্ব তিনটি সময়ের কিছু অংশ শুরুতে অল্প করে দেয়া হয়েছে। যা পাঠককে ক্ষণিকের জন্য হলেও ধাঁধার মাঝে ফেলে দেবে। তিনটি সময়ের কমন প্রজেকশন যে মূলত একটা চরিত্র তা ফুটে উঠে উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। পাঠক হিসাবে আমি প্রথ অংশ টুকুর মাঝ দিয়ে গিয়েছি। একাত্তর পরবর্তী এদেশের সামাজিক জীবনের উপর আলো ফেলে খুব বেশি সাহিত্য কর্ম এদেশে হয় নি। লেখক সেই সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনা গুলোকে তুলে আনবার চেষ্টা করেছেন মূলত সাধারণ মানুষের জীবন চরিতের মধ্য দিয়ে। সত্তর দশকের সময়কার ঐতিহাসিক নানা ঘটনা, সামজিক সমস্যা , কষ্ট , সাম্প্রদায়িকতার বিষ, মানুষের অবক্ষয় সবকিছুই অল্প বেশি করে বিস্তার লাভ করেছে এই ভাগে। লেখক তার উপন্যাস লেখার মোটিভেশন হিসাবে বেছে নিয়েছেন মূলত আমাদের দেশের নারী পাঠকদের। বই পড়ার অভ্যাস প্রায় হারিয়ে ফেলা পাঠকদের কাছে টার বই পৌঁছবে কিনা সেটা ভবিষ্যতের কাছে তোলা থাক, তবে যদি পৌঁছায় তবে তা নারী পাঠকদের কাছে আবেদন রাখতে পারবে বলে মনে হয়। কারণ গল্প লেখার ধাঁচ খুবই সিনেমাটিক স্টাইলে হৃদয় গ্রাহী করবার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে যখন কোন বিশেষ পাঠক শ্রেণীর কথা চিন্তা করে উপন্যাস লেখা হয় সেটা অন্যান্য পাঠক শ্রেনীর কাছ থেকে দূরে সরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেটা অল্প বিস্তর এই উপন্যাসের জন্যও সত্যি। তবে অন্যান্য পাঠকরাও উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া থেকে খুব বেশি বঞ্চিত হবে না। উদাহরণ হিসাবে যেমন বলা যায় গল্পের নায়িকা সর্ব গুণে গুণান্বিতা নায়কও তেমন তখন আমার কাছ এই বোধই এসেছে গণমানুষের কথা অনুপস্থিত। এ যেন রাজা রাজরা দের গল্প। তবে এক সময় বোধ করেছি রাজা রাজরা দের গল্প হয়েও তা আসতে আসতে বিস্তার করেছে গণমানউষের মাঝে। কিংবা একটা সময় পড়ে এসে রাজা রাজরা রাও মিশে গেছে গণ মানুষের স্রোতে। বেশ ভালো লাগলেও কিছু কিছু খুঁত চওখে পড়েছিলো। যেমন ইনফরমেশন আর কাহিনীর ব্লেন্ডিং একটু ছাড়াছাড়া মনে হয়েছিলো। মানে কিছু অংশ পড়ে মনে হয়েছে কেবল তথ্য দেয়ার জন্য বলে যাওয়া হচ্ছে ।লেখক অবশ্য পরে সেটা নিয়ে কাজ করেছেন। উপন্যাসের শক্তির দিক বলতে হবে কাহিনীর বাস্তব মুখীতা। লেখিকা কিছু কিছু জায়গায় লেখার মাঝে ব্যাক্তিগত ভাবে আবেগাক্রান্ত হয়েও সমকালীন বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে পিছু পা হন নি। আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভালো বোধ করেছি সেটা হলো লেখকের সততা ও পরিশ্রম। তথ্য উপাত্ত গুলোর জন্য তাকে কাজ করতে হয়েছে পড়ালেখা করতে হয়েছে উপন্যাস পড়তে গিয়ে পরতে পরতে তা অনুভব করেছি। তার সাথে রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি নির্মোহ থাকবার চেষ্টা করেছেন। লেখক ওয়াহিদা নূর আফজা কে তার দ্বিতীয় উপন্যাসের জন্য অভিনন্দন। তার চমৎকার লেখক জীবন কামনা করি