User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
একটা সরলরেখা। তার সঙ্গে নীল-সবুজের ছোঁয়া। দক্ষ আঁকিয়ের হাতে সাদা ক্যানভাসে এভাবেই উঠে আসে দিগন্তের বিস্তৃতি। বিশ্বজিৎ তা-ই করলেন। ভাষার আঁচড়ে এক টানে ১৪টি প্রেমের দিগন্ত উন্মোচন করলেন। প্রকাশিত হলো স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রেমের গল্প। না, প্রেম কখনো স্বল্প কিংবা দীর্ঘ হয় না, এখানে গল্পের পরিসরের কথা বলা হয়েছে। ছোট, প্রতিটি গল্পই তিন-চার পৃষ্ঠায় শেষ হয়। অনুগল্পও বলা যায়। কিন্তু অনুপম। জীবনের পরমাণু যাতে নিহিত রয়েছে। আছে প্রথম প্রেমের স্নিগ্ধতা। আর আছে জীবনের বিস্তার। গল্পের শুরু মেয়েটি যখন ক্লাস এইটে পড়েন। পাড়ার ছেলে শাহজাহানের প্রেমে পড়েন তিনি। এই প্রেমের পরিণতি ঘটে যখন তিনি ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। এর মধ্যে জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। বাসা বদল, বিদেশে পাড়ি জমানো, ছাত্রত্ব শেষ করে প্রকৌশলী হয়ে কর্মজীবনের আরম্ভসহ জীবনের নানা বাঁকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে গল্পের নায়ককে। দুটো জীবনের দীর্ঘদিনের এই প্রেমে পড়ার কাহিনি বিশ্বজিৎ এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেন। বইয়ের প্রতিটি গল্প মিষ্টি প্রেমের বলেই হয়তো সব কটাতে একটা সাধারণ সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। যেমন গল্পের মেয়েরা খুবই সুন্দরী। প্রেমিকের কাছে তাঁরা অভূতপূর্ব। লীলাবসান গল্পের নায়ক বলছেন, ‘আমার ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা ঘেঁটে এমন একটি মুখের সন্ধান পাই না, জিনাতের চেয়ে যা সুন্দর।’ মিমির খালা গল্পে নায়কের উক্তি, ‘মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী’—এ রকম রূপবর্ণনা প্রায় প্রতিটি গল্পেই পাই। বর্ণনার মুনশিয়ানায়, সুন্দরী নায়িকাটি আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠেন। আর প্রতিটি গল্পের ঘটনায় রয়েছে চলচ্চিত্রের আমেজ, নাটকীয় মোড়, সরস ভাষার পঙিক্ততে পঙিক্ততে চমকে দেওয়ার মতো উপাদান। গল্পগুলোর পরিণতি আগে থেকে আঁচ করা যায় না। গল্পের নায়ক কিংবা নায়িকার আচরণে বোঝা মুশকিল তিনি প্রতিপক্ষের প্রেমের আকুলতা, কিংবা আহ্বান বুঝতে পেরেছেন কি না। বাইরে থেকে অনীহ, নির্বিকার ও প্রেমে অনিচ্ছুক বলেই মনে হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বেদনা কিংবা প্রেম বাসা বুনতে থাকে তাঁর মনের গহিনে। শেষ পর্যন্ত ঘটনার নাটকীয় মোড়ে প্রকাশিত হয় তাঁরা পরস্পরকে ভালোবাসেন। মজাটা এখানেই। গাঁইয়া গল্পে দেখি—শহুরে আধুনিক মেয়ে রুমকিদের ঘরে থাকতে এসেছেন গ্রামের এক ছেলে। ছেলেটিকে গাঁইয়া বলেই সম্বোধন করত রুমকি। ছেলেটির মুখেই শুনি, ‘রুমকি কিন্তু শুরুতে একেবারে পাত্তা দিত না আমাকে, কেমন একটা অবজ্ঞার ভাব ছিল চেহারায়।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত গল্পটি শেষ হয় এভাবে, ‘আমার হাত চেপে ধরে, ভেজা চোখ তুলে রুমকি বলল—গাঁইয়া। ’ বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল গল্পেও দেখি নিজের ভালোবাসার কথাটি প্রকাশ করতে না-পারা এক বিষণ্ন বালকের কথা। যে কি না তার চেয়েও বয়সে বড় এক নীলু আপার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু নীলু আপা তাকে সারা জীবন তাঁর প্রেমিক অসবর্ণ শ্যামল বিশ্বাসের কথাই বলে গেলেন। শেষ পর্যন্ত গল্পের শেষে কেমন করে যেন বালককে আমরা দেখি নীলু আপার বুকে নাক গুঁজে কবিতা বলছে—বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল...’ সমালোচকেরা হয়তো বলবেন, প্রেমের গল্প বুনতে গিয়ে বিশ্বজিৎ চৌধুরী মানুষের জীবনের গূঢ় জটিলতাকে এড়িয়ে গেছেন, প্রকাশ করেননি প্রেমে পড়া এসব মানুষের জীবনের চারপাশের বাস্তবতাকে। বইটির ফ্ল্যাপে লেখা আছে, ‘প্রতিদিনের শত ব্যস্ততার জীবনেও এই অনুভবের অনুরণন থেকে মুক্তি নেই— কারণ, বিষয়টির নাম প্রেম’ আর তাই হয়তো অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে সেটিই প্রধান হয়ে ওঠে এবং ‘বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল’-এর একটি প্রিয় অনুভব তৈরি হয় আমাদের ভেতর।