User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
উষার দুয়ারে =340 টাকা মাত্র সত্যিই অসাধারণ একটি গল্প /আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত নাট্যকার সাংবাদিক কবি ও কথাসাহিত্যিক, । গদ্যকার্টুন ,কবিতা, ভ্রমণকাহিনী ,গল্প, উপন্যাস রম্যরচনা, , শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার বিচরণ। /জাফর ইকবাল স্যারের লেখা প্রতিটা বই সত্যিই অসাধারণ এ বইটি আমি অনেকবার পড়েছি/ আপনারও পড়ুন/ এখানে অতিরিক্ত কিছু লিখে বইটাকে ছোট করা হবে /না পড়লে কখনোই বোঝা সম্ভব না /আপনার একবার হলেও পড়ুন সত্যিই অনেক আনন্দিত হবেন আপনাদের অনেক ভালো লাগবে /আমার ভালো লেগেছে / বইটি পড়ুন সকলের প্রতি আমার অনুরোধ বইটি পড়লে জাফর ইকবাল স্যারের সার্থকতা আসবে/
Was this review helpful to you?
or
'উষার দুয়ারে' উপন্যাসটি হলো ‘যারা ভোর এনেছিল’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব। এই উপন্যাসের টানাপোড়েন শুরু হয় সোহরাওয়ার্দীর মনোভাবকে কেন্দ্র করে তিনি বলেন বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এটা মুজিব মানতে পারেন নি। তাজউদ্দীন নতুন আদর্শের নতুন দল গঠনের কথা ভাবছেন তখন মওলানা ভাষাণী কারাগারে! শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া নিয়ে বিরোধীতা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে বিজয়ী হওয়ার গল্প উঠে আসে উপন্যাসটিতে। তাজউদ্দীনের আওয়ামীতে যোগ দেওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে উপন্যাস এসে পড়ে এই খন্ডের মূল পর্বে, আর তা হচ্ছে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। নির্বাচনি নমিনেশনে মুজিবের দৃঢ়তা ও দুরদর্শীতা ও নির্বাচনে তার পরিশ্রম তাকে অনন্য করে তুলে। এরপর এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে শুরু করে পাকিস্তানিদের মিথ্যা অজুহাতে নানা টালবাহানা ও রাজনৈতিক ডামাডোল আর মোহাম্মদ আলীর অপকর্মের চিত্র পাঠককে উপন্যাসের মধ্যে যেন ডুবিয়ে দেয়।এসবের মাঝে কমিউনিস্ট নিধনের নামে রাজনীতি নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকে।এসব নানা ঘটনার আবর্তে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙ্গে দেন মোহাম্মদ আলী, আবার সোহরাওযার্দীকে মন্ত্রী করা হয় এবং মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলে মুজিব তার পরিবারে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি হয়। দিনের আলো এখনো ফোটেনি। উষার দুয়ারে দাঁড়িয়ে মুজিবের মুখে কেবল একটুকরা রোদ এসে পড়েছে মাত্র। সেই আলোর কথাই বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে।
Was this review helpful to you?
or
বইটা হিস্টরিকাল ফিকশন জনরারই, তবে বেশ কিছু বই (আত্মজীবনী বা স্মৃতিচারনামূলক) থেকে সরাসরি লেখা ধার করায় ফিকশনের চেয়ে ইতিহাসের অংশটাই বেশি। সিরিজের আগের বইটার (যারা ভাের এনেছিলাে) ব্যপ্তি ছিলাে ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত। এ বইয়ের শুরু এর পর থেকেই। '৫২ থেকে মােটামুটি '৫৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা উঠে এসেছে বইটায়। মূলত শেখ মুজিবের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনার মাধ্যমে। (যেহেতু বইয়ের বেশ কিছু অংশ তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটা থেকে নেওয়া!) লেখক সে সময়ের পূর্ব বাংলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন। ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমির ব্যাপারটা এনে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছেন হয়তাে! কিন্তু মাঝে মাঝেই সিরিয়াস লেখার মধ্যে এদের উপস্থিতির ব্যাপারটা খুবই ইরিটেটিং লেগেছে আমার কাছে। লেখা মােটামুটি ফ্লুয়েন্টই ছিলাে।
Was this review helpful to you?
or
উষার দুয়ারে-আনিসুল হক আলো আধারের যাত্রী, যারা ভোর এনেছিল পড়া হয়েছিল। এবারে বইমেলার আগেই তাই উষার দুয়ারে পড়ে সিরিজ শেষ করলাম। হুমায়ুন বাদশার বই হুমায়ুন আহমেদ এর কল্যানে পড়া, সেখানে লেখক বলেছিলেন হুমায়ুন এর জীবন এমনিতেই এমন বৈচিত্র্যময় যে নতুন কিছু যোগ করতে হয় না-বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন এর জীবন তেমনি। ব্যাঙ্গমা, ব্যাঙ্গমীর কথক তাই ভুত ভবিষ্যতকে এক করে দিলেও আমাদের মজা নষ্ট করে মাঝে মাঝে। হয়তো লেখক আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। মাওলানা ভাষানী অদ্ভুত মানুষ, বিপদ দেখলে পালিয়ে যান-বংগবন্ধুর ভাষায়। সোহরাওয়ার্দী, একে ফজলুল হক, যুক্তফ্রন্টের গঠন, পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র অনেক কিছুর ভাষাই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে আগেই জানা ছিল। তাজউদ্দিন এর বিয়ের ব্যাপার, বার বার জেল এর হাত থেকে মুক্তির ব্যাপারটা ছিল উপভোগ্য। একই টাইমলাইনে একই সাথে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন, একে ফজলুল হক এর কথা এনে অনবদ্য উপন্যাসে রুপ দিয়েছেন এই উষার দুয়ারে কে। আসছে ভোর তার ই দুয়ারে এ যেন প্রথম পদচিহ্ন।
Was this review helpful to you?
or
পুলিশ ভেঙে ফেলল ১৯৫২ সালের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেন ফরিপুর কারাগার থেকে অনশন ধর্মঘট করার পর। তাঁর আব্বা তাঁকে নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই মুজিব জানতে পারলেন তাঁর নেতা সোহরাওয়ার্দীর মনোভাব- বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এবার কী করবেন মুজিব? তাজউদ্দীনরা ভাবছেন, একটা আলাদা দল করতে হবে। গণতন্ত্র দল গঠনের তৎপরতার সঙ্গে খানিকটা যুক্ত থাকলেন তিনি। মওলানা ভাষাণী কারাগারে। সেখান থেকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া, তাজউদ্দীনের আওয়ামীতে যোগ দেওয়া, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া, আর শেখ মুজিবের মন্ত্রিত্ব লাভ এবং মন্ত্রীর বাড়ী থেকে সোজা জেলযাত্রা। তিনটি শিশুসন্তান নিয়ে রেনুর অকূলপাথারে পড়ে যাওয়া। রাজনীতির ডামাডোল ওলটপালট করে দেয় ব্যক্তিমানুষেরও জীবন।এই রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কেবল একটি দেশের নেতা বা জনগণ নির্ধারণ করে না, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকেও। ব্যাঙ্গামাআর ব্যাঙ্গামি তো তা-ই বলতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের ইচ্ছাই কি জয়ী হয় না?
Was this review helpful to you?
or
আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কালপর্বকে (১৯৫২-৫৫) কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে উষার দুয়ারে উপন্যাস, যে কালপরিসরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা একটি নির্দিষ্ট রূপ অর্জন করে এবং অঙ্কুরিত হয় একটি নতুন দেশের জন্মের বীজ। ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা, অসামপ্রদায়িক মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির স্বপ্ন এসে তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের কীভাবে উদ্বুদ্ধ করে এবং তা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বিপুল সমর্থন লাভ করে, তা দেখিয়েছেন লেখক। ১৯৪৭-এর আগস্ট-পরবর্তী দুই বছরের মধ্যেই শাসক দলের প্রগতিশীল অংশ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়, তা-ও বিধৃত হয়েছে এ উপন্যাসে। লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে একজন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান নিখাদ দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে আপসহীন অকুতোভয় সৈনিকের মতো, জীবন বাজি রেখে, শত বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে একটি নতুন দল গঠন করে সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে তাঁকে জননন্দিত করে তুলেছেন, জাগিয়ে তুলেছেন এক নতুন স্বপ্ন। এই উপন্যাসে পরস্ফুিটিত হয়েছে ব্যক্তি ও ইতিহাসের মধ্যকার একটি দ্বান্দ্বিক অথচ পরিপূরক সম্পর্কের ব্যঞ্জনা। ইতিহাস যেমন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সৃষ্টিতে সহায়তা করে, তেমনি ব্যক্তিও কখনো কখনো ইতিহাসের গতিধারার নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন। মুসলিম লীগ থেকেই জন্ম হয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগের এবং শেষে আওয়ামী লীগের—সামপ্রদায়িকতা থেকে অসামপ্রদায়িকতার দিকে এই যাত্রা শুধু একটি দলের নয়, একটি পুরো জনগোষ্ঠীর। ওই কালপর্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এ ঘটনার সঙ্গে আরও যে সত্যটি জড়িত তা হলো, শাসক মুসলিম লীগের রক্ষণশীল, অভিজাত ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির ধারাকে কোণঠাসা করে নতুন দল প্রগতিশীল, মধ্যবিত্ত ও গণমুখী ধারাকে বেগবান করে তোলে। এ উপন্যাসে লেখক ইতিহাসের এই সত্যের আবেদনকে পাঠকচিত্তে যথাযথভাবে সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছেন। যিনি ছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির অগ্রসর কর্মী এক ছাত্রনেতা, তিনিই পরিণামে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ সৃষ্টির অগ্রসর নায়ক, জাতীয় নেতা। রূপান্তরের এই বীজ তাঁর ভেতরেই সুপ্ত ছিল, সুপ্ত ছিল বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীর ভেতরেও। বাইরের কোনো তত্ত্ব আদর্শ কিংবা দর্শন নয়, নিজ দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই তাঁর আদর্শ, তাঁর দর্শন, তাঁর সার্বক্ষণিক ধ্যান-জ্ঞান, তাঁর সাধনার মূলকথা। এর বাইরে নিজ সংসার বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাও তুচ্ছ হয়ে গেল, বৃহত্তর দেশটাই হয়ে উঠল তাঁর কাছে নিজ সংসার। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করলেন এই দেশের জন্য। ব্যক্তিস্বার্থমুক্ত, সত্য উচ্চারণে নির্ভীক, মৃত্যুভয়হীন, একমাত্র জাতীয় স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণেই ১৯৫২-৫৫ পর্বে ৩২-৩৫ বয়সসীমায় এই তরুণই হয়ে উঠলেন যেমন দেশের নবগঠিত অথচ প্রধান দলের কেন্দ্রশক্তি তেমনি জাতীয় স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষারও মূর্ত প্রতীক। ১৯৪৬-এর নির্বাচনে এ দেশের মানুষই বিপুলভাবে ভোট দিয়েছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্রাদর্শের পক্ষে; ক্ষমতার আসনে বসিয়েছিল মুসলিম লীগকে; আবার সেই মানুষই আট বছরের ব্যবধানে ভরাডুবি ঘটাল মুসলিম লীগের। স্বাগত জানাল নতুন দল আওয়ামী মুসলিম লীগকে; তাদের স্বপ্নের মধ্যে মুকুলিত হলো এক নতুন জাতীয় চেতনা। এই চেতনা বিনির্মাণে যারা মূল ভূমিকা পালন করলেন, তাঁদেরই মধ্যমণি শেখ মুজিবুর রহমান। উষার দুয়ারে গ্রন্থে নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ তৎকালীন সব রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কুশীলবের কাহিনিই বিবৃত হয়েছে; কিন্তু প্রধান হয়ে উঠেছে এই মুখ্য ভূমিকা পালনকারী তরুণ নায়কের আত্মত্যাগে বলীয়ান, অকৃত্রিম দেশপ্রেমপুষ্ট, জীবনসংগ্রামের অনন্য আখ্যান। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী—এই তিন নেতার ত্রিমুখী অবস্থান ও সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে কীভাবে বেরিয়ে এলেন ভবিষ্যৎ নেতা শেখ মুজিব ও তাঁর নির্ভরযোগ্য সহযোগী তাজউদ্দীন, তারও অন্তরঙ্গ কাহিনি বিবৃত হয়েছে এ গ্রন্থে। বিবৃত হয়েছে ওই কালে নতুন দেশটির আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক টানাপড়েন, শাসক শক্তির সংকীর্ণতা ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব, বাংলাবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র, পূর্ববাংলাকে দলন-শোষণের কৌশল এবং কমিউনিস্টবিরোধী মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের সম্মিলিত আখ্যান। আনিসুল হক কোনো কিংবদন্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেননি। তিনি ইতিহাসকে আশ্রয় করেই তাঁর ঔপন্যাসিক কল্পনাকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, তাজউদ্দীনের ডায়রি, আতাউর রহমানের স্মৃতিকথা, আনিসুজ্জামানের কাল নিরবধি, সরদার ফজলুল করিমের জীবনস্মৃতি, বদরুদ্দীন উমরের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসহ সেকালের নানা নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত অবলম্বনে বাস্তবতার শক্ত ভিত্তির ওপরই আনিসুল হক নির্মাণ করেছেন ঐতিহাসিক কালপর্বের এই মহাকাব্যিক সৌধ। ফলে এ উপন্যাসে লেখকের কল্পনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বাস্তবতার তীর ঘেঁষেই অগ্রসর হয়েছে, তাকে ছাপিয়ে যায়নি বা উছলে পড়েনি। বরং ইতিহাসে যা কখনো লেখা থাকে না, যে স্বপ্ন ও হূদয়াবেগের চিত্র মূর্ত হয় না উপন্যাসে, লেখক তাঁর কল্পনাশক্তির সাহায্যে তাকেই করেছেন দৃশ্যময়, প্রাণবন্ত। এর ফলে ইতিহাসের সত্যের সঙ্গে উপন্যাসের সত্য যুক্তিগ্রাহ্যভাবে সমন্বিত হয়ে এ গ্রন্থ পাঠকের কাছে অনেক বেশি আবেদনগ্রাহী হয়েছে। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি কালপর্বকে যথাযথভাবে অনুধাবনের জন্যও এ গ্রন্থ অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
Was this review helpful to you?
or
উষার দুয়ারে লেখক: আনিসুল হক প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৪৮ মূল্য: ৪০০ টাকা প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশ ‘যারা ভোর এনেছিল’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব উপন্যাস মানে স্থান-কাল-পাত্র আশ্রিত যৌক্তিক ঘটনা বিন্যাসের বিশ্বাসযোগ্য শৈল্পিক বর্ণনা । ভাষাশৈলী, শব্দচয়ন, শব্দগঁথুনি আর বাক্যবিন্যাস হচ্ছে এই গল্প বলার হাতিয়ার । হাতিয়ার ব্যবহারে যে যত পারদর্শী তার উপন্যাসের সাহিত্য মূল্য তত বেশি । আনিসুল হক এমনি একজন দক্ষ হাতিয়ার চালক, যে চালক সমসাময়িক শব্দ চয়ন করেন, সহজ সরল বাক্যকাঠামো আর সাবলিলভাবে ঘটনা বর্ণনায় সিদ্ধহস্ত আধুনিক ধারার লিখেন। ভাষা ব্যবহারের সাফল্যেই ‘উষার দুয়ারে’ একটানা পড়ে শেষ করে ফেললাম। এটি মহৎ সাহিত্যের প্রথম প্রতিবন্ধকতা উৎরে যাওয়া বলেই ধরে নিতে হবে। ইতিহাসাশ্রিত উপন্যাসে ইতিহাসের মূলসত্য অবিকৃত থাকবে বলে যে আশা পাঠক করেন তা এই গ্রন্থে সম্পূর্ণ পূরণ হয়েছে। আবার পাশাপাশি কল্পনাপ্রসূত আখ্যানেও ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে ব্যখ্যা প্রত্যাশিত। উষার দুয়ারে সে প্রত্যাশাও পূরণ করেছে। বাংলার সেই চিরচেনা মায়াবী প্রকৃতির বর্ণনায় ঐতিহাসিক সব ঘটনার স্থান উঠে এসেছে যা ইতিহাস গ্রন্থে কখনোই থাকেনা। ইতিহাস আর উপন্যাসের এখানে একটি মৌলিক পার্থক্য। একইভাবে মানুষ হিসেবে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের জীবনে যে খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, গল্পগুজব, রাগ, স্নেহ- মায়া-মমতা, হাসি –কান্না এসব প্রক্ষোভিক আচরণ থাকে তা এই গ্রন্থে লেখক যথাযথভাবে তুলে ধরেছেন। ফলে আমাদের চিরচেনা মাওলানা ভাষণী, একে ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দিসহ বিদগ্ধ রাজনীতিককে আমরা এখানে পাই খুব আপন করে, মানুষের কাতারে- ব্যথিত হই শামসুল হকের করুণ পরিণতিতে-আবার চমকে উঠি মুজিব ও রেনুর পারিবারিক অটুট বন্ধনে। ট্রিজলির এই দ্বিতীয় খন্ডে মূলত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের চারিত্রিক বেশিষ্ট্য পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছে।বিশেষ করে মাওলানা ভাষণী, একে ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির ব্যক্তি-ভাবনা-দৃঢ়তা- বয়সের ভার ইত্যাদি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে যুক্ত ফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে ।আর প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । মুজিবের জীবনের ৩৫ বছর পর্যন্ত এসে থেমেছে এই খন্ডে । শেষ অধ্যায়ে লেখক উপসংহার টানতে গিয়ে বলেছেন ‘মুজিবের মনে আজ প্রশান্তি। ৩৫ বছরের জীবনে তাঁর রাজনীতির অভিজ্ঞতা কম হলো না। কিশোর বেলা থেকে শুরু। সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ উদ্বুদ্ধ ছিলেন। সেখান থেকে মুসলিম লীগ... আবুল হাশিম সাহেবদের সংস্পর্শে এসে ইসলামের উদারতার কথা শুনলেন।অসাম্প্রদায়িকতার পথ হয়ে উঠলো তাঁর পথ।... কমিউনিষ্টদের সঙ্গেও মুজিবের খাতিরের সম্পর্ক । তিনি বারবার করে বলনে, তিনি কমিউনিস্ট না।কিন্তু সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক কর্মসূচি তার পছন্দ। তিনি একটা শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেন। আর হিন্দু-মুসলীম-বৌদ্ধখ্রিস্টানের পার্থক্য না করার আদর্শটা তার পছন্দ।... গণতন্ত্রে সকল মানুষ সমান। প্রতিটা মানুষ এক ইউনিট। প্রত্যেকের একভোট।... এটাই গণতন্ত্রের মূল কথা।এখানেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’।লেখকের এই উপসংহারে আমরা দেখতে পাই আমাদের ৭২ এর সংবিধানের মূল চার নীতির ৩ টিই মুজির মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই ঠিক করে ফেলেছিলেন। একথাটি ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমি হয়তো বলেদিতে পারতেন। উপন্যাসের টানাপোড়েন শুরু হয় সোহরাওয়ার্দীর মনোভাবকে কেন্দ্র করে তিনি বলেন বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এটা মুজিব মানতে পারছেন না। তাজউদ্দীন নতুন আদর্শের নতুন দল গঠনের কথা ভাবছেন। মওলানা ভাষাণী কারাগারে আছেন। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া নিয়ে বিরোধীতা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে বিজয়ী হওয়া। তাজউদ্দীনের আওয়ামীতে যোগ দেওয়া ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে উপন্যাস এসে পড়ে এই খন্ডের মূল পর্বে, আর তা হচ্ছে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। নির্বাচনি নমিনেশনে মুজিবের দৃঢ়তা ও দুরদর্শীতা ও নির্বাচনে তার পরিশ্রম তাকে অনন্য করে তোলে।এরপর এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে শুরু করে পাকিস্তানিদের মিথ্যা অজুহাতে নানা টালবাহানা ও রাজনৈতিক ডামাডোল আর মোহাম্মদ আলী বগুড়ার অপকর্মের চিত্র পাঠককে উপন্যাসের মধ্যে যেন ডুবিয়ে দেয়।এসবের মাঝে কমিউনিস্ট নিধনের নামে রাজনীতি নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকে।এসব নানা ঘটনার আবর্তে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙ্গেদেন মোহাম্মদ আলী বগুড়া, আবার সোহরাওযার্দিকে মন্ত্রি করা হয় এবং মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্তিদিলে মুজিব তার পরিবারে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি হয়। দিনের আলো এখনো ফোটেনি। উষার দুয়ারে দাঁড়িয়ে মুজিবের মুখে কেবল একটুকরা রোদ এসে পড়েছে মাত্র। সেই আলোর কথা জানতে হলে তরুণ প্রজন্মকে এ বই অবশ্যই পাঠ করতে হবে। আলোয় আলোয় সম্পূর্ণ দিন আসবে । আসবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মূল পর্ব মহান স্বাধীনতার ঘটনা । হয়তো আমরা পাব তৃতীয় খন্ড। সে পর্যন্ত পাঠককে অতৃপ্তই থাকতে হবে।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের স্বাধীনতার ভোরের কারিগর, কেমন মানুষ ছিলেন তাঁরা- ইতিহাসের নির্জীব শুষ্ক মানুষ নয়, জীবন্ত মানুষ তাদের নিয়েই এই বই। প্রত্যেকের সংগ্রহে থাকা উচিৎ।