User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
ভালো লেগেছে...!
Was this review helpful to you?
or
কবি,কথাশিল্পী,নাট্যকার—সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক,ষাটবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার শ্রদ্ধা ও অভিবাদন গ্রহণ করুন।আপনি ভালো ক'রেই জানেন এক বামনপল্লীর অধিবাসী আমরা,যে-পল্লীতে অতিকায়দের আবির্ভাব দুর্লভ ও বিব্রতকর ঘটনা;এবং যদি কোনো অতিকায় আপন দুর্ভাগ্যবশত আবির্ভূত হয় মাঝারি ও নিম্নমাঝারির কীর্তনমুখর এ-পল্লীতে,তাকে আমরা নিজেদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়ে স্বস্তি পাই।এ-কাজ আমরা ক'রে আসছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।আপনার কথা ভাবলে আমি বোধ করি আপনার অতিকায় প্রতিভায় আমরা স্বস্তি পাই নি;তাই আমাদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়েছি আপনাকে;–আপনার অতিকায়তা সুখকর নয় আ।আমাদের জন্যে;আপঞ্জ যে অতিকায় তা আমরা স্বীকার করতে চাই নি;বরং আপনাকে বহু ক্ষুদ্রকায়ের থেকে ক্ষুদ্র দেখার একটি অভ্যাস আমরা গ'ড়ে তুলে স্বস্তি পাচ্ছি।অন্ধ যেমন কখনো সম্পূর্ণ হাতি দেখে উঠতে পারে না,আমরাও সম্পূর্ণ আপনাকে,সৈয়দ শামসুল হককে,দেখতে পাই নি।অন্ধদের আচরণ, আমি বুঝি, নিরন্তর পীড়ন করেছে আপনাকে;তাই আপনি মহাভারতীয় একটি শব্দ—'সব্যসাচী'–পুনরাবিষ্কার করেছেন নিজের জন্যে;নিজেকে দেখেছেন আধুনিক অর্জুনরূপে। বামনপল্লীতে অর্জুন বেমানান;তবে আমাদের ভাগ্য দু-একটি অর্জুন আমাদের পল্লীতেও জন্মগ্রহণ করে।আমরা স্বস্তি পাই,সুখী হই,একমাত্রিকতায়;আপনি বহুমাত্রিক,এটাই আমাদের অস্বস্তির প্রধান কারণ।যিনি শুধুই কবিতা লেখেন,তাঁকে আমরা বলি কবি;তাঁর নামের সাথে কবির আগে বিশেষণের পর বিশেষণ আমরা ব্যবহার করি;যিনি শুধুই উপন্যাস লেখেন,তাঁকে বলি ঔপন্যাসিক, যিনি শুধুই নাটক লেখে, তাঁকে বলি নাট্যকার;কিন্তু যিনি ঋদ্ধ করেন সাহিত্যের নানান শাখা,যিনি হন সৈয়দ শামসুল হক,তাঁকে কী বলবো আমরা ঠিক ক'রে উঠতে পারি না।বকবি বলবো,না ঔপন্যাসিক, না নাট্যকার? তাঁকে এক শব্দে আমরা ডাকতে পারি না ব'লে তাঁকে দেখি খণ্ডিত ক'রে;খণ্ডিত করতে গিয়ে তাঁকে ক্ষুদ্র ক'রে তুলি গৌণদের থেকে।আমাদের খণ্ডিতকরণপ্রবণতার এক বড়ো শিকার আপনি,সৈয়দ শামসুল হক,আপনি তা জানেন,এবং তা নিশ্চয়ই আপনাকে দশকের পর দশক পীড়িত ক'রে আসছে।আপমি নিজেই জানেন কবিতা, কথাশিল্প,নাটক মিলিয়ে আপনার উচ্চতার স্রষ্টা আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে তিনচারজনের বেশি,এবং সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও খুব বেশি মিলবে না।আমাদের খণ্ডিতকরণরোগের বড়ো এক শিকার হয়ে আছেন মহৎ বুদ্ধদেব বসু ;রবীন্দ্রনাথের পর যাঁর সমতুল্য আর কেউ নেই;তাঁর মহিমা আমরা যেমন বুঝি না,আমরা বুঝি না আপনার মহিমাও।কথাশিল্পী হিশেবেই আপনার পরিচয় বেশি,কিন্তু আপনি যে ওই এলাকায় আমাদের প্রধানতম,তা আমরা বলি না,বলতে ভয় পাই,বা আমরা বুঝে উঠতে পারি না।আমাদের বামনপল্লীতে পুরোনোর মূল্য বেশি,আর এ-পল্লীতে কোনো কথা একবার র'টে গেলে তার থেকে আমাদের আর মুক্তি ঘটে না,চিরকাল আমাদের ওই রটনা রটিয়ে যেতে হয়।কথাসাহিত্যের কথা উঠলে আজো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের কথা বলি,বিশেষ করে বলি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র কথা,যেনো তিনিই আমাদের শ্রেষ্ঠ,এমনকি চিরকালের শ্রেষ্ঠ,কথাশিল্পী ;আমরা এখনো ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের মধ্যে মুসলমানিত্বের পরিচয় লেগে আছে গাঢ়ভাবে,আর শিল্পকলার বিচিত্র সৌন্দর্যও দুর্লভ তাঁদের কথাসাহিত্যে।আর তাঁরা কি অনেকটা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মনে রেখেই লেখেন নি তাঁদের উপন্যাসগুলো?আপনিই তো প্রথম লিখেছেন আমাদের আপত্তিকর উপন্যাস,যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিব্রত করেছে;এবং দেখিয়ে দিয়েছে শিল্পকলা পাঠ্যপুস্তক নয়।আমাদের কথাসাহিত্যকে প্রথম বিচিত্র শিল্পসৌন্দর্যখচিত ক'রে তুলেছেন আপনি;এবং আপনার সৃষ্টিশীলতাও বিস্ময়কর। আপনি নিরীক্ষার পর নিরীক্ষা করেছেন শিল্প ও সৌন্দর্য সৃষ্টির;আপনার কথাশিল্প ও কবিতা ও নাটক নিরীক্ষার বিস্ময়কর বিশ্ব,যার কোনো তুলনা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে দেখি না।সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও কি খব বেশি দেখি?বাঙলা কথাশিল্পে জীবন যতোটা বড়ো হয়ে আছে,ততোটা কি বড়ো হ'তে পেরেছে শিল্পকলা ও সৌন্দর্য? তারাশঙ্কর বা বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে যতোটা জীবন পাই,ততোটা কি পাই সৌন্দর্য ও শিল্পকলা;এবং তাঁদের আজো আমরা যতোটা কিংবদন্তি ভাবি তাঁরা কি ততো বড়ো?তাঁরা কি বাঙলা উপন্যাসকে প্রথার মধ্যেই রেখে দেন নি,শিল্পকলার থেকে স্থূল জীবন নিয়েই বেশি মেতে থাকেন নি?আপনি বেরিয়ে এসেছিলেন ওই প্রথার ভেতর থেকে।শিল্পকলায় নিরীক্ষা মূল্যবান,কিন্তু নিরীক্ষা যদি শুধুই নিরীক্ষা হয়ে থাকে,তাহলে তার বিশেষ মূল্য থাকে না;শিল্পকলায় মূল্যবান হচ্ছে সফল নিরীক্ষা,যা আপনার কথাশিল থেকে কবিতা থেকে নাটক পর্যন্ত বিস্তৃত।আমি এখানে আপনার উপন্যাস বা গল্প বা কবিতা বা নাটকের ভাষ্য লিখতে চাই না,হয়তো কোনোদিনই লিখে উঠতে পারবো না,শুধু জানাতে চাই যে আপনার মহত্ত্ব আমি সব সময়ই উপলব্ধি করি।আপনার বাঙালিত্ব ও আন্তর্জাতিকত্ব যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত আপনার প্রেম ও কাম এবং জীবন।আপনার কবিতার উপাখ্যানতা যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত তার গীতিময়তা;এবং বিস্ময়কর আপনার নাটক—অলীক কুনাট্য রঙ্গের দেশে আপনি নাটককে ক'রে তুলেছেন শিল্পকলা।নাটক আমার কাছে দৃশ্যকাব্য নয়,পাঠ্যকাব্য;মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব,আর আপনার নাটকেই আমি পাই ওই পাঠ্যকাব্যত্ব—সুন্দরী নটী,সুন্দর নট,সুন্দর রঙ্গমঞ্চ বাদ দেয়ার পর যা থাকে,তাই হচ্ছে নাটক,যা পাঠ্য,যা দেখার নয়,অনুভব আর উপলব্ধির।নাটক শুধু উল্লাস আর করতালিতে সমাপ্ত নয়।আপনি যখন তৎসম থেকে চলতি যান,এবং চলতি থেকে আঞ্চলিকে,তখন যা সৃষ্টি হয়,তা হচ্ছে শিল্পকলা;এবং আপনার প্রজন্মের কেউ ওই শিল্পকলাকে আপনার মতো অনুভব করেন নি।আপনি বাঙলা গদ্যকে পরিস্রুত করেছেন,শিল্পকলা ক'রে তুলেছেন।আপনার মধ্যে আমি দেখি সৌন্দর্য আর শিল্পকলা, যা জীবনের থেকে মহৎ,এবং অবিনশ্বর। —হুমায়ুন আজাদ অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
Was this review helpful to you?
or
কিছু বইয়ের রিভিউ লাগে না।এককথায় বলা যায় বইটি সম্পর্কে অনবদ্য
Was this review helpful to you?
or
Excellent
Was this review helpful to you?
or
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখনি. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে, তাদের অনেককেও দিতে হয়েছে চরম মূল্য। অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে তারা যেমন তুলে দিয়েছিল পাকসেনাদের হাতে, তাদের কন্যা-স্ত্রীর সম্ভ্রমও ছিনিয়ে নিয়েছে ওই পাকবাহিনি- যুদ্ধকালীন এই চরম বাস্তবতাকে আঁকতে ভুল করেননি সৈয়দ হক তাঁর বর্তমান নাটকে। কাহিনিতে দেখা যায়, মুক্তিবাহিনির বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের ছোবলে মাতবরের কন্যার সম্ভ্রম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাতবর রক্ষা করতে পারেনি তার নিজের ঘরের মর্যাদা। রাজনীতির ফাঁকা বুলি আর জনকল্যাণের জন্য পাকিস্তান বহাল রাখার তাবেদারিও তার পরিবারের সম্মানকে টিকিয়ে রাখতে বিন্দুমাত্র সহায়তা করেনি। মাতবরের কন্যা তার সুখ-সম্ভ্রম লুটের ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, সেই পাঠ নেওয়া যেতে পারে: ‘আমার কী আছে? গ্যাছে সুখ.য্যান কেউ নিয়া গ্যাছে গাভীনের বাঁটে যতটুক.দুধ আছে নিষ্ঠুর দোহন দিয়া।’ অবশেষে স্বাধীনতা-প্রত্যাশি গ্রামবাসী সমবেত জনতার সামনে বিষপানে আত্মহত্মা করে মাতবরের কন্যা।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনা নিয়ে বইটি লেখা। মুক্তিবাহিনী আসার কথা শুনে গ্রামবাসী মাতব্বের কাছে যায় তাদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জবাব নিতে। মাতবর বিভিন্ন মিছে আশ্বাস দিয়ে তাদের চুপ করাতে চায়। কিন্তুু গ্রামবাসী মানে না। জবাব নিতেই দাড়িয়ে থাকে। এক পর্যায়ে মাতবরের কানে মুক্তিবাহিনীর পায়ের আওয়াজ পৌছে। মাতবর সবাইরে বললে তারা বলে যে কই আওয়াজ। মাতবর আবারো শুনতে ভয়। মু্ক্তিবাহিনী আসার প্রচন্ড ভয় পেতে থাকে। তার মনে হয় এই বুঝি এলো তারা। অবশেষে মাতবরের মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মুখ খোলে যে গতকাল মিলিটারী আসছিলো। মাতবর বলে যে মিলিটারী তার মেয়েটারে চায়। মিলিটারীর কাজ শেষ হলে সেই রাতেই আবার পালায়। মাতবর বিয়ের অজুহাত দেখায় গ্রামবাসীর কাছে। গ্রামবাসী মানে না। কলঙ্ক নিয়ে কে বেচে থাকতে চায়? মেয়েটি তখন বিষ খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এমনই ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক। সবাই পড়ে দেখবেন।
Was this review helpful to you?
or
লেখা! কাজটার কোনো কর্মখালি বিজ্ঞাপন নেই, দরখাস্ত নেই, বরখাস্তও নেই। এ কাজ নিজেকেই নিজের দেওয়া। তাই এ থেকে অবসর নেই। কারও কাছে কৈফিয়ত দেওয়ারও দায় নেই। মানুষের গোটা কাজটাকেই দুভাগে ফেলা যায়—অভাব আর স্বভাব। দেশকে যিনি উদ্ধার করেন তিনি তাঁর মানুষের আত্যন্তিক গূঢ় এক অভাব বোধ থেকেই হন কর্মিষ্ঠ। অকারণে যে হেসে ওঠে, ওটাই তার স্বভাব। মানুষের ব্যক্তিত্ব বলে যাকে ঠাহর করি, আসলে সেটি তার স্বভাবেরই ভাবচিত্র। এত কথা বলার কারণ, একটা অনুরোধ এসেছে। আমার কাব্যনাট্য পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নিয়ে এর ভেতর-কথাটি আমাকেই বলতে হবে। দিনের সব আলোর ভেতরে ভোরের প্রথম আলোটির কাজ একেবারেই আলাদা। আলাদাই শুধু নয়, অদ্বিতীয় বটে। দিনের আর কোনো আলো নয়, প্রথম আলোটাই অন্ধকার দূর করে। নাটকটি লিখতে শুরু করি ১৯৭৫ সালের পয়লা মে, শেষ করি মাস দেড়েক পরে, ১৩ জুন রাত দুটোয়। তখন বিবিসির বাংলা বিভাগে কাজ করতাম লন্ডনে। থাকতাম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড পাড়ায়। দৈবাৎ আমার প্রতিবেশী ছিলেন অভিনেতা রিচার্ড বার্টন। তবে উচ্চ ভাড়া গুনে ও-পাড়ায় থাকার আসল লোভটা ছিল, আমার ফ্ল্যাট থেকে মাত্রই দেড় শ গজ দূরের বাড়িটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকতেন ১৯১২ সালে, আর ওই বাড়ির পাশেই ক্রন্দসী উইলো ঘেরা ঝিলের পাড়ে বসে তিনি লিখেছিলেন তাঁর সেই গান—আমার প্রাণের একটি স্বর—সুন্দর বটে তবে অঙ্গদখানি, তারায় তারায় খচিত। হ্যাম্পস্টেড থেকে অফিসে যেতে পাতালরেলে লাগত ৪৫ মিনিট, সন্ধেবেলা ফিরতেও তাই। মাথায় তখন পায়ের আওয়াজ! ট্রেনে যেতে যেতে মুখে মুখে রচনা করে চলেছি লাইনের পর লাইন, তারপর অফিসে গিয়ে প্রথম কাজটাই হচ্ছে লাইনগুলো লিখে ফেলা। লিখতাম বিবিসিরই দেওয়া নোটবুকে। রাতে ফিরে আবার সেই ফিরতি পথে মনে মনে বানানো লাইনগুলো লিখে ফেলা। এই করে করে পুরো নাটকটি একদিন শেষ হয়ে যায়। পাণ্ডুলিপির সেই নোটবই দুটি এখনো আমার কাছে আছে। কত যে কাটাকুটি করেছি তার ইয়ত্তা নেই। আমার কোনো লেখাই তরতর করে আসে না। অনেক শ্রম আর ঘামের পরে যদি একটা কিছু হয়! পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কিছু হয়েছে কি না, ১৯৭৬-এর ২৬ নভেম্বর এর প্রথম অভিনয় দেখেই কবীর চৌধুরী তখনকার বাংলাদেশ অবজারভার-এ লেখেন—এটি আমাদের নাটকের একটি মাইলস্টোন। অন্যেরা বলাবলি করেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর সবচেয়ে ভালো নাটক এটি। ভাষা-রচনার অনেক মাধ্যমে কাজ করেছি সেই কতকাল থেকে, নাটকে এই প্রথম। আর, প্রথম নাটকেই এতখানি অনুকূল ধ্বনি, আমি কিছুটা হতবাক তো হই-ই। আবার ছিটকেও পড়ি কারও কারও মন্তব্যে। যেমন আমার বন্ধু—মনের মানুষ, তিতাস একটি নদীর নাম, পদ্মা নদীর মাঝির মতো চলচ্চিত্রের প্রযোজক—হাবিব খান খুব তেড়ে উঠে বলেছিলেন, হ্যাঁ! আপনি একজন রাজাকারকে প্রধান চরিত্র করলেন! এমন করে তাকে আঁকলেন যে তার জন্য আমাদের কষ্ট পর্যন্ত হয়! ধিক, আপনার কলমকে! কিন্তু সেই তিনিও দ্বিতীয়বার নাটকটি দেখে বুঝেছিলেন কী ছিল আমার বলবার কথাটি। আর সেই কথাটা বলার জন্যই আমার দরকার পড়েছিল একজন রাজাকারের—না! তার নয়, তার মেয়েকেই আমার দরকার ছিল মঞ্চে নিয়ে আসার। কারণ? কারণ, ওই মেয়ের মুখ দিয়েই আমার বলিয়ে নেওয়ার দরকার ছিল—ধর্ম কী, আর ধর্মকে রাজনীতির কূট প্রয়োজনে ব্যবহার করাটাই বা কী, আর সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত করা যায় ধর্মেরই দোহাই দিয়ে। এই সাধারণ মানুষই তো নাটকে বলছে— বুঝি না আল্লার কুদরত কারে কয়, কারে কয় বিচার আচার। যাদের জীবন হইলো জন্তুর লাহান— তারে কিছু দেও নাই, দিয়াছো ঈমান! আর যারে সকলি দিয়াছো, অধিকার তারেই দিয়াছো তুমি দুনিয়ার ঈমান মাপার! আর আর ওই রাজাকার মাতবরের মেয়ে বলছে— পাপ হাজারে হাজার মানুষ নিশ্চিন্তে করে, সাক্ষী নাম সেই তো আল্লার। নাম, আর কিছু নাই, খালি এক নাম, নিরাকার নিরঞ্জন নাম, নামের কঠিন ক্ষারে লোহাও মোলাম— সেই এক নাম। নামের তাজ্জব গুণে ধন্য হয় পাপের মোকাম। এমন আরও অনেক কথা ওই নাটকে আমি লিখি, যা শুনতে হলে আপনাকে রঙ্গমঞ্চে যেতে হবে। জীবন্ত আপনাকে জীবন্ত কুশীলবের সাক্ষাতে সত্যের আগুনে পুড়ে নিখাদ হতে হবে। নাটক তো বইয়ের পাতায় প্রাপ্তব্য নয়, তার জন্ম দাবানল ঘটে মঞ্চের পাটাতনে। এ কথা নিজেকে বড় করার জন্য বলা নয়, বলছি এই সত্যটাই, যে, সেই ১৯৭৫ সালেই আমি বুঝেছিলাম এই ধর্মান্ধতা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, আর ধর্ম দিয়ে সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করাটাই বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কথাটা কবিতায় বললে খুব কম মানুষের কাছে পৌঁছাত, উপন্যাস বা গল্প লিখলে তা বইবন্দী হয়েই থাকত। আমি চেয়েছিলাম সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছাতে, আর তাই, জীবনে প্রথম আমি নাটকের কথা ভাবি, নাটকেই কথাগুলো বলার জন্য কলম ধরি। মুনীর চৌধুরীর কথা মনে পড়ে; সেই ’৫৪ সালেই এক সকালে তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন, তুমি নাটক লেখো না কেন? তোমাকে দিয়ে হবে! পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় লিখতে বসে মুনীর ভাইয়ের কথা বারবার আমার মনে পড়েছে। আর, এই যে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, একে মুক্তিযুদ্ধের নাটক বলা হয়, লোকে বলে, আমি বলি না। আমি বলি, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে আমি ব্যবহার করেছি মাত্র; এবং এই পটভূমি ব্যবহার করে আমাকে বলতে হয়েছে ধর্ম আর ধর্মবিশ্বাস আর রাজনীতিতে ধর্মের অসৎ ব্যবহারের কথা। যদি এ নাটক মানুষের মনে কিছুমাত্র দাগ কেটে থাকে, তবে তা মুক্তিযুদ্ধের অধিক ধর্মসংক্রান্ত ওই বিকট চিত্রটির উদ্ঘাটন কারণেই। আজ বাংলাদেশের দিকে যখন তাকিয়ে দেখি তখন আমার মনে হয়, ১৯৭৫ সালেই সমস্যাটি বোধ হয় ঠিক শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। আজ আমার মনে হয়, যখন একাত্তরের সেপ্টেম্বরে দেশ ছেড়ে চলে যাই, তখনো আমার মনে হয়েছিল, যুদ্ধটা অন্তত বছর তিনেক চলবে, যদি চলত! তাহলে ওই ধর্মব্যবসায়ীরা নির্মূল হয়ে যেত তত দিনে, আর আমরাও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এতখানি বিপর্যস্ত হতে দেখতাম না।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কে উপজীব্য করে লেখা অসাধারণ একটি কাব্যনাটক। নাটকটি আমাদের ঐ সময়য়ের কিছু বাস্তব চিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
Was this review helpful to you?
or
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়তে অ্যারিস্টটলীয় নাট্যতত্ত্বের আদলে কাহিনি উৎকর্ষও নির্ণীত। মেয়ের আগমন এবং পরে দুর্বল সমর্পিত মাতবরের পাদদেশে মুক্তিসংগ্রামীদের জয়ের ভেতর দিয়ে আটষট্টি হাজার গ্রামের মানুষের সমন্বিত শক্তিতে উঠে আসা – একটা সফল শিল্পপ্রয়াস, সন্দেহ নেই। ভাষা প্রসঙ্গে যে কার্যকরী ও শক্তিশালী রূপ এলিয়টে প্রত্যক্ষ হয়, যার মধ্য দিয়ে প্রতœ-পুরাণ-নৃতত্ত্ব-ভূমি উঠে আসে, সে-প্রমাণ সৈয়দ শামসুল হক সীমিত পরিসরে হলেও রাখতে পেরেছেন; বিশেষত বাংলাদেশের সাহিত্য-বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে। সৈয়দ শামসুল হকের শিল্পচিন্তায় নাটকের নানামুখী চরিত্র নির্মাণে ও আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টি প্রয়াসের জন্য শব্দ-ইমেজের ব্যবহার বিশেষভাবে আকর্ষণীয়; যেমন মেয়ের উচ্চারণে : ‘সে ক্যান ফালায়া গেলো আমার জীবন/ হঠাৎ খাটাশে খাওয়া হাঁসের মতন?’, কিংবা ‘গ্যাছে সুখ/ য্যান কেউ নিয়া গ্যাছ গাভীনের বাঁটে যতটুকু/ দুধ আছে নিষ্ঠুর দোহান দিয়া’ ইত্যাদি। শব্দার্থের বৃত্ত ভেঙে ব্যঞ্জনা যে-পরিকাঠামোতে আবদ্ধ তা প্রথা-সংস্কারসন্ধানী অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধ তৈরি করে। লেখকের ভাষায় আঞ্চলিকতার আচ্ছাদন থাকলেও তার বিস্তার ঘটেছে সর্বদৈশিক; কালচিন্তনে তা সর্বকালিক বললেও অত্যুক্তি হয় না। ‘আঞ্চলিক শব্দের নিপুণ ব্যবহারে যুদ্ধকালীন উত্তরবাংলার গ্রামীণ জীবনকে যেন শব্দাবলি করে ধরে রেখেছে। ভাষার গীতময়তা, আঞ্চলিক শব্দের কুশলী প্রয়োগ এবং যুদ্ধকালীন জীবনবাস্তবতার কাব্যিক উচ্চারণে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যে একটি পালাবদলকারী নাটক হিসেবে বিবেচিত।’ শুধু বিষয়বৈচিত্র্য বা উপস্থাপনা নয় কাব্যনাট্যের নিরীক্ষিত শৈলী হিসেবে ততোধিক সাফল্যের মাত্রা স্পর্শের কারণেই পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় বাংলাদেশের সাহিত্যে অনিবার্যতার গুরুত্ব বহন করে চলবে।
Was this review helpful to you?
or
সৈয়দ শামসুল হকের বহুমুখী সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক প্রতিভার অন্যতম প্রধান ফসল তাঁর কাব্যনাট্য। বোধ করি এটি কেবল লেখকের কাব্যবৃত্ত সম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল থাকেনি; বরং বাংলানাট্যের এই শাখাটির পরিপুষ্টতার ক্ষেত্রেও দারুণ অবদান রেখেছে। এ কথা বলা যায়, বাংলা কাব্যনাট্য-সাহিত্য ততো সমৃদ্ধ নয়। যদিও বাংলা কবিতার আদিধারা কিংবা পাশ্চাত্য অনুকরণে আধুনিক বাংলা নাটকের সূত্রপাতের সঙ্গে কাব্যের একটি অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়তা ছিল, তবু রবীন্দ্রোত্তর বাংলা নাটকে এ ধারার বিকাশ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। নাটক রচনা আর কাব্যনাট্য রচনার মধ্যে প্রধান প্রভেদ কাব্যনাট্য রচয়িতাকে সর্বাগ্রে কবি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কবি ছাড়া কাব্যনাট্য লেখা সম্ভব নয়। সেদিক দিয়ে পঞ্চাশের দশক এমনকি সৈয়দ হকের পরবর্তী দশকের সত্যিকারের কবিরা কাব্যনাট্য লেখায় খুব একটা এগিয়ে আসেননি। তবে কবি বলে খ্যাত নন কিন্তু শক্তিমান নাট্যকারদের কেউ কেউ এ শাখায় হাত দিয়েছেন। তাদের সফলতা বিবেচনা এই লেখার প্রতিপাদ্য নয়। তবে শুরুতে এ কথা খোলাসা করা প্রয়োজন যে, কাব্যনাটক রচয়িতার বিস্তারের সুযোগ বেশি থাকলেও আগে তাকে নাটক হতে হবে। কাব্যনাটকের ক্ষেত্রে কবিতার মান উৎকৃষ্ট হলেও নাটকের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং ঘটনা ও চরিত্র বিন্যাস যথাযথ না হলে তা উৎরায় না। আমার নিজের বিবেচনায়, কাব্যনাট্য রচনার ক্ষেত্রেও সৈয়দ হক বিধিবদ্ধ নাটক রচনার ধারা বিবেচনায় রাখেননি কিংবা রাখতে চাননি। আর এখানেই আধুনিক কাব্যনাটকের ধারায় তিনি সম্পূর্ণ আলাদা। আর এই আলাদা কেবল চরিত্র নির্মাণে নয়; ভাষা এবং বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রেও। রুশীয় লেবেদফের হাত ধরে দত্ত ও মিত্র হয়ে বাংলা নাটকের যে ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল তার সঙ্গে হাজার বছরের বাঙালির মিল ছিল খুব সামান্যই। যদিও এই প্রবর্তিত রূপটির ভালো বা মন্দ আবিষ্কার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবু একটি কথা তো স্মরণ করতেই হয়, বাংলা গদ্যের মতো বাংলা নাটকও ঔপনিবেশিক সন্তান।
Was this review helpful to you?
or
this is my first book which is written by a writer. I am reading textbooks only since I have joined the school. I am only 11 years old. this book is amazing to read.