User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই আলোচনা অনর্থনীতির অর্থনীতি লীনা দিলরুবা কেলেঙ্কারির অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অনর্থনীতি শওকত হোসেন মাসুম প্রকাশক :শুদ্ধস্বর প্রচ্ছদ :তৌহিন হাসান মূল্য :২৭০ টাকা পত্রিকার রিপোর্টকে উপজীব্য করে মানসম্পন্ন গ্রন্থ রচনা একটি দুরূহ ও সাহসী কাজ, আর সেটিই করে দেখিয়েছেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখালেখিতে দক্ষ সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম। বইয়ের নাম 'কেলেঙ্কারির অর্থনীতি', প্রকাশিত হলো প্রকাশনা সংস্থা 'শুদ্ধস্বর' থেকে। পত্রিকার খবর পরিবেশনে খুব বেশি বিশ্লেষণের সুযোগ যেমন থাকে না, তেমনই এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ খবর অন্য সময়ে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। ফলে পত্রিকার রিপোর্ট নিয়ে গ্রন্থ রচিত হলে সেটি খুব বেশি আকর্ষণীয় হয় না। এসব কথা মনে রেখেই হয়তো লেখক পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের রিপোর্টগুলোকে গ্রন্থোপযোগী করার জন্য শুধু বিশ্লেষণাত্মক আলোচনাই করেননি, রীতিমতো গবেষণাপত্র এবং কোর্টের রায়, এমনকি জবানবন্দীও হাজির করেছেন! ফলে গ্রন্থভুক্ত লেখাগুলো আর পত্রিকার রিপোর্ট থাকেনি, সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করার কারণে হয়ে উঠেছে অর্থনীতিবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। গ্রন্থটির নামের সঙ্গে একটি সাবটাইটেল আছে—'বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অনর্থনীতি।' বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে অর্থনীতি-রাজনীতি-সমাজনীতি—সবই কু-নীতির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতেই বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, গরিব অর্থনীতির এই গরিব দেশে কোটিপতির সংখ্যাও অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। এসব অর্থাগম যে স্বাভাবিক পথে ঘটেনি, সেটি জনগণের কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার। লেখক এই অনর্থনীতিকেই টেনে বের করে এনে দেখিয়ে দিয়েছেন—কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা ! গ্রন্থটিতে ছয়টি নিবন্ধ রয়েছে—লুটপাটের ব্যাংক, আর্থিক কেলেঙ্কারি :হল-মার্ক, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কালো বেড়ালের বাহিনী, পদ্মা সেতুর দুর্নীত, তবুও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। 'লুটপাটের ব্যাংক' নিবন্ধটি বাঙালির ব্যাংক-ব্যবসা নিয়ে। মহাজনী ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ লেনদেনের নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাংকের উত্পত্তি, ব্যাংক গড়ে তোলার পেছনে বাঙালির ইতিহাসের পরম্পরা এবং বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোন পরিস্থিতিতে, পরিপ্রেক্ষিতে এবং অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—তার সবিস্তার বিবরণ আছে লেখাটিতে। ব্যাংকের কাজ আমানত আর ঋণ নিয়ে এবং বাংলাদেশে ঋণের সাথে খেলাপি শব্দটিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঋণ কেন, কীভাবে, কোন ইশারায়, কার কাছে পৌঁছায়, কীভাবে খেলাপি হয়, পুনঃতফসিল হয়—সেসবেরও মনোজ্ঞ বিবরণ রয়েছে নিবন্ধটিতে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে শওকত হোসেন মাসুম এই অনর্থের অর্থনীতির একেবারে খোলনলচে বের করে দেখিয়ে দিয়েছেন। পরের নিবন্ধটি—'আর্থিক কেলেঙ্কারি :হল-মার্ক।' বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যাংক-ব্যবস্থার সবচেয়ে বৃহত্ আর্থিক কেলেঙ্কারি এটি। এই ঘটনার পরম্পরা এবং আদালতে দেওয়া হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জবানবন্দীও সংযুক্ত হয়েছে লেখাটিতে। শেয়ারবাজার নিয়ে রয়েছে এর পরের নিবন্ধটি। শেয়ারবাজারের উত্পত্তি, বিকাশ, কর্মকাণ্ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশি শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে বলেছেন লেখক। বাংলাদেশে ২০১০-এর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পূর্বাপর, ২০১১-এর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য সবই পরপর তুলে ধরেছেন। কালো টাকার উত্পত্তি, প্রতিপত্তি আর কালো টাকা সাদা করা নিয়ে নানা নাটকের মনোজ্ঞ বিবরণ রয়েছে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক পরের লেখাটিতে। গ্রন্থের শেষ নিবন্ধ—'তবুও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।' এতকিছুর পরও এই গরিব দেশটি যে তলাবিহীন ঝুড়ি হয়ে থাকবে না, অনেক সম্ভাবনার ক্ষেত্র হবে সেসব নিয়ে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক একটি আশাজাগানিয়া আলোচনা এটি। বইটির বিশেষত্ব হচ্ছে, অর্থনীতির মতো জটিল বিষয়ের আলোচনা খুবই প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। গম্ভীর আলোচনার দিক পরিহার করে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিম, মানিক প্রমুখ লেখকের প্রসঙ্গ টেনে লেখক যে আকর্ষণীয় স্টাইল বেছে নিয়েছেন, পাঠক নিঃসন্দেহে তাতে মুগ্ধ হবেন।