User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটার শুরু থেকে শেষ পুরোটাই খুব সুন্দর ছিল। ভেন্ট্রিলোকুইজম যে একটা তুখোড় আর্ট সেটা এই বইটা পড়েই বুঝেছিলাম আর সেই জিনিসটাকে নিয়ে এমন একটা থ্রিলার বই সেটা ইন্টারেস্টিং হবে সেটাই স্বাভাবিক। এটার দ্বিতীয় বই মিনিমালিস্ট পড়ার অপেক্ষায়।
Was this review helpful to you?
or
দাম অনুযায়ী মারাত্মক সুন্দর একটি বই
Was this review helpful to you?
or
It was awesome ?
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
mind blowing. Thriller lovers need to get it asap.
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া অন্যতম সেরা বইয়ের মধ্যে পড়ে। এক বসায় পড়ার মতো উত্তেজনা বইয়ের প্রতি পাতায় পাতায় ছিল
Was this review helpful to you?
or
it's really so good
Was this review helpful to you?
or
========= কাহিনী সংক্ষেপ ========== এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে আড্ডা জমে উঠে তিন বন্ধু মারুফ, রুমি ও হাসানের। সেখানেই গল্পচ্ছলে আলাপ হয় আরেক বন্ধু শওকতের ব্যাপারে। সে নাকি এখন পাপেট শো করে বেড়ায় যাকে বলে ভেন্ট্রিলোকুইজম। শওকতের সন্ধানে তার সাথে দেখা করতে বেড়িয়ে পড়ে মারুফ ও রুমি। দেখাও হয় শওকতের সাথে। কিন্তু তাদের স্মৃতিতে থাকা বন্ধু শওকতের সাথে কোথায় যেন একটা অমিল বা অস্বস্তি খুঁজে পায় তারা। কিছুটা ভয়, বিস্ময় ও কৌতুহলের বশে সাংবাদিক রুমির মন খচ খচ করতে শুরু করে। তারা শুরু করে দেয় অনুসন্ধান। শওকতের একসময়ের ভালোবাসার মানুষ রুনুকে ঘিরে অনুসন্ধান করলে বেশকিছু বিস্ময়কর তথ্য হাতে পায় রুমি। রুনুর খোঁজে হাসপাতালে গেলে সেখানে তারা আবিষ্কার করে এক নতুন জগৎ! ভেন্ট্রিলোকুইজম, বাব, বাহাইজম, সিক্রেট সোসাইটি, সিম্বল, হিটলারের সময়ের অমানুষিক অত্যাচার, চীন-জাপান যুদ্ধের সময়কালের নিষিদ্ধ কিছু ঘটনাসহ অনেক কিছুর সমন্বয় মিলে রহস্যে ঘেরা ঘটনার ঘনঘটায় হতবিহ্ববল হয়ে পড়ে দুই বন্ধু। যেন বিশাল রহস্যের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে তারা দুজন। ========= পাঠ প্রতিক্রিয়া ========== দুর্দান্ত ও ঝড়ো গতির বইটি একদিনেই শেষ করলাম। বইটির শুরু খুব সাধারণ ঘটনা থেকে হলেও ধীরে ধীরে বইয়ের বিষয়বস্তু গভীর হতে গভীরতর হতে থাকে। ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, সিক্রেট সোসাইটি, বাহাইজম সবকিছু মিলে এমন একটি দুর্দান্ত কাহিনী লেখক তুলে ধরেছেন যে বইটি যেন এক রোলার কাস্টার রাইড। কাহিনী যত এগিয়েছে, গতিও তত বেড়েছে। তবে বইয়ের কাহিনী আরোও বিস্তৃত বা বিস্তারিত হলে আমার মতে বইটি আরোও উপভোগ্য হতো। যাই হোক লেখনশৈলী ভালো হওয়ার কারণে রহস্য ও থ্রিলারপ্রেমী পাঠকদের বইটি পড়তে দারুণ লাগবে আমার বিশ্বাস। বইটির শেষে ২য় অংশের ইঙ্গিত রয়েছে। সেই ‘মিনিমালিস্ট’ বইটিও সংগ্রহ করেছি। আশা করি সেটাও দারুণ হবে। প্রোডাকশনঃ কভার ডিজাইন, বইয়ের বাইন্ডিং, ফন্ট সাইজ, পৃষ্ঠার কোয়লিটি ভালো ছিলো। বানান ভুল চোখে পড়েনি। ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০।
Was this review helpful to you?
or
আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে বইটি❤️
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া থ্রিলার বইগুলোর মধ্যে সেরা একটি বই। বইটি পড়ে অনেক অনেক কিছু জানতে পেরেছি যা আগে কখনই জানতাম না। নিছক কোন থ্রিলার নয় ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব পরিভ্রমণ এটি।
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যে আমি না শেষ করে শান্তি পাব না। অনেক সুন্দর। thanks
Was this review helpful to you?
or
Boi gulo shoabr pora uchit
Was this review helpful to you?
or
Really nice one
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
ভালোই।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই
Was this review helpful to you?
or
মাশুদুল হক ভাই কে বাংলার Dan Brown বলবেন না দয়া করে। উনি উনার জায়গায়, মাশুদুল হক ভাই ওনার জায়গায়। অসম্ভব ভালো লেখা। মন ভরে গেছে। জয় বাংলা সাহিত্যের জয়!
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
not so good
Was this review helpful to you?
or
Happy
Was this review helpful to you?
or
Delivery system is very good..
Was this review helpful to you?
or
দীর্ঘ বিরতির পর একসাথে ১০ টা বই কিনলেও শুরু করেছিলাম মাশুদুল হকের এই বইটি দিয়ে। একদম ১ম লাইন থেকেই বইটি আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষন করে। আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ছোটোখাটো কিছু বিষয় ছাড়া বইটি ওভারঅল বেশ ভালো লেগেছে। নতুন অনেক কিছুই জানতে পেরেছি এই বইয়ের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত ভাবে এই রকম ঐতিহাসিক রেফারেন্স সমৃদ্ধ বই আমার কাছে বেশী ভালো লাগে। বাহাই, বাবি দের বিষয়গুলো একদম নতুন ছিলো আমার কাছে। ভেন্ট্রিকুইলিজম নিয়ে জানা থাকলেও সেটার ব্যাপারে কিছু নতুন তথ্য পেয়েছি। নাৎসি বাহিনী নিয়ে জানলেও জাপানের চায়নার আক্রমণের বিষয়গুলো নতুন ছিলো আমার জন্য। তবে বইয়ের কিছু জিনিস একটু দূর্বল মনে হয়েছে। সবকিছুই কেমন অটোমেটিক চলে আসতেছিলো প্রটাগনিস্ট দের হাতে। আর চরিত্রায়নের ব্যাপারে বলতে গেলে মারুফকে রুমীর তুলনায় খুব কম হাইলাইট করা হয়েছে। বিশেষ করে রুমির একদম সবকিছু জানা এই সবজান্তা ভাবটা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর ছিলো। যদিও সেই থ্রুতে আমারো অনেক কিছুই নতুন জানা হয়েছে তাই বিষয়টা নিয়ে সমালোচনা করা মনে হয় ঠিক হবে না। আগে দীর্ঘদিন বই পড়ার অভ্যাস থাকার সুবাদে বেশ কিছু অংশ আগে থেকেই ধরতে পারলেও শেষের রুনুর টুইস্টটা একদমই ধরতে পারিনি। ওভারঅল আমার কাছে চমৎকার এক সুখপাঠ্য বই ছিলো ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ব্যক্তিগত রেটিং ৮.৫/১০
Was this review helpful to you?
or
থ্রিলার প্রেমিদের জন্য দারুন একটি বই
Was this review helpful to you?
or
They provides the awesome books
Was this review helpful to you?
or
Good. I will not disappoint you.
Was this review helpful to you?
or
osthir ekti boi..jara thriller posondo koren tader jnno osadharon
Was this review helpful to you?
or
hudai
Was this review helpful to you?
or
এইরকম থ্রিল আর টুইস্ট এ ভরপুর উপন্যাস এখন অব্দি পড়িনি? #সবচেয়ে পছন্দের বই?
Was this review helpful to you?
or
বই?:ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখক✒:মাশদুল হক ধরণ?:থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার পৃষ্ঠা?:১৯১ রেটিং:৪.৫/৫ বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হলো কিছু পুরনো বন্ধু মারুফ,রুমি এবং হাসানের।মারুফ এবং রুমি হাসানের কাছে জানতে পারলো,তাদেরই এক বন্ধু শওকত নাকি ভেন্ট্রিলোকুইজমকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।কৌতূহল থেকেই হোক দুই বন্ধু চলে গেল শওকতের শো দেখতে।সেখানে শওকতের সাথে দেখা হলে অতীতের বেশ কিছু তিক্ততা থাকায় শওকত তাদের সাথে অমার্জিত আচরণ করে ফেলে।তারপরই মারুফ এবং রুমির মনে হতে থাকে শওকত তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু করে ফেলেছে এবং তারাও জড়িয়ে পড়েছে এর সঙ্গে।যে করেই হোক রুনুকে খুঁজে বের করতে হবে।কিন্তু তারপরই তারা বিশাল এক চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পড়ে।ধর্ম,ইতিহাস,সংস্কৃতি মিশ্রিত রহস্যের গভীর খাদে পড়ে একসময় তাদের জীবন হুমকির দশা দেখা যায়।তবে শেষ পর্যন্ত কি বেঁচে ফিরতে পারে তারা? পাঠ প্রতিক্রিয়া:মাশদুল হকের বই এই আমার প্রথম পড়া।বইটি শুরু করে শুধুই ভাবছিলাম সামনে কী হতে চলছে,,,,টানটান উত্তেজনার মধ্যে হুট করে শেষ হয়ে গেল!ধর্ম,ইতিহাস,গণিতের মিশ্রণ সত্যিই বইটিকে অতুলনীয় করে তুলেছে।ড্যান ব্রাউনের লেখার ইঙ্গিতের পাশাপাশি নিক পিরোগের হেনরি বিন্স সিরিজের টর্চারের মিল দেখা গেছে যা সত্যি অনবদ্য হয়েছে(ব্যক্তিগত মতামত)।
Was this review helpful to you?
or
Awesome
Was this review helpful to you?
or
Darun ... Osadharon chilo boita.
Was this review helpful to you?
or
ভালো❤️ নিতে পারেন
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাস এবং ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে এই গল্পটির মাধ্যমে।
Was this review helpful to you?
or
রহস্যে ঘেরা বই খানা!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখক মাশুদুল হকের থ্রিলার বই।।অবশ্য এই বই পড়ার আগ পর্যন্ত মাশুদুল হককে আমি চিনতাম না।।বইটি শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যে একটা মোহে আটকিয়ে গিয়েছিলাম।।বইটি শুধু কেবল থ্রিলার না বইটিতে আছে এমন কিছু ব্যাপার যা মানুষের এখনো অজানা।।বইটা কোনো পাঠকের এই বোরিং কিংবা স্লো লাগবে না কারন বইটিতে হঠাৎ হঠাৎ এমন কিছু টুইস্ট যা পাঠককে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।।
Was this review helpful to you?
or
রিভিউ লেখার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। লেখকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বই সাধারণ শ্রোতাদের কে উপহার দেওয়ার জন্য ।
Was this review helpful to you?
or
দারুণ বই???
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার! অনেক কিছু জানতে পারলাম। এমন বই-ই তো চাই! টানটান উত্তেজনা! মিনিমালিস্টও সংগ্রহ করা হয়ে গেছে! খেলা হবে!
Was this review helpful to you?
or
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, গল্পটা কিছুটা অন্য ধাঁচের। বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার জনরায় একটা নতুন ধঁচের গল্পের খোজে অনেকদিন ধরেই ছিলাম। অবশেষে সেটা পূরণ হলো। যদিও বইটি আমি অনেক দেড়িতে পড়েছি, কিন্তু এটার সম্পর্কে আলোচনা অনেকদিন ধরেই পড়ছিলাম। অবশেষে এটি পড়ার সুযোগ হলো। গল্পটি মূলত মারুফ নামক এক এন্থ্রোপলজিস্ট এর কথিত। অর্থাৎ লেখক গল্পটি উত্তম পুরুষে বর্ণনা করেছেন। সাধারণত থ্রিলার গুলো তৃতীয় পুরুষে বর্ণিত হয়, কিন্তু মাশুদুল হক এখানে একটি ব্যতিক্রমী চেষ্টা করেছেন যা আমার কাছে পুরোপুরি সফল বলেই মনে হয়েছে। গল্পের দুই বন্ধু মারুফ ও রুমি, মূলত তারা দু'জনই গল্পের মূল চরিত্র। এছাড়াও আছে শওকত নামক একজন ভেন্ট্রিলোকুস্ট, যে মারুফ ও রুমির বন্ধু ছিলো। ঘটনাপরম্পরায় এই দুই বন্ধু এক সময়কার বাকশক্তি হারানো শওকতের ভেন্ট্রিলোকুইজম সম্পর্কে জানতে পারে। তারা বেশ অবাক হয় এবং বিস্তারিত জানার জন্য দেখা করে শওকতের সাথে। সেখানে শওকতের রহস্যময় কথায় তারা খুজতে শুরু করে তাদের আরেক বন্ধুকে। সেখান থেকেই জড়িয়ে পড়ে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের জালে। সেই ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে ডা.রুশদী নামক একজনের নাম। ধীরেধীরে বেরিয়ে আসে নৃশংস কিছু মেডিকেল এক্সপেরিমেন্টের নোংরা ষড়যন্ত্র। এই থ্রিলারটি লেখকের প্রথম উপন্যাস হিসেবে অনেকটাই ভালো। যদিও কিছু বিদেশী উপন্যাসের প্রভাব ছিলো, তবুও সেই প্রভাবকে লেখক কখনোই প্রাধান্যবিস্তার করতে দেন নি। তাঁর উপন্যাসে ব্রাউনের রচনা-কৌশল উপস্থিত। ব্রাউনের মতোই ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত, স্থাপত্য ইত্যাদি মিশিয়ে রহস্য নির্মাণের চেষ্টা করেছেন তিনি। গল্প বলার কৌশলেও ব্রাউনের ছাপ কিছুটা চোখে পড়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে বরাবরই মনে হয়েছে লেখক যথেষ্ট পড়াশুনা করেই উপন্যাসটি লিখেছেন। বর্তমানে অনেক বই দেখাযায় যেগুলোতে তথ্য এবং বাস্তবতার কোনো সামঞ্জস্য দেখা যায় না। ফলে সেগুলো আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই হয় না। মাশুদুল হকের লেখা পড়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী যে বাংলা সাহিত্যে একজন শক্তিশালী থ্রিলার লেখকের আগমন ঘটছে।
Was this review helpful to you?
or
এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
মাশুদুল ইসলামের লেখা আমার পড়া প্রথম বই এটি।মূলত থ্রিলার বই এটি। তিনবন্ধু হঠাত করেই একটি রহস্যে জড়িয়ে যায়।ভেন্ট্রিলোকুইজম এবং হরবোলা নিয়ে রহস্য উপন্যাস এটি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মারুফ যে কি না নৃতাত্ত্বিক, শওকত হল ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, রুশদী হল মনোগবেষক।থ্রিলারটি অসম্ভব সুন্দর।
Was this review helpful to you?
or
Book was good with well information but littel slow. Enjoy every moment of the thriller.
Was this review helpful to you?
or
বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয়ে যায় পুরনো বন্ধুদের, দুই বন্ধু--নৃতাত্ত্বিক মারুফ এবং পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে তাদেরই আরেক বন্ধু পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। কৌতুহলী হয়ে সেটার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওরা জড়িয়ে পড়ে দারুণ রহস্যময় এক অনুসন্ধানে, বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর আর শিউরে ওঠার মত সব সত্য, সাধারণ মানুষকে কখনই জানতে দেয়া হয় না এমন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা, যার পদে পদে ওদের জন্য ওৎ পেতে আছে মৃত্যু, বিপদ, জড়িয়ে আছে ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের জীবন। "ভেন্ট্রিলোকুইস্ট" শুধু একটি উপন্যাসই নয়, পাঠকদের জন্য ইতিহাস, স্থাপত্য, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব যাত্রা।
Was this review helpful to you?
or
বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয় পুরানো বন্ধু মারুফ, রুমি এবং হাসানের। হাসানের মাধ্যমে মারুফ ও রুমি জানতে পারল তাদেরই এক পুরানো বন্ধু শওকত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। সেইরাতেই শওকতের প্রদর্শনীতে গেল তারা। শওকতের সাথে দেখা হওয়ার পর তারা দেখল তাদের বন্ধুর আমূল পরিবর্তন। ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে আগ্রহ থাকার কারনে এবং শওকতের কাছ থেকে ব্ল্যাক ম্যাজিকের আভাস পেয়ে দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়ল এক বিচিত্র রহস্যময় অনুসন্ধানে। সেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসলো শত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা। এবং আরও আবিস্কার করল ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটে যাওয়া কিছু নৃশংস ঘটনার সাথে এর সম্পৃক্ততা। এই রহস্যময় যাত্রায় তারা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে থাকল নিত্যনতুন বিপদের। সবসময়ে ওঁত পেতে আছে মৃত্যু তাদেরকে আলিঙ্গন করে নিতে। এক অভুতপূর্ণ রহস্যে ঘেরা মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস ভেন্ট্রিলোকুইস্ট।
Was this review helpful to you?
or
It is one of the most informative Bangla books. it gives me trills as well as knowledge. like I am reading a Dan Brown book.
Was this review helpful to you?
or
বন্ধুর বিয়ের আড্ডায় কথা প্রসঙ্গে মারুফ আর রুমী জানতে পারে পুরনো আরেক বন্ধু শওকতের কথা। ছাত্রজীবনে অসুস্থতার দরুন প্রায় 'বোবা' হয়ে যাওয়া শওকত, বর্তমানে পেশায় একজন সফল 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট'। কৌতুহল দমন করতে না পেরে ওরা দেখা করে শওকতের সাথে যা পরবর্তীতে ওদের স্বাভাবিক জীবনে বয়ে আনে চরম দুর্ভোগ। পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে, আমরা সাধারণত কি আশা করি...?? উষ্ণ অভ্যর্থনা... তাই না?? কিন্তু শওকতের সাথে দেখা হওয়ার পর...ভয়, শংকা আর গভীর এক রহস্যের জালে আটকা পরে যায় মারুফ আর রুমী। কিন্তু কি সেই রহস্য? শওকত আসলে কি করেছিলো ওদের সাথে? কি প্রতিশোধ নেওয়ার কথা জানালো? আর অপ্রকৃতস্থ ডা:রুশদী লোকচক্ষুরর আড়ালে, ভয়ংকর সব এক্সপেরিমেন্টই বা করছেন কাদের সহায়তায়? সেকথা নাহয় পাঠক বই পড়েই জানবেন। শেষের দিকে অসাধারণ টুইস্টে পাঠককে স্তব্ধ করে দিবে।
Was this review helpful to you?
or
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট; লেখকঃ মাশুদুল হক ; প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী ; প্রকাশকালঃ ২০১৩ ; পৃষ্ঠাঃ ১৯১; মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা শুরুটা অনেক আগে, যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েকশ বছর আগে। মিশরীয় বা গ্রীক সভ্যতায়, অন্যায়ের বিচার করতেন স্বয়ং পাথুরে দেবমূর্তি। প্রাণহীন মূর্তির কণ্ঠে গমগমিয়ে উঠতো দৈববাণী। না, দেবতারা আদতে কথা বলতেন না। সেসময় পুরোহিত ও জাদুকরেরা আয়ত্ত করে নিতেন এক বিশেষ চর্চার। মধ্যযুগে যখন শুরু হলো জাদুকরদের হত্যা করা, তখন প্রাচীন সেই চর্চাকেও কালো জাদুর মতই অশুভ কিছু হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এর সাথে জড়িয়ে ছিল নিষিদ্ধ ধর্মীয় আচার। তবু বিদ্যাটা হারিয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, ঠোঁট না নাড়িয়ে স্বর ছুঁড়ে দেওয়ার খেলা – মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম। ২০১৩ সাল। কলেজের পুরনো বন্ধু রুমি, মারুফ ও হাসান অনেকদিন পর এক হয়েছে জহিরের বিয়েতে। কথা হচ্ছিলো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা কে কোথায় আছে, সেই সূত্রেই জানা যায় আরেক বন্ধু শওকত এখন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ব্যাপারটা অবাক হওয়ার মতোই বটে। একে তো আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিসটার তেমন চল নেই। তার ওপর কলেজে পড়াকালীন টাইফয়েডে বাকশক্তি হারায় শওকত। সেই বোবা শওকত কি করে মায়াস্বরের খেলা দেখায়, এই কৌতুহলে রুমি আর মারুফ হাজির হলো শওকতের শো-তে। শো দেখে মুগ্ধ দুই বন্ধু গেল শওকতের হোটেলের রুমে দেখা করতে। সেখানেই সব তালগোল পাকিয়ে গেল। অদ্ভুত সব প্রেতসাধনা আর আত্মার কথা বলতে শুরু করলো মায়াস্বরবিদ! জানায় ভেন্ট্রিলোকুইজম কেবল সাধারণ কোনো স্বরের খেলা নয়। যে পুতুলটা নিয়ে সে খেলা দেখায়, সেটা নাকি বহন করছে শওকতের আত্মা! তাদের আরেক পুরনো বান্ধবী রুনুকেই বা কি করেছে সে? কি সেই গোল্ডেন পানিশমেন্ট যা রুনুকে দিয়েছে শওকত? মানসিক রোগের ডাক্তার রুহান উদ্দীন রুশদীর হাসপাতালে ভয়ংকর কিছু ঘটছে। সজ্ঞানে রেখেই মানুষের উপর অস্ত্রোপচার চালানোর মত পৈশাচিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে গোপন কোনো ধর্মপালন, অনেক কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে রুশদী হাসপাতালে। শওকতের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? রুনুর আসলে কি পরিণতি হয়েছে? যতই জানতে চায় আরো অশুভ কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়তে লাগলো রুমি আর মারুফ। মাশুদুল হকের প্রথম হরর থ্রিলার ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’। গল্পটা মারুফের জবানে হলেও, এর মূল নায়ক তুখোড় সাংবাদিক রুমি। বুদ্ধি আর যুক্তির সাহায্যে সে বিপদসংকুল পরিস্থিতি কাটিয়েও বেরুতে পারে ঠান্ডা মাথায়। সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মারুফের চরিত্রটি কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছিল। মূল খলচরিত্র হিসেবে রুশদীর উপস্থিতি ছিল সংক্ষিপ্ত, কেবল গল্পের পটভূমিতে তার ভয়াবহতা আঁচ করা যাচ্ছিলো। গল্পটিতে দারুনভাবে মিশেছে ধর্ম, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, ইতিহাস এর উল্লেখ। সাথে টানটান উত্তেজনা আর রহস্য তো আছেই। অজস্র প্রশ্নের সুতো শেষ পর্যন্ত এনে একসাথে জুড়েছেন লেখক দারুন মুন্সিয়ানার সাথে। কাহিনী এগিয়ে গেছে দ্রুততার সাথে, পাঠক এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে বাধ্য হবেন। বাহাই ধর্ম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানীদের নৃশংস প্রজেক্ট, হর্ষদ সংখ্যা, মায়াস্বরবিদ্যা নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে লেখক আলোকপাত করে গেছেন গল্পের মধ্যে মধ্যেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা খাপছাড়া ছিল। শত্রুর কবল থেকে পালানোর সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বর্ণনা করা, বা রেস্তোরাঁয় কাউকে খুন করে সেখানেই খুনের পদ্ধতি ব্যাখা করা ঠিক স্বাভাবিক ছিল না। বাংলা সাহিত্যে "ভেট্রিলোকুইস্ট"এর মতো তথ্যবহুল থ্রিলার বিরল। অনেকরকম তথ্য এবং টুইস্টের সমন্বয়ে লেখা বইটি পাঠকদের জন্য চমৎকার একটি উপহার।
Was this review helpful to you?
or
##রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন #বই_রিভিউ_১৩ #ভেন্ট্রিলোকুইস্ট #লেখক: মাশুদুল হক #বইয়ের_ধরণ: থ্রিলার #প্রকাশনী: বাতিঘর #পৃষ্ঠা: ১৯১ #মুদ্রিত_মূল্য: ২০০ টাকা #ব্যক্তিগত_রেটিং: ৭.৫/১০ . . কোনো ব্যক্তি যদি তার হাতে থাকা কোনো পুতুলকে কথা বলায় সেটা হলো ভেন্ট্রিকুলোইজম। এখন কথা হচ্ছে পুতুলকে কথা বলায় এর মানে কি? পুতুল কি কথা বলতে পারে? না পারেনা। ওই ব্যক্তিই তার মুখ নড়া চড়া না করেই কথা বলে এবং মনে হয় যেন তার হাতে থাকা পুতুল কথা বলছে। . . মারুফ এবং রুমির কলেজ লাইফের বন্ধু শওকত একজন নামকরা ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। যদিও কলেজ জীবনে একবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে সে একবার পুরোপুরিভাবে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। একসময় সেরেও উঠে এবং শুরু করে ভেন্ট্রিলোকুইজম। . . শওকতকে ব্যবহার করে এক পাগলাটে ধরনের ডাক্তার রুশদী। তার হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরে চলে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট এবং যার সহযোগি হলো শওকত। শওকতের সাথে কলেজ জীবনে রুনু নামে এক সহপাঠীর সম্পর্ক হয় এবং পরবর্তীতে রুনুর নিখোজ হবার ঘটনায় তাকে খুজে বের করতে বের হয়ে পড়ে মারুফ এবং রুমি। . . ঘটনাক্রমে মারুফ জানতে পারে তার বোন বিনুকে সে দুর্ভাগ্যক্রমে ড: রুশদীর হাসপাতালেই ভর্তি করেছে! এরপর বিনু এবং রুনুর উদ্ধারকার্যে জড়িয়ে পড়ে মারুফ, রুমি এবং তাদের ই অন্য আরেকজন বন্ধু হাসান। . . একে একে তাদের সামনে উন্মোচিত হয় এমন কিছু সত্য যেগুলো সত্যিই লোমহর্ষক! হিটলারের নাৎসী বাহিনীর ডাক্তাদের গোপন এক্সপেরিমেন্ট, বাব, বাহাই ধর্মের ইতিহাস এবং ড: রুশদীর সাথে তাদের সম্পর্ক, চীন-জাপান যুদ্ধে জাপানের নৃশংস এক্সপেরিমেন্ট এসব মিলে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। . . মারুফ, রুমির এই যাত্রায় তাদের সহযাত্রী হয় ড. রুশদীর বিশ্বাসভাজন এক নার্স মিলি, আদতে যে ছিল গোপন এক সংস্থার এজেন্ট! সংখ্যার, কোডের মারপ্যাঁচ, সিক্রেট সোসাইটি, পাগলাটে এক্সপেরিমেন্ট, বাব, বাহাই ধর্মের বর্ণনায় দারুন থ্রিলিং এই বইটি এক বসায় শেষ করতে বাধ্য হবেন পাঠক। . #হ্যাপী_রিডিং
Was this review helpful to you?
or
রিভিউঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক প্রকাশকঃ বাতিঘর ধরণঃ থ্রিলার ও এডভেঞ্চার ধর্মী উপন্যাস পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৯২ মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা মাত্র হঠাৎ আপনি যদি জানতে পারেন আপনার ছোটবেলার অসুখে পড়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলা বন্ধুটি এখন একজন বিখ্যাত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট! যার পেশাই হলো বাকশক্তির খেলা দেখানো! তখন আপনার কেমন অনুভূতি হবে? নিশ্চয়ই চমকে যাবেন! ঠিক তেমনই চমকে গেছিলো এনথ্রোপলজিস্ট মারুফ এবং সাংবাদিক রুমি তাদের ছোটবেলার বন্ধু শওকতের পেশার কথা শুনে। শওকত ইন্টারমিডিয়েট এক্সামের কিছুদিন আগে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। আর সেই শওকত এখন কিনা একজন বিখ্যাত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট! বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘুরতে এসে বন্ধুদের কাছে এরকম একটা চমকপ্রদ নিউজ শুনে দুজনই বেশ চমকে যায়। আর নিজেদের চোখে শওকতের সেই বিখ্যাত পাপেট শো দেখতে চলে যায়।সেখানে শওকতের কারিশমায় বিষ্মিত হয়ে যায়। শো শেষ হলে শওকতের ফ্ল্যাটে তার সাথে দেখা করতে যায় মারুফ আর রুমি। আর সেখানে শওকতের মুখে আধ্যাত্মিক আর অবিশ্বাস্য কিছু কথা শুনে তারা আরো বিষ্মিত হয়ে যায়। শওকতের কথার পিছনে তারা এক অন্যরকম রহস্যের গন্ধ পায়। আর এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়েই তারা জড়িয়ে পরে আরো বড় এক রহস্যে! বেরিয়ে আসে ভয়ংকর আর শিউরে উঠার মতো সব সত্য! যার সমাধানের পথে ওদের জন্য ওত পেতে আছে মৃত্যুগামী বিপদ। যার সাথে জড়িয়ে যায় তাদের ঘনিষ্ট কিছু মানুষের জীবন! তারা কি পারবে সেই রহস্য উদঘাটন করতে? নাকি নিজেদের জীবন বাঁচাতে রহস্য রেখে ফিরে যাবে নিজেদের আস্তানায়? পাঠ পতিক্রিয়াঃ মাশুদুল হকের এটাই আমার প্রথম পড়া উপন্যাস।লেখকের প্রথম উপন্যাস হিসেবে খুব সুন্দর লিখেছেন উনি। আর উপন্যাসটা পড়ে আমার মনে হয়েছে এই বইটা লেখার জন্য লেখককেও অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। পরিশ্রম করতে হয়েছে অনেক। বইটার প্রথম অংশ পড়েই একেবারে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিলাম। শেষ না করে উঠতেই পারিনি। বইটা ছেড়ে একটু বিশ্রামের জন্য উঠলেও মনের মাঝে শুধু ঘুরপাক খেতো একটাই প্রশ্ন! "তারপর কি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য?" ভেন্ট্রিলোকুইজমের বাংলা অর্থ মায়াস্বর! ভেন্ট্রিলোকুইজম বলতে এক ধরণের শব্দের কাজকে বোঝানো হয়। একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মঞ্চে এমনভাবে তার কণ্ঠকে ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে অন্য কোনও উৎস থেকে শব্দটি আসছে।আর এমন একজন মায়াস্বরবিদ অর্থাৎ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট কে নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়েই গল্পের শুরু হয়। তবে বইয়ের শুরুটা ভেন্ট্রিলোকুইস্ট দিয়ে শুরু হলেও এর কাহিনী ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর মাঝে আবদ্ধ থাকে নি।বইটিতে ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, গণিত, স্থাপত্য আর বিজ্ঞানের বিস্তর আলোচনা করেছেন লেখক। বইটিতে লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতাও খুবই সুক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেসময়ের শত্রুপক্ষের সৈন্য কিংবা সাধারন মানুষদের কিভাবে নিষ্ঠুরতার সাথে ভয়ংকর ভয়ংকর শাস্তি দিতেন তা দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন সেসব মানুষদের নিয়ে করা ভয়ংকর ভয়ংকর পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো। যেগুলো পড়লে আপনি নিজেও ভাবনায় পড়ে যাবেন "তারা কি আদৌ মানুষ?!" বইটির প্রতিটি চরিত্র তাদের নিজেদের জায়গায় যথাযথ ছিলো। অতিরিক্ত চরিত্রের বাড়াবাড়ি নেই গল্পে। প্রতিটি চরিত্রকেই একে অপরের সাথে মিল রেখেই তৈরি করেছেন লেখক। যেটা আমার ভালো লেগেছে। পরিশেষে বলবো অসাধারণ একটা বই। যারা এখনও পড়েননি তারা পড়ে ফেলতে পারেন। ভালো লাগবে আশাকরি।
Was this review helpful to you?
or
“মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম” একি অর্থ বহুল এই অচেনা শব্দ দুটি আসলে কমবেশি আমাদের সকলেরই পরিচিত। হ্যাঁ, একি সাথে অচেনা ও পরিচিত বলাতে হয়তো কিছুটা কনফিউজিং দেখাচ্ছে। চলুন একটু জেনে নেয়া যাক এই “মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম” সম্পর্কে। মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম বলতে এক ধরণের শব্দশিল্পকে বোঝানো হয়। একজন মায়াস্বরবিদ মঞ্চে এমনভাবে তার কণ্ঠকে ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে অন্য কোনও উৎস থেকে শব্দটি আসছে। সাধারণত মায়াস্বরবিদের হাতে থাকা পুতুলের মুখ থেকে তিনি শব্দ বের করে আনেন নিজের ঠোঁট না নেড়েই। ঐতিহাসিক দিক থেকে, মায়াস্বর এক ধরণের ধর্মীয় সংস্কৃতি। মায়াস্বরের ইংরেজি Ventriloquism (ভেন্ট্রিলকুইজম) এসেছে লাতিন venter (পেট) এবং loqui (কথা) থেকে। নামটির অর্থ অনেকটা এরকম- “পেটের অন্তরাল থেকে কথা”। এই কথাকে মায়াস্বরবিদের পেটের অন্তরালে আশ্রয় নেওয়া “প্রেতের” কাছ থেকে আসা বাণী হিসাবে কল্পনা করা হত। এই মায়াস্বরবিদেরা প্রেতেদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন বলে ভাবা হত এবং এরা সাধারণত ভবিষ্যদ্বাণীও করতেন। ভেন্ট্রিলোকুইজম যে ব্যক্তি পারফর্ম বা প্রেকটিস করে তাকেই মূলত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বলা হয়ে থাকে। এই ভেন্ট্রিলোকুইজম বা ভেন্ট্রিলোকুইস্ট সম্পর্কে এতোকিছু বলার কারণ এইটাই যে মাশুদুল হক এর লেখা প্রথম মৌলিক থ্রিলার বইটার মূল বিষয়টা সম্পর্কে পাঠককে একটা সুন্দর ধারণা দেয়া। আমাদের পৃথিবীতে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা এমন সব ধর্মের বিশ্বাসী যা সম্পর্কে হয়তো আমরা এখনো কানা করি ও জানি না। তেমনি একটা ধর্মের নাম বাহাই ধর্ম। যা প্রবর্তিত হয় বাব নামক একটি ধর্মিয় বিশ্বাস থেকে যেখানে তারা “১৯” কে তাদের ধর্মের একটি পবিত্র সংখ্যা মনে করে থাকে। #আলোচনাঃ ঘটনার বর্ণনার শুরুতেই আমাদের যেতে হবে ২০১৩ সালের এক দিনে। কলেজের পুরনো বন্ধু জহিরের বিয়েতে একত্রিত হয় রুমি, মারুফ ও হাসান। সব বন্ধুরা মিলে আলোচনা করতে থাকে কলেজের বাকি বন্ধুদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে শওকত নামের সেই বন্ধুটির কথা যে কিনা কলেজে থাকতে টায়ফয়েড এর শিকার হয়ে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সেই বোবা শওকত হুটকরে হয়ে উঠে বর্তমান সময়ের একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। কিন্তু এ কিকরে সম্ভব? পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় রুমির মাথায় ঘুরে রহস্যের গন্ধ। তাই বিয়ে থেকে সরাসরি ছুটে যায় উত্তরায়, শওকত এর শো দেখতে। সাথে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মারুফ ও। শো দেখে যখন দুজনি মুগ্ধ তখন তারা আসল ঘটনা জানতে শওকত এর হোটেলে যায় তার সাথে দেখা করতে সেই রাতেই। সেখানে এক অচেনা শওকত এর সাথে দেখা হয় তাদের যে কিনা ভেন্ট্রিলোকুইজম কে ধর্মের সাথে তুলনা করে এবং এও জানায় যে তার আত্মা নাকি এখন তার হাতের সেই ডামিটার মধ্যে প্রতিস্থাপন করা। তাদের পুরনো বান্ধুবী রুনু? তার সাথে না শওকত এর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো? তাহলে তাকে কেনো পেতে হলো “গোল্ডেন পানিশমেন্ট?” রুহান উদ্দিন রুশদী। দেশের ক্ষমতাসীন এক মানসিক রোগের ডাক্তার। যে কিনা একের পর এক জীবন্ত মানুষকে বানিয়ে যাচ্ছে তার টেস্ট সাব্জেক্ট এবং পূর্ণ জ্ঞানেই করছে তাদের বিভিন্ন অপারেশন বিনা কোনো এনেস্থিসিয়ার ব্যবহার করেই। কিন্তু কেনোই করছে সে এই পাশবিক নির্যাতনের এই এক্সপেরিমেন্ট? কি এমন অমীমাংসিত কাজ যা তাকেই সম্পুর্ণ করতে হবে? শওকত এর জীবন নিয়ে ঘাটতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে রুমি আর মারুফ জরিয়ে পরে এমন এক রহস্যের সাথে যা কিনা তাদের স্বাভাবিক জীবনকে দিয়ে দেয় এক নতুন গতি। ইংরেজি কোণ মুভির ডিটেকটিভদের মতো অনুসন্ধান শুর করে তারা। তা, ফলাফল কি ছিলো শেষ পর্যন্ত এই অনুসন্ধান এর? আমি মনে করি একটা গল্প সবসময়ই একটা গল্পতেই আবদ্ধ থাকে না। এর থেকে বেরিয়ে আসে নানা অজানা তথ্য। নানা অজানা বিষয় যা জানতে পারলে জ্ঞানের সাম্রাজ্য বাড়তেই থাকে। আর এই জ্ঞান বৃদ্ধিতে ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’’ বইটা আসলেই অনেক গুরুত্ব বহন করবে। লেখক গল্পে অসংখ্য অজানা তথ্যাদির বিশ্লেষণ সহ ব্লে দিয়েছেন। জানিয়েছেন এমন এক ধর্মের কথা যার নাম ও কোনোদিন শুনিনি। জানিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এর পরের সময়কার অজানা এমন কিছু রহস্য যা গায়ের রক্ত হিম করে দেয়ার মতো। এই বইয়ের মাধ্যমেই লেখকের কোনো বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আর প্রথম মৌলিক থ্রিলার হিসাবে যথেষ্ট ভালো লিখেছেন। কিছু কিছু যায়গা খাপছাড়া লাগলেও লেখার ধরণ খুবই চমৎকার মনে হিয়েছে। কাহিনীর বক্তা এখানে মারুফ হলেও চারিত্রিক গুণে রুমিকেই প্রধান চরিত্র মনে হয়েছে। সবমিলিয়ে চমৎকার একটা বই যা এক বসাতেই শেষ করে উঠার মতো। পড়তে থাকুন, ধন্যবাদ। বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৭ লিখিত মূল্যঃ ২০০৳ রেফারেন্সঃ উইকিপিডিয়া
Was this review helpful to you?
or
শুরুটা অনেক আগে, যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েকশ বছর আগে। মিশরীয় বা গ্রীক সভ্যতায়, অন্যায়ের বিচার করতেন স্বয়ং পাথুরে দেবমূর্তি। প্রাণহীন মূর্তির কণ্ঠে গমগমিয়ে উঠতো দৈববাণী। না, দেবতারা আদতে কথা বলতেন না। সেসময় পুরোহিত ও জাদুকরেরা আয়ত্ত করে নিতেন এক বিশেষ চর্চার। মধ্যযুগে যখন শুরু হলো জাদুকরদের হত্যা করা, তখন প্রাচীন সেই চর্চাকেও কালো জাদুর মতই অশুভ কিছু হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এর সাথে জড়িয়ে ছিল নিষিদ্ধ ধর্মীয় আচার। তবু বিদ্যাটা হারিয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, ঠোঁট না নাড়িয়ে স্বর ছুঁড়ে দেওয়ার খেলা - মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম। ২০১৩ সাল। কলেজের পুরনো বন্ধু রুমি, মারুফ ও হাসান অনেকদিন পর এক হয়েছে জহিরের বিয়েতে। কথা হচ্ছিলো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা কে কোথায় আছে, সেই সূত্রেই জানা যায় আরেক বন্ধু শওকত এখন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ব্যাপারটা অবাক হওয়ার মতোই বটে। একে তো আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিসটার তেমন চল নেই। তার ওপর কলেজে পড়াকালীন টাইফয়েডে বাকশক্তি হারায় শওকত। সেই বোবা শওকত কি করে মায়াস্বরের খেলা দেখায়, এই কৌতুহলে রুমি আর মারুফ হাজির হলো শওকতের শো-তে। শো দেখে মুগ্ধ দুই বন্ধু গেল শওকতের হোটেলের রুমে দেখা করতে। সেখানেই সব তালগোল পাকিয়ে গেল। অদ্ভুত সব প্রেতসাধনা আর আত্মার কথা বলতে শুরু করলো মায়াস্বরবিদ! জানায় ভেন্ট্রিলোকুইজম কেবল সাধারণ কোনো স্বরের খেলা নয়। যে পুতুলটা নিয়ে সে খেলা দেখায়, সেটা নাকি বহন করছে শওকতের আত্মা! তাদের আরেক পুরনো বান্ধবী রুনুকেই বা কি করেছে সে? কি সেই গোল্ডেন পানিশমেন্ট যা রুনুকে দিয়েছে শওকত? মানসিক রোগের ডাক্তার রুহান উদ্দীন রুশদীর হাসপাতালে ভয়ংকর কিছু ঘটছে। সজ্ঞানে রেখেই মানুষের উপর অস্ত্রোপচার চালানোর মত পৈশাচিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে গোপন কোনো ধর্মপালন, অনেক কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে রুশদী হাসপাতালে। শওকতের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? রুনুর আসলে কি পরিণতি হয়েছে? যতই জানতে চায় আরো অশুভ কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়তে লাগলো রুমি আর মারুফ। মাশুদুল হকের প্রথম হরর থ্রিলার 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট'। গল্পটা মারুফের জবানে হলেও, এর মূল নায়ক তুখোড় সাংবাদিক রুমি। বুদ্ধি আর যুক্তির সাহায্যে সে বিপদসংকুল পরিস্থিতি কাটিয়েও বেরুতে পারে ঠান্ডা মাথায়। সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মারুফের চরিত্রটি কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছিল। মূল খলচরিত্র হিসেবে রুশদীর উপস্থিতি ছিল সংক্ষিপ্ত, কেবল গল্পের পটভূমিতে তার ভয়াবহতা আঁচ করা যাচ্ছিলো। গল্পটিতে দারুনভাবে মিশেছে ধর্ম, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, ইতিহাস এর উল্লেখ। সাথে টানটান উত্তেজনা আর রহস্য তো আছেই। অজস্র প্রশ্নের সুতো শেষ পর্যন্ত এনে একসাথে জুড়েছেন লেখক দারুন মুন্সিয়ানার সাথে। কাহিনী এগিয়ে গেছে দ্রুততার সাথে, পাঠক এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে বাধ্য হবেন। বাহাই ধর্ম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানীদের নৃশংস প্রজেক্ট, হর্ষদ সংখ্যা, মায়াস্বরবিদ্যা নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে লেখক আলোকপাত করে গেছেন গল্পের মধ্যে মধ্যেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা খাপছাড়া ছিল। শত্রুর কবল থেকে পালানোর সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বর্ণনা করা, বা রেস্তোরাঁয় কাউকে খুন করে সেখানেই খুনের পদ্ধতি ব্যাখা করা ঠিক স্বাভাবিক ছিল না। বাংলা সাহিত্যে এরকম তথ্যবহুল থ্রিলার বিরল। অনেকরকম তথ্য এবং টুইস্টের সমন্বয়ে লেখা বইটি পাঠকদের জন্য চমৎকার একটি উপহার। বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক প্রকাশনায়ঃ বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ২০১৩ পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৯১ মূল্যঃ ২০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মে বইয়ের নাম: ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখক: মাশুদুল হক প্রকাশনী: বাতিঘর পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯১ মূল্য: ২০০(মুদ্রিত) একটি উপন্যাস পড়ে শুধু থ্রিলার নয়, একইসঙ্গে যদি ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের পারফেক্ট কম্বিনেশনের স্বাদ নিতে চান..তবে এই উপন্যাসটি আপনার জন্য। কাহিনীর সূত্র শুরু হয় জহিরের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে। যেখানে দেখা হয়ে যায় অনেকদিনের নিরবিচ্ছিন্ন কিছু বন্ধুর। কথার প্রসঙ্গে জানতে পারে তাদেরই এক পুরনো বন্ধু শওকত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজমকে। ভেন্ট্রিলোকুইজম, অর্থাৎ এমনভাবে শব্দকে ছুঁড়ে দেয়া যেন মনেহয় যিনি বলছেন তার মুখ থেকে নয়, আশপাশের কোথাও থেকে আসছে শব্দটা। হতে পারে হাতে ধরা পুতুলের মধ্য হতে। যে ভেন্ট্রিলোকুইজম পরিচালনা করে তাকে বলা হয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। শওকতের পেশা নিয়ে বন্ধুমহলে সংশয় দেখা দেয়ার একটা কারণ ছিলো, কারণটা হলো শওকতের অতীতে টাইফয়েড হবার কারণে বাকহীন হবার কথা সবাই জানতো। তবে কথা হলো, সেই একই ব্যক্তির পক্ষে এখন পাপেট শো করে জনগণকে মাতানো কতটুক সম্ভব! প্রচন্ড কৌতুহলকে চাপতে না পেরে সেই রাতই পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি এবং নৃতাত্ত্বিক মারুফ বেড়িয়ে পরে তাদের সেই পুরনো শওকতের খোঁজে। তারা তখনও ক্ষুণাক্ষরে টের পায়নি যে কেঁচো খুঁড়তে তারা বিশালদেহী সাপ বের করে ফেলবে! সেই রাতে শওকতের সঙ্গে খানিক কথা বলে তারা আরো সন্দেহপ্রবণ এবং কৌতুহলী হয়ে উঠে। কৌতুহলটা বেশি চেপেছিলো রুমির মাথায়! তুখোড় বুদ্ধিমত্তাসম্পূর্ণ রুমি দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে যা বুঝলো, তা তাদের ধাবিত করলো এক রহস্যময় ঘটনার সঙ্গে। আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আসে শরীরে কম্পনসৃষ্টি করার মতো ভয়ংকর সব সত্য! বহু বছর আগের মেডিকেলে সফল প্রজেক্টের আরে লুকিয়ে রাখা কিছু মর্মান্তিক এবং নিয়ম বহির্ভূত পরীক্ষানিরীক্ষার কথা, যার পুনরাবৃত্তি ঘটছিলো কিংবা বলা যায় প্রাচীন..বিরল এক সম্প্রদায়ের দৈবীক ক্ষমতা আর আর বিজ্ঞানের সমাগম ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছিলো! তাদের প্রতিটা পদক্ষেপে ছিলো মৃত্যুর আশঙ্কা। ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো কিছু ঘনিষ্ট মানুষের জীবন। #প্রিয়_উক্তি: ১: "আমরা সবাই আসলে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। হয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট নয়তো ডামি। নিজের মত আমরা কজনাই চলি, কারো চাপানো পথে নামি বা আমাদের পথ অন্যদের ঘাড়ে চাপাই!" ২: "দুটো মানুষের কখনো ভুল সময় দেখা হয়ে যায়। ভালোবাসা মনকে উদার করে না,করে সংকীর্ণ।" এই কথাটা কেবল আক্ষরিক অর্থেই নয়, বাস্তবেও সত্য বলে আমি মনেকরি। একারণেই হয়তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ কখনো কাউকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেললে সেই কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে অন্যকাউকে ওই জায়গায় স্থাপন করতে পারেনা। #পাঠ_প্রতিক্রিয়া: আমি তেমন থ্রিলারপ্রেমী নই। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলে থ্রিলার হাতে নেই। আমার ধারণা ছিলো যে আমি যতক্ষণ থ্রিলার বই পড়ি ততক্ষণই মাথায় থাকে, তারপরে সব আউট। কিন্ত মাশুদুল হকের এই সিরিজটা(এই বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড 'মিনিমালিস্ট') খুব আগ্রহ করেই হাতে নেই, এবং প্রতিটা পেজে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে সক্ষম ছিলো বইটি। সামনে কি হবে...এর পিছে রুমি কি লজিক দাঁড় করাবে এগুলো ছিলো বইটি পড়াকালীন আমার প্রধান চিন্তা। বাহাইজম সম্পর্কে চাপা একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে বইটা পড়ে। এছাড়াও আরো অনেক বিষয়বস্ত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই বইটির মাধ্যমে। লেখককে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে, জানতে হয়েছে বইটির উপজীব্যর জন্য সেই প্রচেষ্টা দৃশ্যমান ছিলো। সেসব জ্ঞান সে পুরো বই জুড়ে বিতরণ করেছেন পাঠককে। এই বই যে যে কেউ পড়লে ইগারলি মিনিমালিস্ট পড়ার অপেক্ষায় থাকবে। যদি ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্বের সমন্বয়ে থ্রীল পাবার প্রবল আকর্ষণ থাকে তবে বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। সুখপঠন।
Was this review helpful to you?
or
বই: ভেন্ট্রিলোকুইস্ট জনরা: থ্রিলার লেখক: মাশুদুল হক প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশ কাল: ৩য় সংস্করণ নভেম্বর ২০১৫ পৃষ্ঠা: ১৯১ প্রচ্ছদ: ডিলান মুদ্রিত মূল্য: ২০৯ ভেন্ট্রিলোকুইজম হচ্ছে শব্দকে ছুড়ে দেয়া, এটা এমন একটা কৌশল যাতে মনে হয় যে শব্দটা অন্য কোথাও থেকে অাসছে যেমন হতে পারে হাতে ধরা কোন পুতুলের মুখ থেকে। কেউ কেউ মনে করে অাত্মায় ভরে করে কথা বলা মানে উদর থেকে অন্যকারো অাত্মার মাধ্যমে কথা বলা। ভেন্ট্রিলোকুইজম বর্তমানে জনপ্রিয় পাপেট শো বা ম্যাজিক শো বলা যায়। ভেন্ট্রিলোকুইজম প্রাকটিকসকারী হচ্ছে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। কাহিনী সংক্ষেপ : অনেক বছর পরে প্রায় বছর দশকের পুরনো বন্ধুরা জহিরের বিয়েতে একত্রিত হয়। নানা রকম গল্পের সাথে তাদের স্কুল বন্ধু শওকতের প্রসঙ্গ অাসে। হাসানের কাছে শুনতে পায় শওকত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হিসেবে শো করে বেড়ায়। কিন্তু অাশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ইন্টারমিডিট পরীক্ষার মাস ছ'য়েক অাগে শওকত টাইফয়েডে অাক্রান্ত হয়, ফলে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাহলে শো করে কেমনে, এই কৌতুহল থেকেই পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি অার গল্প কথক নৃতাত্ত্বিক মারুফ যায় শওকতের শো দেখতে। কথা প্রসঙ্গে শওকতের থেকে জানতে পারে রুনুর কথা যার অাত্মা ভর করে সে কাজ করে। কিছুটা রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করে ভরকে দেয় রুমি অার মারুফকে। কৌতুহলী হয়ে সেটার সন্ধান করতে গিয়ে একের পর এক রহস্যে জড়িয়ে পড়ে ওরা। রোমহর্ষক সব ভয়ঙ্কর সত্য সামনে চলে অাসে যা সাধারন মানুষের থেকে লুকিয়ে রাখা হয়। খোঁজ পায় বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের, যেখানে প্রতিপদক্ষেপে ওৎ পেতে আছে মৃত্যু, জড়িয়ে আছে ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের জীবন। এই রহস্য থেকে মুক্তির উপায় কী তবে! জানতে হলে পড়তে হবে বইটা... নিজস্বমতামত: ভেন্ট্রিলোকুইস্ট কেবল একটি উপন্যাসই নয় অাছে ইতিহাস, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ। গণিতের ধাঁধায় অাবৃত রহস্যময় রুম অার চিকিৎসা বিজ্ঞান অার ধর্মতত্ত্বের ব্যাখা গুলো সবথেকে বেশী অাকর্ষণীয় ছিল। একটানা পড়ে যাওয়ার মত অাকর্ষণ সৃষ্টি করতে, পারছে লেখক। রহস্যাবৃত এ বইয়ে রুমির বুদ্ধিদিপ্ত ধাঁধার সমাধান পাঠক মনকে পুলকিত করে। টানটান উত্তেজনা নিয়ে একদম শেষ পর্যন্ত না পড়া পর্যন্ত বই রেখে উঠতেই মন চাচ্ছিল না। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য এক রহস্যময় কাহিনী।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি রিভিউ নংঃ৫ বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক ক্যাটাগরিঃ রহস্য ও গোয়েন্দা , মূল্যঃ২২৪টাকা ( রকমারি মুল্য) প্রকাশনীঃ বাতিঘর লেখক পরিচিতিঃ জন্ম ১০ জুন ১৯৮৮, ঢাকায় । পড়াশোনা করছেন চিকিৎসা শাস্ত্রে, বর্তমানে অধ্যয়নরত সিলেটের সিওমেক-এ। লেখালেখির শুরু ছোটগল্প ও ফিচার দিয়ে। দেশের কয়েকটি প্রধান দৈনিকে কয়েক বছর যাবত লিখছেন ফিচার ও গল্প। প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আছেন। রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা “সন্ধানী’সহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে। কাহিনী সংক্ষেপেঃ হাসানের কাছ থেকে প্রথম ব্যাপারটা শুনে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না।শওকত পাপেট শো করে?ঠিক পাপেট শো না, হাসান বিভ্রান্ত্রের মত জবাব দেয়, ওটাকে কী বলে, ওর হাতে একটা পুতুল থাকে, সেটা কথা বলে ওর সাথে।ভেন্ট্রিলোকুইজম!! রুমী বিস্ময় ধ্বনি করে। দারুন ব্যাপার তো! আমাদের মধ্যে কেউ একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, একদমই অবিশ্বাস্য। হাসানের হতভম্ভ মুখ দেখে বোঝা গেল শব্দটার সাথে ও পরিচিত নয়। রুমী ওর কাছে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলো-ভেন্ট্রিলোকুইজম বেশ দুর্লভ বিদ্যা। সহজ কথায় এটা হল শব্দকে ছুড়ে দেয়া, এমন ভাবে যাতে মনে হয় যিনি বলছেন তার মুখ থেকে নয়, আশপাশের কোথা থেকে শব্দটা আসছে, যেমন ধর হাতে ধরা পুতুলের মুখ থেকে হতে পারে।আচ্ছা, আমিতো ভেবেছিলাম পাপেটের গলাটা বোধহয় পর্দার পেছন থেকে কেউ দিচ্ছে-হাসান মনে করার চেষ্টা করে। সপ্তাহখানেক আগে ওর একটা শো ছিল, ইচ্ছা ছিল শো শেষে ওর সাথে দেখা করবো। ধরতেই পারলাম না-চট করে কই যেন চলে গেল শো শেষ হওয়া মাত্রই। ব্যাটা মনে হয় ভাল বিজি এসব নিয়ে।পুরনো বন্ধুরা অনেকদিন পর একসাথে একই ছাদের নীচে, চট করে যেন ফিরে গেছি বছর দশেক আগের সেই কলেজের দিনগুলোতে, ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডামুখর সময়ে। জহিরের বিয়ে উপলক্ষ্যে আসা, নইলে এ্যাদ্দিন পর সবার সাথে দেখা হওয়াটা অকল্পনীয়।ভেন্ট্রিলোকুইজম আমাদের দেশে এখনো অতটা পরিচিত হয়ে উঠেনি, হাতে গোনা দুএকজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আছে, তাও নন-প্রফেশনাল,শখের বশে বা মানুষকে চমকে দেয়ার জন্য প্রাকটিস করে।তাই শওকতের মত সাদামাটা একটা ছেলে-ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হয়ে রীতিমত শো করে বেড়াচ্ছে সেটা আশ্চর্যের কথা তো বটেই তবে আমাদের বিস্ময়টা ছিল অন্য জায়গায়।শওকত ইন্টার পরীক্ষার সময় ভীষণ টাইফয়েডে পড়ে,অনেকদিন ভোগায় ওকে ।জ্বরটা সারবার আগে ওর একটা স্থায়ী ক্ষতি করে দিয়ে যায়। তারপর থেকে ওর যে কাজটি করতে সবচেয়ে কষ্ট হত তা হল ‘কথা বলা’ । ও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে প্রায়! তা হঠাৎ তুই ওর হদিস পেলি কই? রুমী জিজ্ঞেস করে। হাসান বললো, গ্রামের বাড়ির এক ছেলের সাথে দেখা সেদিন, ছেলেটাই খোঁজ দিল। তোরা হয়তো ভুলে গেছিস, শওকতের আর আমার হোম ডিস্ট্রিক্ট একই। ব্যাপারটা আসলেই আমরা ভুলে গেছিলাম। আজকেও শো আছে নাকি?হাসান ঘড়ির দিকে তাকাল, সন্ধ্যা সাতটা এখন, তারমানে ঠিক দু’ঘন্টা পরে লাস্ট শো, জায়গাটা উত্তরার কাছে, যেতে চাইলে খুব দেরি করা যাবে না।অনুষ্ঠানও প্রায় শেষের দিকে, তাই আমরা দ্রুত সিধান্ত নিলাম। শওকতের শো দেখার লোভই জয়ী হল, জহির থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম তিনজন। হাসান ওর গাড়ি করে আমাদের পৌঁছে দেবে শুধু, ওর আবার রাতেই চিটাগাং ফিরতে হবে।যেতে যেতে শওকতকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হাসান বললো, হঠাৎ করে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর ওদের অবস্থাটা চট করে পড়ে যায়, সংসারে অবশ্য তেমন কেউ ছিল না, বোন দুটোর আগেই বিয়ে হয়ে গেছলো, কাকীমা আর ওর এক ছোট ভাই ছিল। বোবার মত হয়ে যাওয়ায় টিউশনীটাইপ কিছু যে করবে তারও উপায় ছিল না, পরে বেশ কিছুদিন এক পরিচিত লোকের ফার্মেসীতে বসতো, পড়াশোনার পাট ততদিনে চুকে গেছে।পরে শুনলাম প্রাকটিস করে করে কথা বলার সমস্যাটাও দূর করে ফেলেছে। রুমী বললো, এতকিছু জানি না, ওর সাথে আমার তেমন মাখামাখি ছিল না, যতদূর দেখেছি মনে হয়েছিল বেশ আত্মপ্রত্যয়ী ছিল, আমার এখন যেটা মনে হয়, নিজের অক্ষমতাকে একহাত দেখে নেয়ার জন্যই এমন এক পেশা বেছে নিল যেখানে কন্ঠস্বরের মুন্সিয়ানাটা থাকতে হয় সবচেয়ে বেশি।ওদের কথা শুনতে শুনতে কিছুদিন আগে টিভিতে দেখা এক ভেন্ট্রিলোকুইস্টের শো এর কথা মনে পড়লো। এক কমেডিয়ানের হাতের পুতুল কথা বলছে সেজন্য নয়, সে কথোপকথোন যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল বলেই দেখছিলাম।তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল কোন বুজরুকি আছে কিনা, কারন পুতুলটা কথা বলার সময় লোকটার চোয়াল একদমই নড়ছিল না।ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলা কি আদৌ সম্ভব? আমি স্বগোতক্তি করলাম। ‘ব্যাপারটা আসলে তা নয়, রুমী ব্যাখ্যা করা শুরু করলো, আসলে যে সব শব্দ ঠোঁট দিয়ে উচ্চারণ করা লাগে, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট সেগুলো এড়িয়ে যায়। যেমন ধর, প ফ ভ ভ ম এইসব বর্ণগুলোর জন্য ঠোঁট নাড়াতে হয়, ইংরেজীতে ল্যাবিয়াল সাউন্ড p f b v m এগুলো তারা অন্য কিছু দ্বারা রিপ্লেস করে বলে। যেমন ধর, তুই একটা বোকা- এটাকে কোন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বলবে ‘ তুই একটা গোকা’ । আর কন্ঠস্বরের রেজোন্যান্স বেশি থাকে বলে এসব ছোটখাট ব্যাপার ধরাই পড়ে না। মূলত হরবোলাদের মত নানা স্বরে কথা বলাই আসল ক্রেডিট, মুখ না নাড়ানোটা প্রাকটিস করলে সবাই পারবে।শো শুরু হবার মিনিট পাঁচেক আগে আমরা পৌঁছালাম। টিকেট কেটে ঢুকতে বেগ পেতে হল না, হাউসফুল হওয়ার মত জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি হয়তো এখনো।হাসানকে বিদায় দিয়ে আমি আর রুমী সিট নিয়ে বসে পড়লাম।মূলত ম্যাজিক শো ছিল, বেশ ক’জন বিদেশী ম্যাজিশিয়ানও পারফর্ম করছিলো দেশী ম্যাজিশিয়ানদের পাশাপাশি ।বেশ আনন্দই পাচ্ছিলাম, অনেকদিন পর এই ধরনের কোন শো দেখছি কিনা নিজের অজান্তেই হাততালি দিতে দিতে হাত ব্যথা করে ফেললাম। হঠাৎ করেই মঞ্চে শওকত ঢুকলো। অনেকদিন পর দেখলেও চিনতে মোটেও সমস্যা হল না।আগের চেয়ে অনেক রোগা হয়েছে, চোখের নীচে বয়সের ছাপ। হাতে একটা কাঠের পুতুল, এক বাচ্চা ছেলের মত মুখের আদল , কোট-টাই পরা। নীচের চোয়ালটা যে নাড়াচাড়া করা যায় তা ভাল করে দেখেলেই বোঝা যায়।চেয়ার পেতে বসেই কথোপকথোন শুরু হয়ে গেল। শওকত পুতুলটার উদ্দেশ্যে বলল, ‘গিলু, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাও!’একটা মিহি চিকন স্বর বেড়িয়ে এল পুতুলের গলা থেকে-কেন? শুভেচ্ছা জানাবো ক্যান? এটাই নিয়ম, লোকদের সাথে দেখা হলে প্রথমে তাই করতে হয়! ওটাতো তোমাদের মানুষের নিয়ম, আমি কি মানুষ? তোমাকেও মানুষ হতে হবে, সবাই তো মানুষ হতে চায়, জানো না? কাঠের পুতুল পিনোকিও ও তো মানুষ হতে চেয়েছিল- মনে নেই?পিনোকিওকে আমি ঘৃণা করি, খালি মিথ্যা বলে নাক লম্বা করা ছাড়া ও আর কীই বা পারে!তুমি মিথ্যা বল না?বয়েই গেছে, আর আমি মানুষ হতে চাই না, বরঞ্চ চাই তুমিও আমার মত পুতুল হয়ে যাও।এইভাবে বাক-বিতন্ডা চলতে থাকে, হাততালি আর হাসির হুল্লোড়ে কখনো কথোপকথোন ঢাকা পড়ে যায়। পাশ থেকে রুমী আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লক্ষ্য করে দেখিস, অন্যান্য কথোপকথোন থেকে এটা একটু আলাদা।দু’জন মানুষ কথা বললে প্রায়ই যেটা হয়, একজনের কথার সাথে আরেকজনর কথা ওভারল্যাপ হয়।কিন্তু ভেন্ট্রিলোকুইস্ট একাই দু’জনের কথা চালিয়ে যায় বলে দুটো স্বরে যথেষ্ট গ্যাপ থাকে । পেশাদারিত্বের সাথে সাথে অবশ্য এই গ্যাপটা কমে আসে।ব্যাপারটা বলে রুমী শো এর মজাটা কিছুটা নষ্ট করে দিল। আমি পুতুল আর শওকতের কন্ঠস্বরের গ্যাপ এর দিকে খেয়াল করা শুরু করলাম কথা না শুনে। এবং বুঝলাম দুটো গলার মাঝে যথেষ্ট গ্যাপ আছে, তারমানে হয়তো শওকত এখনো অতটা উঁচুদরের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হতে পারে নি।মোটামুটি একটা উপভোগ্য শো শেষ করে শওকত মঞ্চ ছাড়লো। আমরাও সাথে সাথে ওকে ধরতে বেড়িয়ে গেলাম।ম্যাজিশিয়ানদের রেষ্টরুমে ঢুকতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম, সেখানে ফাজিল টাইপ এক দাড়োয়ান দাঁড়ানো।আমরা শওকতের বন্ধু বলেও সুবিধা করা গেল না।বলল,‘আপনারা যত বড় তাবেদারই হন লাভ নাই, বাইরের মাইনষের এইখানে ঢোকা নিষেধ,যান গা’কথা শুনে রুমীর মাথায় রক্ত চড়ে গেল । ও আগে থেকেই যথেষ্ট শর্ট-টেম্পারড, দাড়োয়ানের সাথে প্রায় মারামারি বাধিয়ে বসলো।চেঁচামেচিতে অবশ্য কাজ হল, ভেতর থেকে ভদ্রস্থ এক লোক এসে ক্ষমা চাইল। সে জানালো শো শেষ হওয়া মাত্রই শওকত তার রুমে চলে গেছে।শওকত যে হোটেলে উঠেছে তিনি তার ঠিকানা দিলেন। হোটেলটা বেশি দূরে ছিল না। রিসিপশনিষ্ট বলল, উনি কারো সাথে দেখা করবেন না বলে রেখেছেন। দেখুন, আমরা পুরনো বন্ধু, আপনি রুমে একটা ফোন দিন, আমরা কথা বললেই বুঝবে।ফোনে কাজ হল। আমি ভিতরে ভিতরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলাম, এখনই সেলিব্রেটিদের মত ভংচং শুরু করলো শওকত । এবং এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে বাংলাভাষায় তথা বাংলাদেশে প্রচুর থ্রিলার লেখা হয়েছে; অনেক থ্রিলারই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। যদিও সেসব নিয়ে বিতর্ক চালু রয়েছে পাঠক ও সমালোচকদের মধ্যে। অনেক সমালোচকই ধারণা করেছেন যে, বিদেশী সফল থ্রিলারগুলোর মতো সফল থ্রিলার বাংলা ভাষায় লেখার জন্য যে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা বাংলাভাষী লেখকদের নেই। বক্তব্যটি আংশিক সত্য হলেও থ্রিলার উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবার কথা নয়। কারণ সব ধরনের থ্রিলার লেখার জন্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পড়াশুনা ও গবেষণার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ঘাটতি পেছনে ফেলে দেয়া যায়। মাশুদুল হক এমন এক বিষয় নিয়ে তাঁর উপন্যাসের প্লট সাজিয়েছেন যা সম্পর্কে বইপত্র এবং বিশেষ করে ইন্টারনেট থেকে বিস্তৃত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। ধারণা করি, তাঁর থ্রিলারে ব্যবহৃত সকল তথ্য তিনি বইপত্র ও অন্তর্জাল থেকেই সংগ্রহ করেছেন এবং অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তাঁর প্লটে ব্যবহার করেছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র চারটি- নৃতাত্ত্বিক মারুফ, দৈনিক পত্রিকার ফিচার লেখক রুমী, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শওকত এবং মনো-গবেষক ডাঃ রুশদী। আরো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হাসান এবং মিলি। পুরো উপন্যাস বর্ণিত হয়েছে প্রথম পুরুষে, মারুফের জবানিতে। থ্রিলার সাধারণত তৃতীয় পুরুষে লেখা হয়, রহস্য বজায় রাখার স্বার্থে। কিন্তু মাশুদুল হক প্রথম পুরুষে গল্প বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যের খাতিরে, মারুফ চরিত্রটিকে বেশিরভাগ সময়েই অন্ধকারের রাখতে বাধ্য হয়েছেন লেখক। মারুফকে প্রায় পুরোটা সময়ই তাঁর বন্ধু রুমীর ছায়ার নিচে কাটাতে হয়েছে। গল্পের প্লটে একজন নৃতাত্ত্বিকের চমক দেখাবার জায়গা থাকলেও পুরোটা সময় চমক দেখিয়ে গেছেন পত্রিকার ফিচার লেখক রুমী। মাশুদুল হক কেন এই সিদ্ধান্তটি নিলেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। রুমী এই থ্রিলারের সবজান্তা। সে ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত-সব কিছুই জানে। সে মডার্ন আর্কিটেকচার দেখে বলতে পারে এটা কোন ধরনের মন্দির এবং সেখানে প্রবেশের জন্য যে পাসওয়ার্ড দরকার তাও নিমিষে ফেলে! রুমী গন্ধ ধুঁকেই অজ্ঞান-কারী গ্যাসের নাম জেনে ফেলে, বিশেষ ধরনের বাক্স দেখে এক ব্যান্ডদলের নামের উৎপত্তির কথা মনে পড়ে এবং তা থেকে ডাঃ রুশদীর প্রতিহিংসার কারণ জেনে ফেলে। অথচ নৃতাত্ত্বিক হিশেবে মারুফ এখানে লিড নিতে পারত। সম্ভবত প্রথম পুরুষে বর্ণিত হবার কারণেই মারুফ চরিত্রটিকে লেখক বেশিরভাগ সময় সম্যক পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞ রেখেছেন। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ বাংলায় থ্রিলার, অনেক অনেক দিন পরে। নতুন একজন লেখক। বিষয় আবার ভেন্ট্রিলোকুইজম! বিপদজনক আগ্রহ নিয়ে বইটা পড়া শুরু করলাম। অতিরিক্ত প্রত্যাশা থাকলে বেশির ভাগ সময়ই সেটা পূরণ হয় না। বরং আশাভঙ্গের বেদনাই পেতে হয়। লেখক মাশুদুল হককে অভিনন্দন, তিনি দারুণভাবে সুবিচার করেছেন প্রত্যাশা পূরণে। শুরুতে কিছুটা ছাড়াছাড়া ভাব ছিলো। গতি থাকলেও লেখনীতে পর্যাপ্ত গাঁথুনী পাচ্ছিলাম না। কিন্তু গল্প যত এগিয়েছে ততই তা আরো মজবুত হয়েছে।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে থ্রিলার লেখার প্রচেষ্টা চালালেও লেখক তাঁর প্লটে আন্তর্জাতিক প্রভাবের বিষয়টি মিশিয়ে দিয়েছেন। এটি থ্রিলার উপন্যাস রচনার একটি কৌশল- অনেকখানি আঞ্চলিকতার সাথে একটুখানি আন্তর্জাতিকতা এবং প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচানোর আকুতি। থ্রিলারের প্লট দেখে আন্দাজ করা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেখকের আগ্রহ এবং পড়াশুনা। লেখক মেডিকেলে পড়েছেন বলেই হয়ত গল্পে মানসিক রোগ, শারীরবিদ্যা, এনথ্রোপলোজি ইত্যাদি বিষয় অনায়াসে ঢুকে পড়েছে। ভিলেন চরিত্রেও রেখেছেন একজন ডাক্তারকে। আবার লেখক মাশুদুল হক একই সাথে পত্রিকায় ফিচার লেখকের কাজও করেছেন। ধারণা করি, উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রুমী, তাঁর সেই কাজের অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে নির্মিত। কাহিনী শক্তিমত্তা নিয়ে বলতে গেলে বলব প্রথম উপন্যাস হিসেবে অনেক ভালো। কাহিনীতে যেখানে গতির প্রয়োজন আছে সেখানে লেখক গতি এনেছেন। যেখানে ধীরতার প্রয়োজন সেখানে কাহিনীকে ধীর গতিতে এগিয়ে নিয়েছেন। কাহিনীতে টুইস্টগুলা ঠিকই ছিল, । দু-এক জায়গায় একটু সাদামাটা লেগেছে। তবে সবথেকে বেশী প্রশংসনীয় অবশ্যই লেখকের কাহিনীর ডেভেলপমেন্ট এবং ফিনিশিং সুন্দরভাবে মিলাতে পারা। গানিতিক বিশ্লেষণ ও ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলা এবং এই দুইয়ের সংযোগ খুব চতুরতার সাথে লেখক দেখিয়েছেন।তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ড্যান ব্রাউনি-উ ধরনের প্রথম উপন্যাসের জন্য লেখকের সাহসিকতার উচ্ছসিত প্রশংসা করছি। মাশুদুল হককে ধন্যবাদ এই দুর্দান্ত থ্রিলার উপহার দেয়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০১৮ বই: ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখক: মাশুদুল হক মুল্যঃ২০০ টাকা প্রকাশনীঃ বাতিঘর ধরনঃ থৃলার ও আ্যাডভেন্ঞ্চার অনেকদিন পর বন্ধুরা সবাই একজায়গায় হয়েছে একটি মাত্র ডাকের সাড়া দিতে, আর সেটা হলো রি-ইউনিয়ন। জনে জনে সব বন্ধুদের খবরই সবাই নিতে থাকে কিন্তু হঠাৎ করে এক বন্ধুর বর্তমান করা কাজকর্মের কিছুটা বিবৃতি শুনে খুশির থেকে একটু অবাক হয় ওরা।। এই ওরা টা আসলে কারা??? আর কেনই বা এতো অবাক হলো?? কি ছিল তাহলে কাজগুলো??? বইটির নাম দেখলে সবাই মনে করতে পারে যে হয়তো পুরো বইটি এই ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা হয়েছে, আর এরকম মনে করাটাই স্বাভাবিক কারন টা বইয়ের নাম করন আর প্রচ্ছদ। কিন্তু না এরকম একটা বিষয় নিয়ে শুরু হলেও ঘটনা মোড় নিয়েছে বাকে বাকে। প্রতিটা চরিত্রের আলাদা আলাদা বর্ননার সাথে আলোচিত হয়েছে বাহাইজম, ইতিহাস, বিজ্ঞান,ধর্ম, মেডিকেলের অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলো।। মানুষ তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারে কতোটা নৃশংস হতে পারে এই বই টা তার একমাত্র প্রমান হিসেবে রাখা যায়। কিন্তু তারপরও সবাই তো আর একই রকম স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে জানেনা, কিছু ব্যাতিক্রম মানুষ সব জায়গাতেই থাকে। এরকম ই এক চরিত্রের অধিকারী মারুফ এবং রুমী। আগ্রহ থাকার কারনে যখন তারা ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে সামনে এগোতে থাকে একের পর এক রহস্য তাদের সামনে উকি দিতে থাকলো!!! কি করবে তাহলে মারুফ আর রুমি!!! রহস্য উদঘাটনে কি যোগদান করবে?? নাকি পিছিয়ে পড়বে নিজেদের কে নিরাপদ রাখতে??? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টা কতোটা নৃশংস ছিলো সেটা মনে হয় শাস্তির বর্ননা শুনেই একটা মানুষের কল্পনাতীত হয়ে যাওয়ার কথা। নিষ্ঠুর হতে হতে মানুষ কোন পর্যায়ে চলে গেলে নিজ জাতিকেই পরীক্ষার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা থাকেনা।। এই সবকিছুর উত্তর পাওয়ার জন্য বইটি পড়তে হবে। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ আমি আজ পর্যন্ত যতোগুলো বই পড়েছি তথ্য দিয়ে ভরপুর একটি বই মনে হয়েছে আমার "ভেন্ট্রিলোকুইস্ট" কি নেই এই বইতে??? পুরো বইটিতে কোথাও আমার একবারের জন্য ও মনে হয়নি যে লেখক বাড়িয়ে লিখেছেন। পুরো এক বসাতে শেষ করেছি সম্পুর্ন বইটি। পড়ার সময় শুধু মনে হতো তারপর কি হবে!!!আর পড়াশেষে আত্মতৃপ্তিবোধ খুব বেশীই ছিলো বলতে গেলে।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। লেখকঃ মাশুদুল হক। ধরণঃ অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিলার, মিস্ট্রি এবং কিছুটা হরর। পৃষ্ঠাঃ ১৯১। মূল্যঃ ১৪০ টাকা (রকমারি)। প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। যে থ্রিলারে খোদ ড্যান ব্রাউনের প্রভাব লক্ষণীয়- শর্টকাট রিভিউঃ ঘটনা হলো, এক বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয়ে যায় পুরনো দুই বন্ধুর। একজন নৃতাত্ত্বিক মারুফ এবং অন্যজন পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে তাদেরই আরেক বন্ধু পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। কৌতূহলী হয়ে সেটার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওরা জড়িয়ে পড়ে দারুণ রহস্যময় এক....রহস্যে। বেরিয়ে আসে ভয়ংকর আর শিউরে উঠবার মত সব সত্য। সাধারণ মানুষকে কখনোই জানতে দেয়া হয় না এমন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা। সাথে আবার জড়িয়ে আছে পুরনো এক ধর্মও। পদে পদে ওদের জন্য ওৎ পেতে আছে মৃত্যুগামী বিপদ, অভাবনীয় বিস্ম। জড়িয়ে আছে ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের জীবন এবং এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র । ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শুধু একটি উপন্যাসই নয়, পাঠকদের জন্য ইতিহাস, স্থাপত্য, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব যাত্রা। আর কিছু না বলাই ভালো। আবার স্পয়লার না হয়ে যায়। ব্যক্তিগত মতামতঃ মতামত টাইপ জিনিসগুলো আমি খুব একটা সাজিয়ে বলতে পারি না। আচ্ছা একটু নাহয় চেষ্টা করি- দেশের নতুন লেখকদের পড়া বইগুলোর মধ্যে এটাই আমার পড়া প্রথম বই। পড়ার শুরুতে অবশ্য কোনো এক্সপেক্টেশন ছিল না। সে কারণেই হয়তো তখন বইটা বেশি ভালো লেগেছে। বইয়ের নাম দেখে হয়তো মনে হবে বইটি ভেন্ট্রিলোকুইজমের উপরে ভিত্তি করে লেখা। যদিও তা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে হ্যাঁ, গল্পে একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আছে বটে। সেও অন্যতম প্রধান একটি চরিত্র। তাই বলে সে-ই সব নয়। ভেন্ট্রিলোকুইজম দিয়ে রহস্যের সূচনা হলেও ঘটনা পরবর্তীতে অন্যদিকে মোড় নেয়। উপন্যাসটি পেশায় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শওকতকে ঘিরে শুরু হলেও পরে বোঝা যায় যে সে কাহিনীর মূল রহস্যময় চরিত্রের পুতুল মাত্র, সুতোটা সে-ই নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিক থেকে ভাবলে উপন্যাসের প্রকৃত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট সে-ই। মানে, ওই রহস্যময় চরিত্র আরকি। আবার ওদিক থেকে ভাবলে বইয়ের নামকরণ একেবারে যথার্থ হয়েছে। আরেকটা জিনিস, শুরুর দিকে ড্যান ব্রাউনের নামটা দিয়েছি। আসলে, এই বইটা পড়ার সময় আপনার ড্যান ব্রাউনের কথাই মনে হবে। কারণ, লেখক বইটাতে ড্যান ব্রাউনের মতোই ইতিহাস, ধর্ম, সিম্বল ইত্যাদির মিশ্রন ঘটিয়েছেন। এবং সফলও হয়েছেন এক্ষেত্রে। তাছাড়া, ২০১৩ সালে প্রকাশ হওয়া এ বইটির কাহিনী ঐ সময় এবং তারও আগের বইগুলোর তুলনায় নতুন। সে হিসেবে এরকম লেখা তখনকার সময়ে প্রথম। তার আগে এরকম লেখা হয়নি, কিংবা থাকলেও সেটা মৌলিক ছিল না। সুতরাং সব মিলিয়ে বেশ ভালো একটি বই। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ভালো। ব্যক্তিগত রেটঃ ৭.৯/১০ পড়বেন কি পড়বেন না? – পড়ে ফেলুন। কেন পড়বেন, সেটা রিভিউ পড়ে বুঝেছেন নিশ্চয়। তাই আর না বলি। বিঃ দ্রঃ ১. ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’ মাশুদুল হকের প্রথম মৌলিক থ্রিলার। ২. গতবছর এই বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশ হয়, নাম ‘মিনিমালিস্ট’। ধন্যবাদ :)
Was this review helpful to you?
or
বইটি চমৎকার। তবে আত্মার ওজন ২১ গ্রাম এইটি নিয়ে আমি এখনো হাসছি।
Was this review helpful to you?
or
পুরোনো বন্ধুরা অনেকদিন পর আড্ডায় মেতে উঠে। মারুফ, হাসান আর রুমী তাদের আরেক বন্ধু জহিরের বিয়ে উপলক্ষে একত্রিত হয়েছে। আড্ডায় হঠাৎ তাদের অন্য এক বন্ধু শওকতের কথা জানতে পারে মারুফ আর রুমী। সে নাকি এখন দেশের স্বনামধন্য ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ওরা একদিন চট্টগ্রাম চলে যায় শওকতের খেলা দেখার জন্যে। খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে শওকতকে তার হোটেলে খুঁজে বের করে। ওদের সাথে শওকতের কথাবার্তায় ভয়ংকর কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। শওকতের এক্স রুনুর উপর সে কঠিন প্রতিশোধ নিতে চায় যা শুনে মারুফ আর রুমী দুজনেই কেঁপে উঠে। তাই ওরা দ্রুত শওকতের গ্রামের বাড়ি জয়ন্তপুরে যায়। ওখানে গিয়ে জানতে পারে ডাক্তার রুহান উদ্দীন রুশদীর মেন্টাল হসপিটালে গেলে রুনুকে পাওয়া যাবে। কিন্তু এইবার কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসলো সাপ। বেরিয়ে আসলো বাহাইজম নামের গোপন এবং বহু প্রাচীন রক ধর্মের রিচুয়ালের কথা। সাধারণ না বরং ভয়ংকর শিউড়ে উঠার মতো কিছু রহস্যের কথান তার সাথে আবার যুক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় করা কিছু অমানুষিক বায়োলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট, যেগুলো পড়তে পড়তে গা গুলিয়ে উঠে। ওরা কি পারবে রুনুকে বাঁচাতে? কোন ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছে রুনু? শওকতের ভেন্ট্রিলোকুইজম এত জীবন্ত কেন? এর পেছনে কি আসলেই কোনো অলৌকিক শক্তি কাজ করে? বাহাইজম? কি লুকিয়ে আছে এই গোপন ধর্মচর্চার পেছনে? ডা. রুশদী কি এর সাথে জড়িত? তাহলে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এই অসাধারণ থ্রিলারটিতে! পাঠ প্রতিক্রিয়া: ব্যক্তিগতভাবে, এই বইটা আমি ২বছর পাগলের মতো খুঁজেছি। অদ্ভুত আর কাকতালীয় হলেও আর কোনো বইয়ের জন্যে এতটা খাটিনি। যাই হোক, সেদিক থেকে আমার পজিটিভ রিভিউই বেশি হওয়ার কথা। তবে সবদিক বিবেচনা করেই বলবো, এটি আমাদের দেশের অন্যতম প্রথম দিককার সেরা মৌলিক থ্রিলার। এর আগে নাজিম উদ্দীন ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য মৌলিক থ্রিলার লেখক ছিলেন না। "বাংলার ভিঞ্চি কোড" খ্যাত এই বইটি লিখে লেখক থ্রিলারে অসামান্য এক অবদান রেখেছেন। পড়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। বইয়ের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হলো, বইটি যেন একটি ইনফোগ্রাফিক মডেল। প্রচুর তথ্য সম্বলিত একখানা বই, বিশেষ করে বাহাইজম নামক ধর্মের উপর লেখককে যে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে তার প্রভাব স্পষ্ট। আর গতি যে ড্যান ব্রাউনের আর জেমস রোলিন্সের বইয়ের মতো ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। যে ব্যাপারটি ভালো লাগেনি সেটি হলো, রুশদীর হসপিটালে প্রবেশের অত্যাধিক নাটকীয়তা। তাছাড়া মৃত মানুষের আত্মার ওজন সম্পর্কিত একটি তথ্য দেওয়া আছে। ঐটি উল্লেখ করতে গিয়ে লেখক যে ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন তার বিজ্ঞানসম্মত আরো অনেক বিপরীত হাইপোথিসিস আছে। সেগুলো একটু উল্লেখ করে দিলে ভালো হতো। তবে মোদ্দাকথা, এটি একটি অসাধারণ বই! আবারো বলি, এটি আসলেই একটি চমৎকার বই! এডিশনাল ইনফো: ভেন্ট্রিলোকুই্জম হলো এমন এক আর্ট যাতে শিল্পী এমনভাবে শব্দ সৃষ্টি করেন যে মনে হয় তা অন্য কোনো জায়গা থেকে ভেসে আসছে। সাধারণত, এইখানে অন্য কোনো উৎস হিসেবে কোনো পুতুল বা ডামিকেই ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে এরই সমার্থক হিসেবে অনেকে 'হরবোলা' শব্দটি ব্যবহার করেন যা যথার্থ না। হরবোলা হলো সেই ব্যক্তি যে কারো গলার স্বর বা কোনো পশু-পাখির ডাক হুবহু নকল করতে পারে। একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হরবোলা হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৯/৫
Was this review helpful to you?
or
বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক দামঃ ২০০টাকা পৃষ্ঠাঃ ১৯১ প্রকাশনীঃ বাতিঘর এক বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়ে মারুফ ও রুমি জানতে পারে তাদের বন্ধু শওকত এখন ভেন্ট্রিলোকুইজমের কাজ করে। বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ঘটতে থাকে একের পর এক কাণ্ড। এমন সব পরিস্থিতিতে তারা পর্দাপণ করে, যার আশা করে নি আগে। চিকিৎসাশাস্ত্র বিদ্যা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যুগযুগ ধরে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে আসছে। এগুলোর মধ্যে কিছু এতোটাই ভয়ানক , যার কর্মপদ্ধতি জানতে পেরে তারা শিউরে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের উপর নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতো, ঠিক তেমনি জাপানের সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য পরীক্ষা চালায় যুদ্ধে আটকে পরা বন্দিদের উপর। কিন্তু যুদ্ধ শেষে, এই বর্বচিত পরীক্ষা যে চালায়, তাকে শাস্তি দেয়ার বদলে আমেরিকা তাকে তাদের দেশে নিয়ে যায়, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সেই একই রকম বা কাছাকাছি পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতো ডাঃ হারুন। তার এই কুচক্রী কি রুমি আর মারুফ মিলে বন্ধ করতে পারবে? কি ভাগ্যে আছে তাদের? উপন্যাসের শেষে কিছুটা প্রশ্ন জেগেছিল মনে, কে আসলে কাকে হত্যা করে ? তবে সব মিলিয়ে বেশ ভাল একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
#রিভিউ বইঃ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট লেখকঃ মাশুদুল হক প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী ধরণঃ থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৯২ মূল্যঃ ১৪০ টাকা (রকমারি) সার-সংক্ষেপঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয়ে যায় পুরনো বন্ধুদের, দুই বন্ধু নৃতাত্ত্বিক মারুফ এবং পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে তাদেরই আরেক বন্ধু পেশা হিসেবে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। কৌতূহলী হয়ে সেটার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওরা জড়িয়ে পড়ে দারুণ রহস্যময় এক অনুসন্ধানে, বেরিয়ে আসে ভয়ংকর আর শিউরে উঠবার মত সব সত্য, সাধারণ মানুষকে কখনোই জানতে দেয়া হয় না এমন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা। যার পদে পদে ওদের জন্য ওৎ পেতে আছে মৃত্যুগামী বিপদ, অভাবনীয় বিস্ময়, জড়িত আছে ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের জীবন, এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র । ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শুধু একটি উপন্যাসই নয়, পাঠকদের জন্য ইতিহাস, স্থাপত্য, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব যাত্রা। পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ভেন্ট্রিলোকুইজম (Ventriloquism) বা মায়াস্বর বলতে এক ধরণের শব্দশিল্পকে বোঝানো হয়। একজন মায়াস্বরবিদ মঞ্চে এমনভাবে তার কণ্ঠকে ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে অন্য কোনও উৎস থেকে (সাধারণত মায়াস্বরবিদের হাতে থাকা পুতুলের মুখ থেকে) শব্দটি আসছে। এটি এক ধরণের ধর্মীয় সংস্কৃতি। ইংরেজি Ventriloquism এসেছে লাতিন venter (পেট) এবং loqui (কথা) থেকে। নামটির অর্থ অনেকটা এরকম- 'পেটের অন্তরাল থেকে কথা'। এই কথাকে মায়াস্বরবিদের পেটের অন্তরালে আশ্রয় নেওয়া প্রেতের কাছ থেকে আসা বাণী হিসাবে কল্পনা করা হত। এই মায়াস্বরবিদেরা প্রেতেদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন বলে ভাবা হত এবং এরা সাধারণত ভবিষ্যদ্বাণীও করতেন। সাহিত্যে কিছু সময়ে মায়াস্বরের উল্লেখের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়াস্বরবিদ তার কন্ঠকে দূরে কোন একটি স্থানে ছুঁড়ে দিলেন। সাহিত্যের খাতিরে ব্যবহৃত হলেও এটি বাস্তব নয়। মায়াস্বরবিদের কথাগুলো সবসময়েই তার কন্ঠ থেকে নির্গত হয়। মানব মস্তিষ্কে দৃশ্যমান আলো এবং শব্দ একই সাথে বিশ্লেষিত হয়। এই দৃশ্যমান ঘটনাবলী এবং অবস্থানের মাঝে মায়াস্বরবিদ কিছু ছদ্ম দিকনির্দেশ করেন বলে শব্দের উৎপত্তিস্থানের অবস্থান নিয়ে ভ্রান্তি তৈরি হয়। এই ভ্রান্তি তৈরির সামগ্রিক প্রক্রিয়াটির নামই মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম। এবার শুরু করছি মূল রিভিউ। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট গল্পের শুরুটা হয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয় পুরানো বন্ধু মারুফ, রুমি এবং হাসানের। হাসানের মাধ্যমে তারা জানতে পারে তাদেরই এক পুরানো বন্ধু শওকত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। সেইরাতেই শওকতের প্রদর্শনীতে গেল তারা। শওকতের সাথে দেখা হওয়ার পর তারা দেখল তাদের বন্ধুর আমূল পরিবর্তন। ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে আগ্রহ থাকার কারনে এবং শওকতের কাছ থেকে ব্ল্যাক ম্যাজিকের আভাস পেয়ে দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়ল এক বিচিত্র রহস্যময় অনুসন্ধানে। তারপর আর কি? আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকলো সত্য। বেরিয়ে আসলো শত বছরের হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঘটে যাওয়া কিছু নৃশংসতার কথা। একের পর এক বিপদের মুখোমুখি হতে থাকলো মারুফ আর রুমি। চারিদিকে শত্রু। আবিষ্কার করলো, ভয়ানক এক ষড়যন্ত্রের জালে ফেঁসে গেছে তারা! তরুণ লেখক মাশুদুল হকের প্রথম উপন্যাস এটি। সে হিসেবে দূর্দান্ত লেখা। বইটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। সে সময় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এধরণের লেখা এটিই প্রথম। এর আগে এধরণের কনসেপ্ট নিয়ে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য কাজ কাউকে করতে দেখিনি। তার উপর মৌলিক থ্রিলার! বিশাল ব্যাপার। সেই দিক থেকে লেখক গালভরা প্রশংসার যোগ্য। মোটামুটি ভালোই দক্ষতার সাথে কাজ দেখিয়েছেন, যা প্রথম উপন্যাস হিসেবে আশাতীত। তবে গল্পের কয়েকটি ব্যাপারে লেখক আরেকটু যত্নশীল হলে ভালো করতেন। যেমনঃ # গল্পে শওকতের ক্যারেকটারটা আরেকটু ঘসামাজা করে লেখা উচিত ছিল। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হিসেবে আরেকটু রহস্যময়তা থাকা উচিত ছিল। # গল্পের জবানবন্দী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মারুফের মুখ থেকে গেছে। যার ফলে অনেক জায়গাতেই তাকে একটু ইন্যাক্টিভ অবস্থায় দেখেছি। নিরপেক্ষতা নিতে গিয়ে ইন্যাক্টিভ হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে কেমন যেন লেগেছে। # গল্পের গাঁথুনি গদ্যশৈলী বেশ ভালো ছিল। পরতে পরতে টুইস্ট ছিল। তবে শেষ দিকে লেখক হড়বড়িয়ে গেছেন। পুরো বইয়ের গতি শেষ দিকে এসে একটু স্তিমিত হতে দেখেছি। # গল্পে লেখক কিছু কিছু জায়গায় কিছুটা ভয়, কিছুটা গা ছমছমে ব্যাপার সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই থিওরী তেমন ভালো দাগ কাটতে পারেনি বলে আমার মনে হয়েছে। তবে এতকিছুর পরেও ভেন্ট্রিকুইলিস্ট বেশ পাঠকপ্রিয় একটি বই। গল্পের ভেতর সিম্বলজি, ইতিহাস, গুপ্তসংঘ এরকম বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং মাসলা আছে যা পাঠকমনের উদরপূর্তি করতে বেশ ভালোভাবেই সক্ষম! বইটির প্রচ্ছদটি বেশ সুন্দর। কিছূটা ভৌতিক ভৌতিক ভাব আছে। দেখতে বেশ আকর্ষনীয় লাগে। এছাড়া বইটির অন্যান্য বাহ্যিক দিক যেমন, কাগজের মান, ছাপা, বাধাই বেশ ভালো মানের। দামও সাধ্যের ভেতর। সবশেষে এটাই বলতে চাই, ভেন্ট্রিকুইলিস্ট বইটি বেশ আলোচিত একটি বই। পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তাই যারা এখনো পড়েন নি, পড়ে ফেলুন। ঠকবেন না! রেটিংঃ ৪/৫
Was this review helpful to you?
or
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট " গল্পটি শুরু হয় দুই বন্ধু মারুফ এবং রুমির এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হবার মধ্য দিয়ে। কথায় কথায় জানা যায় তাদের আরেক বন্ধু শওকতের কথা। একসময় কথা বলার প্রব্লেম থাকলেও সে এখন একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট । তার সাথে দেখা করতে গিয়ে তারা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার হয়। পড়ে শওকতের শোতে গিয়েও তারা এইরকম কান্ড দেখে। এজন্য দুই বন্ধু আগ্রহী হয়ে শওকতের অতীতের ব্যাপারে খোঁজ নিলে ঘটতে থাকে নানা অদ্ভুত ঘটনা। বেরিয়ে আসতে থাকে দেশের ভিতরে থাকা বিভিন্ন গোপন সংঘের নানা কীর্তিকলাপ। এ ধরণের একটি প্লট নিয়েই লেখা হয়েছে মাশুদুল হকের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট যা পাতায় পাতায় পাঠকদের মোহাবিষ্ট করে রাখতে সক্ষম। - রেটিং : ৯/১০ (ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মূলত একটি হিস্টোরিক্যাল ফিকশন। লেখকের লেখার ভিতরে Dan Brown এর ছায়া পাওয়া যায়। অবশ্য এ দেশের প্রেক্ষাপটে এ রকম লেখার জন্য লেখক বাহবা পেতেই পারেন। কাহিনী বেশিরভাগ সময় মারুফের জবানবন্দিতে বলা হয়েছে যা উপভোগ্য। হিস্টোরিক্যাল ফিকশন হলেও বইতে নানা ধরণের রিলিজিয়াস আর মেডিক্যাল টার্ম ছিল। আর ভেন্ট্রিলোকুইস্ট নাম ও খুব ভাল লেগেছে কারণ আপাত দৃষ্টিতে শওকতকে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মনে হলেও আসলে প্রকৃত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট ছিল আরেকজন যার নির্দেশেই বাকিরা পুতুলের মত কাজ করেছে। কাহিনী খুবই ফাস্ট আর শেষে রয়েছে বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত টুইস্ট। এই বই প্রকাশ পাওয়ার পরে এর বিরাট সাফল্যের কারণে এ বছর এর সিক্যুয়াল "মিনিমালিস্ট" বের হয়। - এক কথায় , বাংলাদেশের হিস্টোরিক্যাল ফিকশন জনরার একটি মাইলফলক ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। যাদের হিস্টোরিক্যাল ফিকশন আর গুপ্তসংঘ সম্পর্কিত বই পড়তে ভালো লাগে তাদের জন্য একটি মাস্ট রিড বই "ভেন্ট্রিলোকুইস্ট " . )
Was this review helpful to you?
or
কাহিনী সংক্ষেপঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয়ে যায় পুরনো বন্ধুদের, দুই বন্ধু--নৃতাত্ত্বিক মারুফ এবং পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে তাদেরই আরেক বন্ধু পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। কৌতুহলী হয়ে সেটার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওরা জড়িয়ে পড়ে দারুণ রহস্যময় এক অনুসন্ধানে, বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর আর শিউরে ওঠার মত সব সত্য, সাধারণ মানুষকে কখনই জানতে দেয়া হয় না এমন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা, যার পদে পদে ওদের জন্য ওৎ পেতে আছে মৃত্যু, বিপদ, জড়িয়ে আছে ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের জীবন। “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট" শুধু একটি উপন্যাসই নয়, পাঠকদের জন্য ইতিহাস, স্থাপত্য, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব যাত্রা। ব্যক্তিগত মতামতঃ এই বইটিকে যতই লেখি না কেন, ততই কম। শুরুতেই দুই বন্ধুর এক বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এমন এক জায়গায় যাওয়া যেখানে তাদের ছোটবেলার এক বন্ধুর ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে শো রয়েছে। তাঁকে খুঁজতে এসে পরিচয় ঘটে এক রহস্যজনক অধ্যায়ের সাথে; ভেন্ট্রিলোকুইজম। বইটির প্রতিটা পাতায় পাতায় রহস্যের ছোয়া লেগে আছে। লেখক বেশ কিছু বিষয় বইটিতে তুলে ধরেছেন। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট নিয়ে চলতে চলতে কাহিনী এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যেখানে রয়েছে বিজ্ঞান, গণিত এবং ধর্ম সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য। - - এছাড়াও বিখ্যাত মেটাল ব্যান্ড “IRON MAIDEN” এর নামের পেছনের তথ্য টা ছিল সত্যিই প্রশংসা করার মত। ডাঃ রুশদি মানুষ হিসেবে এবং ডাক্তার হিসেবে কতটা বিপদজনক হতে পারেন তাঁর বিবরণ দিয়েছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। ঘাটতি বলে যে কিছু থাকার কথা সেটা বই পড়ার সময় একদমই মনে হয় নি। আমি বরাবরই যেকোন বই পড়ার সময় এর টুইস্ট প্রথমেই বের না করার দলে। আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন লাগে। তাতে পড়ার মজা নষ্ট হয়ে যায়। এই বইটা পড়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। লেখক যে বেশ পড়াশুনা করেছেন বইটি নিয়ে তা তাঁর লেখার পরিপক্কতা দেখে বুঝতে পারা যায়। - গণিত বিষয়ে লেখকের “ফিবোনাচ্চি সমীকরণ” টেনে আনা এবং সেটা দিয়েই একটা কোড বের করার পদ্ধতিটা যে বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। - প্রফেশনাল ওয়েতে মার্ডার করার একটি পদ্ধতি তিনি লিখেছেন যেখানে মানুষের শরীরের একটা জায়গায় পিন কিংবা সুচ ফুটালেও মানুষ ইন্সট্যান্ট ডেথ হয়ে যেতে পারে। জায়গার নাম “নেপ অফ দি নেক”। - এছাড়াও পাঠক বইটিতে পাবেন আমেরিকার “পেন্টাগন” এর মতো ডাঃ রুশদির আরেকটি আবিষ্কার “পেন্টাজোন”। যার রয়েছে পাঁচটি দেয়াল এবং ত্রিকোনাকার বেশ কয়েকটি কক্ষ। - এই তো গেল বইটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। এর সাথে রয়েছে দুই বন্ধু রুমি এবং মারুফের মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার মতো রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী। প্রতিবার রুশদির বিশাল জগতের কাছে তারা অসহায় হয়ে যায়। রুমির বেশ কিছু উপস্থিত বুদ্ধির কারণে বের হয়ে আসতে পারে ডাঃ রুশদির ভয়ংকর সব ফাঁদ থেকে। রুনু এবং বিনুকে বাঁচানোর নেশায় ছুটতে থাকা দুই বন্ধুর মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়া এবং জয়ন্তপুরে লোকমানের কাছ থেকে নানা অজানা তথ্য। এরই সাথে জয়ন্তপুরে ডাঃ রুশদির কোন সোর্স আছে কী না তা জানতে গিয়ে তাদের আরেক বন্ধু হাসানকে অপ্রত্যাশিতভাবে এক হসপিটালে আবিষ্কার করা। শওকত দ্য ভেন্ট্রিলোকুইস্টের গলার ভয়েসের আরেকটি গড গিফটেড অংশ কী, সেটা জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। পাঠক কে পুরোটা সময় রহস্যের জালে মোহাচ্ছন্ন করে রাখবে বইটি, যার স্বাদ নেয়ার জন্য পাঠক বারবার হারিয়ে যেতে চাইবেন অচেনা, অজানা এক ভিন্ন ধারার রোমাঞ্চকর- ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর জগতে।
Was this review helpful to you?
or
কাহিনীর সাথে সাথে অনেক অজানাকে জানতে পারলাম। খুব ভাল লেগেছে বইটি। লেখকের কাছে আরও ভাল ভাল গল্প আশা করি।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ লিখা! বোঝাই যায় লেখক ম্যালা শ্রম দিয়েছিলেন তার রিসার্চে । বাহাই মতবাদ নিয়ে পড়া ছিল কিছুটা, এখানেও কিছু জানলাম।
Was this review helpful to you?
or
অনেকদিন পর ভালো একোটা বই পড়ালাম
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই... মাশুদুল হকের লেখা কিআ তে পড়ে আমার অনেক ভালো লাগতো।এখন তার লেখা এই বইটি পড়ে আমি তার ভক্ত হয়ে গেয়েছি।লেখক এই বইটিতে অনেক সুন্দর করে সবকিছুর ব্যাখ্যা করেছেন যা বলতে গেলে এক কথায় অসাধারণ।অনেক সুন্দর করে কাহিনী টা সাজিয়েছেন।প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।এবং কাহিনী ধারাটা সুন্দর করে ধরে রেখেছেন। বইটি আমার প্রিয় বই তালিকায় যুক্ত হলো।আশা করি ভবিষ্যতে লেখক আরো সুন্দর সুন্দর বই আমরা পাবো??
Was this review helpful to you?
or
শুরুটা অনেক আগে, যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েকশ বছর আগে। মিশরীয় বা গ্রীক সভ্যতায়, অন্যায়ের বিচার করতেন স্বয়ং পাথুরে দেবমূর্তি। প্রাণহীন মূর্তির কণ্ঠে গমগমিয়ে উঠতো দৈববাণী। না, দেবতারা আদতে কথা বলতেন না। সেসময় পুরোহিত ও জাদুকরেরা আয়ত্ত করে নিতেন এক বিশেষ চর্চার। মধ্যযুগে যখন শুরু হলো জাদুকরদের হত্যা করা, তখন প্রাচীন সেই চর্চাকেও কালো জাদুর মতই অশুভ কিছু হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এর সাথে জড়িয়ে ছিল নিষিদ্ধ ধর্মীয় আচার। তবু বিদ্যাটা হারিয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, ঠোঁট না নাড়িয়ে স্বর ছুঁড়ে দেওয়ার খেলা – মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম। ২০১৩ সাল। কলেজের পুরনো বন্ধু রুমি, মারুফ ও হাসান অনেকদিন পর এক হয়েছে জহিরের বিয়েতে। কথা হচ্ছিলো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা কে কোথায় আছে, সেই সূত্রেই জানা যায় আরেক বন্ধু শওকত এখন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ব্যাপারটা অবাক হওয়ার মতোই বটে। একে তো আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিসটার তেমন চল নেই। তার ওপর কলেজে পড়াকালীন টাইফয়েডে বাকশক্তি হারায় শওকত। সেই বোবা শওকত কি করে মায়াস্বরের খেলা দেখায়, এই কৌতুহলে রুমি আর মারুফ হাজির হলো শওকতের শো-তে। শো দেখে মুগ্ধ দুই বন্ধু গেল শওকতের হোটেলের রুমে দেখা করতে। সেখানেই সব তালগোল পাকিয়ে গেল। অদ্ভুত সব প্রেতসাধনা আর আত্মার কথা বলতে শুরু করলো মায়াস্বরবিদ! জানায় ভেন্ট্রিলোকুইজম কেবল সাধারণ কোনো স্বরের খেলা নয়। যে পুতুলটা নিয়ে সে খেলা দেখায়, সেটা নাকি বহন করছে শওকতের আত্মা! তাদের আরেক পুরনো বান্ধবী রুনুকেই বা কি করেছে সে? কি সেই গোল্ডেন পানিশমেন্ট যা রুনুকে দিয়েছে শওকত? মানসিক রোগের ডাক্তার রুহান উদ্দীন রুশদীর হাসপাতালে ভয়ংকর কিছু ঘটছে। সজ্ঞানে রেখেই মানুষের উপর অস্ত্রোপচার চালানোর মত পৈশাচিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে গোপন কোনো ধর্মপালন, অনেক কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে রুশদী হাসপাতালে। শওকতের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? রুনুর আসলে কি পরিণতি হয়েছে? যতই জানতে চায় আরো অশুভ কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়তে লাগলো রুমি আর মারুফ। মাশুদুল হকের প্রথম হরর থ্রিলার ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’। গল্পটা মারুফের জবানে হলেও, এর মূল নায়ক তুখোড় সাংবাদিক রুমি। বুদ্ধি আর যুক্তির সাহায্যে সে বিপদসংকুল পরিস্থিতি কাটিয়েও বেরুতে পারে ঠান্ডা মাথায়। সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মারুফের চরিত্রটি কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছিল। মূল খলচরিত্র হিসেবে রুশদীর উপস্থিতি ছিল সংক্ষিপ্ত, কেবল গল্পের পটভূমিতে তার ভয়াবহতা আঁচ করা যাচ্ছিলো। গল্পটিতে দারুনভাবে মিশেছে ধর্ম, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, ইতিহাস এর উল্লেখ। সাথে টানটান উত্তেজনা আর রহস্য তো আছেই। অজস্র প্রশ্নের সুতো শেষ পর্যন্ত এনে একসাথে জুড়েছেন লেখক দারুন মুন্সিয়ানার সাথে। কাহিনী এগিয়ে গেছে দ্রুততার সাথে, পাঠক এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে বাধ্য হবেন। বাহাই ধর্ম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানীদের নৃশংস প্রজেক্ট, হর্ষদ সংখ্যা, মায়াস্বরবিদ্যা নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে লেখক আলোকপাত করে গেছেন গল্পের মধ্যে মধ্যেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা খাপছাড়া ছিল। শত্রুর কবল থেকে পালানোর সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বর্ণনা করা, বা রেস্তোরাঁয় কাউকে খুন করে সেখানেই খুনের পদ্ধতি ব্যাখা করা ঠিক স্বাভাবিক ছিল না। বাংলা সাহিত্যে এরকম তথ্যবহুল থ্রিলার বিরল। অনেকরকম তথ্য এবং টুইস্টের সমন্বয়ে লেখা বইটি পাঠকদের জন্য চমৎকার একটি উপহার।
Was this review helpful to you?
or
plot is very interesting. as a thriller it is good. but the finishing is slow. it had all elements to be a roller coaster novel but unfortunately lost its momentum at the end.
Was this review helpful to you?
or
সংগ্রহে রাখুন- "ভেন্ট্রিলোকুইস্ট" হাসানের কাছ থেকে প্রথম ব্যাপারটা শুনে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। শওকত পাপেট শো করে? ঠিক পাপেট শো না, হাসান বিভ্রান্ত্রের মত জবাব দেয়, ওটাকে কী বলে, ওর হাতে একটা পুতুল থাকে, সেটা কথা বলে ওর সাথে। ভেন্ট্রিলোকুইজম!! রুমী বিস্ময় ধ্বনি করে। দারুন ব্যাপার তো! আমাদের মধ্যে কেউ একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট, একদমই অবিশ্বাস্য। হাসানের হতভম্ভ মুখ দেখে বোঝা গেল শব্দটার সাথে ও পরিচিত নয়। রুমী ওর কাছে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলো- ভেন্ট্রিলোকুইজম বেশ দুর্লভ বিদ্যা। সহজ কথায় এটা হল শব্দকে ছুড়ে দেয়া, এমন ভাবে যাতে মনে হয় যিনি বলছেন তার মুখ থেকে নয়, আশপাশের কোথা থেকে শব্দটা আসছে, যেমন ধর হাতে ধরা পুতুলের মুখ থেকে হতে পারে। আচ্ছা, আমিতো ভেবেছিলাম পাপেটের গলাটা বোধহয় পর্দার পেছন থেকে কেউ দিচ্ছে-হাসান মনে করার চেষ্টা করে। সপ্তাহখানেক আগে ওর একটা শো ছিল, ইচ্ছা ছিল শো শেষে ওর সাথে দেখা করবো। ধরতেই পারলাম না-চট করে কই যেন চলে গেল শো শেষ হওয়া মাত্রই। ব্যাটা মনে হয় ভাল বিজি এসব নিয়ে। পুরনো বন্ধুরা অনেকদিন পর একসাথে একই ছাদের নীচে, চট করে যেন ফিরে গেছি বছর দশেক আগের সেই কলেজের দিনগুলোতে, ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডামুখর সময়ে। জহিরের বিয়ে উপলক্ষ্যে আসা, নইলে এ্যাদ্দিন পর সবার সাথে দেখা হওয়াটা অকল্পনীয়। ভেন্ট্রিলোকুইজম আমাদের দেশে এখনো অতটা পরিচিত হয়ে উঠেনি, হাতে গোনা দুএকজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আছে, তাও নন-প্রফেশনাল,শখের বশে বা মানুষকে চমকে দেয়ার জন্য প্রাকটিস করে।তাই শওকতের মত সাদামাটা একটা ছেলে-ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হয়ে রীতিমত শো করে বেড়াচ্ছে সেটা আশ্চর্যের কথা তো বটেই তবে আমাদের বিস্ময়টা ছিল অন্য জায়গায়। শওকত ইন্টার পরীক্ষার সময় ভীষণ টাইফয়েডে পড়ে,অনেকদিন ভোগায় ওকে ।জ্বরটা সারবার আগে ওর একটা স্থায়ী ক্ষতি করে দিয়ে যায়। তারপর থেকে ওর যে কাজটি করতে সবচেয়ে কষ্ট হত তা হল ‘কথা বলা’ । ও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে প্রায়! তা হঠাৎ তুই ওর হদিস পেলি কই? রুমী জিজ্ঞেস করে। হাসান বললো, গ্রামের বাড়ির এক ছেলের সাথে দেখা সেদিন, ছেলেটাই খোঁজ দিল। তোরা হয়তো ভুলে গেছিস, শওকতের আর আমার হোম ডিস্ট্রিক্ট একই। ব্যাপারটা আসলেই আমরা ভুলে গেছিলাম। আজকেও শো আছে নাকি? হাসান ঘড়ির দিকে তাকাল, সন্ধ্যা সাতটা এখন, তারমানে ঠিক দু’ঘন্টা পরে লাস্ট শো, জায়গাটা উত্তরার কাছে, যেতে চাইলে খুব দেরি করা যাবে না। অনুষ্ঠানও প্রায় শেষের দিকে, তাই আমরা দ্রুত সিধান্ত নিলাম। শওকতের শো দেখার লোভই জয়ী হল, জহির থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম তিনজন। হাসান ওর গাড়ি করে আমাদের পৌঁছে দেবে শুধু, ওর আবার রাতেই চিটাগাং ফিরতে হবে। যেতে যেতে শওকতকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হাসান বললো, হঠাৎ করে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর ওদের অবস্থাটা চট করে পড়ে যায়, সংসারে অবশ্য তেমন কেউ ছিল না, বোন দুটোর আগেই বিয়ে হয়ে গেছলো, কাকীমা আর ওর এক ছোট ভাই ছিল। বোবার মত হয়ে যাওয়ায় টিউশনীটাইপ কিছু যে করবে তারও উপায় ছিল না, পরে বেশ কিছুদিন এক পরিচিত লোকের ফার্মেসীতে বসতো, পড়াশোনার পাট ততদিনে চুকে গেছে।পরে শুনলাম প্রাকটিস করে করে কথা বলার সমস্যাটাও দূর করে ফেলেছে। রুমী বললো, এতকিছু জানি না, ওর সাথে আমার তেমন মাখামাখি ছিল না, যতদূর দেখেছি মনে হয়েছিল বেশ আত্মপ্রত্যয়ী ছিল, আমার এখন যেটা মনে হয়, নিজের অক্ষমতাকে একহাত দেখে নেয়ার জন্যই এমন এক পেশা বেছে নিল যেখানে কন্ঠস্বরের মুন্সিয়ানাটা থাকতে হয় সবচেয়ে বেশি। ওদের কথা শুনতে শুনতে কিছুদিন আগে টিভিতে দেখা এক ভেন্ট্রিলোকুইস্টের শো এর কথা মনে পড়লো। এক কমেডিয়ানের হাতের পুতুল কথা বলছে সেজন্য নয়, সে কথোপকথোন যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল বলেই দেখছিলাম।তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল কোন বুজরুকি আছে কিনা, কারন পুতুলটা কথা বলার সময় লোকটার চোয়াল একদমই নড়ছিল না। ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলা কি আদৌ সম্ভব? আমি স্বগোতক্তি করলাম। ‘ব্যাপারটা আসলে তা নয়, রুমী ব্যাখ্যা করা শুরু করলো, আসলে যে সব শব্দ ঠোঁট দিয়ে উচ্চারণ করা লাগে, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট সেগুলো এড়িয়ে যায়। যেমন ধর, প ফ ভ ভ ম এইসব বর্ণগুলোর জন্য ঠোঁট নাড়াতে হয়, ইংরেজীতে ল্যাবিয়াল সাউন্ড p f b v m এগুলো তারা অন্য কিছু দ্বারা রিপ্লেস করে বলে। যেমন ধর, তুই একটা বোকা- এটাকে কোন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বলবে ‘ তুই একটা গোকা’ । আর কন্ঠস্বরের রেজোন্যান্স বেশি থাকে বলে এসব ছোটখাট ব্যাপার ধরাই পড়ে না। মূলত হরবোলাদের মত নানা স্বরে কথা বলাই আসল ক্রেডিট, মুখ না নাড়ানোটা প্রাকটিস করলে সবাই পারবে। শো শুরু হবার মিনিট পাঁচেক আগে আমরা পৌঁছালাম। টিকেট কেটে ঢুকতে বেগ পেতে হল না, হাউসফুল হওয়ার মত জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি হয়তো এখনো।হাসানকে বিদায় দিয়ে আমি আর রুমী সিট নিয়ে বসে পড়লাম। মূলত ম্যাজিক শো ছিল, বেশ ক’জন বিদেশী ম্যাজিশিয়ানও পারফর্ম করছিলো দেশী ম্যাজিশিয়ানদের পাশাপাশি ।বেশ আনন্দই পাচ্ছিলাম, অনেকদিন পর এই ধরনের কোন শো দেখছি কিনা, নিজের অজান্তেই হাততালি দিতে দিতে হাত ব্যথা করে ফেললাম। হঠাৎ করেই মঞ্চে শওকত ঢুকলো। অনেকদিন পর দেখলেও চিনতে মোটেও সমস্যা হল না।আগের চেয়ে অনেক রোগা হয়েছে, চোখের নীচে বয়সের ছাপ। হাতে একটা কাঠের পুতুল, এক বাচ্চা ছেলের মত মুখের আদল , কোট-টাই পরা। নীচের চোয়ালটা যে নাড়াচাড়া করা যায় তা ভাল করে দেখেলেই বোঝা যায়। চেয়ার পেতে বসেই কথোপকথোন শুরু হয়ে গেল। শওকত পুতুলটার উদ্দেশ্যে বলল, ‘গিলু, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাও!’ একটা মিহি চিকন স্বর বেড়িয়ে এল পুতুলের গলা থেকে- কেন? শুভেচ্ছা জানাবো ক্যান? এটাই নিয়ম, লোকদের সাথে দেখা হলে প্রথমে তাই করতে হয়! ওটাতো তোমাদের মানুষের নিয়ম, আমি কি মানুষ? তোমাকেও মানুষ হতে হবে, সবাই তো মানুষ হতে চায়, জানো না? কাঠের পুতুল পিনোকিও ও তো মানুষ হতে চেয়েছিল- মনে নেই? পিনোকিওকে আমি ঘৃণা করি, খালি মিথ্যা বলে নাক লম্বা করা ছাড়া ও আর কীই বা পারে! তুমি মিথ্যা বল না? বয়েই গেছে, আর আমি মানুষ হতে চাই না, বরঞ্চ চাই তুমিও আমার মত পুতুল হয়ে যাও। এইভাবে বাক-বিতন্ডা চলতে থাকে, হাততালি আর হাসির হুল্লোড়ে কখনো কথোপকথোন ঢাকা পড়ে যায়। পাশ থেকে রুমী আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লক্ষ্য করে দেখিস, অন্যান্য কথোপকথোন থেকে এটা একটু আলাদা।দু’জন মানুষ কথা বললে প্রায়ই যেটা হয়, একজনের কথার সাথে আরেকজনর কথা ওভারল্যাপ হয়।কিন্তু ভেন্ট্রিলোকুইস্ট একাই দু’জনের কথা চালিয়ে যায় বলে দুটো স্বরে যথেষ্ট গ্যাপ থাকে । পেশাদারিত্বের সাথে সাথে অবশ্য এই গ্যাপটা কমে আসে। ব্যাপারটা বলে রুমী শো এর মজাটা কিছুটা নষ্ট করে দিল। আমি পুতুল আর শওকতের কন্ঠস্বরের গ্যাপ এর দিকে খেয়াল করা শুরু করলাম কথা না শুনে। এবং বুঝলাম দুটো গলার মাঝে যথেষ্ট গ্যাপ আছে, তারমানে হয়তো শওকত এখনো অতটা উঁচুদরের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হতে পারে নি। মোটামুটি একটা উপভোগ্য শো শেষ করে শওকত মঞ্চ ছাড়লো। আমরাও সাথে সাথে ওকে ধরতে বেড়িয়ে গেলাম। ম্যাজিশিয়ানদের রেষ্টরুমে ঢুকতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম, সেখানে ফাজিল টাইপ এক দাড়োয়ান দাঁড়ানো।আমরা শওকতের বন্ধু বলেও সুবিধা করা গেল না।বলল, ‘আপনারা যত বড় তাবেদারই হন লাভ নাই, বাইরের মাইনষের এইখানে ঢোকা নিষেধ,যান গা’ কথা শুনে রুমীর মাথায় রক্ত চড়ে গেল । ও আগে থেকেই যথেষ্ট শর্ট-টেম্পারড, দাড়োয়ানের সাথে প্রায় মারামারি বাধিয়ে বসলো। চেঁচামেচিতে অবশ্য কাজ হল, ভেতর থেকে ভদ্রস্থ এক লোক এসে ক্ষমা চাইল। সে জানালো শো শেষ হওয়া মাত্রই শওকত তার রুমে চলে গেছে।শওকত যে হোটেলে উঠেছে তিনি তার ঠিকানা দিলেন। হোটেলটা বেশি দূরে ছিল না। রিসিপশনিষ্ট বলল, উনি কারো সাথে দেখা করবেন না বলে রেখেছেন। দেখুন, আমরা পুরনো বন্ধু, আপনি রুমে একটা ফোন দিন, আমরা কথা বললেই বুঝবে।ফোনে কাজ হল। আমি ভিতরে ভিতরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলাম, এখনই সেলিব্রেটিদের মত ভংচং শুরু করলো শওকত । ওর রুমে ঢুকে চমকাতে হল। আজকের দিনটা যথেষ্ট ঠান্ডা এমনিতেই, এই ঠান্ডার মধ্যেও ও ফুল এসি ছেড়ে রেখেছে। হঠাৎ করে মনে হল যেন উত্তরমেরুতে গিয়ে পড়লাম।ঘরে একটা মাত্র শেড ল্যাম্প জ্বালানো। শওকতের মুখভঙ্গি তাই ভাল বোঝা গেল না, এতদিন আমাদের দেখে ও উচ্ছ্বসিত না কিছুটা বিরক্ত। কুশল বিনিময়ের পর শওকত জিজ্ঞেস করলো, তা শো কেমন দেখলি? অসাধারন, তুই এমন একটা শো করছিস, ব্যাপারটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল। কেন? হঠাৎ ওর কন্ঠস্বর গম্ভীর শোনাল আমি বললাম,না মানে, তোর স্পিচে একটা সময় সমস্যা ছিল- সেটা সেরে উঠবার পর তো আর কথা হয় নি তোর সাথে! তা হঠাৎ তোরা এখানে? খোঁজ পেলি কই। জহিরের বিয়ের কথা বলতেই মনে হল ওর চোখমুখ আরও শক্ত হয়ে গেছে। তোরা জানিস কলেজে থাকতে জহিরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে ছিল? ও কি বলবে ব্যাপারটা অনুমান করে ফেললাম, জহিরের সাথে একসময় ওর খুব মাখামাখি ছিল। ওর সমস্যাটা হবার পর একটা সময় সব বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে যোগাযোগের ইচ্ছাটা ওর তরফ থেকেই ছিল না বলে আমাদের মনে হয়েছিল। কাল কোথায় শো করছিস- পরিবেশ হালকা করার জন্য আমি বলি। সকালের ফ্লাইটে ইন্ডিয়া যাচ্ছি। ওখানে আগামী একসপ্তাহ শো আছে। রুমী বলল, তা তোর হঠাৎ এ ইচ্ছা জাগলো ক্যান, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হবার? বোবা হওয়ার পরপরই। থমথমে গলায় ও জবাব দিল। ওর জবাবে আমরাও বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলাম,বাকশক্তিহীন হবার পর ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হবার চিন্তা খোঁড়া হবার পর দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হবার মতই নয় কি? আমাদের অবাক হয়ে যাওয়াটা মনে হয় শওকত এনজয় করলো, ওর মুখে এক ধরনের রহস্যময় হাসি দেখা দিল। ‘ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে তোরা কদ্দুর জানিস’ আমরা খুব বেশি কিছু জানি না হয়তো, রুমী বলল।তারপর ও আমাকে যা বলেছিল তাই রিপিট করলো। হঠাৎ হাই তোলার ভঙ্গি করে শওকত ওকে থামিয়ে দেয়- মধ্যযুগের উইচ হান্টের নাম শুনেছিস, যখন ম্যাজিশিয়ানদের ধরে ধরে পুড়িয়ে মারা হত। শুনেছি, রুমী বলল, হাজার হাজার মানুষকে ধরে ধরে মারা হয়েছে। সংখ্যাটা আসলে লাখে গিয়ে ঠেকেছিল, আবহাওয়া খারাপ হলেও দোষ হত যাদুকরদের।তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য রীতিমত রাষ্ট্রীয় আইনও ছিল। আইন? এটা পরিচিত উইচক্র্যাফট অ্যাক্ট নামে, সে উইচহান্টে শুধু ম্যাজিশিয়ানদেরই নয়, ভেন্ট্রিলোকুইস্টদেরও ধরা হত, যদিও আপাতত দৃষ্টিতে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট মোটেও ম্যাজিশিয়ান নয়। কিন্তু যারা আসল ব্যাপারটা জানতো তারা বুঝতে পেরেছিল, ভেন্ট্রিলোকুইজমও ব্ল্যাক ম্যাজিকের মতই নিষিদ্ধ কিছু। কিন্তু…রুমী বলে উঠে। শওকত সাথে সাথে হাত তুলে ওকে থামিয়ে দেয়। ‘ হ্যাঁ,অনেকের ধারনা এটা সাধারণ কিছু, প্রাকটিসের সাথে সম্পর্কিত, তাই যে কেউ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হতে পারে, এমনকি যে কেউ হচ্ছেও। কিন্তু সবাই প্রকৃত অর্থে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট নয়। আসল ব্যাপারটা অনেক বড় কিছু। এর মধ্যে স্পিরিচুয়াল ইন্সপায়ারিং আছে। আধ্যাত্মিক প্রেরণা। মূলত এটা একটা রিলিজিয়াস প্রাকটিস। ধর্মসংক্রান্ত আচার। কথা শুনে আমার আমার মাথা ঘুরছিল,কন্ঠস্বরে এমন একটা গাম্ভীর্য শওকতের যে অবিশ্বাসও করতে পারছিলাম না। রুমী বলল, আমিও এ ধরনের কথা যে শুনি নি তা না,ভেন্ট্রিলোকুইজম শব্দের মানে তো উদর থেকে কথা বলা, ধারনা করা হত মৃত আত্মা তাদের উদরে স্থান নিত এবং কথা বলতো। এক্সাক্টলি,শওকত দাঁড়িয়ে যায়, ল্যাটিন venter এবং loqui থেকে এসেছে শব্দটা। Venter মানে উদর আর loqui মানে কথা বলা। কিন্তু ব্যাপারটা তো ভেন্ট্রিলোকুইস্টদের ভন্ডামি ছিল পুরোটাই, তাই না? মোটেও না, শওকতের দৃষ্টি দিয়ে যেন আগুন ঝরে, তাঁরা ছিল বিশেষ ক্ষমতাবান, সত্যি সত্যিই মৃতের আত্মা তাদের দেহে স্থান নিত।তাদের কথা তোমাদের ওই ইতিহাসের পাতায় নয়, একেবারে ধর্মগ্রন্থে আছে! ধর্মগ্রন্থে? হ্যাঁ, Septuagiant বাইবেলের নাম শুনেছিস, হিব্রু বাইবেলের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রীক অনুবাদ। সেখানে ভেন্ট্রিলোকুইস্টদের কথা বলা আছে, গ্রীকরা একে বলতো gastromancy অর্থাৎ উদর থেকে ভবিষ্যতবানী করা। আমরা চুপ হয়ে গেলাম, বিস্ময়ের পাশাপাশি শওকতের তেজদীপ্ত কন্ঠস্বরে যেন বশ হয়ে রইলাম। আমি বাকশক্তিহীন হয়ে যাওয়ার পর সবচেয়ে বড় আঘাতটা কি ছিল জানিস? হঠাৎ প্রসংঙ্গ পাল্টে শওকত আমাদের জিজ্ঞেস করলো।রুনু আমাকে ছেড়ে চলে যায়! কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।রুনুর সাথে শওকতের ভাব ছিল জানতাম, হয়তো সেটা প্রেমের সম্পর্ক ছিল।কিন্তু বাকহীন হওয়ার পর রুনু ওকে ছেড়ে চলে যায় এ ধরনের কোন ঘটনা জানা ছিল না। তোরা রুনুর খবর জানিস? আমাদের কারে জানা ছিল না। জানতাম, জানবি না।হঠাৎ মনে হল ওর মুখে সামান্য হাসির মত। আমি এত কাঁচা কাজ করি না। মানে? রুমী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়, তুই ওর কিছু করেছিস? তেমন কিছু না, আমার আলমারীতে আর একটা পাপেট আছে। একটা মেয়ে পাপেট। এখনও ভাল কথা বলতে পারে না, তবে হ্যাঁ, দিন দিন শিখছে। পুরো ব্যাপারটা আসলে কী বুঝে উঠতে পারলাম না,তবে শীতল ঘরে আধো আলো অন্ধকারে ওর হিসহিসে গলায় বলা কথাটা শুনে আমি শিউরে উঠলাম, খুব অশুভ কিছু ঘটছে বলে মনে হল। রুমীর কী হল কে জানে,হঠাৎ ক্ষেপে উঠলো মনে হল, চেঁচিয়ে বলল, ‘তুই রুনুকে খুন করেছিস? শওকত দৃঢ় স্বরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, মোটেও না, আমি খুনী নই।শুধুমাত্র মাত্র একজন মূলধারার ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। তবে…, শওকত মুখের ক্রুর হাসিটা বজায় রেখে যোগ করে, ওভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না।এটা ওর প্রাপ্য ছিল। একটা পারফেক্ট পানিশমেন্ট, পানিশমেন্ট অব গোল্ডেন রুলস, ব্যালান্সড প্রতিশোধ। ব্যালান্সড প্রতিশোধ? নিশ্চয়ই।সত্যিকার অর্থেই।ও একটা প্রাইভেট মেন্টাল ক্লিনিকে আছে, ওভাবেই বেঁচে থাকবে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যতদিন বাঁচবে।ওর আত্মাটা ওর দেহে নেই আর ! মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। তারপরও মুখ দিয়ে প্রশ্নটা বেড়িয়ে গেল, আত্মা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকে? আমি তো আত্মা গ্রহনের ঈশ্বরপ্রেরিত দূত নই। যে উপায় আমরা সেটা করি, তাতে আত্মার উল্লেখযোগ্য একটা অংশ দেহে থেকে যায়।আর বাকীটা... আর বাকীটা নিয়ে কি করা হয় শওকত শেষ করে না। শওকত ঠিক পাগল না আমাদের বোকা বানাচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। তারমানে আজকে যে ডামি নিয়ে তুই শো করলি,এটাও কোন মানুষের আত্মা বহনকারী? রুমী জিজ্ঞেস করে। প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে ও উল্টো আমাদের প্রশ্ন করে,বোবা হওয়ার পরপরই আমি ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হতে চেয়েছিলাম কেন জানিস? কারন হল- ডাক্তার আমাকে বলে দিয়েছিল আমি আর কোনদিন স্বাভাবিক হতে পারবো না। শুনে সেইদিনই সমীরদের আন্ডার কন্সটার্কশনড ছয় তলা বাড়ির ছাতের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু সাহসে কুলায় নি বলে ফিরে এসেছি। পরে একদিন এক সাধকের খোঁজ পাই,ল্যে পিপলরা বলে প্রেতসাধক, মূলত ব্লাক ম্যাজিশিয়ান।যে সে মানুষ তার কাছে যাওয়ার সাহস পেত না, গেলেও কল্কে পেত না।আমাকে কেন যেন ফিরিয়ে দিল না, আমার চোখের ক্ষোভ বোঝার ক্ষমতা তার ছিল। একনজর আমাকে দেখে বলল, তুই বোবা, কিন্তু তোর আত্মাটা বোবা না। সেটা দিয়ে বকবকাতে পারবি, কিন্তু সেটা আত্মহত্যার সামিল। চলে যা, দরকার নাই। আমি তখন মরিয়া, পড়ে রইলাম যতক্ষণ না রাজী হয়। একটা ডামি পুতুল বানিয়ে নিয়ে গেলাম কয়েকদিন পর। তারপর যা করেছেন তখন বুঝি নাই, অনেকদিন পর সেই পদ্ধতিটা আমিই আত্মস্থ করি। কি করেছে? কি করেছে সেটা তোদের জেনে কাজ নেই। এরপর থেকে কথা বলে ডামিটা,আর আমি মুখ মিলাই! রিভার্স ভেন্ট্রিলোকুইজম! রুমী বিস্ময় ধ্বনি করে। তারচেয়েও বেশী কিছু। আমার শরীরটাও ডামির নিয়ন্ত্রনাধীন। আমার আত্মাটা আসলে ওখানেই বসানো। বলতে বলতে শওকত ধপ করে পড়ে যায়, সোফায় এলিয়ে পড়ে। আর এতক্ষণ লক্ষ্য করিনি, পাপেটটা সোফারই একপাশে বসিয়ে রাখা। অন্ধকারে ভালো বোঝা যায় না।হঠাৎ মনে হল ওটা ঘাড় ঘুড়িয়ে আমাদের দিকে তাকাল। মুখটা হা করা, বড় করে। চোখদুটো জ্বলজ্বলে, চোখের ভুল কিনা জানি না। মনে হল মুখের ভেতর লালচে কিছু। কথা বলতে জিহ্বা লাগে মনে পড়লো আমার। তীক্ষ্ণ একটা শীতল কন্ঠ বেড়িয়ে এল, গা হীম করা- ‘তোরা চলে যা, বেড়িয়ে যা এক্ষুণি। নইলে বিপদ। ভীষণ বিপদ।‘সে স্বরে এমন কিছু ছিল যা অগ্রাহ্য করার সাধ্য আমাদের ছিল না । রুম থেকে কীভাবে ছুটে বেড়িয়ে গেছি নিজেরাই জানি না। হোটেল থেকে নেমে দৌড়ে এক সিএনজি ধরি।দুজনেরই মুখ থমথমে। এ ধরনের কোন অভিজ্ঞতা হবে কেউ তা কষ্মিনকালেও ভেবেছিলাম! পারফেক্ট পানিশমেন্ট, রুমী হঠাৎ বিড়বিড় করে বলে। শওকত পারফেক্ট পানিশমেন্টের কথা বলেছিল মনে আছে? মানে কি এর? আমি ওর কথায় আবারও বিভ্রান্ত হই। এর মানে eye for an eye, tooth for an tooth, হাজার বছর আগের হাম্বুরাবী আইনেও যেটা ছিল,অনেকগুলো একেশ্বরবাদী ধর্মেও যে বিধান আছে,ব্যালান্সড প্রতিশোধ,সবচেয়ে পারফেক্ট শাস্তি বিধান, চোখের বিনিময়ে চোখ,দাঁতের বিনিময়ে দাঁত…আত্মার বিনিময়ে আত্মা।শওকতের আত্মা, রুনুর আত্মা। হঠাৎ করে আজকের রাতটাকে কেমন দু:স্বপ্নের মত মনে হয়।
Was this review helpful to you?
or
rohoshow r uttejonay vorpur 1t boi.. ekbar pora shuru korle shesh na kore otha akebarey impossible .. chapa na sotti, pore bolchi... ekkothay joteeel..
Was this review helpful to you?
or
একদিনের ব্যবধানে আরও একটি দুর্দান্ত মৌলিক থ্রিলার পড়ে ফেললাম এবং এই থ্রিলারটিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের। ১৯৮৮ সালে জন্ম নেয়া ২৫ বছরের তরুন লেখক মাশুদুল হকের প্রথম মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকদিন পর দেখা হয় পুরানো বন্ধু মারুফ, রুমি এবং হাসানের। হাসানের মাধ্যমে মারুফ ও রুমি জানতে পারল তাদেরই এক পুরানো বন্ধু শওকত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভেন্ট্রিলোকুইজম। সেইরাতেই শওকতের প্রদর্শনীতে গেল তারা। শওকতের সাথে দেখা হওয়ার পর তারা দেখল তাদের বন্ধুর আমূল পরিবর্তন। ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে আগ্রহ থাকার কারনে এবং শওকতের কাছ থেকে ব্ল্যাক ম্যাজিকের আভাস পেয়ে দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়ল এক বিচিত্র রহস্যময় অনুসন্ধানে। সেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসলো শত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক সম্প্রদায়ের কথা। এবং আরও আবিস্কার করল ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটে যাওয়া কিছু নৃশংস ঘটনার সাথে এর সম্পৃক্ততা। এই রহস্যময় যাত্রায় তারা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে থাকল নিত্যনতুন বিপদের। সবসময়ে ওঁত পেতে আছে মৃত্যু তাদেরকে আলিঙ্গন করে নিতে। এক অভুতপূর্ণ রহস্যে ঘেরা মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ২০০১ সালের পর থেকেই পুরো পৃথিবীই ড্যান ব্রাউনের সিক্রেট সোসাইটি/ ধর্ম ভিত্তিক মিস্ট্রি-কন্সপিরেসি থ্রিলার উপন্যাসগুলার পাঁড় ভক্ত হয়ে আছে। ড্যান ব্রাউনের আমিও একজন অন্ধভক্ত। এই ধরনের থ্রিলার উপন্যাস আমরা শুধু পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধ থেকেই আশা করি। কিন্তু আমাদের দেশেই যে এই ধরনের থ্রিলার লেখা সম্ভব তা বোধহয় কেবলমাত্র মাশুদুল হক ভেবেছিলেন। এবং ভেবেছিলেন বিধায় এত দুর্দান্ত একটা উপন্যাস আমরা পড়তে পারলাম। কি নেই এই ভেন্ট্রিলোকুইস্ট -এ। সিক্রেট সোসাইটি, ইতিহাস, স্থাপত্য, গনিত, ধর্ম আর বিজ্ঞ্যানের এক অপূর্ব সম্মেলন ঘটিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক অভুতপূর্ণ থ্রিলার লেখক পাঠককে উপহার দিয়েছেন। কাহিনী শক্তিমত্তা নিয়ে বলতে গেলে বলব প্রথম উপন্যাস হিসেবে অনেক ভালো। কাহিনীতে যেখানে গতির প্রয়োজন আছে সেখানে লেখক গতি এনেছেন। যেখানে ধীরতার প্রয়োজন সেখানে কাহিনীকে ধীর গতিতে এগিয়ে নিয়েছেন। কাহিনীতে টুইস্টগুলা ঠিকই ছিল, তবে আরও ভালো হতে পারত। দু-এক জায়গায় একটু সাদামাটা লেগেছে। তবে সবথেকে বেশী প্রশংসনীয় অবশ্যই লেখকের কাহিনীর ডেভেলপমেন্ট এবং ফিনিশিং সুন্দরভাবে মিলাতে পারা। গানিতিক বিশ্লেষণ ও ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলা এবং এই দুইয়ের সংযোগ খুব চতুরতার সাথে লেখক দেখিয়েছেন। নেগেটিভ ঠিক বলব না, তবে একটা বিষয় একটু খাপছাড়া লেগেছে। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে নৃতাত্ত্বিক মারুফ থেকে পত্রিকার সাংবাদিক রুমির এগিয়ে থাকা। আর এই কাহিনী ফার্স্ট পারসন ভিউতে না লেখা হলে বোধহয় আরও ভালো লাগতে। আরেকটু অ্যাকশন আর ভায়োলেন্স থাকলে বোধহয় মন্দ হত না। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ড্যান ব্রাউনি-উ ধরনের প্রথম উপন্যাসের জন্য লেখকের সাহসিকতার উচ্ছসিত প্রশংসা করছি। মাশুদুল হককে ধন্যবাদ এই দুর্দান্ত থ্রিলারের জন্য।
Was this review helpful to you?
or
'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' মাশুদুল হকের প্রথম থ্রিলার। তার লেখনীর ভিতর সহজেই ড্যান ব্রাউন, রবার্ট লুডলাম বা জেমস টোয়াইনিংদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এক লেখার ভিতর থেকেই তিনি কাভার করতে চেয়েছেন ইতিহাস, স্থাপত্য, গণিত, ধর্মতত্ত্ব আর বিজ্ঞানের মত ইন্টারেস্টিং কয়েকটি বিষয়কে। পাশাপাশি একটি গল্পও বলতে চেয়েছেন যা বেশ আকর্ষনীয় এবং এদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন। স্বাভাবিকভাবেই এদেশী সাহিত্য অনুসারীদের কাছে এই লেখার আবেদন অনেক, কারণ একসাথে অনেক নতুনত্বের খোঁজ পাওয়া যাবে এই একটি উপন্যাস থেকেই। নৃতাত্বিক মারুফ আর পত্রিকার ফিচার এডিটর রুমি তাদের বন্ধু হাসানের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারল যে তাদের আরেক পুরনো বন্ধু শওকত বর্তমানে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে মারুফ আর রুমি। দেখা করে শওকতের সাথে। কিন্তু অতীতের কিছু তিক্ততার রেশ ধরে শওকত তাদের সাথে দুর্বিনীত আচরণ করে। কিন্তু তারপরও সেই অস্বস্তিকর আলাপচারিতার মাধ্যমে এক রহস্যের সন্ধান পায় রুমি আর মারুফ। তারা সন্দেহ করে শওকত তার সাবেক প্রেমিকা রুনুর সাথে ভয়ংকর কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। তারা উদ্যত হয় রুনুকে বাঁচাতে। তাদের মিশন শুরু হয় রুনুকে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে। কিন্তু ক্রমেই এক বিশাল চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পড়ে তারা। ধর্ম, ইতিহাস, স্থাপত্য প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে তারা ক্রমেই রহস্যের গভীর থেকে আরও গভীরে ঢুকে পড়তে থাকে। এবং এক সময় হুমকির মুখে পড়ে শুধু তাদের দুজনের জীবনই নয়, সাথে আরেক বন্ধু হাসানের জীবনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি বেঁচে ফিরবে তারা? যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজে নেমেছিল তারা তা কি সফল হবে? শওকতকে কি তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে? আর ঠিক কোন ধরণের চক্রান্তের সাথে তারা জড়িয়ে পড়েছিল, তারও কি কোন সমাধান মিলবে? এই নিয়েই ভেন্টিলোকুইস্টের কাহিনী যার শেষ পর্যন্ত রয়েছে রহস্যাবৃত আর শেষমেষ সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে জটিল গণিত ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক ব্যাখ্যার মাধ্যমে। 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট'কে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্লটের ফসল বলা যেতে পারে। তবে কাহিনিবিন্যাসে সেই প্লটের সার্থক প্রয়োগের দেখা মেলেনি। কাহিনীর বর্ণনা একটু অন্যভাবে হলে আর ক্রিটিকাল সিচুয়েশনগুলোকে যদি লেখক আরেকটু মুনশিয়ানার সাথে হাইলাইট করতেন এবং কাহিনীর প্রতিটি স্তরকে আরেকটু ধরে ধরে বলার মাধ্যমে গোটা কাজটাকে ডিটেইলে সম্পন্ন করতেন, তাহলে 'ভেন্ট্রিকোলুইস্ট'কে একটি সার্থক থ্রিলার বলে অভিহিত করা যেত। তাতে যদি বইয়ের পরিধি একটু বাড়ত, তবু সমস্যা হত বলে মনে হয় না। তারপরও কথায় আছে, একজন লেখকের পক্ষে কোনোমতেই পাঠকের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। কোথাও না কোথাও একটু খামতি থেকেই যায়। কিন্তু সেসব খামতিকে পাশে সরিয়ে রেখে যদি ইতিবাচক দৃষ্টিতে মাশুদুল হকের কাজটিকে দেখতে চাওয়া হয়, তাহলে কাজটি অবশ্যই আন্তরিক প্রশংসার দাবিদার। এতদিন বিদেশী থ্রিলারগুলোতে যেধরণের বহুস্তরবিশিষ্ট রহস্যের স্বাদ পাঠক আস্বাদন করতে পেরেছে, তার দেখা এবার মিলবে বাংলাদেশী থ্রিলারগুলোতেও - এরচেয়ে সুখকর আর কি হতে পারে? ধর্ম, ইতিহাস আর গণিতকে এই গল্পের প্লটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সন্দেহ নেই এই তিনের মিশেলে আরও ভাল কিছু সৃষ্টি করা অসম্ভব ছিল না তবু 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট'-এ যেটুকু আমরা পেয়েছি, স্বীকার করতে আপত্তি নেই যে এদেশের অধিকাংশ থ্রিলারের তুলনায় তা ঢের বেশি। তাই সবাইকে আমি শুধু এই বার্তাটিই দিতে চাই, এই থ্রিলারটি নিয়ে অনেক পাঠক যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে তা একটু বাড়াবাড়ি হলেও, থ্রিলারটি আসলেই বেশ শক্তিশালী। ফিনিশিংটা মনে রাখার মত।
Was this review helpful to you?
or
বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে বাংলাভাষায় তথা বাংলাদেশে প্রচুর থ্রিলার লেখা হয়েছে; অনেক থ্রিলারই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। যদিও সেসব নিয়ে বিতর্ক চালু রয়েছে পাঠক ও সমালোচকদের মধ্যে। অনেক সমালোচকই ধারণা করেছে যে, বিদেশী সফল থ্রিলারগুলোর মতো সফল থ্রিলার বাংলা ভাষায় লেখার জন্য যে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা বাংলাভাষী লেখকদের নেই। বক্তব্যটি আংশিক সত্য হলেও থ্রিলার উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবার কথা নয়। কারণ সব ধরনের থ্রিলারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পড়াশুনা ও গবেষণার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ঘাটতে পেছনে ফেলে দেয়া যায়। মাশুদুল হক এমন এক বিষয় নিয়ে তাঁর উপন্যাসের প্লট সাজিয়েছেন যা সম্পর্কে বইপত্র এবং বিশেষ করে ইন্টারনেট থেকে বিস্তৃত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। ধারণা করি, তাঁর থ্রিলারে ব্যবহৃত সকল তথ্য তিনি অন্তর্জাল থেকেই সংগ্রহ করেছেন এবং অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তাঁর প্লটে ব্যবহার করেছেন। আলোচনা করছি মাশুদুল হক’এর থ্রিলার উপন্যাস “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” নিয়ে। শিরোনাম দেখে হয়তো মনে হবে বইটি ভেন্ট্রিলোকুইজমের উপরে ভিত্তি করে লেখা, যদিও তা পুরোপুরি সত্য নয়। হ্যাঁ, গল্পে একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আছে যেটি অন্যতম প্রধান একটি চরিত্র, কিন্তু তা-ই সব নয়। ভেন্ট্রিলোকুইজম দিয়ে রহস্যের সূচনা হলেও ঘটনার ডালপালা নানাদিকে গজিয়েছে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র চারটি- নৃতাত্ত্বিক মারুফ, দৈনিক পত্রিকার ফিচার লেখক রুমী, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শওকত এবং মনো-গবেষক ডাঃ রুশদী। আরো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হাসান এবং মিলি। পুরো উপন্যাস বর্ণিত হয়েছে প্রথম পুরুষে, মারুফের জবানিতে। থ্রিলার সাধারণত তৃতীয় পুরুষে লেখা হয়, রহস্য বজায় রাখার স্বার্থে। কিন্তু মাশুদুল হক প্রথম পুরুষের বর্ণনা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যের খাতিরে মারুফ চরিত্রটিকে বেশিরভাগ সময়েই অন্ধকারের রাখতে বাধ্য হয়েছেন লেখক। মারুফকে প্রায় পুরোটা সময়ই তাঁর বন্ধু রুমীর ছায়ার নিচে কাটাতে হয়েছে। গল্পের প্লটে একজন নৃতাত্ত্বিকের চমক দেখাবার জায়গা থাকলেও পুরোটা সময় চমক দেখিয়ে গেছেন পত্রিকার ফিচার লেখক রুমী। মাশুদুল হক কেন এই সিদ্ধান্তটি নিলেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। রুমী এই থ্রিলারের সবজান্তা। সে ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত-সব কিছুই জানে। সে মডার্ন আর্কিটেকচার দেখে বলতে পারে এটা কোন ধরনের মন্দির এবং সেখানে প্রবেশের জন্য যে পাসওয়ার্ড দরকার তাও নিমিষে বের করে ফেলে! রুমী গন্ধ ধুঁকেই অজ্ঞান-কারী গ্যাসের নাম জেনে ফেলে, বিশেষ ধরনের বাক্স দেখে এক ব্যান্ডদলের নামের উৎপত্তির কথা মনে পড়ে এবং তা থেকে ডাঃ রুশদীর প্রতিহিংসার কারণ জেনে ফেলে। অথচ নৃতাত্ত্বিক হিশেবে মারুফ এখানে লিড নিতে পারত। সম্ভবত প্রথম পুরুষে বর্ণিত হবার কারণেই মারুফ চরিত্রটিকে লেখকে বেশিরভাগ সময় সম্যক পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞ রাখতে হয়েছে। যে কারণে রুমী ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’ উপন্যাসের নায়ক চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা মারুফ হলেও হতে পারত। আমি মতে, চরিত্র নির্মাণে আরেকটু সময় নিতে পারতেন লেখক। কারণ থ্রিলার উপন্যাসের চরিত্রের ছোটখাটো দিকও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে থ্রিলার লেখার প্রচেষ্টা চালালেও লেখক তাঁর প্লটে আন্তর্জাতিক প্রভাবের বিষয়টি মিশিয়ে দিয়েছেন। এটি থ্রিলার উপন্যাস রচনার একটি কৌশল- অনেকখানি আঞ্চলিকতার সাথে একটুখানি আন্তর্জাতিকতা এবং প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচানোর আকুতি। থ্রিলারের প্লট দেখে আন্দাজ করা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেখকের আগ্রহ এবং পড়াশুনা। লেখক মেডিকেলে পড়েছেন বলেই হয়ত গল্পে মানসিক রোগ, শারীরবিদ্যা, এনথ্রোপলোজি ইত্যাদি বিষয় অনায়াসে ঢুকে পড়েছে। ভিলেন চরিত্রেও রেখেছেন একজন ডাক্তারকে। আবার লেখক মাশুদুল হক একই সাথে পত্রিকায় ফিচার লেখকের কাজও করেছেন। ধারণা করি, উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রুমী, তাঁর সেই কাজের অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে নির্মিত। “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” লেখকের প্রথম থ্রিলার। তাই তাঁর ওপর কোনো না কোনো লেখকের প্রভাব থাকবেই। আমার মনে হয়েছে, মাশুদুল হক থ্রিলার রচয়িতা ড্যান ব্রাউন দ্বারা বেশ খানিকটা প্রভাবিত। অন্যান্য লেখকের প্রভাবও থাকতে পারে, তবে তাঁর উপন্যাসে ব্রাউনের রচনা-কৌশল উপস্থিত। ব্রাউনের মতোই ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত, স্থাপত্য ইত্যাদি মিশিয়ে রহস্য নির্মাণের চেষ্টা করেছেন তিনি। গল্প বলার কৌশলেও ব্রাউনের ছাপ কিছুটা চোখে পড়েছে। যেমন- ড্যান ব্রাউন তাঁর ‘রবার্ট ল্যাংডন সিরিজে’ প্রায়ই গল্পের কোনো এক পরিস্থিতির সাথে খাপ খায় এমন মুহূর্ত-গুলোয় অতীতে ল্যাংডনের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের যোগান দেয়ার জন্য ছাত্রদের সাথে কথোপকথনের কৌশল ব্যবহার করেছেন। মাশুদুল হক “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট”এ এই কৌশলটি ব্যবহার করেছেন। তিনি এমনকি ব্রাউনের 'দ্য লস্ট সিম্বল' এ উল্লেখিত আত্মার ওজন পরীক্ষার মতো বিষয়ও নিয়ে এসেছেন আলোচ্য গ্রন্থে। নামকরণের চাতুর্য্য আমাকে আনন্দিত করেছেন। এই উপন্যাসটি পেশায় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট শওকতকে ঘিরে শুরু হলেও পরে বুঝা যায় যে সে ডাঃ রুশদীর পুতুল মাত্র, সুতোটা তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনিই সমস্ত কর্মের উৎস। সেদিক দিয়ে ভাবলে, বৃহত প্রেক্ষাপটে উপন্যাসের প্রকৃত ভেন্ট্রিলোকুইস্ট ডাঃ রুশদী। থ্রিলারের নামকরণ একেবারে যথার্থ হয়েছে। নানান সীমাবদ্ধতা এবং বিদেশী লেখকের সামান্য প্রভাব সত্ত্বেও “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” থ্রিলার হিশেবে উৎরে গেছে। লেখক বিভিন্ন টুইস্ট বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন গল্পে। সবচেয়ে বড়ো বিষয়- থ্রিলার উপন্যাসে যে টানটান ভাষার উপস্থিতি অপরিহার্য তা এই উপন্যাসে বেশ ভালোভাবেই আছে। মাশুদুল নবীন লেখক হিশেবে যেটুকু পেরেছেন তা আমাদের উপহার দিয়েছেন। ভবিষ্যতে তাঁর কাছ থেকে আরো জমাট এবং পরিপক্ব থ্রিলার আশা করাই যেতে পারে। ধারণা করি, তিনি নিরাশ করবেন না।