User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটার একটা গল্প পড়ে ভাল লাগল। তবে বানান ভুল আছে বেশ কিছু। জামা পড়ার বস্তু নয় সেটা লেখকের বোঝা উচিৎ। জামা পরতে হয়। বই পড়তে হয়। গাছ থেকে আম পড়তে পারে। আপনি সিঁড়ি থেকে পড়তে পারেন। তাই বলে জামা প্যান্ট এসব পড়বেন? আর সহিস বানান সহীস হবে কেন?
Was this review helpful to you?
or
বাংলা আধুনিক রূপকথা ভান্ডারে অন্যতম একটি রত্ন হিসেবে সংযোজিত হবে এই বইটি, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। যদিও রূপকথা মূলত শিশু সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হয়, একটি সার্থক শিশু সাহিত্য বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাইকেই মোহিত করতে সক্ষম। আমার মতে লেখক এই গল্পের মাধ্যমে তা করতে সমর্থ হয়েছেন। তবে যেসব শিশু ঠাকুরমার ঝুলি শুনে আর চাঁদ মামার জাদুতে ঘুম্পাড়ানি মাসী পিসির কোলে ঘুমায়নি, তারা মনে হয়না খুব বেশি উৎসাহিত হবে। তবে এসব বঞ্চিত শিশুদের জন্যই দরকার বেশি বেশি রূপকথার উপন্যাস লেখা। অভিযানটা যত না বেশি বিলু, কালু আর গিলুর, তার থেকে বেশি গুরুতের। গুরুতের গুরুত্ব আমরা গল্পের শেষেই বুঝতে পারি। তার দরকার নেই রাজত্ব বা রাজকন্যা, সে ছুটে চলে অভিযানের নেশায়, নতুন কিছু আবিষ্কারের মোহে। ক্ষমতা মানুষকে যে ছোটলোকে পরিণত করে তা আমরা জানতে পারি সূচ্রাজার সরল স্বীকারোক্তিতে। রূপকথার গল্প মানুষ শিক্ষার্জনের থেকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখতে বেশি পছন্দ করে। তবুও যদি কিছু নীতি শিক্ষা বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে দেয়া যায়, সেটা দোষের কিছু নয়। লেখকের কাছ থেকে এমন আরো কিছু শিশু সাহিত্য আশা করছি।
Was this review helpful to you?
or
কিছু কিছু গল্প থাকে যেগুলো ভাবায়, এই গল্পটি সেরকমই একটি গল্প। অনেক কথা আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা আমরা কখনো ভাবতে যাই না, রূপকথার গল্পে শুনে শুনে হজম করে নিই, সেইসব বিষয় লেখক মাশুদুল হক খুব সুন্দরভাবে ভেবেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন গল্পের মধ্যে। তার সাথে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বইয়ের ভিতর থাকা সুদৃশ্য চিত্রকর্মগুলো। দুর্দান্ত মজার এই রূপকথার অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয় একটি রাজপ্রাসাদ দিয়ে। সেখান থেকে পলাতক হয় এক গল্প বলিয়ে জল্লাদ যে নিজেই নিজের গর্দান নেবার হুকুম পেয়েছে রাজার থেকে; বলাই বাহুল্য না পালিয়েও তার উপায় ছিল না কোনও! কিন্তু গল্প না শুনে তো থাকতে পারবে না রাজপুত্র আর তার বন্ধু সহিসপুত্র, তাই সামান্যভীতু হলেও তারা দুজনেই রাজপ্রাসাদের একমাত্র পালাতে না পারা বন্দীকে হুমকির মুখে পড়ে মুক্তি দেয় এবং যাত্রা শুরু করে জল্লাদকে খুঁজে বের করার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বুঝতে পারে অভিজাত্রার সুতো আর তাদের হাতে নেই! সেই আসামীর নির্দেশনায় ভাগ্যের টানে তারা এগিয়ে যেতে থাকে এক একটি অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে, এবং অবশেষে এসে গল্পের সমাপ্তিতে পতিত হয়। গল্পটি পুরোমাত্রার রূপকথা তাতে কোনও সন্দেহ নেই, রূপকথা সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান প্রশ্নাতীত এবং ভাবনার মাধ্যমে তিনি সবটুকু মেধাই কাজে লাগিয়েছেন একটি সামগ্রিক ছবি দেখানোর জন্য। সেখানে মাঝে মধ্যে আমি সশব্দে হেসে উঠেছি, মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে ভেবেছি এটা কিভাবে হল, কখনো কখনো চিন্তায় কপাল কুঁচকেছি এর পড়ে কি হবে ভেবে! বিলু, কালু এবং গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান একটি পুরো মাত্রার চমকপ্রদ, অনুমানাতিত প্লটের রূপকথার গল্প, যেটা রূপকথার ভেতরে থেকেই মজাদার সব আনন্দের মধ্যে দিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। এবং শেষ পর্যন্ত গল্পের প্রতিটি প্রধান চরিত্র প্রমাণ করে দেয় যে তারা কাহিনীর প্রগতিতে নিজের ভূমিকা সঠিক ভাবে রাখছে, সেটা আসামী গুরুত-ই হোক কিংবা কালু, বিলু অথবা দাঁত ভাঙ্গা দু'বছর বয়সী হাঁতি গিলু! লেখককে এরকম সুন্দর একটু গল্প উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ। রূপকথার প্রতি আমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসা এই গল্পের মধ্যে দিয়ে একটি নতুন মাত্রা পেল।পাঠক আপনারাও পড়েন আপনাদের কাছে ভাল লাগবে বইটি আশাকরি।
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় বললে অসাধারণ !!! আমাদের দেশে বাচ্চাদের জন্যে যে বই রচিত হয় না তা না, কিন্তু সেগুলো এতটাই শিশু সুলভ তারা বাচ্চাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না । লেখক যে 'বাচ্চাদের জন্যে লিখতে হবে'- এই দায়বদ্ধতা থেকে বইটা লিখেননি তা একদম বই এর শুরু থেকেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে । খুবই চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত প্লট। এক একটা লাইন পড়েছি আর নিজের অজান্তেই হাসতে শুরু করেছি । বই এর কাহিনী শুরু হয় একটা রাজ্যের রাজপুত্র বিলুর রাজপ্রাসাদে । তাঁর বন্ধু কালু আর কালুর দুই বছরের হাতী কে নিয়ে সে অ্যাডভেঞ্চারে বের হয় রাজ্যের জল্লাদপকে খুজতে যে কিনা নিজেই নিজের গর্দান নেবার হুকুম পেয়েছে রাজার কাছ থেকে । ঘটনা ক্রমে তাদের সঙ্গী হয় বীর গুরুত- যার কিনা প্রতি পদে পদেই অ্যাডভেঞ্চার । এভাবেই তারা আগাতে থাকে এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায় প্রবেশের মাধ্যমে । বইটা যে একেবারে ছোট বাচ্চাদের জন্যে তা মোটেও নয় কিন্তু!! এটা পড়ে ভালো লাগবে না, আমার ধারণা এমন পাঠক পাওয়া যাবে না । সব বয়সী পাঠকদের আগ্রহই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে ! আর চরিত্র গুলো এত জীবন্ত আর সাবলীল যে না ভালো লেগে পার পাওয়া যাবে না, সে রাজার ছেলে বিলু, সহিসপুত্র কালু আর দুবছর বয়সী দাঁতছাড়া(কিউট) হাতি গিলু(যে কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে হাঁটা দেওয়া শুরু করে) -ই হোক না কেন। কোন অতিরিক্ত চরিত্র নেই, সবার ই যে সমান গুরুত্ব আছে তা বই শেষে বোঝা যাবে। বইটা ভালো লাগার আরো একটা কারণ আমরা ছোট বেলা থেকে যে সকল রূপকথা শুনে বড় হয়েছি সেগুলো নিয়ে মাশুদুল হক খুব সুন্দর ভাবে ভেবেছেন এবং এগুলোর যথার্থ ব্যাবহারও করেছেন । কিছু যায়গায় এত্ত সুন্দর ভাবে মিলে গিয়েছে যে ভাবতে বাধ্য হয়েছি যে- "আচ্ছা এটা তাহলে এখান থেকে এসেছে" । রূপকথার প্রতি আমার ভালো লাগাটা ছোট বেলা থেকেই । কিন্তু এত দিন পরে আমাদের সময়ের একজন লেখকের এত সুন্দর রূপকথার বই পড়ে অন্যরকম ভালো লাগলো। আর বই এর অলঙ্করনের জন্যে ব্যবহৃত ছবি গুলোও এত সুন্দর যে ওগুলোর দিকেই অনেক সময় তাকিয়ে থেকেছি । সব মিলিয়ে একটা কথা বলতেই হবে এত সুন্দর ভাবে লেখা, সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ একটা বাঙলা বই অনেক দিন পড়ে পড়লাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা বই উপহার দেয়ার জন্যে। আশা করি সামনে তাঁর কাছ থেকে আরো সুন্দর সুন্দর বই পাবো ।
Was this review helpful to you?
or
বিলু, কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান, বইটা কি ধরনের বলা একটু মুশকিল, এটাকে পুরোপুরি বাচ্চাদের রূপকথা বলা যায় না, কারন এত ঘোরালো প্যাচালো এর প্লট যে মাথা খাটাতে হয়, আবার যে গল্পে পক্ষীরাজ আছে, আছে সূচরাজা, আছে মায়াবনের মত অদ্ভূত জায়গা তাকে আবার শিশুতোষ না বলে উপায় কি। সব মিলিয়ে বলা চলে গল্পটা একটা মস্ত রূপকথাই, রূপকথা চরিত্রদের নিয়ে, তবে গল্পের প্লট একেবারে সব বয়সের উপযোগী, বইয়ের গায়ে তাই লেখা জুভেনাইল অ্যাডভেঞ্চার বই। তাই এ বইয়ের রিভিউ লেখাটা দারুন মুশকিল। তারচেয়ে ভাল যদি কেউ প্রথম চ্যাপ্টারটা পড়ে দেখে। প্রথম চ্যাপ্টার পড়ে যদি ভালে লাগে, তাহলে বলা চলে বাকী আরো বারোটা চ্যাপ্টারও আপনার ভাল লাগবেই। তাই অত ভণিতা না করে আমি প্রথম চ্যাপ্টার তুলে দিই, আপনিই না বিচার করবেন বইটা আপনার দাঁতে কাটবে কিনা: ।। প্রথম অধ্যায়: রাজকুমার বিলু ।। রাজার ছেলে বিলু, বসেছিল প্রাসাদের দাওয়ায়। তাই দেখে রাজা রেগে মেগে দিলেন হুঙ্কার। পাইক পেয়াদা, বরকন্দাজ কে আছিস? বাঁদরটাকে ধরে নিয়ে আয়! তাই শুনে, পাইক পেয়াদার লাঠি সোঠা, তীর ধনুক,বর্শা আর হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে ছুটলো। রাজপ্রাসাদে বাঁদর, দেখো দেখি! কিন্তু কোথায় বাঁদরটাকে দেখতে না পেয়ে শেষমেষ একদল বনের দিকে রওনা দিল বাঁদর ধরতে, আর একদল গেল চিড়িয়াখানার কর্তাকে ধরে আনতে। রাজা কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের মস্ত গোফটা টানতে টানতে এসব কান্ড দেখছিলেন। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে নিজেই এসে রাজপুত্রকে কানে ধরে তুললেন। এই হচ্ছে না! রাজার ছেলে হয়ে পা বিছিয়ে বসা হচ্ছে মাটিতে, কত বড় সাহস দেখেছো তুমি মন্ত্রী? রাজ্য মন্ত্রী রাজার সাথেই ছিলেন। তিনিও এতক্ষনে ব্যাপারটা ঠাহর করতে পারলেন। বিচ্ছিরি আর বেজায় সাহস! তিনি গলা মেলালেন। মাটিতে যদি বসবে তবে কাবলুষ পাহাড়ের তুলো আর শঙ্খপুরের রেশমে তৈরি গদিগুলো দিয়ে হবেটা কি শুনি, মিউজিক পিলো খেলবো? রাজার রাগ পড়ে না। মাটিতে বসতে আমার ভাল লাগে! রাজকুমার জবাব দেয়, মাটির দিকে তাকিয়ে। ওই রেশমের গদিতে বসতে আমার ভাল লাগে না। শুনে রাজা আর মন্ত্রী দুজনারই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের মুখ থেকে যেন কথা সরে না। তাছাড়া...বিনু বলে চলে, এই ভারী জামাটাও আমার পড়তে ভাল লাগে না। কালুর মত জামা চাই আমার, মোটেও ভারী না। কালুটা কে মন্ত্রী? সহীসের ছেলে হুজুর, খুব সাহসী ছেলে। সহীসের ছেলে তো সাহসীই হবে, রাজা বিরক্ত হন, কিন্তু ওর জামাটা কি? ছোটলোকের জামা আর কী হবে হুজুর, সুতির পিরান। কারুকার্যের বালাই নেই। তাই কিনা পড়তে চাইছে, তুমি সাহসটা দেখেছো মন্ত্রী, রাজার ছেলে কিনা পড়তে চায় সুতির পিরান? বেজায় আর বিচ্ছিরি সাহস! মন্ত্রী যোগ করে। তা তোমার আর কী কী করতে ইচ্ছে করে না, রাজা রাজপুত্রকে প্রশ্ন করে। অনেক কিছুই, রাজপ্রাসাদে বসে থাকতে ভাল লাগে না, কালুর মত ইশকুলে গেলে মজা হত খুব, আর আর..রাজপুত্র ইতস্তত করে, সকালবেলা উঠে যুদ্ধবিদ্যা শিখতে ভাল লাগে না। কালুর মত ছড়ার বই পড়লে মজা হত খুব। আর আর.. গল্প শুনতে ভাল লাগে, আর আর.. রাজা আর সহ্য করতে পারেন না। মন্ত্রী ওকে থামাও! শুনতে পেলে ওইটুকুন গলা দিয়ে কি বেরুলো? আজ বলছে ছড়ার বই পড়বে, কাল বলবে পড়ালেখা করবে, আর তারপরের দিন রাজকোষ প্রজাদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। আমি এবার সর্বসান্ত হলাম, একে বারে পথে বসালো আমায় ! রাজা হায় হায় করতে থাকেন। বাবা, পথে তো তুমি বসছো না। আমি বসছি, পথে বসতে আমার ভালো লাগে খুব। রাজপুত্র রাজাকে অভয় দেয়। সেই অভয়ে কাজ হয় না। রাজার আহাজারি থামে না। সবে মাত্র দশ বছর বয়স, এখনই এই দশা! এগারোতে উঠে সবাইকে গেরো দেবে, আর বারোতে আমার বারোটা বাজাবে! রাজা বলে যান। আর বিশে উঠে সবাইকে বিষ খাওয়াবে! মন্ত্রী যোগ করে,সেও তক্কে তক্কে ছিল রাজার মত মিলিয়ে বলতে। কী করা যায় একে বলোতো? রাজা মন্ত্রীর দিকে চিন্তিত মুখে তাকান। কেটে কুটে জলে ভাসিয়ে দেন! আর সেই সুযোগে আমি গত হবার পর তুমি রাজা হও আর কী, সে মতলবেই তো আছো চর মারফত যদ্দুর জানি। ওসব বাদ দাও। অন্যকিছু ভাব। এটাকেই তো রাজা বানাতে হবে। মন্ত্রী অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন ভারী, তাহলে আর কী, বেকসুর খালাস দেন। তার গলায় অভিমানের সুর। হুম, সেটা খারাপ বলোনি। তবে তার আগে তো কারাদন্ড প্রয়োজন। পেয়াদা! রাজা এক পেয়াদাকে ডাকলেন। এটাকে ধরে নিয়ে যাও। দুঘন্টার কারাদন্ড। পেয়াদার সাথে রাজপুত্র লাফাতে লাফাতে চলে গেল। তাই দেখে মন্ত্রী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। গুরু পাপে দন্ড বড় লঘু হয়ে গেল, তিনি বিড়বিড় করলেন। **** দুঘন্টা পর রাজার কাছে খবর আসলো, কারাদন্ডের সময় শেষ হওয়া সত্বেও রাজপুত্র কারাগার ছাড়তে রাজী নয়। পেয়াদাদের সে জানিয়েছে আজ সারাদিন সে ওখানে থাকতে চায়। রাজা ভেবে পেলেন না কি করা উচিত। মন্ত্রী বললেন, ঘাড় ধরে নিয়ে আসো! বিচ্ছিরি আর বেজায় সাহস। পেয়াদা মুখ কাচুমাচু করে বলল, মাফ করবেন মন্ত্রীমশাই, কনকপুরের সংবিধান অনুযায়ী রাজপুত্রের ঘাড় ধরে নিয়ে আসার অধিকার আমাদের নেই। তবে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসো, মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলল। বলো এক পঙ্খীরাজ ঘোড়া প্রাসাদে এসে ঝিমাচ্ছে! মাফ করবেন মন্ত্রীমশাই, কনকপুরের সংবিধান অনুযায়ী রাজপুত্রকে মিথ্যা কোন তথ্য দেয়ার অধিকার আমাদের নেই। পঙ্খীরাজ ঘোড়া বলতে আমাদের জানামতে কিছু নেই। তবে..তবে..মন্ত্রী রেগেমেগে তোতলাতে থাকেন। কিছু একটা করো, ওই বিচ্ছিরি সংবিধানের দোহাই, হাতে পায়ে ধরে, কান্নাকাটি করে নিয়ে আসো। মাফ করবেন মন্ত্রীমশাই, কনকপুরের সংবিধান অনুযায়ী... পেয়াদা আবার বলতে থাকে। কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখা যায়, রাজপুত্র আরেক পেয়াদার সাথে লাফাতে লাফাতে রাজপ্রাসাদে ঢুকছে। বাবা,বাবা-এসেই রাজপুত্রের গালভরা ডাক। আজকে প্রথম পর্ব শুনলাম। কালকে আবার আমাকে কারাগারে পাঠিও, দ্বিতীয় পর্ব বলবে। রাজা যেন থই পান না। কীসের পর্ব পেয়াদা? জ্বী হুজুর, এটা সোলেমান ভাই’র গল্প। আমরা আগেই শুনছি। আজকে রাজকুমারের জন্য সোলেমান ভাই নতুন করে শুরু করছে। সোলেমানটা কে? রাজা আর সইতে পারেন না, হাইমাউ করে উঠেন। কারাগারের জল্লাদ হুজুর। কারাগারের জল্লাদ তোমাদের গল্প শুনিয়ে বেড়ায়। জ্বী হুজুর। প্রতি রাতেই সে কারাগারের সব কয়েদী আর পাইক-পেয়াদা নিয়ে গল্পের আসর জমায়। তার গল্প শুনলে খালি হাসি পায়। অ্যা, এ কী বলছে শুনছো মন্ত্রী। রাজা যেন নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না। রাজ কারাগারের সবাই ফুর্তি করে দিন কাটাচ্ছে। জল্লাদ কিনা কয়েদীদের গল্প শুনিয়ে বেড়াচ্ছে। জ্বী হুজুর, পেয়াদা আবার বলে। সেদিন লোকনাথ চোরের খালাস ছিল। কিন্তু সে সেইদিন কিছুতেই যাবে না। কারন সোলেমানের আট পর্বের ধারাবাহিক গল্পের সেদিন ছিল ছয় নম্বরটা। আরো দুইদিন থাকার জন্য সে খুব কান্নাকাটি করলো, আমরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি। বেশ করেছো। রাজা মনে হল সন্তুষ্ট হলেন। পরক্ষণেই আবার তাকে চিন্তিত মনে হল। কী করা যায় বলোতো মন্ত্রী। কেটে কুটে জলে ভাসিয়ে দিন! কাকে? রাজপুত্রকে আবার? না হুজুর, বলছিলাম জল্লাদের গর্দান নিয়ে জলে ভাসিয়ে দেন। হুম,ঠিক বলেছো। জল্লাদের গর্দান নাও, এক্ষুনি! কত সাহস দেখো দেখি। বেজায় আর বিচ্ছিরি সাহস। মন্ত্রী যোগ করে। হুজুর একটা সমস্যা। পেয়াদা আবার গলা তোলে। কী? গর্দান নেয়ার মত সোলেমান ছাড়া আর কেউ নেই কারাগারে, জল্লাদ আমাদের একজনাই। ও নিজেই নিজের গর্দান নেবে! রাজা হুঙ্কার ছাড়ে। কিন্তু মাফ করবেন রাজামশাই, কনকপুরের সংবিধান অনুযায়ী... এরও গর্দান নাও। রাজা লাফিয়ে উঠলেন, কত বড় সাহস দেখেছো মন্ত্রী, আমাকে সংবিধান শেখায়। হুম,বিচ্ছিরি আর বেজায় সাহস। মন্ত্রীও মুখ ভার করে বলে। বাবা! এতক্ষণে রাজপুত্রের কলকলে গলা শোনা যায়। সোলেমান চাচাকে দুদিন পরে মারো। মাত্র তিন পর্বের গল্প। তুমিও আমার সাথে শুনবে। ভারী মজার গল্প। না না, ওসব হবে না, পরে ওই তিন পর্বকে একহাজার পর্ব বানাক আরকী, কী ভেবেছো, আরব্য রজনীর গল্প আমার জানা নেই। গল্পের লোভে পড়ে ওর গর্দান নেয়া থেমে থাকুক আর কী! নাহ, আমি কোন গল্প শুনতে চাই না। আজকে রাতেই ওর গর্দান নেবে,ও নিজেই নেবে। রাজামশাই, পেয়াদা আবার বলে উঠে মুখ কাচুমাচু করে, কনকপুরের সংবিধান অনুযায়ী গর্দান শুধুমাত্র সকালেই নেয়া যায়। ঠিকাছে, কাল সকালেই হবে। মন্ত্রী! জ্বী রাজামশাই। আমি আর কিচ্ছু শুনবো না, না কোন সংবিধান, না কোন ধারাবাহিক গল্প। কালকেই যেন এদের গর্দান নেয়া হয়। প্রথমে নেবে এই সংবিধানওয়ালার গলা, তারপরে সোলেমানের। কত বড় সাহস দেখো দেখি। হুম,বিচ্ছিরি আর বেজায় সাহস! মন্ত্রী যোগ করে। ....