User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অতীত, অতীত নয়—হাসান শাহরিয়ার উৎস প্রকাশন \ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ দাম: ৬৫০ টাকা হাসান শাহরিয়ার যখন ইত্তেফাক-এ সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগে, তখন তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র। ইত্তেফাক তখন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায় এক প্রভাবশালী দৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মানিক মিয়া শুধু সম্পাদকই ছিলেন না, ছিলেন সাংবাদিক তৈরির এক কারিগরও। তাঁর কাছে হাতে-কলমে তালিম নিয়ে অনেক সাংবাদিক পরবর্তীকালে নাম-যশ কুড়িয়েছেন। হাসান শাহরিয়ার তাঁদেরই একজন। দীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি ওই পত্রিকায় কাজ করেছেন এবং মানিক মিয়ার স্কুলের গুণাবলি নিজের মধ্যে বিকশিত হতে দিয়েছেন। এই গুণাবলির একটি ছিল সংবাদকর্মীর অদৃশ্যমানতা—অর্থাৎ, তাঁকে পড়া যাবে, শোনা যাবে, দেখা যাবে না; অন্যটি ছিল সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা। তৃতীয় একটি ছিল সত্যসন্ধি দৃষ্টি। দীর্ঘদিন ইত্তেফাক-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান শাহরিয়ার। এই উপমহাদেশের অনেকগুলো কাগজের সংবাদদাতা অথবা প্রতিনিধি এবং খালিজ টাইমস ও নিউজ উইক-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন, কিন্তু কোনো দিন কোনো কাগজে তাঁর ছবি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তাঁর কাজে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান এবং সংবাদের সত্যের প্রতি অবিচল। এ জন্য পাঠক সেই সংবাদকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। হাসান শাহরিয়ার সংবাদ বিশ্লেষণ করে প্রবন্ধও লিখেছেন এবং সাংবাদিকতার ভাষায়, অপ-এড কলাম লিখেছেন প্রচুর। কলাম লেখায় তাঁর একটি স্বাধীনতা ছিল: তিনি নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সংবাদ ও সংবাদের ইতিহাসটাকে ব্যাখ্যা করতে পারতেন, একটা ঘটনাকে আরেকটা ঘটনার সঙ্গে মেলাতে পারতেন এবং ভালো-মন্দের একটা হিসাব কষতে পারতেন। তাঁর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে উপস্থাপনার জন্য তিনি যে ভাষাটি বেছে নিলেন, সেটি যেন অকারণে জটিল ও তথ্য-তত্ত্বে আকীর্ণ না হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখলেন। ফলে তাঁর কলামগুলো আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়াল। হাসান শাহরিয়ারের ক্ষেত্রে মানিক মিয়ার তত্ত্বাবধানের সঙ্গে যোগ হয়েছিল তাঁর বাবা মকবুল হোসেন চৌধুরীর সাংবাদিকতার ঐতিহ্য। ফলে নিজের ভূমি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর রয়েছে এক অবিচল আনুগত্য। মকবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন আসাম ও সিলেটের যশস্বী সম্পাদক ও ভাষাসৈনিক। বাংলা বাঙালিয়ানা যেখানেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে, সেখানেই হাসান শাহরিয়ারের শাণিত কলম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে। হাসান শাহরিয়ার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক—সংবাদের এ দুই পরিমণ্ডলে বিচরণ করেছেন। রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের খুব কাছে থেকে দেখেছেন, রাজনীতির ভাষায় যাঁদের বলা হয় ‘মোভার্স অ্যান্ড শেইকার্স’, অর্থাৎ যাঁরা রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদিকে নাড়ায়-ঝাঁকায়, তাঁদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন, ঘটনা-নায়কদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এসব থেকে তিনি যে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছেন, তা তাঁর কলামগুলোয় প্রতিফলিত। দেশের নানা সংকটকালে তিনি সেসব সংকটের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন এবং যেখানে সম্ভব সমাধান দিয়েছেন। সিলেট ও অবিভক্ত আসাম নিয়ে তাঁর একটু পিছুটান আছে। ফলে তাঁর অনেক কলামে আসাম ও সিলেটের রাজনীতি ও ব্যক্তিত্বরা এবং তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতি গুরুত্ব পেয়েছে। ৫০ বছর ধরে যিনি সাংবাদিকতা করেছেন, অনেক সাংবাদিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন, দুবার কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু এই প্রথম তাঁর একটি বই বের হলো! বইটি তাঁর গত এক-দেড় দশকে বিভিন্ন কাগজে ছাপা বাছাই কিছু কলামের একটি সংকলন। তিনি যে নিজের জায়গায় থেকে কাজ করতে চান, সর্বক্ষণ দৃশ্যমান থাকতে চান না, এটি তার প্রমাণ। বইটি এই সময়ের নানা সংকট-সম্ভাবনা, ঘাত-প্রতিঘাত ও সাফল্য-ব্যর্থতার একটি খতিয়ান। এটিকে তিনি বর্ণনা করেছেন ‘বিকেলে ভোরের ফুল হিসেবে’। কিন্তু ফুলগুলো বাসি নয় মোটেও, টাটকাই বলা যায়। এ রকম আরও ফুলের জন্য যে হাসান শাহরিয়ারের পাঠকেরা অপেক্ষা করবেন, সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।