User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত সেলিনা হোসেনের কাঁটাতারে প্রজাপতি। বর্গাচাষীদের উপর জোতদারের শোষণের করুণ চিত্রের পাশাপাশি শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বিদ্রোহের আগুন ঝলসে উঠেছে উপন্যাসটির পাতায় পাতায়। সেইসাথে রেশম চাষীদের জীবনযাত্রাও কিছুটা স্থান দখন করে নিয়েছে এখানে। ভোলাহাটের বিখ্যাত রেশম ব্যবসায়ী ইয়াসিন বসনির ছেলে আজমলকে দিয়েই এ উপন্যাসের সূচনা ও সমাপ্তি। অন্যান্য চরিত্রের তুলনায় তার ভূমিকা নিতান্ত নগন্য হলেও তার অন্তর্দন্দ্ব ও মানসিক টানাপোড়েন ছিল পুরো উপন্যাস জুড়ে। আজমল বড় বেশি সাধারন, নিরীহ। সে না পারে আজিজের মত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে, আবার না পারে অন্যায় মেনে নিতে। এক কঠিন যাতনায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হতে থাকে আজমল। আছিয়ার সাথে ইয়াসিন বসনির অনৈতিক সম্পর্ক, জোহরা ও কুতুবের ভালবাসার করুণ পরিনতি, জোহরার আত্মাহুতি, কুতুবের মস্তিস্কবিকৃতি পিতার প্রতি বিষিয়ে তোলে তার মন। প্রচন্ড আক্রোশে ফুসে উঠতে চায় সে পিতার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে, কিন্তু পারেনা। তখন গ্লানিতে ভেতরটা ছেয়ে যায়, আজিজের সাথে তার ব্যবধানটা বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠে। আজিজ নির্ভীক, সাহসী যুবক। শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস রাখে, মিলেমিশে একাত্ম হয়ে যেতে পারে নিগৃহীত সাওতালদের সাথে, আর পারে গভীরভাবে ভাবতে; তার সেই ভাবনা পরিপক্কতা পায় রমেন মিত্রের সংস্পর্শে এসে। রমেন মিত্রের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলনে বর্গাচাষীদের পক্ষে লড়াইয়ে নামে জোতদার পিতার ছেলে আজিজ। রমেন মিত্র আর ইলা মিত্র। শুধু দাম্পত্য জীবনে না, কর্মজীবনেও একই পথের পথিক তারা। জমিদার পরিবারের হয়েও তারা আন্দোলন করে শোষনের বিরুদ্ধে, গরীব চাষীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবীতে সোচ্চার হয় তাদের কন্ঠ। বর্গাচাষীদের চোখে ইলা মিত্র হয়ে উঠে তাদের রানীমা। আর রানীমাও তার নিজের মাতৃত্বের সাধ-আহলাদ, অধিকার অকাতরে বিসর্জন দেয় তার আর্ত সন্তানদের ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। তাদের জন্য চরম নিগ্রহও নির্বিবাদে মেনে নিতে পারে গরীব চাষীদের এই রানীমা। এরা ছাড়াও এ উপন্যাসে আছে কুতুব-জোহরার ভালবাসার জলাঞ্জলি; আছে আছিয়ার পলু পোকার মত জীবন, যার গলার চারদিক বেষ্টন করে আছে মুগা সুতার ফাঁস, আর আছে তেভাগা আন্দোলনে মাতলা, হরেকের একনিষ্ঠ অবদান। ব্যক্তিগত মতামতঃ এ উপন্যাসে প্রখ্যাত কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন তার লেখনশৈলীর সাহায্যে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন অত্যন্ত সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। বইটি পড়ার সময় নিজেকে খুঁজে পেয়েছি ১৯৪৫-৫০ সালে; কখনো নাচোলের বাসিন্দা হিসাবে, কখনোবা পীড়িতের রানীমা হিসেবে। কুতুবের কয়েদ চাচায় পরিনত হওয়াটা মেনে নিতে আজমলের মত আমারও কষ্ট হয়েছে। আর সঙ্গত কারণেই আজমলের চেয়ে আজিজ, রমেন মিত্র, হরেক, মাতলা ছিল আমার প্রিয় চরিত্র; তবে সবাইকে ছাপিয়ে ইলা মিত্র আলাদা একটা জায়গা দখল করে নিয়েছে আমার মনে।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এ পর্যন্ত যে সকল শক্তিমান নারী সাহিত্যিকদের আবির্ভাব হয়েছে, সেলিনা হসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার প্রতিটি উপন্যাস, প্রতিটি সাহিত্যকর্ম একেকটি স্বচ্ছ আয়নার মত। যে আয়নায় এদেশের সমাজ ব্যবস্থা, অতীত ইতিহাস, সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছে। ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ সেলিনা হুসেনের এমনই একটি উপন্যাস। উপন্যাসের শুরু হয় আজমল নামের এক যুবকের সাধারন জীবনের সাধারন একটি দিনের কাহিনী দিয়ে। আজমলের বন্ধু আজিজ, আজিজ রাজনীতি করে, রমেন মিত্রের সঙ্গে মিলে আজিজ সাঁওতালদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে। আজিজ কে দেখে আজমলের বুকের কোণে কোথায় যেন চিনচিন করে ব্যথা হয়। আজিজ অনেক কিছু পারে, সাঁওতালদের সাথে কিভাবে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে আজিজ, বাবার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজিজ কি করে দিনের পর দিন সাঁওতালদের সাথে বটতলায় ঘুমায় এসব ভেবে আজমলের দুঃখবোধ হয়। সে কেন আজিজের মত হতে পারে না! আর ইলা বৌদি! ইলা মিত্র, স্কুল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সমস্ত খেলাধূলায় প্রথম, অসাধারণ তেজোদীপ্ত কন্ঠস্বর, কলকাতায় পড়াশুনার সময় সক্রিয় রাজনীতি করা, গ্রামে এসে রমেনদার সঙ্গে মিলে দিনরাত সাঁওতাল আর কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাওয়া ইলা বৌদিকে দেখে আজমল অবাক হয়। কোন মেয়েও এত কিছু করতে পারে তা আজমলের কল্পনার বাইরে! আবার বৃদ্ধ ছমীর আলীকে দেখেও আজমলের হিংসা হয়, এই পঁচাত্তর বয়সে এসেও কোন মানুষ এতো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, নিজের ছেলের ঘৃনা সহ্য করেও কেউ এত সুখী আর ভাবনা চিন্তাহীন থাকতে পারে এসবও আজমলের কাছে বিস্ময়! আজমল এর কিছুই পারেনা। আজমলের জীবন ছকে বাঁধা। পিতার রেশম ব্যবসার দেখভাল, মৃত মায়ের স্মৃতি, ঘরে দুই সৎ মা, বিধবা আছিয়ার সাথে বাবার অবৈধ সম্পর্ক, মামাদের তাড়া, বাবার চারিত্রিক অধঃপতন, নিজের হীনমন্ন্যতা আজমলকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে আজমলের নিজেকে উদ্বাস্তু মনে হয়, অথচ ক্রোশ দূরে নাচোলে গেলে আজমল যেন প্রাণ ফিরে পায়। আজিজ, ইলা বৌদি, রমেনদা, ছমীর আলী, আশেক, হরেক, শুক্র মাডাং এদের কথা শুনলে, এদের গায়ে টগবগ করে ফুটতে থাকা রক্ত কিংবা চোখে মুখে তেজের দীপ্তি দেখে আজমলের খুব ভয় হয় আবার মনের ভিতর কেমন জানি একটা উথাল পাতালও হয়। আজমল কি পারবে এই ছকে বাঁধা জীবনের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে এসে মুক্তির আন্দোলনে যোগ দিতে? ইলা, রমেন কিংবা আজিজ কি পারবে তাদের লক্ষ্যে পৌছুতে? মুক্তির জন্য কিসের মূল্য দিতে হবে সবাইকে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে এই বইতে। আজমলের অন্তর্দ্বন্দের সাথে সাথে গল্পের ছলে লেখিকা একটি উত্তাল সময়ের গল্প খুব সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসে। নাচোলের তেভাগা আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, কৃষক আন্দোলন, বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দা, ক্লাইভ মিশন, ইংরেজ আমলে বর্গাচাষীদের চরম দুঃখ দুর্দশার করুণ চিত্র, ভারত ছাড় আন্দোলন ইত্যাদি অনেক ঐতিহাসিক বিষয়ের শাণিত চিত্র বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। যারা ইতিহাসআশ্রয়ী উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
Was this review helpful to you?
or
আজিজ আর আজমল নামক দুইটি চরিত্র কে কেন্দ্র করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নাচলের তেভাগা আন্দোলন।উপন্যাসের মূল চরিত্র হয়ে উঠেছে ইলা মিত্র,আজিজ আর আজমলের পটভূমিকায়।উপন্যাসের শুরুতেই কলকাতার শিক্ষিত মেয়ে ইলা যে কিনা পরপর তিন বার এয়াথলেটিক্সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন,তিনি বৌ হয়ে এসেছেন জমিদার বাড়িতে।মূলত ইলা মিত্রের সাহস,আত্মত্যাগ আর মানুষের প্রতি ভালবাসা বর্ণিত হয়েছে এখানে।দেখানো হয়েছে কিভাবে গড়ে উঠেছে শ্রেণী বৈষম্য মুক্ত সমাজের স্বপ্ন।সাধারণ ভুমিহীন কৃষক দের মনে ইলা ও তার স্বামী জাগিয়ে তুলেছেন সম অধিকার পাবার স্বপ্ন,একটু ভালভাবে বেচে থাকার স্বপ্ন।কুসংস্কার আর শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ইলার কঠোর প্রচেষ্টা কৃষক দের অধিকার আদায়ের জন্য।সেই ইলা কেই দেখা যায় অন্য রূপে যখন সে ছেলে কে একটি বার দেখার জন্য হেটে যান মাইলের পর মাইল।আবার এই ইলা কেই যখন পুলিশ অকথ্য নির্যাতন করে,একটি নাম ও সে বলে না পুলিশ কে,উপরন্তু অত্যাচারের কথা নির্দিধায় তুলে ধরে জনসমুক্ষে। কাটাতারে প্রজাপতি উপন্যাসটি ইতিহাস কে তুলে ধরা হয়েছে গল্প বলার ভঙ্গি তে।এক কথায় দারুন।