User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কবি আলতাফ হোসেন গদ্যেও সমুজ্জ্বল। তাঁর সাম্প্রতিক গদ্যগ্রন্থ ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ও চামেলি এই সাক্ষ্যই দেবে। প্রথম আলোর ‘অন্য আলো’ বিভাগে একসময় ‘শহর ঢাকার কথকতা’ নামে যে মুক্ত গদ্যটি তিনি লিখতেন মূলত সেসব লেখালেখির সংকলন এ বই। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু লেখা। পাঁচটি শিরোনামে ভাগ করা হয়েছে বইটিকে—‘বই-নাটক-ছবি’, ‘গান’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘স্মরণ, কিঞ্চিত্’, ‘এ বিষয় সে বিষয়’। একেক শিরোনামের ভেতর আবার বহু উপশিরোনামে ছোট ছোট লেখা। পাঠাভিজ্ঞতা, দর্শন, স্মৃতি আর শ্রুতির সজীব প্রাণবন্ত সমাবেশ ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ও চামেলি। নাটক কিংবা বইয়ের তুলনায় অজস্র চলচ্চিত্রের কথা ঘুরে ঘুরে এসেছে এখানে। নানা দেশের, নানা ভাষার এত এত ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে আলতাফ হোসেনের! এ তথ্য জেনে যেমন ঈর্ষা জাগবে পাঠকের, তেমনি আলোচ্য লেখকের চলচ্চিত্র ভাবনা রীতিমতো প্ররোচিত করবে অনেক ছবি দেখার জন্য। ইয়ে লু পরিচালিত চীনা চলচ্চিত্র সুজৌ রিভার (সুচু একটি নদীর নাম) ছবিটি নিয়ে বিন্দু কথায় সিন্ধু তৈরি করেন লেখক—সুচু নদীটি সাংহাই শহরের মধ্য দিয়ে গেছে। নদীর নামে ছবি হলেই মনে হয় বহমান জীবনের কথা এতে থাকবে; বড় বাঁকগুলো, প্রেম তো নিশ্চয়। শুরুতেই মোহময় নারীকণ্ঠে এই সংলাপ: ‘তুমি কি আমাকে খুঁজে বেড়াবে যদি আমি হারিয়ে যাই?’ ‘রূপকথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নারীটিকে। অর্ধেক মানবী, অর্ধেক মেস্যর চিত্রকল্পে সমাজদেশে নারীর অবনমিত অবস্থাটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর ইনোসেন্স, নারীর সততা-সরলতা। প্রেম আর বিলয় যে অঙ্গাঙ্গি সম্পর্কের, তা-ও বলে দিতে চান নির্মাতা আরেকবার।’ (পৃষ্ঠা ৩৩)। গান, নাটক, ছবি, বই, মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতি ইত্যাদির প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে এ বইয়ে জড়ো হয়েছে জগত্ ও জীবনের অনেক অনেক গূঢ় ভাবনা। যেমন—অ্যাবসার্ডিটি, ভাববাদ-বস্তুবাদ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্য, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, ভাষাপ্রশ্ন, জাতীয় সাহিত্য বিতর্ক, যুদ্ধ ও শান্তি। টুকরো কথায় লেখক আমাদের ঘুরিয়ে আনেন চারপাশের আলো ও অন্ধকার থেকে। সব বিষয়ে লেখকের ভাবনা যে একাত্মতার বোধ তৈরি করে তা নয়, তবে তাঁর উদার মানবিক পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পাঠককে সহজেই স্পর্শ করে। ‘আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে’ শীর্ষক লেখাটি থেকে একটু উদ্ধৃতি দিই—‘…সত্য হচ্ছে এই যে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে, কিন্তু সমাজ আমাদের এই পুরুষের মধ্যে যে নারী অথবা নারীর মধ্যে যে পুরুষ রয়েছে তাকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয় না। বরং অমিল ও পার্থক্যকেই গুরুত্ব দিয়ে বৈষম্য বাড়াতে সচেষ্টা হয়।’ (পৃ. ২৩) কমলা ভাসিনের একটি বইয়ের পরিচিতি দিতে গিয়ে এভাবে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে; যার সূত্র ধরে হয়তো আরও অনেক বিষয়ে যাওয়া যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ও চামেলির অনেক লেখাই এমন বহুস্তর ভাবনার সূচনাবিন্দু যেন। ‘স্মরণ, যিকঞ্চিত্’ অংশে দেখব, আহমদ ছফার স্মরণসভায় গেছেন লেখক। শুনলেন, সবাই তাঁকে নিয়ে নানা কথা বললেও তাঁর লেখা নিয়ে কেউ-ই কিছু বলছেন না। তখন লেখকের যা উপলব্ধি তা ব্যক্তিগত হয়েও বৃহত্ সত্যের প্রতিমায় ধরা দেয়— ‘মনে হল, সমসাময়িকদের, জীবিতদের, বা চেনাজানা, বন্ধুস্থানীয়দের লেখা পড়তে চান না কেউ, বা পড়লেও মনে রাখেন না। কেউ চলে গেলে তখনই তাঁর দিকে ফিরে তাকাবার অবকাশ আমাদের হয়।’ (পৃ. ১০০) স্বচ্ছ-স্নিগ্ধ ভাষাভঙ্গি বইটিকে মূল্যমণ্ডিত করেছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে কোথাও হোঁচটও খেতে হয়। হুমায়ূন আহমেদের ছবির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গিয়ে যখন বলা হয়, ‘চারদিকে সপ্রতিভতা উপচে পড়ছে’ তখন একটু ধন্দে পড়ে যাই। সপ্রতিভতা উপচে পড়ার বিষয় নাকি? আলতাফ হোসেনের এই ছোট গদ্যগুলো পড়তে পড়তে মনে হবে জীবনের নিরর্থতার বোধ প্রবল তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। আর সমকালীন সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ববাস্তবতাও তো মানুষের বেঁচে থাকার অর্থকে ক্রমশ ফিকে করে দিচ্ছে। এর মধ্যে বই, নাটক, ছবি, গান, চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদির সম্মিলনে হয়তো সামান্য হলেও উজ্জীবক রসদ পাওয়া যায়। বেঁচে থাকা সুসহ হয়। চারদিকে ঘনঘোর মেঘের প্রাদুর্ভাব। লণ্ডভণ্ড সব। ক্ষয়াটে পাংশুটে পরিপার্শ্বে আলতাব হোসেন দু-একটি কুসুমের সন্ধান দেন। তাঁকে ধন্যবাদ।