User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ড. মোঃ কামাল হোসেন এর তাজউদ্দিন আহমদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বইটিতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কিভাবে সীমিত সম্পদ দ্বারা সদ্য যদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের তথা বাংলার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা যায় সে চেষ্টা করেছিলেন তা খুব ভালোভাবে দেখিয়েছেন। তাজউদ্দিন জানতেন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না হলে এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়বে। বইটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিককার বাজেট, সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, রাজনৈতিক অবস্থা ও বাংলার গণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন কিভাবে চলছিল তার চিত্র খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
Was this review helpful to you?
or
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতা-উত্তর সংসদে পর পর দুটি বাজেট প্রদানকারী অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে প্রতিটি বাঙালি কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যেভাবে তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করে মাত্র নয় মাসের মধ্যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তা বাঙালি জাতি কোনো দিনই ভুলবে না। একইভাবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের নবগঠিত সংসদে দুটি বাজেট উপস্থাপন করে দেশকে যে অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাও অবিস্মরণীয়। তাজউদ্দীন জানতেন যে অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া একটি জাতির স্বাধীনতার কোনো মূল্য থাকে না। তাজউদ্দীন নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। সেই ডায়েরিগুলোর মধ্যে তিন খণ্ড আপাতত প্রকাশ করেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। দুঃখের বিষয়, তাঁর ডায়েরির শেষ খণ্ড, যেটি তিনি জেলে বসে লিখছিলেন, সেটি তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আর পাওয়া যায়নি। ওই ডায়েরিগুলো থেকে যদিও তাজউদ্দীন আহমদের অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়, তবু তাঁর সম্পর্কে অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে। তাঁর সারা জীবনের রাজনীতির ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে বিদায়—এসব সম্পর্কে দেশবাসী জানতে চায়। তাঁকে নিয়ে একজন ঐতিহাসিক যে গবেষণা করেছেন, তাতে আমরা আনন্দিত। সেই গবেষণাগ্রন্থটির নাম তাজউদ্দীন আহমদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। গবেষক-লেখক হচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। ইনি একজন ইতিহাসবিদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এখন শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত। এই বইতে রয়েছে চারটি অধ্যায়, যেখানে লেখকের গবেষণালব্ধ ফলাফল উঠে এসেছে। রয়েছে মোট চারটি পরিশিষ্ট, যেখানে তাজউদ্দীন আহমদের দুটি বাজেট বক্তৃতা হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে। রয়েছে ১৯৭১-৭২ এবং ১৯৭২-৭৩-এর বাজেট বক্তৃতা, যেগুলো তাঁকে দিতে হয়েছিল দেশে একটি নির্বাচিত সংসদ সৃষ্টি হওয়ার আগেই। এবং সব শেষে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ইংরেজি অনুলিপি। বইটি কৌতূহলী পাঠকের অনেক প্রশ্নের জবাব দেবে বলে এই আলোচকের বিশ্বাস। বইটির ভূমিকায় লেখক একটি কথা লিখেছেন তা উল্লেখযোগ্য। উনি লিখেছেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদই বাংলাদেশের একমাত্র অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী, যিনি ছিলেন আদ্যোপান্ত রাজনীতিবিদ।’ যেহেতু তিনি জীবনের প্রথম থেকেই রাজনীতি করেছেন, সে কারণে তিনি এ দেশের মানুষের নিত্যদিনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি এ দেশের মানুষকে জানতে গিয়ে, তাদের ভালোমন্দ বুঝতে গিয়েই রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ছাত্র বয়সের অনেক ঘটনাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর ডায়েরির পাতায় পাতায় উঠে এসেছে সেই বাংলার মানুষকে চিনে ওঠার কাহিনি। তাঁর বাজেটগুলোতে তিনি ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচানোর চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেছেন শহর ও গ্রামগুলোর মধ্যে ব্যবধান ঘোচাতে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষটি সত্যের পথে থাকার জন্য কোনো দিন কারও সঙ্গে আপস করেননি। দেশটিকে বিদেশি সাহায্যনির্ভর না করে একটি সত্যিকারের স্বাবলম্বী স্বাধীন দেশ করে তোলাটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। আততায়ীর গুলি ও বেয়নেট তাঁর স্বপ্ন সফল করতে দেয়নি। একাত্তরে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন, সেই বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে এ দেশের শাসনকারী প্রায় সবগুলো সরকার। অসাধারণ মেধাবী ছাত্র তাজউদ্দীন স্কুলজীবনেই ব্রিটিশ শাসনাধীনে বঞ্চিত পূর্ব বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে যুক্ত হন। ১৯২৫ সালে ঢাকার কাছে একটি গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া তাজউদ্দীন তাঁর আশপাশের দরিদ্র ধান ও পাটচাষি কৃষকদের দুঃখ-বেদনায় শরিক হয়ে ওঠেন অল্প বয়সেই। কীভাবে এই পরিস্থিতি বদলে দেওয়া যায়, কী করলে কৃষকের ও শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটানো যায়, সেই চিন্তা-ভাবনার মধ্য দিয়েই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি বুঝতে পারেন যে এই স্বাধীনতা বাংলার জন্য কিছুই আনবে না। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং এর পরবর্তীকালে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য আস্তে আস্তে চরম আকার ধারণ করে। এই সময়ের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী—এঁদের সংস্পর্শে এসে তাজউদ্দীন বিষয়টি হূদয়ঙ্গম করেন এবং বুঝতে পারেন যে পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে পূর্ববাংলার মানুষের মুক্তি আসবে না। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৫৬ সালে ছয় দফা দাবি প্রকাশ করেন, এর আগের বছরেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। যত দিন আওয়ামী লীগের নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, তত দিন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দল গণ আজাদি লীগ ছাড়েননি। এই বইয়ের লেখক লিখছেন, ‘যা হোক, ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগের (১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়) ঢাকা জেলার সম্পাদক, ১৯৫৫ সালে সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে তাজউদ্দীন আহমদ পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।’ দুটি বাজেট বক্তৃতাতেই তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীকে জানিয়েছেন যে এ দেশের মানুষের কষ্টের কাল শেষ হয়নি, বরং শুরু হয়েছে। জাতিকে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। প্রয়োজনে একটু কম খেয়ে এবং একটু কম পরেও আগামী দিনগুলোকে উজ্জ্বল করে তুলতে হবে। বড়লোকেরা খাবে, পরবে আর দরিদ্ররা কৃচ্ছ্রসাধন করবে, তা হতে পারে না। সবাইকেই কৃচ্ছ্রসাধনা ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সমসাময়িক লেখকদের অজস্র উদ্ধৃতি পাওয়া যাবে এই বইতে। তাজউদ্দীন আহমদের জীবিতকালেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক বড় মাপের মানুষ। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর তাই তাঁর সম্পর্কে মানুষের জানার ইচ্ছার শেষ নেই। স্বল্প পরিসরের এই লেখায় এই আলোচকের পক্ষে বইটির যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তাই উৎসাহী পাঠককে বইটি কিনে পড়তে এবং নিজের সংগ্রহে রাখার অনুরোধ করব। একদিন বাংলার জয় হবেই—এই আশাতেই তাজউদ্দীনের মৃত্যু হয়েছিল। তাদ্দউদ্দীন আহমদ বাঙালির প্রাণে চিরজীবী থাকুন। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ১৬, ২০১০