User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ ❤️
Was this review helpful to you?
or
# বইয়ের _শহরে_রকমারি _উৎসব # বিভূতির_জন্মদিনে_বুক _ রিভিউ বই রিভিউ সাহিত্য কর্মের এক দুরূহ কঠিন কাজ। লেখকের লেখার উদ্দেশ্যে তার সৃষ্টিকে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক দ্বারা ফুটিয়ে কলমের ক্ষুর ধারে কাটা এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর যদি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের " পথের পাঁচালী" হয় তাহলে মস্তিষ্কের উর্বরতা কতখানি হওয়া দরকার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন "সত্যজিৎ রায়" তার চলচ্চিত্রে। আমার মত নগন্য পাঠকের এক ধৃষ্টতা ' পথের পাঁচালী' বইয়ের রিভিউ করা। তবুও চেষ্টা করা। জ্ন্ম মৃত্যে গল্প উপন্যাসের এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম গল্প উপন্যাসের ছোঁয়া আর ধারাবাহিকতা রাখা যেনই অন্য এক তুলির আঁচর। হরিহর( অপুর বাবা) এর মৃত্যে অপুর জীবনে কিভাবে নাড়া দিয়েছে । প্রত্যেক সন্তানের জীবনে বাবা হারানো সুর এক এক রকম। অপুর জীবনেও তেমনি -- "যে বাবাকে সকলে মিলিয়া আজ মনিকর্ণিকার ঘাটে দাহ করিতে আনিয়াছিল, ---রোগে জীবনের যুদ্ধে পরাজিত যে বাবা স্বপ্ন মাত্র--- অপু তাহাকে চেনে না, জানে না, --- তাহার চিরদিনের একান্ত নির্ভরতার পাত্র, সুপরিচিত, হাসিমুখ বাবা জ্ঞান হইয়া অবধি পরিচিত সহজ সুরে, সুকন্ঠে,প্রতিদিনের মতো কোথায় বসিয়া যেন উদাস পূরবীর সুরে আশীর্বাচন গান করিতেছে---- কালে বর্ষতু পর্জন্যং পৃথিবী শস্যশালিনী---- লোকঃ সন্তূ নিরাময় ঃ ---------------- পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা গল্পের চরিত্রগুলোর কি প্রাণ আছে?লেখক এমন ভাবে অবাস্তব সত্তায় প্রাণ দেন, কিছু সাধারণ ঘটনা অসাধরণ ভাবে খোদাই করেন , যেন মনে হয় চরিত্রগুলো জীবন্ত এবং বাস্তব। বাংলা সাহিত্যের এমনি কিছু কালজয়ী সৃষ্টির মধ্যে একটি হলো বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের "পথের পাঁচালী"। বলা যায় লেখকের আত্মজীবনি মূলক একটি লেখা এটি । উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ- হরিহর রায় নামের এক সাধারণ ব্রাহ্মণ তার স্ত্রী সর্বজয়া এবং দুই সন্তান দূর্গা ও অপুকে নিয়ে নিশিন্দিপুর গ্রামে থাকতেন। ইন্দিরা ঠাকুর নামের এক বৃদ্ধার আশ্রয় ভিটা এবং দেখাশোনার কেউ না থাকায় দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্রে তিনিও হরিহর রায়ের বাড়িতে থাকতেন। এদিকে অভাবের সংসারে সর্বজয়া মোটেও ইন্দিরা ঠাকুরকে পছন্দ করতেন না। তুচ্ছ কারণেও বৃদ্ধা ননদকে কথা শোনাতেন । কিন্তু দূর্গার ভালোবাসায় বৃদ্ধা সব ভুলে যেতেন। অবশ্য কখনো কখনো রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যেতেন । আবার রাগ কমলে ফিরে আসতেন। একবার বৃদ্ধা তার মৃত মেয়ের বাড়িতে যান। মেয়ের জামাই সেখানে তাকে থাকতে দিলেও বৃদ্ধার মন টেকে না ,দূর্গার টানে তাই আবার ফিরে আসেন হরিহরের বাড়িতে । কিন্তু এবার হরিহরের দারিদ্র পরিবারে বৃদ্ধাকে আশ্রয় দিতে নারাজ সর্বজয়া। বৃদ্ধা অনেক অনুরোধ করে , কিন্তু কোনমতেই আর আশ্রয় দেয় না সর্বজয়া । এই চলে যাওয়াই ছিল বৃদ্ধার শেষ চলে যাওয়া । শেষ পর্যন্ত ইন্দিরা ঠাকুরের নির্মম মৃত্যু হয় এক চালের গুদামে। এরপরে প্রায় চার-পাঁচ বছর পরে উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয় ।অপু দূর্গার সোনালি শৈশব ।অপু একদম মায়ের বাধ্য ছেলে কিন্তু দূর্গা ছিল দুরন্ত এক উড়ন্ত মেয়ে । বনেবাদরে ঘুরতে তার ভীষণ ভালো লাগতো। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সে আম-জাম কুড়াতে যেতো। অবশ্য সুযোগ পেলে অপুও দিদির সঙ্গে ছুট দিত । তাদের মাকে লুকিয়ে কখনো গুটি আম ,লবণ- লঙ্কা -তেল দিয়ে মেখে খেতো । একবার দুই ভাইবোন লুকিয়ে অনেক দূরে রেলগাড়ি দেখতে যায় । তারপর ফেরার পথে পথ হারিয়ে ফেলে । অনেক কষ্টে শেষ অব্দি বাড়ি ফেরে । দূর্গার একগাদা মিথ্যা কথা মায়ের হাতের মার থেকে দুই ভাইবোন রক্ষা করে। চরিত্রগুলোতে লক্ষ্য করা যায় দূর্গার মা দূর্গার চেয়ে অপুকে বেশি প্রাধান্য দিত । দূর্গা ছিল ছটফটে এক চরিত্র । আর অপু ছিল কল্পনাপ্রেমী । অপুর চোখে আমরা অনেক কিছু দেখতে পারবো এবং শিখতে পারবো। অপু তার গ্রামের একটি পাঠশালায় ভর্তি হয়। বাইরের জগত সম্পর্কে জানত পারে। উপন্যাসটার পুরো জায়গা জুড়ে অপু দূর্গা নেই । যেহেতু পথের পাঁচালী তাই পুরো গ্রামীন জীবনের কথা এখানে ফুটে উঠেছে । গ্রামের মানুষের নানান পরিস্থিতির বর্ণনা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। গল্পের একপর্যায়ে হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসের মতো সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে অস্থির চিত্তের নিরীহ এক শিশু,নারীসত্তা দূর্গা। দিদিকে হারিয়ে একা হয়ে যায় অপু, হয়ে পড়ে সঙ্গীহীন। এদিকে অভাব অনটনের হাত থেকে রক্ষা পেতে জীবিকা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে যান হরিহর এবং দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকলেও একসময় হরিহর সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে শহরে নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবেন । এরপর কলকাতার ট্রেন-এ করে যাওয়ার সময় তারা ফেলে যান তাদের জীবনে নিশ্চিন্দিপুরের সব দুঃখ আর সুখের স্মৃতি। বই: পথের পাঁচালী লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনা-সুচয়নী পাবলিশার্স ৩৮/২ক,বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০ মূল্য-২০০ টাকা রিভিউ এ : রাফেয়া বসরী রুপা
Was this review helpful to you?
or
#বইয়ের_শহরে_রকমারির_উৎসব #বিভূতির_জন্মদিনে_বুক_রিভিউ বিভূতিভূষণের দেখা গ্রামীণ জীবন ও জগৎ উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। তার অত্যন্ত পরিচিত গ্রামাঞ্চলের মানুষ ও সমাজজীবন পরিস্ফুট হয়েছে "পথের পাঁচালী " উপন্যাসে। ঔপন্যাসিক জানিয়েছেন "পথের পাঁচালী" র গ্রাম্য চিত্রগুলো সবই আমার স্বগ্রাম বারাকপুরের।জেলা যশোহর।গ্রামের নীচেই ইছামতী নদী।" ?চরিত্র: উপন্যাসটিতে প্রধান চরিত্র গুলো হলো- * হরিহর (অপুর বাবা) * সর্বজয়া( অপুর মা) * দূর্গা * অপূর্ব (অপু) দূর্গার ছোট ভাই * ইন্দির ঠাকরুন (অপুর পিসি হরিহরের দূর সম্পর্কে বোন) পথের পাঁচালী উপন্যাস কবির আত্মাজীবনীমূলক উপন্যাস - ১.পথের পাঁচালী উপন্যাসটিতে সর্বজয়া চরিত্র সম্পর্কে বিভূতিভূষণ বলেন: সর্বজয়ার একটি অস্পষ্ট ভিত্তি আছে (আমার মা) ২.অপু চরিত্রটি কবি নিজেই। কারণ অপুর মতোই কবি পড়তে যেতেন প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালায়। ৩. অপুর বোন দূর্গা চরিত্রটি লেখকের ছোট বোন মনি চরিত্রের অংশ(লেখক তার ছোট বোন মনিকে দূর্গা বলে ডাকতো) ?বই পর্যালোচনা: কাহিনীর সময়কাল বিশের দশকে। নিশ্চিন্দপুর নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু এক গরিব বামুন হরিহরের পরিবারকে ঘিরে। উপন্যাসটি ৩ টি ভাগে বিভক্ত। মোট ৩৫টি অনুচ্ছেদ রয়েছে উপন্যাটিতে- ১.বল্লালী বালাই (৬টি অনুচ্ছেদ) ২.আম আঁটির ভেঁপু (২৩টি অনুচ্ছেদ) ৩. অক্রুর সংবাদ (৬টি অনুচ্ছেদ) ◼️বল্লালী বালাই : বল্লালী বালাই এখানে অপুর পিসি ইন্দির ঠাকরুনকে বলা হয়। তখন রাজা বল্লাল সেন এক অদ্ভুত বিয়ের প্রচলন করেছিলেন। একজন পুরুষ অনেক গুলো বিয়ে করতো এবং প্রতি বছর যৌতক সংগ্রহ করতো। এর প্রত্যেক্ষ স্বীকার হয়েছিল ইন্দির ঠাকরুন। ◼️আম আঁটির ভেঁপু : আম আঁটির ভেঁপু বলা হয় পথের পাঁচালী প্রাণ। অপু ও দূর্গার শৈশব এর স্মৃতির অংশ হলো আম আঁটির ভেঁপু। আম খেয়ে আঁটি ফেলে রাখলে কিছুদিন পর তা থেকে সবুজ গাছ গজায়। আঁটির শক্ত খোলস ফেললে সবুজ অংশ বেড়িয়ে পড়ে। এ অংশটি অমসৃন শক্ত স্থান ঘেষে এক প্রকার বাঁশি তৈরী করা হয়। যা গ্রামের ছেলে মেয়েরা মনে আনন্দে বাজিয়ে বেড়ায়, তাকেই আম আঁটির ভেঁপু বলে। এ সময়টা প্রকৃতির অপু ও দূর্গার বেড়ে ওঠা। তাই এ অংশের নাম অত্যন্ত স্নিগ্ধ এবং রোমান্টিক হয়েছে। ◼️অক্রুর সংবাদ: শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন ত্যাগ করার মতো অপুর নিশ্চিন্দপুর গ্রাম ত্যাগ করে। অপুর এ চলে যাওয়ার সাথে জড়িত অক্রুর সংবাদ। ?পাঠ প্রতিক্রিয়া : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিছক নির্জনতম সাহিত্যিক নন-তিনি জীবনের সন্ধান করেছেন প্রকৃতির মধ্যে শান্ত সুরের মধ্যে, স্বপ্রদর্শী আবেশে। 'পথের পাঁচালী' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম, শ্রেষ্ঠ,কালোত্তীর্ণ এবং পাঠক সমাজে লেখকের জনপ্রিয়তার সৌধ সৃষ্টিকারী উপন্যাস। ভীষণ ভালো লেগেছে উপন্যাসটি।অবশ্য তার জনপ্রিয়তার পিছনে 'পথের পাঁচালী 'র সত্যজিৎ রায়কৃত চলচ্চিত্রায়ণ এবং সাফল্য পরবর্তীকালে কম কার্যকর ছিল না। বইয়ের নাম: পথের পাঁচালী লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশক: বইটই রিভিউদাতা: তানজিনা তানজু ছবি: ( ফেসবুক থেকে নেওয়া)
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_বুক_রিভিউ একটি কাছারি ঘরে সন্ধ্যার পর সাহিত্য আড্ডা বসে। সেখানে যে যার লেখা গল্প, কবিতা, মাঝে মাঝে উপন্যাসের দু'একটা পরিচ্ছেদ পড়িয়ে শোনায়। কখনও কখনও চলে বিস্তর সাহিত্য সমালোচনা, এই সভায় একটি নতুন মুখ যোগ হলো। নতুন এই যুবকটির পেটে বোধ হয় বিদ্যের অভাব অথবা মুখচোরা প্রকৃতির তাই বুঝি কখনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করে না। তবুও আড্ডার লোভে হোক বা সাহিত্যে অনুরাগে হোক তাকে আড্ডায় পাওয়া যায় প্রতিদিনই। কাল ঘুরে বৈশাখ এলো, বইছে কালবৈশাখীর বিখ্যাত ঝড়বৃষ্টি। সভাপতি উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় কাছারি ঘর থেকে চেয়ে দেখলেন দূরে পথের বাঁকে, ‘আজ বুঝি কেউ এলো না?' হঠাৎ কে যেন একটা লন্ঠন হাতে পথ আলো করে এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে। সেই মুখচোরা, শান্ত মানুষটি ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে এসেছে। এত প্রেম সাহিত্যের প্রতি! সভাপতি উপেন্দ্রনাথ সেদিন দেখলেন মুখচোরা মানুষটি বেশ কথা কইতে জানে। বিদ্যেও কম নয়। তাহলে এতদিন বেচারাকে শুধু অপবাদ দেওয়া হলো! নিস্তব্ধ বৃষ্টি মুখর সন্ধ্যায় গল্প বেশ জমে উঠেছে, গল্পের ফাঁকে সভাপতি শান্ত মানুষটিকে বললেন,‘ আপনার লেখার অভ্যােস আছে নাকি? কিছু লেখা থাকলে নিয়ে আসবেন তো পড়ে দেখবো।' শান্ত মানুষটি বললো,‘ বিশেষ কিছু নেই। তবে শখের বসে একটি উপন্যাস লিখেছি। বোধহয় তেমন মানসম্মত হয়নি, আচ্ছা একদিন নিয়ে আসবো।' একদিন পান্ডুলিপি দিয়েও গেলেন, কিন্তু সভাপতি উপেন্দ্রনাথ এই নিয়ে আর কিছু উচ্চারণ করেননি তারপর। শান্ত মানুষটি শঙ্কায় বুক পেতে রইলো, বোধ হয় মানসম্মত হয়নি বলেই সভাপতি এই নিয়ে কথা বলে বাক্যের অপচয় করতে চান না। পান্ডুলিপি জমা নেয়ার কয়েক মাস পর বিচিত্রা পত্রিকায় একটা উপন্যাস বের হতে লাগলো,“পথের পাঁচালি”। উপন্যাস বের হতেই রীতিমতো চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। কোথায় হতে এই লেখকের আর্বিভাব হলো যার নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যোয়? তখনকার সিংহভাগ সাহিত্য ছিল শহরকেন্দ্রিক, কিন্তু বিভূতিভূষণ কী এক মন্ত্রবলে যেন পাঠককে নিয়ে গেলেন নিশ্চিন্দপুরের ছায়াঘেরা কোমল, শান্তিপূর্ণ রুপকথার গ্রামে। সেই সময় সাহিত্য এবং সাহিত্যিক মানেই ছিল বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা উপন্যাসের মহাকাব্যে আরও একটি তারকা যোগ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যোয়, বাংলা সাহিত্য পেল কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালি।' দূর্গা, অপু, সর্বজয়া, হরিহর ও ইন্দির ঠাকুরুন এরা অমর হয়ে রইলো পাঠক হৃদয়ে যুগের পর যুগ। উপন্যাসের পথ শুরু হয় ইন্দির ঠাকরুনের গল্প দিয়ে। ইন্দির ঠাকুরুন হরিহরের দূরসম্পর্কের আত্মীয়, বৈধব্যের পর তারই কাছে আশ্রিত। সর্বজয়ার সাথে ইন্দির ঠাকরুনের সম্পর্ক ভালো নয়, সর্বজয়া প্রায় তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। ইন্দির ঠাকরুন বের হয়ে যায়ও বটে কিন্তু অগত্যা ফিরেও আসতে হয়। কেউ যে নেই আর কোথাও। দুঃখ, অপমান, শতবার লাঞ্ছিত হবার পরও হরিহরের ভিটেমাটি ধরে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় কিন্তু একদিন ঘর থেকে বের যাওয়ার পর নানান ঘটনাপ্রবাহের পর ইন্দির ঠাকরুনের পথের ধারে করুন মৃত্যু হয়। লেখক সেই মৃত্যুর বর্ণনা লিখতে গিয়ে বলেন,‘ ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের সেকালের অবসান হইয়া গেল।' এখানে প্রথম খন্ড বল্লালী বলাই(পরিচ্ছেদ ১-৬) এর সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় খন্ড আম-আঁটির ভেঁপুতে (পরিচ্ছদে ৭- ২৯) লেখক আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন উপন্যাসের প্রধান দুই চরিত্র দূর্গা ও অপুর সাথে। উপন্যাসের প্রাণ যদি হয় অপু তবে উপন্যাসের লাবণ্য দূর্গা। এখান হতেই পাঠকের ভ্রমণ শুরু হয় এক বিচিত্র জগতের সঙ্গে, প্রতিটি পাতা পড়বার পর মনকে এনে দেয় এক প্রগাঢ় প্রশান্তি প্রকৃতির সান্নিধ্যে। অপু এবং দূর্গা এরা দুইজন সহোদর, দারিদ্র্যতার করুণ অভিঘাতেও এদের হৃদয় মাধুর্যে পরিপূর্ণ। দূর্গা বড় ঘরছাড়া এবং ভবঘুরে মানুষ, সে যেন অযত্নে বেড়ে উঠা এক তরুলতা। লেখক দূর্গার বর্ণনা দিতে বলেন, ‘হাতে কাঁচের চুড়ি, পাতলা গড়ন, ময়লা কাপড়, মাথার চুল রক্ষ, ডাগর ডাগর চোখ।' চৈত্রের রোদ, কী বৈশাখের মেঘ দূর্গা সারাদিন ঘুরে বেড়াই। কোথায় কার বাগানে নতুন আমের মুকুল এসেছে, কোথায় বৈঁচি ফল পেকেছে, কোথায় শুকনো রড়া ফলের বিচি গাছ থেকে পড়েছে এইসব তত্ত্ব নিয়ে। তাতে তার জীর্ণ মলিন শাড়ি আরো জীর্ণ, চুল আরো রুক্ষ হয়ে উঠে। মায়ের বকুনি, প্রতিবেশীদের অপমান কিছুতেই তার এই মুক্ত প্রাণকে দমিয়ে রাখতে পারে না। আর অপু বড় ভাবুক, কল্পনাপ্রবণ, অনুসন্ধিৎসা এবং এক মুগ্ধ পাঠক। কানখাড়া খরগোশ, নীলকন্ঠ পাখির গান, বন্য সোঁদাল গাছের শাখা পত্রে বিস্তর ছায়া, কুঠির মাঠের পর ওদিকের জগত, উঠানের পাশের অশ্বত্থ গাছ, বাবার ট্রাঙ্ক থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়া এইসব তার কাছে বড় ভাবনার বিষয় এবং দূভের্দ্য বিস্ময়। অপু তার চরিত্রের অনেকটা পেয়েছে বাবার কাছ থেকে। হরিহর ছেলেবেলা থেকে বড় ভবঘুরে, এককালে এতটাই উদাসীন ছিল বিয়ে করে নববধূকে ঘরে রেখে দশবছর নিরুদ্দেশ ছিল। সেই সত্ত্বা দারিদ্র্যের কঠিন আঘাতে আজ শিকলবন্দী হলেও অপুর মাঝে বাবার সে সত্ত্বা বেড়ে উঠছে একটু একটু করে। অপু গল্প শুনতে বড় ভালবাসে, মায়ের কাছে পৌরাণিক যুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে জানালার বাহিরে দুপুরের রৌদ্র মাখানো শেওড়া-ঘেঁটু বনের দিকে চেয়ে সে তন্ময় হয়ে যায়। মাঝে মাঝে যুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে অপু বাড়ির ধারে শেওড়া বনের ভিতর নিজেই যোদ্ধা হয়ে উঠে। আপন মনে কোন গাছের ডালকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ করে বেড়ায়। এইভাবে একদিন কল্পনাবিলাসী অপু শেওড়া বনের ভিতর যুদ্ধ করছে, নিজ মনে বকতে বকতে হঠাৎ শুনতে পেল কে যেন তাকে কৌতুকের কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,‘ ও কিরে অপু? হ্যাঁ রে পাগলা, আপন মনে বকছিস, আর হাত পা নাড়ছিস? শেওড়া বনের ভিতর একটি রুক্ষ মূর্তি, সারা গায়ে ধূলো বালি, মিটিমিটি হাসছে। এই আর কেউ নয় দূর্গা, গভীর বন হতে সে বের হয়ে এলো ভাইয়ের বকুনি শুনে। কত অদ্ভুত এই দূর্গার প্রকৃতি, লেখক কী অসাধারণ করেই লিখেছেন। পরক্ষণে অপু লজ্জা পেয়ে গেলে অপুকে হাত ধরে নিয়ে যায় দূর্গা আরও গভীর বনে। খানিক দূর গিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,‘দেখেছিস? কত নোনা পেকেচে? এখন কী করে পাড়া যায় বল দিকি?' দূর্গা এখানে অপুর শিক্ষক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, প্রকৃতির সঙ্গে তার পরিচয় করে দেয় যাকে সে এত ভালবাসে। দূর্গাদের বাড়ির চারিদিকেই জঙ্গল, পাশের ভিটার লোকজন অন্যত্র বাস করছে বলে তাদের ভিটাও জঙ্গলাবৃত। নিকটে আর কোন বাড়ি নেই, পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলে পরে ভুবন মুখয্যের বাড়ি। দূর্গাদের বাড়ি অনেকদিন হয় পয়সার অভাবে মেরামত করা হয় নাই, রোয়াক ভাঙা, ঘরদোর জানালার সব কপাট ভাঙা। হরিহরের ভালো চাকরি নেই, অল্প মাইনের চাকরিতে যা পায় তাতে সংসার কোনভাবেই চলে না। নিত্যদিন সে নতুন চাকরির আশায় ঘুরে বেড়ায়। এইসব কারণেই অপু এবং দূর্গা প্রতিবেশীদের কাছে বড় অবহেলিত। তাদের অর্থ নেই, ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। গায়ে কখনো ভালো জামাকাপড় থাকে না। একবার ভুবন মুখুয্যের বাড়িতে চিনিবাস খাবার ফেরি করতে গেলে অপু এবং দূর্গা কৌতূহলী হয়ে এর পিছন পিছন ছুটে যায়। সেই বাড়ির সেজবৌ মুড়কি, সন্দেশ, বাতাসা নিজের ছেলেমেয়ে জন্য ক্রয় করলেন। তাদের ক্রয় বিক্রয় শেষ হলে সেই ফেরিওয়ালার পিছনে পুনরায় অন্য বাড়ির উদ্দেশ্য তারা রওনা হলো। সেই বাড়ির সদর দরজা পার হতেই সেজবো মুখ ঘুরিয়ে বললো,‘দেখতে পারি নে বাপু, ছুঁড়িটার যে কী হ্যাংলা স্বভাব -নিজের বাড়ি আছে, গিয়ে বসে কিনে খেগে যা না? তা না, লোকের দোর দোর, যেমন মা তেমনি ছা।' একবার চুরির অপবাদে মারও খেয়েছে দূর্গা সৈজ বউয়ের হাতে। এইসব কথার প্রতিবাদ করার সাধ্য, ইচ্ছে, ক্ষমতা ওদের কোনটাই নেই। তবুও দূর্গা, অপুর আনন্দ উৎসাহ একটুও কমবার নয়। ওরে আবার ছুটে যায় পালিতদের বাগানে বিকেলবেলা পাকা কামরাঙার লোভে, বৃষ্টি মাথায় করে সোনামুখী তলায় আম কুড়োতে, মাঠের ধারে মজা পুকুরে, গ্রামের উত্তরাংশে বাঁশ বনের জঙ্গলে। সব স্বপ্নের একদিন শেষ হয়, দিনের আলো নিভে গিয়েই আঁধার নেমে আসে। এতক্ষণ অপু, দূর্গার বিপদ, আনন্দ, দুঃখ ও আশার গল্প পড়ে রুপকথার জগতে চলে গিয়েছিলাম। এইবার ফিরে আসতে হলো রুঢ় বাস্তবতায়। এক বর্ষার মৌসুমে তাদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছাল। ঘরে খাবারে নেই, ঘরের মেঝেতে বৃষ্টির জল পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে হরিহর গ্রামের বাহিরে চাকরি খুঁজতে যায়। কিন্তু সে আর আসে না, এইভাবে কতদিন কেটে গেল। দূর্গার জ্বর হলো এইদিকে ভীষণ, ভালো খাবার নেই, চিকিৎসা নেই। সর্বজয়া বড় বিপদে পড়লেন, প্রতিবেশীর সাহায্য চেয়ে কোনরকম দুই-একদিন গেল। বৃষ্টি লেগেই আছে, ঘরে খাবার নেই তার উপরে ঝড়ে ঘর ভেঙে যাবার জোগাড়। দূর্গার অসুস্থ শরীরে রাতের বেলা বৃষ্টি এসে গায়ে পড়ে, প্রকৃতি এতদিন তাকে কাছে পায়নি বলেই বোধহয় সে যেন রাত হলে তার খবর নিতে এসে কোমল স্পর্শে ছুঁতে চায়। একরাতে দূর্গার শরীর ভারী খারাপ হতে লাগলো, শরৎ ডাক্তার প্রথম চিকিৎসা করে ভরসা দিয়ে গেলেও পরে আর তার মুখে কোন ভরসার কথা এলো না। হরিহরকে পত্র দেওয়া হলো, কিন্তু তার খবর নেই। শরতের এক দুপুরে দূর্গা চোখ বন্ধ করলো। তার চিরচেনা জগত ছেড়ে, অভাব দুঃখ কষ্ট ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো অজানার উদ্দেশ্যে। একটি বার ভাবলো না অপুর কথা, যে তার একমাত্র খেলার সঙ্গী। একটিবার ভাবলো না এই বনজঙ্গলের কথা যারা তাকে চিরকাল সঙ্গ দিয়ে এসেছে। লেখক দূর্গার মৃত্যুর বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন,‘ আকাশের নীল আস্তরণ ভেদ করিয়া মাঝে মাঝে মাঝে অনন্তের হাতছানি আসে- পৃথিবীর বুক থেকে ছেলেমেয়েরা চঞ্চল হইয়া ছুটিয়া যায় অনন্ত নীলিমার মধ্যে ডুবিয়া নিজেদের হারাইয়া ফেলে- পরিচিত ও গতানুগতিক পথের বহুদূর পারে কোন পথহীন পথে- দূর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড় অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে।' দূর্গার মৃত্যুর পর সর্বজয়া ক্রমাগত হরিহরকে এখানের বাস উঠাবার জন্য তাগাদা দিতে থাকে, হরিহর অনেক চেষ্টা করেও কোন সুবিধা করতে পারেনি। তবে বৈশাখের দিকে কাশীতে একটা ব্যবস্থা হলো। জিনিসপত্র বিক্রি করে, ঋণ শোধ করে, চারিধারে বনজঙ্গলের মাঝে তাদের এই ভিটেমাটি ছেড়ে নিশিন্দিপুর হতে চললো ওরা। এখানে এসে অপুর জন্য মনটা বড় খারাপ হয়। অপু যেতে যেতে কল্পনা করে– তার দিদিকে কেউ নিয়ে আসি নি, সবাই ফেলে এসেছ। জামতলায় দাঁড়িয়ে সে ম্লানমুখে তাকিয়ে আছে তাদের রেলগাড়ীর দিকে। দূর্গা মরে গেলেও অপু এতদিন তাকে পেয়েছে দু'জনের খেলা করার পথেঘাটে, বাঁশবনে, আমতলায়। তার দিদির অদৃশ্য স্নেহস্পর্শ ছিল নিশিন্দিপুরে তাদের ভাঙা বাড়িতে, কিন্তু অপু ভাবে আজ বুঝি চিরকালের জন্যে দিদির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল? অপু যেতে বারবার কল্পনা করে তার দিদি দূরে এখনো অভিমান করে চেয়ে আছে। তার মনের মাঝে অবাক ভাষাকে চোখের জলে রুপ দিয়ে বারবার একটি কথাই বলতে চাইলো,‘ আমি চাইনি দিদি, আমি তোকে ভুলিনি, ইচ্ছে করে ফেলেও আসি নি- ওরা আমায় নিয়ে এসেছে।' অবুঝ শিশুর এই ব্যাথাটা বারবার আমাকেও ছুয়ে গেছে। আর এখানেই লেখক দ্বিতীয় খন্ডের সমাপ্তি রচনা করেন। তৃতীয় খন্ড অক্রূর সংবাদ ( পরিচ্ছেদ ৩০- ৩৫) উপন্যাসের শেষ খন্ড। এখানে শুরু হয় অপু, সর্বজয়া, হরিহরের কাশী বাসের গল্প। হরিহর সামান্য পড়াশোনা জানতো, দশাশ্বমেধ ঘাটে কথকতা করে, মন্দিরে পুরাণ পাঠ করে জীবনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হলো। সর্বজয়া শহরের এত ঘরবাড়ি দেখে অবাক হয়ে যায়, চিরদিন পাড়া গাঁয়ের গভীর বনজঙ্গল তার কাছে স্বাভাবিক দৃশ্য কিন্তু এইসব তার বড়ই দূর্ভেদ্য ঠেকে। আর অপু নিজ মনে ঘুরে বেড়াই, কোথায় কে গল্প করছে, গান করছে, কোথায় মেলা বসেছে এইসব দেখে সে সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ফিরে। অগ্রহায়ণ মাসে অপু বাবাকে বলে স্থানীয় একটা স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল, জীবন এইবার যেন তার কাঙ্খিত গতি পেয়েছে। দূর্গা, নিশিন্দিপুর, ফেলে আসা জীবনের দুঃখ-কষ্ট পাশ কাটিয়ে তাদের জীবনে নতুন স্বপ্ন, নতুন ভোরের হাতছানি। তবে এখানেই যে মস্ত বড় একটা ভুল, মস্ত বড় একটা ফাঁকি। মানুষ যে নিজের নিয়ন্ত্রক নয়। সুখের দিন শেষে হরিহর একবার জ্বরের পড়লো, আয় বন্ধ হলো, সঞ্চয় ধীরে ধীরে ফুরোতে লাগলো। শেষে দূর্গাকে অনুসরণ করে হরিহরও চললো জীবনের সবচেয়ে বড় অজনার ডাকের সাড়ায়। এই অপরিচিত শহরে নিঃস্ব সর্বজয়া, অপু জীবনের আরও একটি করুন বাস্তবতার পাশে দাঁড়ালো। কাশী শহরে আপন কেউ নেই, যারা আছে তারা সাহায্য করার ছলে সর্বজয়ার সুযোগ নিতে চায়। এখানেরও বাস উঠলো, কাজ জুটিয়ে ছেলেকে সঙ্গ করে নিয়ে গেল পরের বাড়িতে। শুরু হলো পরাধীন জীবন, সুখে হোক, দুঃখে হোক, সে এতদিন একা ঘরের গৃহিণী ছিল অথচ সে এখানে পরাধীন। তার প্রাণ বের হয়ে যেতে চায় কিন্তু উপায় যে নেই আর? অপু চিরকাল মানুষের সাথে মিশতে ভালবাসে, তাদের গল্প শুনতে ভালবাসে। কিন্তু এখানে এসে সে আর সংকুচিত হয়ে গেল, এদের মাঝে আর তাদের মধ্যে যে সুস্পষ্ট একটা দেয়াল রয়েছে তার শিশুমনেও তা বুঝতে কষ্ট হয় না। অপু সব হারালেও মাকে চিরদিনই কাছে পেয়েছে, কিন্তু এখানে মাকে সারাদিন কাছে পাওয়া যায় না। সকাল থেকে সর্বজয়া রাঁধতে বসে, পান থেকে চুন খসলেই কথা শুনতে হয়। মায়ের কষ্ট অপুর মনে বড় ঘা দেয়, অপু যেন নিশিন্দিপুরে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে– সেইরুপ কথার দেশে। যেখানে তার দিদি আজও বাঁশ বনে, সতুদের বাগানে, মজা পুকুর ঘাটে, পালিত দের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনে রাতে অপুকে নিশিন্দিপুর অপুকে ডাকে। শাঁখারীপুকুর ডাকে, বাঁশ বনটা ডাক দেয়, সোনাডাঙার মাঠ ডাক দেয়, কদম তলার সায়েবের ঘাট ডাক দেয়, কিন্তু সেসব যেন বহুদূর ফেলে আসা জীবনের স্বপ্ন! এরপর জানতে হয় তো পাঠক আপনাকে পড়তে হবে সেই রুপকথার গল্প “পথের পাঁচালি"।
Was this review helpful to you?
or
খুবই ভালো বইটা।আমি পড়ে খুশি।?
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
জীবনের অলি গলি গুলো কি সংকীর্ণ নাকি বিস্তৃত?আমরা কতটুকুই বা জীবনকে উপলব্ধি করি যেখানে জীবনের ভাঙাচোরা, জীর্ণশীর্ণ, স্যাতঁসেতে আর মরিচাধরা দেয়ালগুলো তাকিয়ে আছে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিতে।প্রকৃতিও এক বাস্তবতার সঙ্গি। দুঃখ,দৈন্য,সুখ,নৈরাশ্য-বেদনা,সামাজিক কুসংস্কার, বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রাণবন্ততা,প্রাণোচ্ছলতা আর জীবনকে টিকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টাই আমাদের জীবনের এপিঠ ওপিঠ। এই দিকগুলোর প্রতিফলনের বাস্তব গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় "পথের পাঁচালী" তে।যেকোন মানব হৃদয়ে বইয়ের পাতাগুলো বাস্তবতার জীবনকে দাড় করিয়ে জীবনকে আত্মউপলব্ধি করাবে বলতে পারছি। এবার আসি "পথের পাঁচালী" বলতে কি বোঝানো হয়েছে।পথ মানে রাস্তা,আর পাঁচালী হল বর্ণনাত্মক কাব্য। বইটিতে বিস্তর বর্ণনা দেয়া হয়েছে প্রকৃতির দৃশ্যের। জীবনের সরু বা প্রশস্ত পথ,উত্থান-পতনের গান গেয়েছেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।পল্লীজীবন,গৃহস্থালী,বন,মাঠ-ঘাট, নদী-প্রান্তর,পূজা-পার্বন এসব বিষয়ের বর্ণনা পাঠককে মুখরিত করবে। যৌতুক প্রথার মতও সামাজিক ব্যাধি ঠাই নিয়েছে নিখুঁতভাবে যেখানে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে বইটিতে। সমগ্র উপন্যাসটি তিনটি খন্ড ও মোট পঁয়ত্রিশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত।মূল চরিত্র হলো- অপু,দূর্গা,হরিহর রায়,সর্বজয়া,পিসি ইন্দির ঠাকুরণ প্রমুখ.... ★উপন্যাসের প্রথম অংশে (বল্লালী বালাই)ঃ৭৫ বছর বয়সী ইন্দির ঠাকুরণ,যাকে নিয়ে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্হার অন্যতম সমস্যা বাল্যবিবাহ ও যৌতুক বিশাল আকার ধারণ করতে দেখা যায়।কেমন হয় যখন একজন নারী ক্রমাগত নির্যাতিত হয়,পদদলিত হয়? কারন তার যে আয়ের উৎস নেই,মাথায় যেন আকাশ নেই,কি করে এক পশলা বৃষ্টিতে সে হৃদয় জুড়োবে। তাই ই হতে দেখা যায় যখন এক অবলা নারী অল্পবয়সে স্বামীহারা হন আর এই মরিচা ধরা সমাজ যখন তাকে বিয়ে বসার জন্য অনুমতি না দেয় তখন কি দাড়ায় বাস্তবতা এক অসহায় নারীর?আসলে তখন জীবনে শেষ পর্যায় কি দাড়ায়, মর্মান্তিক নাকি অনুপ্রেরণাদায়ক নাকি বাস্তবতার দেয়ালে জীবন ঠেকে যায়?এইসবকিছু কূলহীন ভিটাহীন নারীকে নিয়ে তৈরি হওয়া সামাজিক বৈষম্য,ব্যাধিএবং এসবের করাল গ্রাসকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বইটিতে।যা পাঠক হৃদয়কে বাস্তবতার স্পর্শ করাবে।ইন্দির ঠাকুরণের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, যৌতুকের মত ব্যাধির কারনে সংসারের খুটিটা আর মজবুত থাকেনা। ঠাই গুজার জায়গাটা কতটাই নাজুক তা পাঠকের হৃদয়কে আপ্লুত করবে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ঠাঁই হয় দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িতে। এক মনুষ্যত্বহীন পরিবারকে দেখতে পাওয়া খুব সহজেই।আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে মনে করানো হতো সে আশ্রিতা,করুণার পাত্র।প্রায়শই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও সেই ঠাঁই নিতেই হতো হরিহরের বাড়িতে। অবশেষে সে যে ভিটাহীন সেটাই দেখতে পাওয়া যায় বইয়ে। কী এক জীবন,তাই নাহ! ★দ্বিতীয় অংশে(আম আঁটির ভেঁপু)ঃ হরিহরের দুই সন্তান বড় মেয়ে দূর্গা আর ছোট ছেলে অপুর শৈশব-কৈশোর তথা টক-মিষ্টি সম্পর্ককে।এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপু।প্রকৃতির টানে সে বরাবরই আকৃষ্ট। অপু চরিত্র টাকে লেখক এমন ভাবেই উপস্থাপন করেছেন যেখানে আপনি বই এর প্রতি কোন অনীহাই আনতে পারবেন না,বরং মুগ্ধতা আপনাকে ছুঁয়ে দেবে।আর প্রধান চরিত্রের অন্তপ্রাণ আরেক টা চরিত্র দূর্গা, যাকে কিনা অপুকে ছাড়া ভাবাই যায়না।দূর্গার হাত ধরেই অপুর প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক।দূর্গারখেলা,ঝগড়া,দুরন্তপনা, মায়ের শাসনে মাখা আদর,ভাইবোনের দুষ্টামি সবকিছুই লেখকের বাস্তব জীবনের স্পর্শেই ফুটিয়ে তোলা।পুরো গ্রাম টায় যেন আপনি ঘুরে আসতে পারবেন অপু দূর্গার চরিত্রের মধ্যেই।গ্রাম বাংলার খুবই সাধারণ তবে অসাধারণ দিকগুলো যা চোখে পড়েনা তা এই উপন্যাসে যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তাই পাঠকের উচিত একবার হলেও বইটি পড়া।কিশোর অপু পথের দু'ধারের দৃশ্যকে আপনমনে দেখতে চায়।কিন্তু সে খুব সংকোচ-লাজুক।তাদের বাবা কুলীন ব্রাহ্মণ হলেও অভাবে দিন কাটাতে হত,মা সন্তানদের মুখে ভালো খাবার দিতে পারেন না বলে সর্বদাই ব্যাথিত থাকতেন।দুই ভাই-বোন বনেবাদাড়ে ঘুরে বেতফল,পানিফল,অপরিপক্ব আমের গুটি,বিচি ফল,কুল খেয়ে তৃপ্ত থাকে ভালো খাবার যে পায়নি।দূর্গার হাতটান স্বভাবটা আমার কাছে বিশেষ ভালোই লেগেছে যেটা দুরন্তপনার ছাপ। তবে যে দারিদ্র্যতায় জীবনই কোণঠাসা সেখানে পড়াশুনাও যেন বিলাসবহুল চিন্তা।জীবন যেখানে যেমন মানায়।অপু-দূর্গার ট্রেন দেখতে যাওয়া যেন এক যুদ্ধ জয়ের কাহিনী,যে কাহিনীতে পাঠক কখন যে প্রবেশ করবে তা বুঝতেই পারবেনা। এদিকে এক কালো অধ্যায়ে নেমে আসে অপুর জীবনে কারন দূর্গা দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগছে।দূর্গাকে কি বাঁচানো গিয়েছিল, একটা প্রাণোচ্ছল বালক অপুর কি হয় অবশেষে? এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রগুলো ভালো লেগেছে।দূর্গার প্রতি অপুর অসীম ভালোবাসা প্রকাশ পায় কয়েক লাইনে- " আমি যাইনি দিদি,আমি তোমাকে ভুলিনি,ইচ্ছে করে ফেলে আসিনি,ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে"। জীবনের পরিক্রমায় দুঃখ-দৈন্যতার মাঝেও টিকে থাকতে হয়,আকাশ ভাঙা বজ্রের চিৎকারের মাঝেও যেন বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোই জীবন,হোক ভিটেমাটি হীন,দূর্যোগ। বৈষম্যের প্রতিফলন ঘটে এই শেষ অংশে লেখক সাফল্যের সাথেই যেন উপস্থাপন করে গেছেন।যেটা আমাদের শিকড় ছেড়া সমাজেই আপনি আমি শিকার। ★শেষ অংশ (অক্রুর সংবাদে)ঃসন্তান হারানো হরিহর আর সর্বজয়া ভেঙ্গে পড়ে।গায়ের পাঠ চুকিয়ে কাশী যান তবুও যখন জীবন যেন সুখের পরশ পেয়েও পায়নি এইবেলায়।টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায় এক পর্যায়ে ধনীর বাড়িতে যেখানে সর্বজয়া একজন রাধুনি হিসেবে কাজ শুরু করেন।শুরু হয় ধনী-গরিবের বৈষম্যমূলক আচরণ।তখন নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দপুরের কথা মনে পড়ে।কতটা বৈষম্যর শিকার হলে সর্বজয়া ও তার ছোট ছেলে অপুকে নিয়ে সেই অজানার ভিটেমাটি নিশ্চিন্দপুরেই ফিরতে হয় তা বোধগম্য হয় বইটির শেষ অংশেই। উদ্ধৃতিঃ ১. ★ড.সৌমিত্র শেখর____ বিভূতিভূষণ দরিদ্র চরিত্রগুলোর সমাবেশ ঘটিয়ে কোন দুঃখ গাঁথা তৈরি করতে চাননি।অথবা চাননি প্রলেতারিয়েতের শ্রেনী বিপ্লব ঘটাতে।তিনি যুগের অস্হিরতায় না জড়িয়ে আবহমানকালের চিরস্থায়ী, চিরসাক্ষী এবং একটি পরিপূর্ণ সত্ত্বা নির্সগ প্রকৃতিকে অবলম্বন করলেন এ উপন্যাসে ২.★রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর____ বইখানা দাঁড়িয়ে আছে আপন সত্যের জোরে। লেখক স্পষ্ট ও বোধগম্যতার আশ্রয় নিয়ে সামাজিক গোড়াপত্তন থেকে সামাজিক দৃশ্যপট গুলো তুলে ধরছেন।প্রকৃতির রসভান্ডারের সাজানো বৈচিত্র্য গুলো এ উপন্যাসে বিশেষ স্থান যেন দখল করে নিয়েছে তাছাড়া এই একবিংশ শতাব্দীতেও সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় যা একধরণের ব্যাধি। এতটা মাধুর্য আর নিপুন কারিগরে প্রতিটি বাক্যশৈলী লেখক সাজিয়েছেন তা পাঠককে মুগ্ধ করাবে বলে আশা করছি।পাঁচালী গেয়েছেন জীবনের উত্থান-পতনের,বেদনার,সুখের ও সামাজিক ব্যাধির প্রভাবগুলোর যেথায় প্রকৃতি মিশে আছে নিবিড়ভাবে। এই উপন্যাস টি জীবনের বাস্তবতার বিশ্লেষণাত্বক সেটা পাঠক নিঃসন্দেহে বুঝবে।পাঠক হতাশ হবেনা এতটুকু বলতে পারি। আর এটা শুধু উপন্যাস ই নয় যেন আমাদেরজীবনের প্রতিচ্ছবি।তাই সকল বইপ্রেমী,সাহিত্যপ্রেমী এবং যেকোন মানুষের ই বইটি একবার হলেও পড়ার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি....... আর চন্দ্রভুক প্রকাশনীর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এই জীবনের প্রতিচ্ছবিগুলোকে এতটা জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা বই"পথের পাঁচালী " কে প্রকাশ করায়। বইঃ পথের পাঁচালী লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনায়ঃ চন্দ্রভুক প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৪০ মুদ্রিত মূল্যঃ ২২১ রিভিউ করছিঃ সুহায়লা এরলিন সুমু
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
G
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ পথের পাঁচালী লেখকের নামঃ বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায় প্রকাশনীঃচন্দ্রভূক প্রকাশন পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ২৪০ প্রচ্ছদ মূল্যঃ২৬০৳ ক্যাটাগরিঃবুক রিভিউ প্রকাশকালঃ১ম প্রকাশ,২০২১ রিভিউকারিঃ মো নাবিল মুবাশশির লেখক পরিচিতিঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালে ২৪ পরগনার মুরারীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা মৃনালী দেবী। কর্মজীবনে তিনি হুগলি কলকাতা ব্যারাকপুর সহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষের সহজ সরল জীবন যাপনের অসাধারণ এক আলেখ্য নির্মাণ করে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের বিভিন্ন সম্পর্কের চিরায়ত তাৎপর্য তার কথাসাহিত্য মহিমান্বিত।তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলোঃ পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, ইচ্ছামতী। ১৯৫০সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উৎসর্গঃ পথের পাঁচালী(১৯২৯) লেখক তার পিতাকে উৎসর্গ করেন। পথের পাঁচালী উপন্যাসটি গ্রামীণ জীবনে অসম্পূর্ণ শৈশব এবং প্রকৃতির সম্পর্ক দেখে প্রকৃতিমুখী হওয়ার প্রেরণা যোগায়। চরিত্রঃ অপুঃ উপন্যাসে এটি প্রধান চরিত্র এবং এটি লেখকের ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি। দুর্গাঃ অপুর বোন। হরিহরঃ উপন্যাসে অপু ও দুর্গার বাবা। সর্বজয়াঃ অপু-দূর্গার মা। এছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রঃ ইন্দিরঠাকুরন বই পর্যালোচনাঃ পথের পাঁচালী উপন্যাসটি ৩টি খন্ড ও ৩৫টি পরিচ্ছদে বিভক্ত। (১)বল্লালী বালাই (২)আম-আঁটির ভেঁপু (৩)অক্রূর সংবাদ প্রথম খন্ডঃ পরিচ্ছেদ 1-6; এই অংশে লেখা হয়েছে ইন্দিরঠাকুরণকে নিয়ে। এখানে ইন্দিরঠাকুরনের বিয়ে হয় এক যৌতুকলোভী সাথে। পরবর্তীতে যিনি আরেক জনকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় খন্ডঃ পরিচ্ছেদ ৭-২৯; এই অংশটি এই অংশটি অর্থাৎ "আম-আঁটির ভেঁপু" নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে সংকলিত হয়েছে। এই অংশটি গ্রামীণ জীবনের প্রকৃত ঘনিষ্ঠ দুই ভাই বোনের জীবনালেখ্য। তাদের শৈশবের আনন্দ মানুষের চিরায়ত শৈশবের আনন্দের প্রতীক। এখানে তারা গ্রামের ঝোপঝাড়ে ছোটাছুটি করে ফলমূল সংগ্রহ করে এবং সেগুলোর ভাগ নিয়ে খুনসুটি করে। এ কারণে তাদের আনন্দঘন শৈশবকে আচ্ছন্ন করতে পারে না অভাব এর সর্বগ্রাসী কালো ছায়া। উল্লেখ্য, দুর্গার মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। ফলে অপূর্ণ রয়ে যায় তাদের অনেক ইচ্ছা। তৃতীয় খন্ডঃ পরিচ্ছেদ ৩০-৩৫। এখানে বাংলার বড়লোক ছোটলোকের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। হরিহরের মৃত্যু এবং সর্বজয়া কাজের জন্য কাশিত্যাগের ঘটনা উল্লেখিত রয়েছে। বইটির ভালো দিকঃ বইটি ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি লেখকের উপন্যাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষের সহজ সরল জীবন এর অভিন্ন সম্পর্কের চিরায়ত ও তাৎপর্যে তার কথাসাহিত্য মহিমান্বিত যার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত এই পথের পাঁচালী উপন্যাস। বইটির নেতিবাচক দিকঃ বইটি সম্পূর্ণ সাধু ভাষায় রচিত ফলে বইটি পড়তে অনেক ধৈর্য্য থাকা অবশ্যক। যদি কেউ বইটি বিভিন্ন কাজের জন্য পড়ার প্রয়োজন হয় তাহলে সে বইটির তাৎপর্য বোঝা তার পক্ষে সহজ নয়। বইটির তাৎপর্য বোঝার জন্য সাহিত্যপ্রেমী হওয়া প্রয়োজন। বইটি সম্পর্কে আমার মতামতঃ আমার পড়া সকল বইয়ের মধ্যে সেরা বই"পথের পাঁচালী" বইটি কেন পড়বেনঃ বইটি প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের অভিন্ন সম্পর্কের তাৎপর্যে লেখা। ইনশাআল্লাহ বইটি পড়ে কেউ ভালো নয় এই কথা বলতে পারবেন না।বইটি পড়া শুরু করলেই কৌতুহল বাড়বে,যতই পড়বেন ততই কৌতুহল বাড়বে।বইটি পড়ার পরে নিশ্চয় আপনারও মনে হবে,বইটি আপনার পড়া বইয়ের মধ্যে সেরা। সেরা কথোপকথনঃ -এই শোন -কি রে? -এইবার জ্বর সারলে রেলগাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবি? -আগে তুই সেরে উঠ তো দিকি।
Was this review helpful to you?
or
এটি আমার প্রিয় বই! বারবার পড়ি।?
Was this review helpful to you?
or
best book.
Was this review helpful to you?
or
"পথের পাঁচালী" বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের রচিত অসাধারণ একটি সৃষ্টি। বইটি এই পর্যন্ত কতবার যে পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। পথের পাঁচালীকে কেবলই উপন্যাস বললে ভুল হবে। এটি তার চেয়েও বেশ উপরে। এতে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় সমাজের চিরায়ত সত্য কতগুলো চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের সমাজ সহায় সম্বলহীন অসহায় নারীর প্রতি কিরোপ মানষিকতা প্রদর্শণ করে তা লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এটি দশে দশ পাওয়া একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
'পথের পাঁচালি'বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস।বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে গড়ে ওঠা গল্প খুব কমই পাওয়া যায়।অপু আর দুর্গা চরিত্র দিয়ে ভাইবোনের সম্পর্ক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।পুরো উপন্যাসটি না পড়লে এর রস বোঝা সম্ভব না।গ্রামবাংলার সাথে পল্লী মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠতা বোঝানোর ক্ষেত্রে লেখকের সফলতা ফুটে উঠেছে।
Was this review helpful to you?
or
পথের পাঁচালী (১৯২৯) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) প্রথম, কালোত্তীর্ণ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস।উপন্যাসটি তিনটি পর্বে বিভক্ত: বল্লালী বালাই, আম-আঁটির ভেঁপু, অক্রুর সংবাদ। বিভূতিভূষনের আত্মজীবনী তৃণাঙ্কুর থেকে আমরা জানতে পারি, উপন্যাসটি লেখার আগে তিনি অন্তত পাঁচ বছর ভেবেছেন। ১৯২৯ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর ডায়রিতে বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন "বই বেরুবে বুধবারে। ভগবান বলতে পারবেন না যে আমি ফাঁকি দিয়েছি; তা যে দেইনি, তিনি অন্তত সেটা জানেন। লোকের ভালো লাগবে কিনা জানি না,আমার কাজ আমি করেছি।" বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র হরিহর রায় ও তার স্ত্রী সর্ব্বজয়া, দুই সন্তান দুর্গা ও অপু ওদের পিসী ইন্দির ঠাকরুন এবং কতিপয় গ্রাম্য চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে বল্লালী বালাই ও আম আঁটির ভেঁপুতে। তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়েই গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের প্রথমিকা। দুর্গার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে একসময় কাশীতে চলে যায় অপুরা। অক্রুর সংবাদে এসে যোগ হয়েছে অপর প্রধান চরিত্র, লীলা। আমার কাছে পথের পাঁচালী পড়ার সময় মনে হতো যেন জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ছি এককথায় চিত্ররূপময়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপন্যাসটির মূল্যায়ন করেছেন এভাবে,”আখ্যানটি অত্যন্ত দেশি।এই বইটিতে পেয়েচি যথার্থ গল্পের স্বাদ। এর থেকে শিক্ষা হয়নি কিছুই। দেখা হয়েছে অনেক যা পূর্বে এমন করে দেখিনি। …..আধুনিক অভিজ্ঞতার পরিবেষ্টণ থেকে দূরে…লেখার গুন এই যে, মনে হয় খুব খাঁটি উঁচুদরের কথায় মন ভোলাবার জন্য সস্তাদরের রাঙতার সাজ পড়াবার চেষ্টা নাই।বইখানা দাঁড়িয়ে রয়েছে আপন সত্যের জোরে।” সত্যজিৎ রায় এ উপন্যাসটিকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন। শেষের দিকে এসে পথ কথা বলেছিলো…জীবনের অনাস্বাদিত এক দিকের কথা গৃহবিচ্ছিন্ন বেদনা উচ্ছ্বসিত অপুর কাছে, “পথ আমার চলে গেল শুধুই সামনে…সামনে…দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে,সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে,জানা ছেড়ে অজানার পানে….মহাযুগ পার হয়ে যায় পথ আমার তখনও ফুরায় না…চলে চলে এগিয়েই চলে….।অনির্বান তার বীণা শোনে শুধু অনন্ত কাল আর অনন্ত আকাশ…চলো এগিয়ে যাই।” এই এগিয়ে যাওয়াই তো জীবন!! পথের পাঁচালী আমাদের কাছে জীবনের আসল বার্তাটি পাঠিয়ে দিতে পেরেছিলো শব্দের বুননে। পথের পাঁচালী মূলত বহু জীবনের, অনেক সংসারের এবং বিচিত্র মানুষের কাহিনির বিরাট ক্যানভাস। আর বিভূতিভূষণ যে ফাঁকি দেননি তা প্রমাণিত সত্য।
Was this review helpful to you?
or
পথের পাচালি বইটাতে বাংলার গ্রামের গরীব দুঃখীরা আসলে কত কষ্ট করে বসবাস করে সেইদিকটা অনেক সুন্দর করে ফুটে এসেছে। যদি আমরা সংগ্রহ করে বইটা পড়ি তাহলে অবশ্যই আমাদের অন্তরের ভিতর অসহায়দের প্রতি ভালোবাসাটা বেড়ে যাবে।
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো ভাবে হাতে পেয়েছি। কোয়ালিটি ও ভালো।
Was this review helpful to you?
or
পথের পাঁচালী উপন্যাসটিতে গ্রামীন দরিদ্র জীবনের এক ব্রাহ্মন পরিবারের সুখ-দু:খ দুর্দশার কাহিনী বর্নিত হয়েছে।অসাধারন লেখনী।
Was this review helpful to you?
or
বই পড়িনা অনেক বছর হয়ে যায়। বই কিনে জমিয়ে রেখেছে সেই কবে থেকে। জীবনের ব্যস্ততায় ধরা হয়না। এবার এরকম কয়েকটি বই পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিনে ফেলি। এখনও পড়ছি, ভালো লাগছে। ফিরে যাচ্ছি আবারও সেই বইয়ের দুনিয়ায়। ❤️
Was this review helpful to you?
or
পথের পাঁচালী হলো প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলার গ্রামে দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠা নিয়েই বিখ্যাত এই উপন্যাস।সমগ্র উপন্যাসটি তিনটি খণ্ড ও মোট পঁয়ত্রিশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। খণ্ড তিনটি যথাক্রমে বল্লালী বালাই (এখানে ইন্দির ঠাকরূনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে), আম-আঁটির ভেঁপু (এখানে অপু-দুর্গার একসাথে বেড়ে ওঠা, চঞ্চল শৈশব, দুর্গার মৃত্যু, অপুর সপরিবারে কাশীযাত্রার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে) এবং অক্রূর সংবাদ।এই খন্ডে অপুদের কাশীজীবন, হরিহরের মৃত্যু, সর্বজয়ার কাজের জন্য কাশীত্যাগ এবং পরিশেষে নিশ্চিন্দিপুরে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।বইটিতে পাঠের মাধ্যমে একজন পাঠক প্রাচীনকালের সমাজ ব্যবস্থা,পল্লী প্রকৃতি,সামাজিক ত্রুটি যেমন: বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথা,স্বামীহারা নারীদের জীবন সংগ্রাম,গ্রামের মানুষের সরলতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবে।বইটি অামাদের অাবার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।বইটি পড়ে আমি অনেক সচেতন হয়েছি এবং অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য আরেকটু অনুপ্রেরণা পেয়েছি ।খুবই চমৎকার ছিলো উপন্যাসটি। পরবর্তী কালে বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসটি অবলম্বনে পথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র) নির্মান করেন যা দর্শকদের কাছে ব্যাপক সাড়া পায়। তাই পাঠক দেরি না করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা এই উপন্যাসটি এখনোই পড়ে ফেলুন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইঃ পথের পাঁচালী লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ধরণঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনীঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মূল্যঃ ২৫০ টাকা (রকমারি মূল্য ১৮৮ টাকা) . নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাকে নিয়ে #পথের_পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনী। গ্রামের একেবারে উত্তর প্রান্তে যে কোঠাবাড়ি টা আছে, ওইটা দূর্গাদের বাড়ি। দূর্গাদের পরিবারের লোকসংখ্যা পাঁচজন। মা সর্বজায়া, বাবা হরিহর, ছোট ভাই #অপু এবং বৃদ্ধা পিসি ইন্দির ঠাকুরুন। ইন্দির ঠাকুরুন অবশ্য দূর্গার আপন পিসি নন, দূরসম্পর্কের পিসি। সর্বজায়া পরিবারের এই দূরসম্পর্কের সদস্যকে অবশ্য তেমন সহ্য করতে পারেননা, বেশ কাটা কাটা কথা সারাক্ষণই শুনিয়ে থাকেন, কিন্তু বৃদ্ধা পিসির এই অনাদরটুকু দূর্গা যেন পুষিয়ে দেয়..... পিসির সাথে দূর্গার রাজ্যের গল্প। প্রতি সন্ধ্যাবেলায় কত অদ্ভুত ছড়া শোনে সে পিসির কাছে.... অবশ্য পিসিকে ভালবাসার জন্য বকাও কম খেতে হয়না দূর্গাকে! কিন্তু দূর্গা যেন সেইসব বকা গায়েই মাখেনা। সে চলে তার মত! ঝড়ের মত! কালবৈশাখীর মত্ত ঝড়ও যেন দূর্গার কাছে হার মানে.... একেবারে দস্যি মেয়ে! মায়ের হাজার শাসনের, বাবার স্নেহ, পিসির অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে দূর্গা..... সাথে ছোট ভাই অপু। অবশ্য অপু মায়ের বকা নয়, একচেটিয়া ভালবাসা নিয়েই যেন বাড়তে থাকে। এই দুই ভাই-বোন যেন উপন্যাসের প্রাণ..... অপু বলতে গেলে দূর্গার ঠিক উল্টো। শান্ত চলাফেরা, দস্যিপনা বলতে গেলে তার মাঝে একেবারেই নেই। কিন্তু তবুও, দিদির সাথে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো বেশ লাগে তার। দূর্গা #ওড়কলমি_ফুল দিয়ে নোলক পড়তে ভালবাসে। শুধু ভালই-বাসে না, অপুকেও পড়িয়ে দেয়। ছেলে হয়েও দিদির জন্য অপুকে নোলক পড়তে হয়। এদের যেন অল্পতেই আনন্দ! ভাল খাবার কিনে খাওয়া তাদের কতদিন যে হয়নি সে হিসেব নাহয় বাদই দেয়া হল! দু'টাকার সামান্য মুড়ি,সন্দেশ,বাতাসা কিনে ওরা খেতে পারেনা.... অন্যেরা খায়, ওরা চেয়ে দেখে... অপেক্ষায় থাকে, রথ আসবে, বাবার কাছ থেকে চারটে পয়সা নিবে তারপর মুড়কি কিনে খাবে...... কষ্ট যেন তাদের এত অভাবের মাঝেও ছুঁতে পারেনা। বনের অবহেলিত মাকালফল পেয়েই ছিল তারা, আনন্দে আত্মহারা! অল্প রান্না দিয়ে চড়ুইভাতি করে যখন খেয়েছিল? সেদিন যেন সেই নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে আনন্দে তাদের স্বর্গ নেমে এসেছিল....! . যেবার অপু বাবার সাথে গ্রামের বাইরে গেল, দূর্গা যেন একা হয়ে গেল। খেলা, ঘুরে বেড়ানোতে দূর্গার যেন মন লাগেনা। অন্যদিকে অপু... ভাল থাকলেও, ভাল খাবার খেলেও সবকিছুর মধ্যে যেন দিদিকে খুঁজে ফিরে অপু। অমলা নামের তার দিদির বয়েসি একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয় তার। মেয়েটির কত খেলনা! কত ধরণের জিনিষ! দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপু... তার দিদির যে কোন ভাল খেলনা নেই!.... . দস্যি দূর্গা ধীরে ধীরে যেন শান্ত হতে থাকে। অন্নদা রায়ের বাড়ির "গোকুলের বউ" নামক মহিলার সাথে দূর্গার বেশ ভাব। প্রায়ই সেখানে যাওয়াআসা ছিল দূর্গার। হঠাৎ একদিন সে বাড়িতে আগমন হয় নীরেন নামক এক ছেলের। বেশ কৌতূহল জমে ছেলেটাকে নিয়ে দূর্গার মনে! জমবে নাইবা কেন? দস্যি দূর্গার সাথে এই নীরেন নামক মাস্টারমশাইয়ের বিয়ের কথা হয় হয়...... বাইরে শান্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে বেশ পুলক অনুভব করে দূর্গা এই ছেলেটিকে নিয়ে....! . তারপর..... কেমন করে সব পাল্টে যেতে শুরু করে। নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে অপুরা চলে যায় শহরে। ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব হাহাকার যেন এসে জড়ো হতে থাকে #পথের_পাঁচালী নামক উপন্যাসের মধ্যে! . #পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তার "পথের পাঁচালী" উপন্যাসের মধ্যেই অনেকদিন বেঁচে থাকবেন! এত জনপ্রিয় এক উপন্যাস! উপন্যাসের এত অভাব-অনটনের মধ্যেও লেখক ফুঁটিয়ে তুলেছেন এক অপার ভাল লাগা! বৈশাখের ঝড়ে অপু-দূর্গার আম কুঁড়ানো, মাকালফল পেয়ে ওদের খুশি, সামান্য আয়োজন নিয়ে চড়ুইভাতি করে তাদের সীমাহীন আনন্দ....... আমাকেও দিয়েছিল আনন্দ! যখন মায়ের মার খেয়ে দূর্গা পালিয়ে যায় আর দিদিকে খুঁজে ফেরা, দিদির ব্যথায় ব্যথিত অপুর জন্য আমার যে কতটা মায়া হয়েছিল, সেটা বলে বুঝানোর নয়! আমি সত্যি কেঁদেছি বইটি পড়ে! দূর্গার মায়ের ওপর ছিল আমার ভীষন রাগ!!! দূর্গার অপুকে বলা একটি কথা - #আমায়_একদিন_তুই_রেলগাড়ি_দেখাবি। মনে ভীষন ভাবে গেঁথে আছে..... বাস্তবতা কি সাবলীল-ভাবেই না লেখক তার লেখায় নিয়ে এসেছেন..... কষ্টের হলেও চমৎকার একটি বই। যাদের পড়া এখনও বাকি, পড়তে পারেন- হ্যাপি রিডিং :)
Was this review helpful to you?
or
পথের পাঁচালী (১৯২৯) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) প্রথম, কালোত্তীর্ণ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস। সাময়িক পত্র মাসিক ‘বিচিত্রা’য় ১৩৩৫ সালের আষাঢ় সংখ্যা থেকে পথের পাঁচালী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। পরবর্তীতে সজনীকান্ত দাসের রঞ্জন প্রকাশনালয় থেকে ১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে পথের পাঁচালী পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। উৎসর্গ করা হয়েছিল, ‘পিতৃদেব’ কে। উপন্যাসটি তিনটি পর্বে বিভক্ত: বল্লালী বালাই, আম- আঁটির ভেঁপু, অক্রুর সংবাদ। বিভূতিভূষনের আত্মজীবনী তৃণাঙ্কুর থেকে আমরা জানতে পারি, উপন্যাসটি লেখার আগে তিনি অন্তত পাঁচ বছর ভেবেছেন। পথের পাচাঁলী প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীন ভিন্নধারার একটি উপন্যাস।এ উপন্যাসের ঘটনা পরম্পরা পরবর্তীতে "অপরাজিত" এবং "অপুর সংসার" নামে আরো দুইটি পূর্নাঙ্গ উপন্যাসে বিস্তৃত হয়েছে। ফলাফল হিসেবে বাঙলা সাহিত্য (একই সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রি) পেয়েছে এক অবিস্মরণীয় ত্রয়ী (Apu Trilogy)। উপন্যাসটিকে তিন অধ্যায়ে বিভাজন করা হয়েছে- প্রথম অধ্যায়ে অপুর জন্ম ও বেড়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিত এবং ইন্দির ঠাকরুণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি প্রজন্মের ঐতিহ্যসমেত অবসান, দ্বিতীয় অধ্যায়ে অপুর মাধ্যমে জগতকে দেখার ও দেখাবার অনুভব, তৃতীয় অধ্যায়ে সব আরেক প্রজন্মের সব গল্প ও স্বপ্ন শেষের মাধ্যমে অপর এক অজানা প্রজন্মের দিকে ধাবমানতার ছবি। প্রয়াত ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, "বিভূতিভুষন পথের পাঁচালীতে একবার ও চিরকালের জন্য একটি কাজ করে গেছেন; তিনি পল্লীর অমল সরল কল্পনামথিত রোম্যান্টিক কোন বালককে নিকে উপন্যাস লেখার সমস্ত পথ বন্ধ করে গেছেন। অপু একবারই সৃষ্টি হতে পারে, তাকে আমরা ফিরে ফিরে পেতে পারি না।" ডঃ সৌমিত্র শেখরের একটি মূল্যায়ন,”বিভূতিভূষণ দরিদ্র চরিত্রগুলোর সমাবেশ ঘটিয়ে কোন দুঃখগাঁথা তৈরি করতে চান নি। অথবা চান নি প্রলেতারিয়েতের শ্রেণি বিপ্লব ঘটাতে। তিনি যুগের অস্থিরতায় না জড়িয়ে আবহমানকালের চিরস্থায়ী, চিরসাক্ষী এবং একটি পরিপূর্ণ সত্ত্বা নিসর্গ প্রকৃতিকে অবলম্বন করলেন এ উপন্যাসে।”
Was this review helpful to you?
or
আমি বইটা পড়ে আমি আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি।
Was this review helpful to you?
or
'পথের পাঁচালী' প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখা একটি উপমহাদেশখ্যাত সামাজিক উপন্যাস। এটি উপন্যাস হলেও পড়ার সময় একটিবারের জন্যও মনে হয় না যে এটা উপন্যাস। বরং লেখকের স্বচ্ছ-সাবলীল ভাষায় আমাদের সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবিটিরই একটি সহজ-স্বাভাবিক প্রতিফলন ঘটেছে এই উপন্যাসে। আমরা, তরুণ প্রজন্ম, কখনও কী ভেবেছি যে একজন নারীর কিরকম অনুভূতি হয় যখন সে ক্রমাগতভাবে নির্যাতিত হয়, কারণ তার কোন আয়ের উৎস নেই? যখন একজন নারী তার জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে আসে, তখন তার সামাজিক পরিস্থিতি কেমন হয়? যখন কোন নারী অল্পবয়সে স্বামীহারা হয় এবং সমাজ তাকে আবার বিয়ে করবার অনুমতি দেয় না, তখন সেই নারীর সামাজিক অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” বইয়ে রয়েছে। এই উপন্যাসের প্রথম অংশে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে প্রকট আকার ধারণ করতে দেখি। ইন্দিরঠাকুরনের বিয়ে অল্পবয়সে এমনই এক লোকের সাথে লোকের সাথে দেয়া হয়, যে বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আর কখনও ফিরে আসে না। তখন আয়হীন ইন্দিরঠাকুরনের স্থান হয় তার বাবার বাড়িতে, এবং তাদের ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িই তার স্থান হয়। সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হত যে সে একজন আশ্রিতা ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত, কিন্তু দিনশেষে তার পথ এসে শেষ হত হরিহরের বাড়িতেই। একবার ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে তাকে একেবারে বের করে দেয়া হয় এবং মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের ইতি ঘটে। এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ ‘আম আঁটির ভেঁপু’-এ অত্যন্ত সুচারুভাবে হরিহরের সন্তানদ্বয়- বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপুর টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। দূর্গা একপর্যায়ে অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় দুর্গার মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে দুর্গা মারা যায়। উপন্যাসের শেষ অংশ ‘অক্রুর সংবাদে’ চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরীবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। লেখক সাফল্যের সাথে দেখিয়েছেন, যে একজন ব্রাক্ষ্মণ নারীর(সর্বজয়া) কি অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে স্বামী হরিহরও মারা যায়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ ছিল না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ায় না। অবশেষে সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দিপুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না। কিন্তু বলাই বাহুল্য যে এই সামাজিক বৈষম্য আজকের একবিংশ শতাব্দিতে এই উন্নত সমাজেও পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত এই উপন্যাস আদি ও বর্তমান সামাজিক উত্থান-পতন ও সামাজিক কুসংষ্কারেরই প্রতিচ্ছবি।