Our User Product Reviews

ধন্যবাদ

:)

মূল “পথের প্যাঁচালী” উপন্যাসের একটি অংশের সংক্ষিপ্ত ও ঈষৎ সরলীকৃত রুপ হচ্ছে আম আঁটির ভেপু বইটি যা শুধু শিশুদের কাছেই নয়, সব বয়সের পাঠকের মনেই সংবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলার এক গ্রামে জন্ম নেয়া একটি শিশুর ক্রমাগত বিষ্ময়বোধের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠার এক অনবদ্য কাহিনী নির্মাণ করেছেন লেখক এই বইতে। এর কাহিনীর মধ্যে ভরে দিয়েছেন অপূর্ব এক রহস্যময় স্বপ্নীল আনন্দঘন জগত।

অপু দুর্গার গল্প। অপু দুর্গা মানে তো বিভূতিভূষণ আর তার পথের পাঁচালী। পথের পাঁচালীর অন্তর্গত দ্বিতীয় পর্ব। অপু দুর্গার দুনিয়া আম আঁটির ভেপু। পড়তে পড়তে পাঠক দুর্গাকে হারাবেন। হযতো অপু হয়ে তার নির্লিপ্ত বেদনা আপনিও অনুভব করবেন। ৮/৯ বছর আগে পড়েছি। এরপর পথের পাঁচালী পড়া হয়েছে। পড়তে গিয়ে মনে পড়েছে সেই গল্প, ছোট্ট অপু আর দুর্গার গল্প!

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু এবং দুর্গা। দুই ভাইবোন গ্রাম্য সরলতায় বেড়ে উঠে। দুর্গা চঞ্চলপ্রাণ, ছুটে ফিরে গ্রামময় ফল কুড়োনো আর প্রকৃতির সৌন্দর্য আকন্ঠ পান করার উদ্দেশ্যে। অপু বাবা মার বাধ্যগত সন্তান, পড়ালেখায় বেজায় আগ্রহ আর তার কল্পনার জগৎ সুবিশাল। কখনো সে পৌরাণিক যোদ্ধা তো কখনো বনবাসে বিতাড়িত দুঃখী রাজপুত্র। বইয়ের প্রায় সবটা জুড়েই অপু আর দুর্গার সহদোরজাত ভালবাসার মধুর সম্পর্ক অন্বেষণ করা হয়েছে। দারিদ্রের করাল আঘাতে জর্জরিত সাধারন মানুষের জীবন- ঠ্যাঙাড়েদের ডাকাতি, অপুদের পরিবার দুইটা টাকার মানিগ্রামের জন্য যেন হাজার বছরের প্রতিক্ষা অপু, দুর্গা ও সর্বজয়ার। গল্পে রেল্গাড়ি আর রেললাইনের উপমা দিয়ে অপুর অতীতকে ফেলে উজ্জ্বল আগামীর দিকে আগমন এবং বোনের শোকে কাতর হয়ে পিছন ফিরে দেখা ফিঁকে হয়ে যাওয়া দুর্গার স্মৃতি। বোনের অপূর্ণ শখগুলোকে বাস্তবতায় রূপ দেয়ার জন্য দারিদ্রের বিরূদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ন হয় অপু। যদিও এই সংকলনটি শিশুদের পাঠযোগ্য করে লেখা হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়নি মূল উপন্যাস থেকে খুব বেশি সরে এসেছে। এটি পথের পাঁচালী উপন্যাসের একটি অংশ মাত্র। এটা পড়ার পরে মূল উপন্যাস পড়ার আগ্রহ কয়েকশ গুণ বেড়ে গেলো।

'আম আঁটির ভেঁপু' পড়েন নি? তার মানে একটা অসাধারণ! বই পড়েন নি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপ্যাধায় এমন একজন লেখক যার লেখা তার সমকালীন লেখকদের তুলনায় সহজ, সুন্দর। এতো সহজ ভাষায় দুর্গা আর অপুর কাহিনি শুধু মুগ্ধই করে। বিভূতিভুষণ বন্দ্যোপ্যাধায় খুব সুন্দর ভাবে গ্রামের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের দুই ভাই বোন অপু আর দুর্গার তাদের ছেলেবেলা উৎযাপনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন দাগ কেটে যায় মনে। দুর্গা আর অপু চরিত্র পুরোপুরি মনে দাগ কেটে যায়। তাদের কাশবনে লুকিয়ে রেলগাড়ী দেখা কিংবা হক দুর্গার মায়ের হাতে মার খাওয়া সব কিছুই যেন অসম্ভব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিনেমা দেখে ভাববেন না সব পড়া হয়ে গিয়েছে। সিনেমা থেকেও সুন্দর বইয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১১৪ টাকার এই বইটি অসম্ভবসুন্দর। আপনার ছেলেবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।

"আম আঁটির ভেঁপু" বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লিখা একটি উপন্যাস । এটি নিশ্চিন্দপুর গ্রামে দুই ভাইবোন বেড়ে ওঠার গল্প, এটি একটি বাঙালির একটি ছোট্ট গ্রাম। ভাই-বোনের সম্পর্ক এবং তাদের আবিষ্কারগুলি আমাকে আমার শৈশবকালের স্মৃতিতে নিয়ে যায়। বিভূতিভূষণ সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছেন যে কীভাবে একটি পল্লী শিশুরা আশেপাশের একটি বিশ্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, গ্রামাঞ্চলে আমার লালন-পালন আমাকে "দুর্গার" জীবনযাপনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যুবতী মেয়ের চরিত্র, যা একজন নির্বোধ এবং সর্বদা গ্রামের জীবন অন্বেষণ করে। এই বইটি মানুষের আবেগে ভরপুর ।

অপু আর দুর্গা!! কঠিন বাস্তবতার সাথে সাথে ভাই বোনের অপূর্ব ভালবাসার প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় বিভূতিভূষণ বন্ধ্যোপাধ্যায় এর এই উপন্যাসে। এই উপন্যাসটা পড়া হয়েছে প্রায় সাত বছর হবে। কিন্তু এখনও মন থেকে যায় না এর কঠিন বাস্তবতার রূপ। তবে আমার এক বন্ধুর কাছে এটা ছিল সবচেয়ে প্রিয় বই। ভাই বোনের খুনসুটি, গাঁয়ের মেঠোপথে দৌড়ানো, মায়ের হাতে দুর্গার মার খাওয়া, বৃষ্টির মধ্যে ভিজে জ্বর এসে যাওয়া, ভাই বোনের কাশবনের ভিতর দিয়ে রেলগাড়ি দেখা!, এমনকি দুর্গার চুরি করা, এর প্রতিটি ঘটনা বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এমনকি এখানে তাদের মায়ের চরিত্রতেই বাস্তবতার মিশ্রণ রয়েছে। অপুর জন্মক্ষণ যেভাবে বর্ননা করা হয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ। হয়ত আমরাও এরকম বিড়াল ছানার মতোই ছোট্টটি মনে করতাম আমাদের জন্মরত ছোট্ট ভাই বোনকে। এক কথায় অসাধারণ। অসাধারণ এই উপন্যাস নিয়ে সত্যজিৎ রায়ও তার অসাধারণ কাজটা দেখিয়েছেন তার সিনেমার রিলেতে!! আমি বলব না যে লেখার চেয়েও সেটা অসাধারণ। তবে অবশ্যই তা হৃদয়ে দাগ কাটার মতই। তবে আমার মনে হয় যে কোন বিষয়েই সিনেমা এবং বই পড়া সম্পূর্ণ আলাদা। বই পড়লে চরিত্রগুলোকে নিজের ইচ্ছে মত সাজানো যায়। কিন্তু সিনেমাতে তা পাড়া যায় না। আবার সিনেমা যত তাড়াতাড়ি বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। হয়ত বই সেখানে নীরব। যখন অপু তার বোনের সাথে রেলগাড়ি দেখতে যায়,তখন সবার মনে হতে পারে যেন নিজেই ছুটে যাচ্ছে সেখানে। বিভূতিভূষণ বন্ধোপাধ্যায়ের লেখাগুলোর মধ্যে এই লেখাটিকেই আমি এগিয়ে রাখব। অপু আর দুর্গা বেঁচে থাকবে পাঠকের হৃদয়ে আজীবন।

দুই ভাইবোনের এক করুণ কাহিনী, সংগ্রহে রাখার মতো