User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বাংলা কবিতার রাজপুরুষ আল মাহমুদ। তবে যখন তিনি উপন্যাস লিখতে বসেন তখনও বোঝা যায় আল মাহমুদ সদম্ভে বিচরণ করতে পারেন সাহিত্যের সব শাখায়। এ বছরের একুশে বইমেলায় আল মাহমুদের উপন্যাস ‘বিবি মরিয়মের উইল’ প্রকাশিত হয়েছে আদর্শ প্রকাশনী থেকে। তিনটি জীবিত চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠেছে বিবি মরিয়মের উইল। আর একটি চরিত্র মরিয়মের মেয়ে নাসরিন মৃত হিসেবেই দেখা দেবে। উপন্যাসের শুরুই হয় নায়ক নায়িকার দেখা হওয়ার মধ্য দিয়ে। উপন্যাসে একটিই পুরুষ চরিত্র। বাকি তিনটি চরিত্রই নারী। উপন্যাসের শুরুতে একমাত্র পুরুষ চরিত্রটি যান এক ধনী বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করতে। যে বৃদ্ধা তার মাকে বহু বছর আগে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তবে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করতে দেয় না ঘরের কাজের মেয়ে। এভাবে ১৫ দিন পর মাত্র ২০ মিনিটের কথা বলে বৃদ্ধার কক্ষে যাওয়ার সুযোগ হয়। সেখানের আলাপের মধ্যে জানা যায় বৃদ্ধা তার দাদু। বৃদ্ধার মেয়ের নাম নাসরিন। নাসরিনের ছেলে এই পুরুষ চরিত্রটি। পুরো উপন্যাসের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রটির নাম জানা যায় না। চরিত্রগুলো বিস্তার করার আগেই লেখক উইলের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। যে উইল নিয়ে তিনটি চরিত্রই একটি খেলায় মেতে উঠবে। বৃদ্ধা উইলের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তোমাকে আমাকে দাদু বলে ডাকার অনুমতি দিয়েছি। তবে চট করে কিছু হয় না। আমার অ্যাটর্নি এখন কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। পড়ে আমার অংশীদারদের ডেকে আমার উইল প্রকাশ করবো। এ থেকে তুমি বঞ্চিত হবো না। ’ এ শুনে নাতি স্পষ্ট করে ফেলে যে সে বৃদ্ধার সঙ্গে অর্থ সম্পদের লোভে দেখা করতে আসেনি। তখন সে বলে, ‘আমি বললাম, আমি সব সম্পত্তি- টাকা পয়সা ইত্যাদি পাওয়ার লোভে এখানে আসিনি। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম, এই বাড়ির মালিক মরিয়ম বেগম আমার দাদু হন। এ কারণেই আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আপনার বিপুল সম্পত্তি টাকা কড়ি ইত্যাদি আমার বিবেচনার বিষয় নয়।...’ নাতির এই চরম অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধা অবাক হয়ে যান। একসময় নাসরিনের এ ধরনের কথায় তিনি আঘাত পেয়েছিলেন। তাই তিনি তার মেয়ে নাসরিনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। নাসরিন তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এ সম্পত্তির মালিক ছিল নাসরিন। কিন্তু নাসরিন সবকিছু উপেক্ষা করে চলে গিয়েছিল। একদিকে বৃদ্ধা তার সমস্ত সম্পত্তি থেকে নিস্তার চান। ঠিক মতো ভাগ করে উত্তারাধিকার সূত্রে তিনি তার নাতিকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে চান। কারণ এ সম্পত্তি এখন তার কাছে অভিশাপের মতো। এ বিষয়টি নাতি জানার পরপরই বলে ওঠে, ‘... যা কিছু ঘটেছে সব কিছুর মূলে আপনিই ছিলেন। আপনার মেয়ে আমার মা চির অসন্তোষ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি মনে করি আপনার সব সম্পত্তি টাকাকড়ি সবই অভিশপ্ত, কোনো অভিশাপ যেন লেগে আছে এই বাড়ির দেয়ালে। এর জন্য অন্য কাউকে দায়ী করে লাভ নেই। আপনি নিজেই সবকিছুর জন্য দায়ী। এবং সব কিছু আগলে বসে আছেন।’ ধীরে ধীরে উপন্যাসটি আটকে পড়ে দাদু আর নাতির যুক্তি-তর্কে । বৃদ্ধ বয়সে অঢেল সম্পত্তির বোঝা বইতে না পারা বিবি মরিয়ম তার সম্পত্তি থেকে নিস্তার চান। অন্যদিকে বিবি মরিয়মের মেয়ে নাসরিনের ছেলে সম্পত্তির প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করতে থাকে। এভাবেই উপন্যাস এগিয়ে চলে। নাসরিনের ছেলে এক পর্যায়ে ধিক্কার দিয়ে বসে। তখন সে বলে ওঠে, ‘আপনার অর্থ সম্পদকে আমার জন্য আমি জায়েজ ভাবি না। কারণ এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনিই এর মালিক। আমার মা, এর মধ্য থেকে সামান্য কিছু সম্ভবত চেয়েছিলেন, আমি ঠিক জানি না। আপনি দেননি। ধরে নিলাম আজ আপনি দিতে চান। কিন্তু নেবে কে? নেয়ার কেউ নেই। এমন একটা অবস্থা হবে সেটাও আপনি ভাবেননি। আক্ষেপের বিষয় এই অর্থের উত্তরাধিকারী ছিলেন মা। এর ভেতর থেকে সামান্য কিছু তাকে দিলে তিনি ক্যান্সার নিয়ে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে ধুঁকতে মরতেন না। এখন এই সম্পদকে আমি অভিশপ্ত মনে করি। কেউ নিতে চায় না আপনার টাকা। কেউ স্পর্শ করতে চায় না আপনার সম্পদ। অথচ আপনি এখন ব্যাকুল হয়েছেন দেয়ার জন্য। এটাই আপনার অপরাধের শাস্তি। ’ এক পর্যায়ে গিয়ে বিবি মরিয়ম ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সম্পদের কোনো মূল্য নেই সেটা তিনি বুঝতে পারেন। এই বোঝা তিনি রাখতে পারছেন না। হুট করেই তিনি কাজের মেয়ের প্রসঙ্গ আনেন। এই মেয়েটির নাম হুমায়রা। হুমায়রাকে বহু বছর আগে বিবি মরিয়ম এতিমখানা থেকে এনেছিলেন। হুমায়রাকে মানুষ করেছেন। পড়াশোনা করিয়েছেন। শিক্ষিত একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এবং বিবি মরিয়ম চান হুমায়রার সঙ্গে নাসরিনের ছেলের বিয়ে হোক। এমনকি উইলেও তা উল্লেখ আছে। দুজনের বিয়ে হলেই উইল পরিপূর্ণ হবে। তা না হলে উইল কার্যকর হবে না। এ শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় তার নাতি। কিন্তু একপর্যায়ে অবাক করে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। তবে সেখান থেকে গল্পের মোড় ঘুরে যেতে থাকে। ছেলেটির ভেতর তৈরি হওয়া ক্ষোভ সে মেয়েটির মাঝেও ছড়িয়ে দেয়। মেয়েটিকে বুঝতে শেখায়, বিবি মরিয়ম তাকে শিক্ষা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার আপনসত্ত্বা বলে কিছুই নেই। উপন্যাসটিতে তখন তৈরি হয়, বিপ্লব চেতনার। প্রতিটি চরিত্রই শুরু করে বিপ্লব। অন্যদিকে মরিয়ম সবকিছু বুঝেও অচল থাকে তার সিদ্ধান্তে। বিষয় সম্পত্তির লোভ ছেড়ে অন্য এক জগৎ তৈরিতে মেতে ওঠে হুমায়রা ও নাসরিনের ছেলে। এমনকি পালিয়ে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তারপরও এক অজানা সম্পর্কের বন্ধনে বিবি মরিয়মের জন্য তাদের মন কাঁদে। বৃদ্ধ একজন মানুষকে এভাবে একা ফেলে রেখে দুজনই যেতে পারে না। এছাড়াও উপন্যাসের দুটি চরিত্রের অন্তরে সম্পত্তি নিয়েও আগ্রহ দেখা যায়। যা লেখক স্পষ্ট না করলেও পাঠক বুঝে নেবে। উপন্যাসে তৈরি হয় ভিন্নরকম মাত্রা। প্রেম, সম্পর্ক, সম্পত্তি, বিপ্লব সবকিছু নিয়ে অন্যরকম ট্র্যাজিডির দিকেই এগিয়ে যায় ‘বিবি মরিয়মের উইল’। কিন্তু অন্যরকম চরিত্রের বৈশিষ্টের অধিকারি বিবি মরিয়ম শেষ পর্যন্ত থাকেন অটল। তিনি দুটি চরিত্রকে শেষ পর্যায়ে এসে মুক্তি দেন। বিপ্লব সফল না হলেও সম্পর্ক এবং প্রেমের সফলতা দেখতে পাবে পাঠক। কারণ, প্রেম ও সম্পর্কের বন্ধনে কখনো বিপ্লব হয় না।